তিনদিনে শিশুসহ ৪শ’র বেশি রোগী ভর্তি!

0
12

 

গরমের পূর্বাভাস : চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক-সেবিকাদের নাভিশ্বাস
নিউজ ডেস্ক:কয়েকদিন ধরেই সকাল বেলার দিকে বেশ গরম লাগছে। বেলা গড়িয়ে দুপুর হলে বাড়ে রোদের তেজও। দুপুরের দিকে আচমকা এতটাই গরম লাগছে যে, কারও কারও ঘাম হচ্ছে। ফলে ঘরে পাখা-এসি চলে সারা সকাল। আবার সন্ধ্যা পড়তে না পড়তেই ঠান্ডা হিমেল ভাব। রাতে ঘুমাতে গিয়েও বিপত্তি। পাখা চালাবেন কী চালাবেন না, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়াও মুশকিল হয়ে পড়ে। দেখা যায়, চালালে ঠান্ডা লাগছে কিছুক্ষণ পর। আবার না চালালে গরম গরম ভাবের জন্য ঘুমই আসতে চাইছে না।
আবহাওয়ার এই তারতম্যের ফলে রোগজীবাণু বাসা বাঁধছে। ঘরে ঘরে জ্বর সর্দি কাশি, গলাব্যথা, ভাইরাল ফিভার নিয়ে জেরবার শিশু থেকে বয়স্ক সকলে। গত কয়েকদিন ধরে ঠান্ডা-গরমের ফারাকের চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালে আক্রান্ত রোগীদের ভিড় বাড়ছে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, তাপমাত্রার এই তারতম্য জীবাণুকূলের পক্ষে আদর্শ। ফুসফুসের সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করছে। যে কারণে কখনও হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসারও প্রয়োজন পড়ছে। ফলে, সতর্ক থাকাটাই বাঞ্ছনীয়। আবহাওয়ায় শুধু অস্বস্তিই বাড়ছে না, বাড়ছে জ্বরজারি, শরীর খারাপও। আবহাওয়া পরিবর্তনের এই সময়ে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, পরিবারে কারও সর্দি-কাশি-জ্বরজারি হয়নি, এমন গৃহস্থ বাড়িই খুঁজে পাওয়া কঠিন হচ্ছে।
ক’দিন আগেও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা তেমন লক্ষ্য করা যায়নি। গত তিনদিনে ব্যাপক হারে বেড়েছে রোগির সংখ্যা। স্বাস্থ্যবিদরা বলছেন আবহাওয়া পরিবর্তনের কারনে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। এসময় সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শও দেন। এদিকে রোগীর সংখ্যা যেমন বেড়েছে ঠিক চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছে সেবিকারা।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত তিনদিনে ঠান্ডাজনিত ও বিভিন্ন রোগে শুধু বহির্বিভাগে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ চিকিৎসা নিয়েছে ২৫শ’র বেশি রোগী। আর তিনদিনে ভর্তি হয়েছে ৪শ’ রোগী। সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে। হাসপাতালের দুই মেডিসিন ওয়ার্ডে পা ফেলার তিল পরিমানও জায়গা নেই। ঠিক তেমনই শিশু ওয়ার্ডেরও একই অবস্থা। চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছে চিকিতৎসক ও সেবিকারা।
বর্হিবিভাগে দেখা যায়, শিশু কোলে নিয়ে কয়েকজন অভিভাবক ডাক্তার দেখানোর অপেক্ষা করছেন। তাদেরই দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের গৃহবধূ নাসরিন বেগম। তিনি জানান, ৩ দিন যাবত তার ছয় বছর বয়সী মেয়েটির বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। এরপর পরদিন থেকে জ্বর। তিনদিনেও জ্বর না কমায় আজ মেয়েকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছেন।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামিম কবির বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে সাধারণ জ্বর ও ঠান্ডাজনিত রোগের উৎপাত হঠাৎ করে বেড়েছে এই ক’দিনে। শুধু বয়স্কই নয়, শিশুদের মধ্যেও নিউমোনিয়ার প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। সুতরাং এই সময়টায় খুবই সতর্ক থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
ঠান্ডা কাশি যে ভাইরাসগুলোর কারণে সৃষ্টি হয় তা কম তাপমাত্রায়, কম আর্দ্রতায় এবং পরিবেশ পরিবর্তনের কারণে প্রার্দুভাব ঘটে বেশি। শ্বাষতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে নষ্ট করে কাশি, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট তৈরি করতে পারে। এর সঠিক চিকিৎসা না হলে সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হয়ে সাইনোসাইটিস, ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া, হাঁপানিসহ নানা জটিলতা তৈরি হয়।
গরমের এসব রোগ থেকে বাঁচতে পরামর্শ দিয়েছেন সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামিম কবির। তিনি জানান, মুখে নাকে সব সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। নিয়মমাফিক ভিটামিনযুক্ত খাবার, পরিমাণমতো পানি পান ও পূর্ণ বিশ্রাম নিলে এমনিতে এসব রোগের হাত থেকে পরিত্রাণ মিলবে। এ মসয় বেশি করে আদা ও লেবুর চা খেতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ফার্মেসি থেকে কাশির সিরাপ বা অ্যান্টিবায়োটিক না খাওয়াই উত্তম। সকাল-বিকেলে কুসুম গরম পানিতে গড়গড়া করতে হবে। অনেক সময় ভাইরাসঘটিত ঠান্ডা কাশি থেকেই সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হয়। তাই অবস্থা বেশি সিরিয়াস মনে হলে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক ঔষধ খেতে হবে।
শিশু বিষেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন বলেন, কখনো বৃষ্টি, কখনো গরম- এই আবহাওয়ায় শিশুদের সর্দি কাশি লাগার একটি প্রবণতা থাকে। শিশুদের যদি সাধারণ ঠান্ডা, কাশি, সর্দি থাকে, সেই ক্ষেত্রে কী করণীয়, আসলে বাচ্চাদের অ্যালার্জির সমস্যা অনেক বেশি। বাইরে হয়তো বৃষ্টি হচ্ছে, তবে অ্যালার্জিজনিত কারণে ওদের নাক দিয়ে পানি পড়ছে। আবার গরমে নাক দিয়ে পানি পড়ছে। ঘামছে নাক দিয়ে পানি পড়ছে। এই জন্য বাচ্চাদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জায়গায় খোলামেলা আবহাওয়ায় রাখার জন্য বলব। আর যেন শুকনো কাপড়, পরিষ্কার কাপড়, সুতির কাপড় পরানো হয়। আর শিশু ঘেমে গেলে যেন শুকনো কাপড় দিয়ে মুছিয়ে দেয়া হয়। শিশুর বয়স এক বছরের কম হলে তাকে শক্তিশালী কাশির ওষুধ দেবেন না। কাশির প্রতিক্রিয়া মস্তিষ্কের নিচের অংশে নিয়ন্ত্রিত হয়, তাই যদি আপনি আপনার ছোট শিশুকে কাশি দমনকারী কোনো ওষুধ দেন, তাহলে তার শ্বাস দমন করা হবে। শিশুর কাশি হলে তাকে চিকিৎসক দেখিয়ে কাশির কারণ নির্ণয় করা গুরুত্বপূর্ণ। রাত্রিকালীন কাশি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন- ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ, অ্যাজমা, শিশু কিছু গিলে ফেলার কারণে শ্বাসপথে আংশিক অবরুদ্ধ অবস্থা, অস্বস্তিকর ধোঁয়া ইত্যাদি। কিছু ক্ষেত্রে মারাত্মক অসুখ, যেমন সিস্টিক ফাইব্রোসিসের কারণে কাশি হতে পারে।