শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমরান ও সহযোগী লিটুকে গুলি করে হত্যা

0
8

জীবননগরের উথলী ও হাসাদহ সংলগ্ন মহেশপুর সীমানা মাঠে দূর্বৃত্তদের পৃথক কিলিং মিশন
নিউজ ডেস্ক:
চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের মোস্ট ওয়ানটেড শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমরান হোসেন (৩০) ও তার সহযোগী লিটুর গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে জেলার জীবননগর উপজেলার উথলী মোল্লাবাড়ি গ্রামের একটি বাগান থেকে ইমরানের ও জীবননগর উপজেলা সীমান্তের মহেশপুর উপজেলার মধ্যে আলম ইটভাটার সামনে থেকে লিটুর গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত ইমরান হোসেন আলমডাঙ্গা উপজেলার কলেজপাড়ার মৃত অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কনস্টেবল আবদুর রহমানের ছেলে। তার সহযোগী লিটু একই উপজেলার বাদেমাজু গ্রামের আনিসুর রহমানের ছেলে।
বৃহস্পতিবার সকালে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ জানায়, জেলার জীবননগর উপজেলার উথলী মোল্লাবাড়ি গ্রামের কৃষকরা সকালে মাঠে কাজ করতে গেলে ডিঙ্গেখালী মাঠের একটি ইপিল ইপিল বাগানের মধ্যে গুলিবিদ্ধ একজনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে খবর দেয় জীবননগর থানা পুলিশকে। খবর পেয়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। পরে নিহতের পরিবারের সদস্যরা ইমরানের মরদেহ শনাক্ত করে।
জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ গণি জানান, নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ইমরান হোসেন খুন হতে পারেন। দুর্বৃত্তরা তার মাথায় ও বুকে গুলি করে হত্যা করেছে। হত্যার কারণ ও খুনিদের শনাক্ত করতে পুলিশি অনুসন্ধান ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।
সহকারী পুলিশ সুপার আবু রাসেল (দামুড়হুদা সার্কেল) জানান, নিহত ইমরান চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের মোস্ট ওয়ানটেড। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ব্যবসাসহ ১৪টি মামলা রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে খুঁজছিল।
এদিকে, একই সময়ে জীবননগর ও ঝিনাইদহের সীমান্তবর্তী ফতেপুর ইউনিয়নের আলম ইটভাটার সামনে থেকে উদ্ধার হয় চুয়াডাঙ্গার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমরানের সহযোগী লিটুর গুলিবিদ্ধ মরদেহ। বৃহস্পতিবার সকালে গ্রামের কৃষকরা মাঠে কাজ করতে গেলে তার লিটুর গুলিবিদ্ধ মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে।
ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশিদুল আলম জানান, গ্রামের কৃষকদের কাছ থেকে খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠাই। তিনি আরও জানান, প্রথমে নিহতের পরিচয় জানা না গেলেও পরে নিহতের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। সে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকা- চালাতো। বেশ কয়েকটি মামলাও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।.


পুলিশ জানিয়েছে, মোটরসাইকেল ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, নারী নির্যাতন, ইভটিজিং, অস্ত্র ও বিষ্ফোরক মামলাসহ আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা, মিরপুর, গাংনী ও কুষ্টিয়া থানায় ইমরানের বিরুদ্ধে বহু মামলা রয়েছে। শুধু চুয়াডাঙ্গা নয়, তাদের অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্র বৃহত্তর কুষ্টিয়া জুড়ে। শুধুমাত্র আলমডাঙ্গা থানায় তার বিরুদ্ধে ৮টি মামলা রয়েছে। বিষ্ফোরক আইনে একটি, নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে দু’টি, ডাকাতি মামলা দু’টি, মারামারি মামলা একটি ও অস্ত্র আইনে দু’টি মামলা। সে ইতোপূর্বে ইভটিজিং মামলায় ৯ মাসের জেল খেটেছে। তার নামে ২০১৪ সালে দু’টি চুরি মামলা, ২০১৫ সালে একটি চুরি ও মারামারি মামলা এবং ২০১৬ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা রুজু হয়। গত দেড় বছর পূর্বেও নীল রঙের পালসার মোটরসাইকেল নিয়ে কখনও ফাঁড়ি পুলিশ, কখনও থানা পুলিশ আবার কখনও ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আলমডাঙ্গা-চুয়াডাঙ্গাসহ এর আশপাশ এলাকায় একের পর এক মোবাইলফোন ও মোটরসাইকেল ছিনতাই করে আসছিলো বলেও জানা গেছে। এছাড়া গত বছর ১ ফেব্রুয়ারি দামুড়হুদার দেউলি গ্রামের সামসুল আলম বাদি হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জনের নামে মামলা দায়ের করেন।
তবে নিহত ইমরান ও লিটুর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে চুরি হয়ে যাওয়া একটি মোবাইলের সূত্র ধরে যশোর গোয়েন্দা পুলিশ ও আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের যৌথ একটি দল ইমরান ও লিটুকে মঙ্গলবার রাতে আলমডাঙ্গা থেকে গ্রেফতার করে। এরপর থানায় গিয়েও তাদের কোনো সন্ধান মেলেনি। তবে আলমডাঙ্গা থানার ওসি আসাদুজ্জামান মুন্সি নিহতের পরিবারের অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ইমরান ও লিটু নামে তার থানাতে কেউ গ্রেফতার ছিল না।