সমাধান পাননি ফ্রন্টের নেতারা, কর্মসূচি চলবে !

0
35

নিউজ ডেস্ক:

নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থাসহ সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু বিষয় নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সংলাপ শেষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা জানিয়েছেন, তারা আলোচনা থেকে কোনো সমাধান পাননি।

দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন ও কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সংলাপ শেষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেনের বেইলী রোডের বাসায় এসে এই প্রতিক্রিয়া দেন জোট নেতারা।

সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত সংলাপ করে নিজের বাসভবনে এসে সাংবাদিকদের কাছে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা গিয়েছিলাম আজকে গণভবনে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপ ছিল। আমরা তিন ঘণ্টা সেখানে ছিলাম। আমরা নেতৃবৃন্দ সবার অভিযোগ ও বক্তব্য তুলে ধরেছেন। সবার কথা শুনার পরে প্রধানমন্ত্রী বেশ লম্বা বক্তৃতা দিলেন। তবে ওখানে কোনো বিশেষ সমাধান আমরা পাই নাই।’

‘শুধু একটা ব্যাপারে, সভা-সমাবেশের ব্যাপারে উনি যেটা বললেন একটা ভালো কথা বলেছেন। সুব্রত চৌধুরী সেটা বলবেন।’

পরে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী সভা-সমাবেশের বিষয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ঢাকাসহ সারা দেশে সভা-সমাবেশেসহ রাজনৈতিক কর্মসূচির ওপর কোনো বাধা থাকবে না। রাজনৈতিক দলসমূহ যেখানে সভা করতে চাইবে সেখানে কোনো বাধা দেবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তিনি ইতিমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন।’

‘রাজনৈতিক মামলার সম্পর্কে উনি বলেছেন যে, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মামলা ও গায়েবী মামলার তালিকা আপনারা দেন। আমি অবশ্যই বিবেচনা করবো যাতে হয়রানি না হয় তা বিবেচনা করব।’

তিনি বলেন, ‘উত্থাপিত দাবি-দাওয়া নিয়ে ভবিষ্যতে আলোচনা অব্যাহত থাকবে বলে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন।’

ড. কামাল বলেন, ‘আমরা সংলাপের সুযোগ পেয়েছি। আমরা আমাদের কথা বলে এসেছি উনাকে। উনি জানতে পেরেছেন। উনি উনার কথাগুলো বলেছেন, উনার মনের কথা আমরা কিছুটা জানতে পেরেছি।’

খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সুনির্দিষ্টভাবে কোনো কিছু বলেননি। তিনি বলেছেন যে, এই বিষয়গুলো নিয়ে ভবিষ্যতে আলোচনা হতে পারে।’

বিএনপি কী এতে আশাবাদী?-প্রশ্ন করা হলে ফখরুল বলেন, ‘আমি তো বলেছি যে ভাই আমি খুব সন্তুষ্ট নই।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র আসম আবদুর রব বলেন, ‘আমরা ৭ দফা কর্মসূচি দিয়েছি। মানা না মানার দায়িত্ব সরকারের। আমাদের কর্মসূচি আমরা দিয়েছি এ নিয়ে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

সংলাপে সমাধানের আগে নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা হবে কি না?-প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা তফসিলের বিষয়ে বলেছি। উনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, তফসিল দেওয়ার এখতিয়ার নাই। সেটা নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।’

সংলাপ থেকে কী পেলেন?-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সব সময় কী সব কিছু অর্জন হয় নাকি।’ ওই প্রশ্নের উত্তরে আসম রব বলেন, ‘একদিনে সব পাওয়া যায় না।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, গণফোরামের জগলুল হায়দার আফ্রিকসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গণভবন থেকে বের হওয়ার সময়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আলোচনায় তিনি সন্তুষ্ট নন।

অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘ভালো আলোচনা হয়েছে।’ আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে বলে কি আপনি মনে করেন-জবাবে তিনি বলেন, ‘ফলপ্রসূ হবে।’

সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের মধ্যে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফা মহসীন মন্টু, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির খান, জগলুল হায়দার আফ্রিক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ও ম শফিক উল্লাহ, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, সহসভাপতি তানিয়া রব, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, এস এম আকরাম, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আ ব ম মোস্তফা আমিন, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সংলাপে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের যোগ দেয়ার কথা থাকলেও তিনি যোগ দেননি।

অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এই সংলাপে ১৪ দলীয় জোট থেকে ২৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল যোগ দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া অন্যরা হলেন–আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, মো. আবদুর রাজ্জাক, কাজী জাফর উল্যাহ, আবদুল মতিন খসরু, রমেশ চন্দ্র সেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, দীপু মনি, আবদুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আইনবিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও জাসদের একাংশের সভাপতি মইন উদ্দীন খান বাদল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিকল্পধারা ও জাতীয় পার্টির নেতারা ২ ও ৫ নভেম্বর গণভবনে সংলাপে বসবেন। সব দলের সঙ্গে সংলাপের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাম দলগুলোকে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে বাম দলগুলো তাদের সিদ্ধান্ত পরে জানাবে বলে জানিয়েছে।

Ref: রাইজিংবিডি