হাবিবুল ইসলাম হাবিব, টেকনাফ: মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের ভয়ে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাগুলোতে ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নেমেছে। আবারও রোহিঙ্গারা ঢল বেঁধে আসতে শুরু করেছে। কয়েক সাপ্তাহে টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রায় ১০ হাজারের বেশী রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। গত দুই দিন ধরে এসব রোহিঙ্গা মিয়ানমারের দমংখালী ও সুদারদ্বীপ, কোয়ানসিবং ও নাইসাদং সীমান্তে অবস্থান করে পরে এই দেশের দালালদের মাধ্যমে নিরাপদে চলে আসে।
সরেজমিনে গতকাল ৪ নভেম্বর রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওপারে মিয়ানমারের বিভিন্ন সীমান্তে উখিয়ার লম্বাবিল, আঞ্জুমানপাড়া, থাইংখালী, টেকনাফের হ্নীলার উনছিপ্রাং, দক্ষিণপাড়া, শাহপরীরদ্বীপের সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে আরও হাজার হাজার রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গা ১৫ থেকে ২০ দিন আগেই তাদের ভিটেবাড়ি ফেলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার উদ্দেশ্য হাঁটা শুরু করে। মিয়ানমারের বুসিদং ও রাসিদং থেকে হেঁটে বাংলাদেশ সীমান্তে আসতে তাদের দুই থেকে তিন সপ্তাহ লেগে যায়। এ ছাড়া উখিয়ার আঞ্জুমানপাড়ার বিপরীতে ওপারে মিয়ানমার সীমান্তের কোয়ানসিবং, নাইসাদং, দংখালী, কুমিরখালী, মংডুর সর্বদক্ষিণে নাইক্যনদিয়ায় এক মাসেরও অধিক সময় ধরে অপেক্ষা করছে আরও ২০ থেকে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা। সুযোগ পেলেই তারাও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করবে। তাই ভিটেবাড়ি ছাড়া এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশ সীমান্তের কাছেই মানবেতর জীবন যাপন করছে। এদিকে গতকালও টেকনাফ সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে ভোরে শতাধিক রাহিঙ্গা নারী-পুরুষ অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে আরো দেখা যায়, অনাহারে-অর্ধাহারে থাকা এসব রোহিঙ্গা খাবার ও পানির জন্য ছটফট করছে। বিশেষ করে শিশুরা ক্ষুধার যন্ত্রণায় কান্নাকাটির রোল বসিয়ে দিয়েছে। বয়স্করাও ক্ষুধায় কাতর হয়ে হারিয়াখালী এলাকায় রাস্তার পাশে কড়া রোদ মাথায় নিয়ে বসে ছিলেন। সকাল ১০ টার পর আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ও দেশি-বিদেশি এনজিওর কর্মীরা উপস্থিত হয়ে শুকনো খাবার ও পানি বিলি-বন্টন করেন। প্রয়োজনের তুলনায় খাদ্য ও চিকিৎসাসেবা অপ্রতুল হওয়ায় তা নিয়ে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। বেশ কয়েক দিন না খেয়ে থাকা এসব রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুকে বেশ ধৈর্যহীন হতে দেখা যায়। খাবার ও পানি দেখলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ার অবস্থা তাদের।
রাখাইনের বুসিডং এলাকার আবুল হাসেম জানান, তারা ১১ দিন আড়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন, নদী নালা, খাল বিল ও পাহাড়- পর্বত পার করে স্থানীয় দালালদের সহযোগিয় বাংলাদেশে ঢুকেন। তিনি আরো জানান, মিয়ানমার সেনা ও পুলিশ তাঁদের এনভিসি কার্ড দিচ্ছেন। পাশাপাশি তাঁরা বলছেন রোহিঙ্গাদের কোন সম্পদ দাবী করতে পারবেনা । সেনারা যেখানে নিয়ে যান, রোহিঙ্গাদের সেখানে যেতে হবে। এ কার্ড ছাড়া বাহির হলে রোহিঙ্গাদের চলে অমানবিক অত্যাচার। একই এলাকার খালেক হোসেন জানান, প্রতিটি পরিবার হতে সপ্তাহে তিন দিন করে বিনা পয়সায় মিয়ানমার পুলিশ ও সেনাদের কুলি বা শ্রম ব্যায় করতে হয়। অনিহা প্রকাশ করলে ভয়াবহ অত্যাচার চালায়। তাই তারা নিরপদ দেশ হিসেবে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন। পালিয়ে আসা একাধিক রোহিঙ্গারা জানান, মিয়ানমার সেনাবাহনী এখনো তাঁদের ধরণ পরিবর্তন করে নির্যাতন চালাচ্ছে। তারা আরো জানান, মিয়ানমার সেনারা রোহিঙ্গাদের বাধ্য করে এনভিসি (ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড) কার্ড দিতে বাধ্য করছেন। এ কার্ড নিতে অনিহা করলে নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়েদেন সেনারা।
টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল এসএম আরিফুল ইসলাম জানান, মিয়ানমার থেকে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের তাদের তল্লাশি শেষে ক্যাম্পগুলোতে পাঠানো হচ্ছে।