ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) অর্থনীতি বিভাগের ইন্টারসেশনের খেলা চলাকালীন দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন ঐ বিভাগের একদল শিক্ষার্থী।
শনিবার (১২ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে এক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় হামলাকারীদের শাস্তি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তারা হলেন অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও জুলাই ৩৬ হল ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি আফসানা পারভীন টীনা, একই বর্ষের নাহিদ হাসান, মিনহাজ, সৌরভ দত্ত, পান্না এবং ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সাইফুল ইসলাম, হৃদয়, রাকিব, অজিল, মশিউর রহমান রিয়নসহ আরও ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা হলেন আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং জাতীয় দৈনিক আমাদের বার্তার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক আরিফ বিল্লাহ, একই বিভাগের একই সেশনের শিক্ষার্থী ও জাতীয় দৈনিক আজকালের খবরের প্রতিনিধি রবিউল আলম এবং কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের একই সেশনের শিক্ষার্থী ও বার্তা২৪-এর ক্যাম্পাস প্রতিনিধি নুরে আলম।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ফুটবল মাঠে অর্থনীতি বিভাগের আন্তঃসেশন খেলাকে কেন্দ্র করে নিজেদের ভিতরে হাতাহাতিতে জড়ান বিভাগটির সিনিয়র ও জুনিয়ররা। এসময় তাদের মারামারির ভিডিও করতে গেলে আরিফ বিল্লাহ’র (সাংবাদিক) মোবাইল কেড়ে নেন তাদের এক সহপাঠী আফসানা পারভিন তিনা। একইসময় দলবেঁধে তেড়ে এসে সেই সাংবাদিককে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন বিভাগটির অন্য শিক্ষার্থীরা। এসময় আশেপাশের কয়েকজন ঠেকাতে গেলেও দফায় দফায় মারধর ও ঘিরে ফেলেন তারা।
একইভাবে আরেক সাংবাদিক নুর ই আলম মারধরের ভিডিও করতে গেলে তাকেও মারধর করেন তারা। পরবর্তীতে একইভাবে আরেক সাংবাদিক রবিউল আলমের উপরেও ঝাঁপিয়ে পড়েন তারা। এভাবে পরপর তিনজন সাংবাদিককে দফায় দফায় মারধর করা হয়। ঘটনার পরবর্তীতে সেখানে অন্য সাংবাদিকরা সমাধানের জন্য গেলে তাদের সাথেও বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে কয়েকজন সাংবাদিক উত্তেজিত অবস্থায় তাদের দিকে গেলে তাদেরকেও মারধর করা হয়।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক আরিফ বিল্লাহ জানান, ‘‘ফুটবল মাঠে দুই পক্ষের হাতাহাতির ঘটনা আমি মোবাইলে ভিডিও করছিলাম। এসময় আফসানা পারভীন টীনা আমার ফোন কেড়ে নেয়। কারণ জানতে চাইলে ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী একযোগে আমাকে ঘিরে ধরে গালিগালাজ ও মারধর করে।’’
নূরে আলম বলেন, ‘‘আমি ভিডিও করতে গেলে ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী আমাকে ভিডিও বন্ধ করতে বলে এবং মারার জন্য এগিয়ে আসে। পরে কয়েকজন এসে আমাকে উদ্ধার করে। কিছুক্ষণ পর অন্য সাংবাদিকরা আসলে তাদেরও হামলার শিকার হতে হয়। আমরা এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িতদের বিচার এবং প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চাই।’’
রবিউল আলম জানান, ‘‘বিকেলে মাঠে মারামারির খবর শুনে ভিডিও করতে গেলে দেখি আরিফ বিল্লাহকে ঘিরে ধরা হয়েছে। আমি ভিডিও করার চেষ্টা করলে কয়েকজন মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং আমাকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারে। নাহিদ হাসান পেটে লাথি মেরে আমাকে মাটিতে ফেলে দেয়। পরে সমন্বয়ক সুইট, সহ-সমন্বয়ক রব্বানীসহ কয়েকজন আমাকে উদ্ধার করে। এর আগে ২০ এপ্রিলের একটি সংবাদের জেরে আমাকে হুমকিও দিয়েছিলেন নাহিদ।’’
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী ইশতিয়াক ফেরদৌস ইমন বলেন, ‘‘হট্টগোল শুনে এগিয়ে গিয়ে দেখি কয়েকজন মিলে একজন সাংবাদিককে মারছে। আরেকজন সাংবাদিক ভিডিও করলে তাকেও আক্রমণ করা হয় এবং একজন তার পেটে লাথি মারে।’’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক এস এম সুইট, রোভার খন্দকার সায়েম এবং ডিবিসি প্রতিনিধি নাজমুল হোসেন। তাঁরা জানান, তাদের সামনেই আরিফ বিল্লাহ ও রবিউল আলমকে মারধর করা হয় এবং পরে আহতদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নেওয়া হয়।
অভিযুক্তদের মধ্যে নাহিদ হাসান বলেন, ‘‘আমাদের বিভাগের খেলা চলাকালে নিজেদের মধ্যে ঝামেলা হয়, পরে সেটা সমাধান হয়ে যায়। প্রথমে তিনি সাংবাদিককে মারার কথা অস্বীকার করেন। কিন্তু পরবর্তীতে স্বীকার করেন যে, ‘‘আমার গলা ধরেছে তখন আমি কি করব?’’ এ বলেই কল কেটে দেন।
এদিকে অভিযুক্ত আফসানা পারভীন তিনা ঘটনা স্থলে আহত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে ভর্তি আছেন। তার বক্তব্য নিতে যাওয়া হলে তার সহপাঠীরা জানান, সে এখন বক্তব্য দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই।
তবে এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. সাহেদ আহম্মেদ বলেন, “ছাত্রীর গায়ে কোন আঘাত লাগার চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে আতঙ্কগ্রস্ত বা প্যানিক অ্যাটাকে এমন হতে পারে।”
অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি ড. পার্থ সারথি লস্কর বলেন, ‘‘বিভাগের আন্তঃশিক্ষাবর্ষ ফুটবল খেলা চলছিল। শুনেছি মারামারির ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মোঃ শাহীনুজ্জামান বলেন, “এই বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামান বলেন, আমি ঘটনাটি শোনার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে সবাইকে নিবৃত করি। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম. এয়াকুব আলী বলেন,
“সাংবাদিকদের সঙ্গে এ ধরনের অবমাননাকর আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রশাসনকে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানালে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সাংবাদিকদের কারণেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও ইতিবাচক চিত্র দেশব্যাপী পৌঁছে যাচ্ছে। তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে সম্মান ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় প্রশাসনের সক্রিয় সহযোগিতা থাকা উচিত এবং এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।