শিরোনাম :
Logo যবিপ্রবিতে শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষা যাত্রায় শুভেচ্ছা ও প্রত্যাবর্তনে সংবর্ধনা- ২০২৫ অনুষ্ঠিত Logo প্রধানমন্ত্রী পদে একজন ১০ বছরের বেশি নয়, একমত সব দল Logo থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়াকে যুদ্ধ বন্ধ করতে বললেন ট্রাম্প Logo চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশক নিধন কর্মসূচি শুরু জনসচেতনতা বাড়াতে লিফলেট বিতরণের উদ্যোগ, পুরো পৌর এলাকায় চলবে স্প্রে কার্যক্রম Logo এক বছরের ব্যবধানে বিএনপির আয় বেড়েছে ১৪ গুণ Logo পানিতে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু Logo দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ড Logo হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে এশিয়া কাপের ১৭তম আসর শুরু করবে বাংলাদেশ Logo ইবিতে শিক্ষার্থীকে হুমকির অভিযোগ, মানহানির পাল্টা অভিযোগ দায়ের সহ-সমন্বয়কের Logo কয়রায় যৌথ অভিযানে জব্দকৃত ৭০০ কেজি কাকড়া অবমুক্ত

ভারতের সবচেয়ে ১০ দরিদ্র ক্রিকেটার !

  • amzad khan
  • আপডেট সময় : ০২:১৭:২৩ অপরাহ্ণ, রবিবার, ১৬ জুলাই ২০১৭
  • ৭৩৬ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক:

ভারতের ক্রিকেটে তারা এখন সফল ক্রিকেটার। পেয়েছেন তারকা খ্যাতি, অর্থ-বিত্ত অর্জনেও পিছিয়ে নেই কিন্তু কেমন ছিল তাদের শুরুর দিকে গল্পটা। কতটা দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে পাড়ি দিতে হয়েছে এ পথ! চলুন জেনে নিই তাদের গল্প-

১.পাঠান ব্রাদার্স: ভারতীয় ক্রিকেটে পাঠান ভাইদের ছোটবেলা কেটেছে মসজিদে। যে মসজিদে মাত্র মাসিক ২৫০ টাকায় খাদিমের কাজ করতে ইরফান ও ইউসুফের বাবা। পরে একটি ঘর নিলেও সেখানেই থাকতেন পরিবারের পাঁচজন। নতুন জুতো কেনার পয়সা না-থাকায় পুরনো জুতো কিনে তা নিজেই সেলাই করতেন ইরফান। বাকিটা ইতিহাস, মাত্র ১৯ বছর বয়সে টেস্ট অভিষেক হয় ইরফানের।

২০০৬-এ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্টের প্রথম ওভারে হ্যাটট্রিক করে নজির গড়েন ভারতের বাঁ-হাতি সুইং বোলার। ২৯টি টেস্ট, ১২০টি ওয়ান ডে এবং ২৪টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন ইরফান। বড় ভাই ইউসুফ দেশের হয়ে ৫৭টি ওয়ানডে এবং ২২টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন। পরে ভদোদরায় বাংলো বানান পাঠান ব্রাদার্স।

২. মুনাফ প্যাটেল: গুজরাটের ইকহারে জন্ম মুনাফ মুসা প্যাটেলের ছোটবেলা কেটেছে অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে। বাবা ছিলেন একজন দিনমজুর। শিশুশ্রমিক হিসেবে ভারতীয় দলের প্রাক্তন পেসার দৈনিক ৩৫ টাকা বেতনে কাজ করতেন টাইলস ফ্যাক্টরিতে। তিন বেলা পেট ভরে খেতে না-পাওয়া মুনাফের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন অবাস্তব। জুতো কেনার পয়সা না-থাকায় চপ্পল পরেই টেনিস বলে খেলতেন তিনি। গ্রামের এক ব্যক্তি এ দেখে মুনাফকে জুতো কিনে দেন এবং বরোদার এক ক্রিকেট ক্লাবে ওকে ভর্তি করার ব্যবস্থা করেন।

পরে এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনে ট্রায়ালে সুযোগ পান মুনাফ। সেখানে কিংবদন্তি অজি পেসার ডেনিস লিলির তত্ত্বাবধানে প্র্যাকটিস করেন বরোদার ডানহাতি। পের স্টিভ ওয়াহ মুনাফের জন্য সচীনের কাছে দরবার করেন। ২০০৬-এ টেস্ট অভিষেক হয় মুনাফের। দেশের হয়ে ১৩টি টেস্ট ও ৭০টি ওয়ান ডে খেলেছেন তিনি।

৩. জহির খান: কপিল দেবের পর একমাত্র ভারতীয় পেসার যাঁর দখলে তিনশোর বেশি টেস্ট উইকেট রয়েছে। কিন্তু জহিরের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার রাস্তা খুব একটা মসৃণ ছিল না। মুম্বাই ন্যাশানাল ক্রিকেট ক্লাবে সুযোগ পাওয়ায় জহিরকে আন্টির সঙ্গে মুম্বাইয়ে এক হাসপাতালের একটি বেডের মধ্য দিন কাটাতে হয়। কারণ তাঁর আন্টি হাসপাতালে সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন৷

দু-বেলা খাবারের পয়সাও ছিল না জহিরের কাছে। না-খেয়ে সকালে প্র্যাকটিসে যেতেন জহির। মেন্টর সুধীর নায়েক জহিরকে মাসে পাঁচ হাজার টাকার কাজ দেন। তা দিয়েই সমস্ত খরচ চালাতেন ভারতীয় বোলিংয়ের ‘জ্যাক’। ২০০০ সালে কেনিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক হয় ভারতীয় ক্রিকেটে সেরা বাঁ-হাতি পেসারের। ভারতের হয়ে ৯২টি টেস্ট এবং ২০০টি ওয়ান ডে খেলেছেন জাহির।
৪. রবীন্দ্র জাদেজা: সৌরাষ্ট্রে জন্ম রবীন্দ্র অনিরুদ্ধ জাদেজার বাবা একটি বেসরকারি সংস্থায় সিকিউরিট গার্ডের কাজ করতেন। দ্ররিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করা জাদেজার ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ছিল অলীক। তবুও চেষ্টা চালিয়ে যান কিন্তু ২০০৫-এ দুর্ঘটনায় মায়ের মৃত্যুর পর ক্রিকেট ছেড়ে দিতে চেয়েছিলে জাদেজ। ৷ কিন্তু বোন পার্টটাইম কাজ করে তাঁর খেলার খরচ চালাতেন। ২০০৮-এ বিরাট কোহলির নেতৃত্বে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সহ-অধিনায়ক ছিলেন জাদেজা। পরের বছরই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে অভিষেক হয় বাঁ-হাতি অল-রাউন্ডারের। এখন টিম ইন্ডিয়ার বিরাটের দলে অন্যতম সদস্য তিনি।
৫. বিনোদ কাম্বলি: মুম্বইয়ের বস্তি থেকে ক্রিকেটের রাজপথে আগমন ঘটে কাম্বলির। বাবা ছিলেন এক সামান্য মেকানিক। মাসে যাঁর আয় ছিল মাত্র ৫০০ টাকা। একটি ঘরের ১৮জন থাকত। শোনা যায় ব্যাট কেনার জন্য চুরিও করেছিলেন কাম্বলি। কিন্তু চমক ঘটে স্কুল ক্রিকেটে সারদাশ্রম বিদ্যামন্দিরের হয়ে সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে তাঁর ৬৬৪ রানের পার্টনারশিপ শুধু ভারতেই নয়, ক্রিকেটবিশ্বেও নজর কাড়ে। এর পর মাসে ২০০ টাকা পেতেন কাম্বলি। যা দিয়ে ক্রিকেটের খরচ চালাতেন সচিনের বন্ধু। ১৯৯১-এ শারজায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথমবার ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপান কাম্বলি। দু’ বছর পর কলকাতায় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক মুম্বইয়ের প্রতিশ্রুতিময় এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানের। দেশের হয়ে ১৭টি টেস্ট এবং ১০৪টি ওয়ান ডে খেলেন তিনি।

৬. মুহাম্মদ শামি: উত্তরপ্রদেশের আমরোহা জেলার সাহসপুর নামে এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম শামির বাবা ছিলেন এক দরিদ্র কৃষক। ক্রিকেটের প্রতি ছেলের আগ্রহ দেখে গ্রাম থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে মোরাদাবাদে এক ক্রিকেট কোচিং সেন্টারে তাঁকে ভর্তি করেন বাবা। উত্তরপ্রদেশে অনূর্ধ্ব ১৯ দলে সুযোগ না পাওয়ায় শামিকে কলকাতায় পাঠান কোচ বদরুদ্দিন সিদ্দিকি। এখান থেকেই প্রথমে বাংলা এবং ২০১৬ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজে ভারতীয় দলে ডাক পান শামি। যিনি এখন টিম ইন্ডিয়ার পেস বোলিংয়ের মূল সম্পদ।

৭. হরভজন সিং: ভারতের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট প্রাপক ভাজ্জি বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের আর্থিক হাল ধরতে কানাডায় ট্রাক ড্রাইভার হওয়ার কথা ভেবেছিলেন। ১৯৯৮-এ দেশের হয়ে টেস্ট অভিষেক হলেও প্রথম আটটি টেস্টের পর দল থেকে বাদ পড়েছিলেন। কিন্তু ২০০১-এ অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ফের ভারতীয় দলে ডাক পান হরভজন। বাকিটা ইতিহাস, কলকাতা টেস্টে তাঁর হ্যটট্রিক-সহ ১৩টি উইকেট নেন ভাজ্জি। চেন্নাইয়ে পরের টেস্টে ২০টি অজি উইকেটের মধ্যে ১৫টিই নেন টার্বুনেটর।

৮. বীরেন্দ্র সেহওয়াগ: নজফগড়ের নবাব বলে পরিচিত সেহওয়াগ একান্নবর্তী পরিবারে বড় হয়েছেন। ৫০ জনের বেশি লোক এক সঙ্গে থাকতেন। সেহওয়াগের বাবার গমের ব্যবসা ছিল। বাবা চাইতেন সেহওয়াগ বড় হয়ে এই ব্যবসা দেখুক। কিন্তু বীরুর তা পছন্দ ছিল না। প্রায় ৮৪ কিলোমিটার দূরে ক্রিকেট খেলতে যেতেন। সচীন টেন্ডুলকারের ব্যাটিং টিভিতে দেখে প্র্যাকটিস করতেন বীরু। বকিটা ইতিহাস। দেশের হয়ে ১০৪টি টেস্ট এবং ২৫১টি ওয়ান ডে খেলেছেন সেহওয়াগ। ১৯৯৯-এ মোহালিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজে প্রথমবার ভারতীয় দলের জার্সি পড়েন বীরু।

৯. উমেশ যাদব: ভারতীয় দলের পেসার উমেশের বাবা ছিলেন একজন খনি শ্রমিক। ক্রিকেট খেলার মতো অর্থ ছিল না।
ছোটবেলায় টেনিস বলেই খেলতেন উমেশ। কিন্তু বড় হয়ে পুলিশের চাকরি করার ইচ্ছে ছিল বিদর্ভের এই ডানহাতি পেসারের। কিন্তু ট্রায়ালে সুযোগ পাওয়ার পর ধীরে ধীরে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি। ২০১০-এ ভারতের জিম্বাবুয়ে সফরের দলে সুযোগ পান উমেশ। পরের বছর ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক হয় ভারতীয় দলের এই স্পিডস্টারের।

১০. রমেশ পওয়ার: দেশের হয়ে ২টি টেস্ট ও ৩১টি ওয়ান ডে খেলা মুম্বাইয়ের এই অফ-স্পিনার জীবন সংগ্রাম অন্যদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার মত। ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ায় পর রমেশের বোন তাঁকে সাহায্য করেন। মোটা থাকার জন্য ক্যারিয়ারের শুরুতে অনেক কটুক্তি শুনতে হয়েছিল রমেশকে। কিন্তু ২০০৪-এ ভারতের পাকিস্তান সফরে জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পর নিঃশব্দে সবকিছুর জবাব দেন মুম্বইয়ের এই অফ-স্পিনার।

সূত্র: কলকাতা টোয়েন্টিফোর

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

যবিপ্রবিতে শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষা যাত্রায় শুভেচ্ছা ও প্রত্যাবর্তনে সংবর্ধনা- ২০২৫ অনুষ্ঠিত

ভারতের সবচেয়ে ১০ দরিদ্র ক্রিকেটার !

আপডেট সময় : ০২:১৭:২৩ অপরাহ্ণ, রবিবার, ১৬ জুলাই ২০১৭

নিউজ ডেস্ক:

ভারতের ক্রিকেটে তারা এখন সফল ক্রিকেটার। পেয়েছেন তারকা খ্যাতি, অর্থ-বিত্ত অর্জনেও পিছিয়ে নেই কিন্তু কেমন ছিল তাদের শুরুর দিকে গল্পটা। কতটা দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে পাড়ি দিতে হয়েছে এ পথ! চলুন জেনে নিই তাদের গল্প-

১.পাঠান ব্রাদার্স: ভারতীয় ক্রিকেটে পাঠান ভাইদের ছোটবেলা কেটেছে মসজিদে। যে মসজিদে মাত্র মাসিক ২৫০ টাকায় খাদিমের কাজ করতে ইরফান ও ইউসুফের বাবা। পরে একটি ঘর নিলেও সেখানেই থাকতেন পরিবারের পাঁচজন। নতুন জুতো কেনার পয়সা না-থাকায় পুরনো জুতো কিনে তা নিজেই সেলাই করতেন ইরফান। বাকিটা ইতিহাস, মাত্র ১৯ বছর বয়সে টেস্ট অভিষেক হয় ইরফানের।

২০০৬-এ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্টের প্রথম ওভারে হ্যাটট্রিক করে নজির গড়েন ভারতের বাঁ-হাতি সুইং বোলার। ২৯টি টেস্ট, ১২০টি ওয়ান ডে এবং ২৪টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন ইরফান। বড় ভাই ইউসুফ দেশের হয়ে ৫৭টি ওয়ানডে এবং ২২টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন। পরে ভদোদরায় বাংলো বানান পাঠান ব্রাদার্স।

২. মুনাফ প্যাটেল: গুজরাটের ইকহারে জন্ম মুনাফ মুসা প্যাটেলের ছোটবেলা কেটেছে অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে। বাবা ছিলেন একজন দিনমজুর। শিশুশ্রমিক হিসেবে ভারতীয় দলের প্রাক্তন পেসার দৈনিক ৩৫ টাকা বেতনে কাজ করতেন টাইলস ফ্যাক্টরিতে। তিন বেলা পেট ভরে খেতে না-পাওয়া মুনাফের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন অবাস্তব। জুতো কেনার পয়সা না-থাকায় চপ্পল পরেই টেনিস বলে খেলতেন তিনি। গ্রামের এক ব্যক্তি এ দেখে মুনাফকে জুতো কিনে দেন এবং বরোদার এক ক্রিকেট ক্লাবে ওকে ভর্তি করার ব্যবস্থা করেন।

পরে এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনে ট্রায়ালে সুযোগ পান মুনাফ। সেখানে কিংবদন্তি অজি পেসার ডেনিস লিলির তত্ত্বাবধানে প্র্যাকটিস করেন বরোদার ডানহাতি। পের স্টিভ ওয়াহ মুনাফের জন্য সচীনের কাছে দরবার করেন। ২০০৬-এ টেস্ট অভিষেক হয় মুনাফের। দেশের হয়ে ১৩টি টেস্ট ও ৭০টি ওয়ান ডে খেলেছেন তিনি।

৩. জহির খান: কপিল দেবের পর একমাত্র ভারতীয় পেসার যাঁর দখলে তিনশোর বেশি টেস্ট উইকেট রয়েছে। কিন্তু জহিরের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার রাস্তা খুব একটা মসৃণ ছিল না। মুম্বাই ন্যাশানাল ক্রিকেট ক্লাবে সুযোগ পাওয়ায় জহিরকে আন্টির সঙ্গে মুম্বাইয়ে এক হাসপাতালের একটি বেডের মধ্য দিন কাটাতে হয়। কারণ তাঁর আন্টি হাসপাতালে সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন৷

দু-বেলা খাবারের পয়সাও ছিল না জহিরের কাছে। না-খেয়ে সকালে প্র্যাকটিসে যেতেন জহির। মেন্টর সুধীর নায়েক জহিরকে মাসে পাঁচ হাজার টাকার কাজ দেন। তা দিয়েই সমস্ত খরচ চালাতেন ভারতীয় বোলিংয়ের ‘জ্যাক’। ২০০০ সালে কেনিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক হয় ভারতীয় ক্রিকেটে সেরা বাঁ-হাতি পেসারের। ভারতের হয়ে ৯২টি টেস্ট এবং ২০০টি ওয়ান ডে খেলেছেন জাহির।
৪. রবীন্দ্র জাদেজা: সৌরাষ্ট্রে জন্ম রবীন্দ্র অনিরুদ্ধ জাদেজার বাবা একটি বেসরকারি সংস্থায় সিকিউরিট গার্ডের কাজ করতেন। দ্ররিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করা জাদেজার ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ছিল অলীক। তবুও চেষ্টা চালিয়ে যান কিন্তু ২০০৫-এ দুর্ঘটনায় মায়ের মৃত্যুর পর ক্রিকেট ছেড়ে দিতে চেয়েছিলে জাদেজ। ৷ কিন্তু বোন পার্টটাইম কাজ করে তাঁর খেলার খরচ চালাতেন। ২০০৮-এ বিরাট কোহলির নেতৃত্বে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সহ-অধিনায়ক ছিলেন জাদেজা। পরের বছরই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে অভিষেক হয় বাঁ-হাতি অল-রাউন্ডারের। এখন টিম ইন্ডিয়ার বিরাটের দলে অন্যতম সদস্য তিনি।
৫. বিনোদ কাম্বলি: মুম্বইয়ের বস্তি থেকে ক্রিকেটের রাজপথে আগমন ঘটে কাম্বলির। বাবা ছিলেন এক সামান্য মেকানিক। মাসে যাঁর আয় ছিল মাত্র ৫০০ টাকা। একটি ঘরের ১৮জন থাকত। শোনা যায় ব্যাট কেনার জন্য চুরিও করেছিলেন কাম্বলি। কিন্তু চমক ঘটে স্কুল ক্রিকেটে সারদাশ্রম বিদ্যামন্দিরের হয়ে সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে তাঁর ৬৬৪ রানের পার্টনারশিপ শুধু ভারতেই নয়, ক্রিকেটবিশ্বেও নজর কাড়ে। এর পর মাসে ২০০ টাকা পেতেন কাম্বলি। যা দিয়ে ক্রিকেটের খরচ চালাতেন সচিনের বন্ধু। ১৯৯১-এ শারজায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথমবার ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপান কাম্বলি। দু’ বছর পর কলকাতায় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক মুম্বইয়ের প্রতিশ্রুতিময় এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানের। দেশের হয়ে ১৭টি টেস্ট এবং ১০৪টি ওয়ান ডে খেলেন তিনি।

৬. মুহাম্মদ শামি: উত্তরপ্রদেশের আমরোহা জেলার সাহসপুর নামে এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম শামির বাবা ছিলেন এক দরিদ্র কৃষক। ক্রিকেটের প্রতি ছেলের আগ্রহ দেখে গ্রাম থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে মোরাদাবাদে এক ক্রিকেট কোচিং সেন্টারে তাঁকে ভর্তি করেন বাবা। উত্তরপ্রদেশে অনূর্ধ্ব ১৯ দলে সুযোগ না পাওয়ায় শামিকে কলকাতায় পাঠান কোচ বদরুদ্দিন সিদ্দিকি। এখান থেকেই প্রথমে বাংলা এবং ২০১৬ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজে ভারতীয় দলে ডাক পান শামি। যিনি এখন টিম ইন্ডিয়ার পেস বোলিংয়ের মূল সম্পদ।

৭. হরভজন সিং: ভারতের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট প্রাপক ভাজ্জি বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের আর্থিক হাল ধরতে কানাডায় ট্রাক ড্রাইভার হওয়ার কথা ভেবেছিলেন। ১৯৯৮-এ দেশের হয়ে টেস্ট অভিষেক হলেও প্রথম আটটি টেস্টের পর দল থেকে বাদ পড়েছিলেন। কিন্তু ২০০১-এ অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ফের ভারতীয় দলে ডাক পান হরভজন। বাকিটা ইতিহাস, কলকাতা টেস্টে তাঁর হ্যটট্রিক-সহ ১৩টি উইকেট নেন ভাজ্জি। চেন্নাইয়ে পরের টেস্টে ২০টি অজি উইকেটের মধ্যে ১৫টিই নেন টার্বুনেটর।

৮. বীরেন্দ্র সেহওয়াগ: নজফগড়ের নবাব বলে পরিচিত সেহওয়াগ একান্নবর্তী পরিবারে বড় হয়েছেন। ৫০ জনের বেশি লোক এক সঙ্গে থাকতেন। সেহওয়াগের বাবার গমের ব্যবসা ছিল। বাবা চাইতেন সেহওয়াগ বড় হয়ে এই ব্যবসা দেখুক। কিন্তু বীরুর তা পছন্দ ছিল না। প্রায় ৮৪ কিলোমিটার দূরে ক্রিকেট খেলতে যেতেন। সচীন টেন্ডুলকারের ব্যাটিং টিভিতে দেখে প্র্যাকটিস করতেন বীরু। বকিটা ইতিহাস। দেশের হয়ে ১০৪টি টেস্ট এবং ২৫১টি ওয়ান ডে খেলেছেন সেহওয়াগ। ১৯৯৯-এ মোহালিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজে প্রথমবার ভারতীয় দলের জার্সি পড়েন বীরু।

৯. উমেশ যাদব: ভারতীয় দলের পেসার উমেশের বাবা ছিলেন একজন খনি শ্রমিক। ক্রিকেট খেলার মতো অর্থ ছিল না।
ছোটবেলায় টেনিস বলেই খেলতেন উমেশ। কিন্তু বড় হয়ে পুলিশের চাকরি করার ইচ্ছে ছিল বিদর্ভের এই ডানহাতি পেসারের। কিন্তু ট্রায়ালে সুযোগ পাওয়ার পর ধীরে ধীরে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি। ২০১০-এ ভারতের জিম্বাবুয়ে সফরের দলে সুযোগ পান উমেশ। পরের বছর ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক হয় ভারতীয় দলের এই স্পিডস্টারের।

১০. রমেশ পওয়ার: দেশের হয়ে ২টি টেস্ট ও ৩১টি ওয়ান ডে খেলা মুম্বাইয়ের এই অফ-স্পিনার জীবন সংগ্রাম অন্যদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার মত। ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ায় পর রমেশের বোন তাঁকে সাহায্য করেন। মোটা থাকার জন্য ক্যারিয়ারের শুরুতে অনেক কটুক্তি শুনতে হয়েছিল রমেশকে। কিন্তু ২০০৪-এ ভারতের পাকিস্তান সফরে জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পর নিঃশব্দে সবকিছুর জবাব দেন মুম্বইয়ের এই অফ-স্পিনার।

সূত্র: কলকাতা টোয়েন্টিফোর