নজরুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ:সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী সালেহা ইসহাক সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আফছার আলীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ থাকলেও প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয়ভাবে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন সময় তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলন হলেও শেষ পর্যন্ত ‘বদলির আবেদন দিয়েছেন’ বলে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
অভিভাবকরা জানান, দীর্ঘ ৯ বছর ধরে একই বিদ্যালয়ে কর্মরত প্রধান শিক্ষক আফছার আলী প্রতিবার অভিযোগ উঠলে বদলির কথা বলে সময় ক্ষেপণ করেন। তবে অফিসসূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত তাঁর কোনো লিখিত বদলির আবেদন পাওয়া যায়নি। তিনি দাবি করলেও এর স্বপক্ষে কোনো স্মারক নম্বর বা তারিখ দিতে পারেননি।
গতকাল (বুধবার) অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে আফছার আলী উত্তেজিত হয়ে বলেন, “বহু হারামি ডিপার্টমেন্ট এটা। সব নষ্টের মূল এই ডিপার্টমেন্ট। উপরে চাপ, নিচে চাপ—তাও বদলি করায় না। বদলি হলে হয়তো এত ভালো প্রতিষ্ঠান আর পাবো না। তাও করায় না। তিনি আরও বলেন, আমি কাউকে দোষ দিই না, দোষ আমার ডিপার্টমেন্টের। তবে প্রতিবাদকারীরা বলছেন, এটি তাঁর পরিচিত কৌশল।যখনই অনিয়ম বা দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ হয়। তখনি তিনি মিথ্যা বদলির আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত রাখেন।
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকায় রয়েছে— শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর নানা রকম হয়রানি, নিয়মবহির্ভূতভাবে গাছ বিক্রি, অতিরিক্ত ছাত্রী ভর্তি, মাসিক বেতন বৃদ্ধি, প্রশংসাপত্র প্রদানে অর্থ নির্ধারণ, ছাত্রী নিবাস দখল, আইসিটি ল্যাব থেকে এসি অপসারণ, ফিডার স্কুল পরিচালনায় রেজুলেশন ও কমিটি না থাকা, নিম্নমানের টিফিন বিতরণ, পরীক্ষা পরিবর্তন করে অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা, এমনকি ধর্মীয় ও নৈতিক সীমানা অতিক্রম করে শিক্ষার্থীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগে আদালতের শাস্তি হিসেবে পাঁচ বছর অবনমনসহ প্রায় ১৫টি গুরুতর অভিযোগ।
এছাড়া প্রধান শিক্ষক আফছার আলী তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা প্রতিবাদ দমনে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আসছেন। এমনকি জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করে “ছাত্র আন্দোলন প্রতিরোধের নীলনকশা” তৈরি করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ডা. জান্নাত আরা হেনরীর নামও সংশ্লিষ্ট হিসেবে উঠে এসেছে। গত ২০২৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পিপলস নিউজ ২৪-এ প্রকাশিত দুটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে কোটি কোটি টাকার অবৈধ আর্থিক লেনদেনের চিত্র তুলে ধরা হয়।
এই বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও নাটোর জেলা শিক্ষা অফিসার রোস্তম আলী হেলালী জানান, “সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে। তবে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো প্রমানিত হয়েছে। প্রধান শিক্ষক আফছার আলীর শাস্তি চেয়ে সুপারিশও পাঠানো হয়েছে।
এদিকে রাজশাহী অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. আবদুর রশিদ বলেন, “আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর এমন কোনো তদন্ত প্রতিবেদন পাইনি। তবে ফাইলপত্র খতিয়ে দেখে জানাতে পারবো।
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ ও দীর্ঘ তদন্তের পরও প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতির পরিবেশ ও শিক্ষার পরিবেশ বিপর্যস্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন অভিভাবক ও সচেতন নাগরিকরা। তাঁরা দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ ও শাস্তি স্বরুপ বদলির দাবি জানিয়েছেন।