শিরোনাম :
Logo ইবিতে জুলাই বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আন্তঃবিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতা Logo স্বাস্থ্যসচেতন সমাজ গড়তে খুবি রোটার‌্যাক্ট ক্লাবের উদ্যোগ ‘আলোর আঁচল’ Logo সাঘাটায় থানায় এএসআইকে ছুরিকাঘাতকারী যুবকের পুকুর থেকে মরদেহ উদ্ধার Logo ঝিকুট ফাউন্ডেশনের সংবর্ধনা পেল ৩৮ মেধাবী শিক্ষার্থী Logo শহিদ ক্যাডেট একাডেমিতে শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগে পরিচালক ও শিক্ষক বিরুদ্ধে মামলা Logo কচুয়ার সাচারে মাদক বিরোধী গণমিছিল, মাদকমুক্ত সমাজ চান সচেতন মহল Logo বনানী থানা শ্রমিক পার্টির আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত: নুরুজ্জামান হীরা Logo মুজিববাদের অপতৎপরতা’র প্রতিবাদে ইবিতে বিক্ষোভ Logo ইবিতে জুলাই বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আন্তঃবিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতা Logo ইবিতে হঠাৎ বেড়েছে সাপের উপদ্রব, ঝুকিতে শিক্ষার্থীরা

ইবিতে হঠাৎ বেড়েছে সাপের উপদ্রব, ঝুকিতে শিক্ষার্থীরা

ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাসে সম্প্রতি আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে সাপের উপদ্রব। একের পর এক শিক্ষার্থীর চোখে পড়ছে বিষধর ও নির্বিষ সাপ, যার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে তীব্র আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা। তবে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, সাপের উপদ্রব বাড়লেও বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নেই কোনো অ্যান্টিভেনাম, যা শিক্ষার্থীদের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, একাডেমিক ভবনের আশপাশ, লেকপাড়, এবং ঝোপঝাড়পূর্ণ এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই সাপ দেখা যাচ্ছে বলে জানান শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে রাতের বেলায় ক্যাম্পাসে চলাফেরা করা অনেকটাই দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলে সাপের উপদ্রব ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত ১০–১২ দিন ধরে রুম, বারান্দা, ওয়াশরুম—সব জায়গায়ই প্রতিনিয়ত দেখা মিলছে বিষধর গোখরা সাপের। আতঙ্কিত হয়ে শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে ১০টিরও বেশি সাপ মেরে ফেলেছেন। তবে কয়েকটি সাপ রেসকিউও করা হয়েছে।”

হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ধারণা, এখনো অন্তত ৩০–৪০টি সাপ লুকিয়ে রয়েছে বিভিন্ন স্থানে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। রাতেও স্বস্তিতে ঘুমাতে পারছেন না অনেকেই। এদিকে, হল প্রশাসন এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও তারপরও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মো. রাশেদ ইসলাম বলেন, “হল হওয়ার কথা ছিল নিরাপদ আবাসস্থল, কিন্তু এখন তা সাপের বাসায় পরিণত হয়েছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নেই অ্যান্টিভেনাম কিংবা প্রশিক্ষিত চিকিৎসক।”

মো. আকিব হাসান পারভেজ জানান, “প্রথমে শুধু নিচতলায় দেখা গেলেও এখন সাপের বাচ্চা পাওয়া যাচ্ছে প্রতিটি ফ্লোরে। ব্লকজুড়ে চলাফেরা করছে সাপ। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”

অপু মিয়া বলেন, “প্রতিদিন সাপ ধরা পড়ছে। বারবার অভিযোগের পরও কার্যকর পদক্ষেপ নেই। সাপে কাটা রোগীকে দূরে নিতে হয়, যা প্রাণঘাতী হতে পারে।”

এবিষয়ে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে অ্যান্টিভেনামের পর্যাপ্ত মজুত রাখার পাশাপাশি তা প্রয়োগে অভিজ্ঞ একজন চিকিৎসক বা প্রশিক্ষিত ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে হবে। পাশাপাশি হলের আসেপাশে প্রতিটি ঝোপঝাড় ও পরিত্যক্ত স্থান নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। রাতের বেলা পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি, স্থায়ীভাবে সাপ প্রতিরোধে পরিবেশবান্ধব ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানিয়েছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. মো: ওয়াহিদুল হাসান জানান, “বর্তমানে চিকিৎসা কেন্দ্রে কোনো অ্যান্টিভেনোম নেই। পাশাপাশি অ্যান্টিভেনোম প্রয়োগে প্রযুক্তিগত সক্ষমতাও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিও নেই। এমন পরিস্থিতিতে সাপে কাটা কোনো রোগী এলে তাকে যত দ্রুত সম্ভব কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।”

তিনি আরও বলেন, “উপাচার্য মহোদয় চাইলে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে অ্যান্টিভেনোমের ব্যবস্থা করতে পারেন।

লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. গাজী মো. আরিফুজ্জামান খান বলেন, “আমি বিষয়টি জানার পরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। যেসব জায়গা দিয়ে সাপ আসতে পারে, সেসব প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি রুমে শিক্ষার্থীদের কার্বলিক অ্যাসিড সরবরাহ করা হয়েছে, যাতে সাপ রুমে প্রবেশ না করতে পারে। পাশাপাশি হলের ভেতরে ও বাইরে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।”

অ্যান্টিভেনম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বর্তমানে আমাদের চিকিৎসা কেন্দ্রে অ্যান্টিভেনম নেই। তবে এটি আনলেও সঠিকভাবে প্রয়োগ করার মতো প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও প্রশিক্ষিত জনবল আমাদের নেই। ভুলভাবে প্রয়োগ করলে তা আরও বিপজ্জনক হতে পারে। তাই অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটলে, আক্রান্ত শিক্ষার্থীকে দ্রুত সদর হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।”

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারী ব্যবহার করতে হবে এবং সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। এখন বর্ষাকাল, আর এই সময়েই সাধারণত সাপ বাচ্চা দেয়, ফলে উপদ্রব বাড়ে। আশা করি বর্ষা শেষে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।”

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

ইবিতে জুলাই বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আন্তঃবিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতা

ইবিতে হঠাৎ বেড়েছে সাপের উপদ্রব, ঝুকিতে শিক্ষার্থীরা

আপডেট সময় : ০৭:২০:১২ অপরাহ্ণ, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫

ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাসে সম্প্রতি আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে সাপের উপদ্রব। একের পর এক শিক্ষার্থীর চোখে পড়ছে বিষধর ও নির্বিষ সাপ, যার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে তীব্র আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা। তবে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, সাপের উপদ্রব বাড়লেও বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নেই কোনো অ্যান্টিভেনাম, যা শিক্ষার্থীদের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, একাডেমিক ভবনের আশপাশ, লেকপাড়, এবং ঝোপঝাড়পূর্ণ এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই সাপ দেখা যাচ্ছে বলে জানান শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে রাতের বেলায় ক্যাম্পাসে চলাফেরা করা অনেকটাই দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলে সাপের উপদ্রব ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত ১০–১২ দিন ধরে রুম, বারান্দা, ওয়াশরুম—সব জায়গায়ই প্রতিনিয়ত দেখা মিলছে বিষধর গোখরা সাপের। আতঙ্কিত হয়ে শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে ১০টিরও বেশি সাপ মেরে ফেলেছেন। তবে কয়েকটি সাপ রেসকিউও করা হয়েছে।”

হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ধারণা, এখনো অন্তত ৩০–৪০টি সাপ লুকিয়ে রয়েছে বিভিন্ন স্থানে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। রাতেও স্বস্তিতে ঘুমাতে পারছেন না অনেকেই। এদিকে, হল প্রশাসন এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও তারপরও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মো. রাশেদ ইসলাম বলেন, “হল হওয়ার কথা ছিল নিরাপদ আবাসস্থল, কিন্তু এখন তা সাপের বাসায় পরিণত হয়েছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নেই অ্যান্টিভেনাম কিংবা প্রশিক্ষিত চিকিৎসক।”

মো. আকিব হাসান পারভেজ জানান, “প্রথমে শুধু নিচতলায় দেখা গেলেও এখন সাপের বাচ্চা পাওয়া যাচ্ছে প্রতিটি ফ্লোরে। ব্লকজুড়ে চলাফেরা করছে সাপ। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”

অপু মিয়া বলেন, “প্রতিদিন সাপ ধরা পড়ছে। বারবার অভিযোগের পরও কার্যকর পদক্ষেপ নেই। সাপে কাটা রোগীকে দূরে নিতে হয়, যা প্রাণঘাতী হতে পারে।”

এবিষয়ে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে অ্যান্টিভেনামের পর্যাপ্ত মজুত রাখার পাশাপাশি তা প্রয়োগে অভিজ্ঞ একজন চিকিৎসক বা প্রশিক্ষিত ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে হবে। পাশাপাশি হলের আসেপাশে প্রতিটি ঝোপঝাড় ও পরিত্যক্ত স্থান নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। রাতের বেলা পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি, স্থায়ীভাবে সাপ প্রতিরোধে পরিবেশবান্ধব ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানিয়েছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. মো: ওয়াহিদুল হাসান জানান, “বর্তমানে চিকিৎসা কেন্দ্রে কোনো অ্যান্টিভেনোম নেই। পাশাপাশি অ্যান্টিভেনোম প্রয়োগে প্রযুক্তিগত সক্ষমতাও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিও নেই। এমন পরিস্থিতিতে সাপে কাটা কোনো রোগী এলে তাকে যত দ্রুত সম্ভব কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।”

তিনি আরও বলেন, “উপাচার্য মহোদয় চাইলে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে অ্যান্টিভেনোমের ব্যবস্থা করতে পারেন।

লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. গাজী মো. আরিফুজ্জামান খান বলেন, “আমি বিষয়টি জানার পরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। যেসব জায়গা দিয়ে সাপ আসতে পারে, সেসব প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি রুমে শিক্ষার্থীদের কার্বলিক অ্যাসিড সরবরাহ করা হয়েছে, যাতে সাপ রুমে প্রবেশ না করতে পারে। পাশাপাশি হলের ভেতরে ও বাইরে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।”

অ্যান্টিভেনম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বর্তমানে আমাদের চিকিৎসা কেন্দ্রে অ্যান্টিভেনম নেই। তবে এটি আনলেও সঠিকভাবে প্রয়োগ করার মতো প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও প্রশিক্ষিত জনবল আমাদের নেই। ভুলভাবে প্রয়োগ করলে তা আরও বিপজ্জনক হতে পারে। তাই অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটলে, আক্রান্ত শিক্ষার্থীকে দ্রুত সদর হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।”

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারী ব্যবহার করতে হবে এবং সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। এখন বর্ষাকাল, আর এই সময়েই সাধারণত সাপ বাচ্চা দেয়, ফলে উপদ্রব বাড়ে। আশা করি বর্ষা শেষে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।”