শতবর্ষী মাঠে নির্মাণসামগ্রী, হারিয়ে যাচ্ছে খেলাধুলা

  • নীলকন্ঠ অনলাইন নীলকন্ঠ অনলাইন
  • আপডেট সময় : ১২:১৯:০৬ অপরাহ্ণ, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
  • ৭০৮ বার পড়া হয়েছে
শরীয়তপুরে একটি বিদ্যালয়ের শত বছর পুরনো খেলার মাঠ দখল করে সড়ক নির্মাণের সামগ্রী রাখা হয়েছে। এতে খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। নির্মাণসামগ্রী দ্রুত সরানো না হলে খেলার মাঠটি অনুপযোগী হয়ে পড়বে এমন আশংকা তাদের।বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন- অনুমতি ছাড়াই কে-বা কারা মালামালগুলো রেখেছেন; এ বিষয়ে জানেন না তারা।

স্থানীয় ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে সদর উপজেলার রুদ্রকর নীলমনি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে অদূরেই খেলার জন্য একটি মাঠ তৈরি করেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মাঠটি তুলনামূলক বড় এবং সুন্দর হওয়ার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আশেপাশের বেশ কয়েকটি এলাকার খেলোয়াড়রা এখানেই খেলাধুলা করেন।

সম্প্রতি মাঠটির বড় একটি অংশ দখলে নিয়ে রাতের আধারে কোনো এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন সড়ক নির্মাণের পাথরচূর্ণ এবং পিচ ফেলে রেখে যান। এতে মাঠটিতে বন্ধ হয়ে যায় খেলাধুলা। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত মাঠটি থেকে নির্মাণ সামগ্রী অপসারণ করে খেলার উপযোগী করার দাবি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও খেলোয়াড়দের।

সরেজমিনে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি জায়গায় স্তূপ করে রাখা হয়েছে পাথরসহ সড়ক নির্মাণের পিচ। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা নির্মাণসামগ্রী আর পড়ে থাকা পিচের কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছে স্কুল শিক্ষার্থী ও স্থানীয় খেলোয়াড়দের খেলাধুলা। শিশুদের অনেকে খেলতে গেলে পড়ে থাকা পাথর পাড়ে লেগে অনেকের কাটছে হাত-পা। এতে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে তাদের খেলাধুলা।দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সামী বলেন, আমাদের মাঠটি বিদ্যালয়ের পাশেই। এখানে কারা যেন পাথর ফেলে রেখেছে। এ জন্য আমরা খেলতে পারছি না। আমরা চাই মাঠটি থেকে পাথরগুলো সরানো হোক।

মেহেদী হাসান নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের একটিই মাঠ। আমরা প্রতিদিন বিকালে সেখানে খেলাধুলা করি। এখন মাঠটিতে পিচ ফালানোয় খেলাধুলার পরিবেশ নেই। খেলার সময়টায় এখন মোবাইল নিয়েই সময় কাটাই। দ্রুত সময়ের মধ্যে মালামাল সরানোর দাবি জানাই।

এই অঞ্চলে একটি মাত্র খেলার মাঠ। দীর্ঘদিন ধরে এখানেই খেলাধুলা করে কয়েকটি এলাকার খেলোয়াড়রা। আর খেলার মাঠের এমন দশায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় খেলোয়াড়রা। রোহান খান নামে স্থানীয় এক খেলোয়াড় বলেন, আমাদের এই মাঠটি অনেক পুরাতন। প্রতিদিন বন্ধুদের নিয়ে খেলাধুলা করি। এখন সেখানে পাথর রাখা হয়েছে। ছোট ছোট পাথরের কারণে আমার পা কেটে গিয়েছে এখন আর খেলতে পারি না।নাহিদ হাসান নামে আরেক খেলোয়াড় বলেন, শত বছরের এই মাঠে নবীন প্রবীণ সবাই খেলাধুলা করে। তবে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে পাথর ও অন্যান্য মালামাল রাখায় বর্তমানে খেলা বন্ধ রয়েছে। মাঝে খেলার চেষ্টা করা হয়েছিলো তবে পড়ে থাকা পাথরে অনেকের হাত-পা কেটে যায়। তাই এখন আর কেউ খেলতে আসে না।

তিনি আরও বলেন, এমনিতেই দিন দিন খেলাধুলার মান কমে গিয়ে অনেকেই মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ছে। তার উপর যদি মাঠের এই দশা বানিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয় তাহলে আমাদের খেলাধুলা প্রশিক্ষণের আর কোনো মাঠ রইলো না। আমরা সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, অতি দ্রুত এই প্রাচীনতম মাঠটি বাঁচানো হোক।

পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলার নেই বিকল্প। আর মাঠে খেলতে না পারলে মোবাইল আসক্তিতে জড়াবে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। তাই নষ্ট না হওয়ার আগেই দ্রুত নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে মাঠটি শিক্ষার্থীদের খেলার উপযোগী করার দাবি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা) মনিরুল ইসলামের।

তিনি বলেন, আমাদের ঐতিহাসিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য একটি মাঠ রয়েছে। সেখানে তারা বিকালে খেলাধুলা ও বিচরণ করে। সম্প্রতি মাঠে কে বা কারা সড়ক নির্মাণের জন্য নির্মাণ সামগ্রী রেখেছেন। এজন্য ছেলেমেয়েদের খেলাধুলা বন্ধ রয়েছে। বর্তমান সময়ে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই সময়ে অনেকেই মাদকাসক্ত ও মোবাইল গেমসে আসক্ত হয়ে পড়ছে।তিনি আরও বলেন, আমরা চাই দ্রুত মাঠটি পূর্বের ন্যায় ফিরিয়ে আনা হোক, আমরা আমাদের বাচ্চাদের নিয়ে সেখানে খেলাধুলা চালিয়ে যেতে চাই।

জানতে চাইলে রুদ্রকর নীলমনি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ওই মাঠে খেলাধুলা করে। সম্প্রতি মাঠটি ফাঁকা পেয়ে পাথর পিচ ফেলে রেখে গেছে। এ বিষয়ে আমাদের জানানো হয়নি এমনকি অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। আমরা দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইলোরা ইয়াসমিন বলেন, খেলার মাঠ নষ্ট করার অধিকার নেই কারো। এ বিষয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হবে। যারাই মাঠে নির্মাণ সামগ্রী রেখেছেন তাদের সরিয়ে নেয়ার জন্য বলা হবে। যদি তারা নির্দেশ না মানেন তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

শতবর্ষী মাঠে নির্মাণসামগ্রী, হারিয়ে যাচ্ছে খেলাধুলা

আপডেট সময় : ১২:১৯:০৬ অপরাহ্ণ, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
শরীয়তপুরে একটি বিদ্যালয়ের শত বছর পুরনো খেলার মাঠ দখল করে সড়ক নির্মাণের সামগ্রী রাখা হয়েছে। এতে খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। নির্মাণসামগ্রী দ্রুত সরানো না হলে খেলার মাঠটি অনুপযোগী হয়ে পড়বে এমন আশংকা তাদের।বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন- অনুমতি ছাড়াই কে-বা কারা মালামালগুলো রেখেছেন; এ বিষয়ে জানেন না তারা।

স্থানীয় ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে সদর উপজেলার রুদ্রকর নীলমনি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে অদূরেই খেলার জন্য একটি মাঠ তৈরি করেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মাঠটি তুলনামূলক বড় এবং সুন্দর হওয়ার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আশেপাশের বেশ কয়েকটি এলাকার খেলোয়াড়রা এখানেই খেলাধুলা করেন।

সম্প্রতি মাঠটির বড় একটি অংশ দখলে নিয়ে রাতের আধারে কোনো এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন সড়ক নির্মাণের পাথরচূর্ণ এবং পিচ ফেলে রেখে যান। এতে মাঠটিতে বন্ধ হয়ে যায় খেলাধুলা। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত মাঠটি থেকে নির্মাণ সামগ্রী অপসারণ করে খেলার উপযোগী করার দাবি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও খেলোয়াড়দের।

সরেজমিনে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি জায়গায় স্তূপ করে রাখা হয়েছে পাথরসহ সড়ক নির্মাণের পিচ। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা নির্মাণসামগ্রী আর পড়ে থাকা পিচের কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছে স্কুল শিক্ষার্থী ও স্থানীয় খেলোয়াড়দের খেলাধুলা। শিশুদের অনেকে খেলতে গেলে পড়ে থাকা পাথর পাড়ে লেগে অনেকের কাটছে হাত-পা। এতে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে তাদের খেলাধুলা।দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সামী বলেন, আমাদের মাঠটি বিদ্যালয়ের পাশেই। এখানে কারা যেন পাথর ফেলে রেখেছে। এ জন্য আমরা খেলতে পারছি না। আমরা চাই মাঠটি থেকে পাথরগুলো সরানো হোক।

মেহেদী হাসান নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের একটিই মাঠ। আমরা প্রতিদিন বিকালে সেখানে খেলাধুলা করি। এখন মাঠটিতে পিচ ফালানোয় খেলাধুলার পরিবেশ নেই। খেলার সময়টায় এখন মোবাইল নিয়েই সময় কাটাই। দ্রুত সময়ের মধ্যে মালামাল সরানোর দাবি জানাই।

এই অঞ্চলে একটি মাত্র খেলার মাঠ। দীর্ঘদিন ধরে এখানেই খেলাধুলা করে কয়েকটি এলাকার খেলোয়াড়রা। আর খেলার মাঠের এমন দশায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় খেলোয়াড়রা। রোহান খান নামে স্থানীয় এক খেলোয়াড় বলেন, আমাদের এই মাঠটি অনেক পুরাতন। প্রতিদিন বন্ধুদের নিয়ে খেলাধুলা করি। এখন সেখানে পাথর রাখা হয়েছে। ছোট ছোট পাথরের কারণে আমার পা কেটে গিয়েছে এখন আর খেলতে পারি না।নাহিদ হাসান নামে আরেক খেলোয়াড় বলেন, শত বছরের এই মাঠে নবীন প্রবীণ সবাই খেলাধুলা করে। তবে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে পাথর ও অন্যান্য মালামাল রাখায় বর্তমানে খেলা বন্ধ রয়েছে। মাঝে খেলার চেষ্টা করা হয়েছিলো তবে পড়ে থাকা পাথরে অনেকের হাত-পা কেটে যায়। তাই এখন আর কেউ খেলতে আসে না।

তিনি আরও বলেন, এমনিতেই দিন দিন খেলাধুলার মান কমে গিয়ে অনেকেই মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ছে। তার উপর যদি মাঠের এই দশা বানিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয় তাহলে আমাদের খেলাধুলা প্রশিক্ষণের আর কোনো মাঠ রইলো না। আমরা সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, অতি দ্রুত এই প্রাচীনতম মাঠটি বাঁচানো হোক।

পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলার নেই বিকল্প। আর মাঠে খেলতে না পারলে মোবাইল আসক্তিতে জড়াবে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। তাই নষ্ট না হওয়ার আগেই দ্রুত নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে মাঠটি শিক্ষার্থীদের খেলার উপযোগী করার দাবি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা) মনিরুল ইসলামের।

তিনি বলেন, আমাদের ঐতিহাসিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য একটি মাঠ রয়েছে। সেখানে তারা বিকালে খেলাধুলা ও বিচরণ করে। সম্প্রতি মাঠে কে বা কারা সড়ক নির্মাণের জন্য নির্মাণ সামগ্রী রেখেছেন। এজন্য ছেলেমেয়েদের খেলাধুলা বন্ধ রয়েছে। বর্তমান সময়ে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই সময়ে অনেকেই মাদকাসক্ত ও মোবাইল গেমসে আসক্ত হয়ে পড়ছে।তিনি আরও বলেন, আমরা চাই দ্রুত মাঠটি পূর্বের ন্যায় ফিরিয়ে আনা হোক, আমরা আমাদের বাচ্চাদের নিয়ে সেখানে খেলাধুলা চালিয়ে যেতে চাই।

জানতে চাইলে রুদ্রকর নীলমনি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ওই মাঠে খেলাধুলা করে। সম্প্রতি মাঠটি ফাঁকা পেয়ে পাথর পিচ ফেলে রেখে গেছে। এ বিষয়ে আমাদের জানানো হয়নি এমনকি অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। আমরা দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইলোরা ইয়াসমিন বলেন, খেলার মাঠ নষ্ট করার অধিকার নেই কারো। এ বিষয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হবে। যারাই মাঠে নির্মাণ সামগ্রী রেখেছেন তাদের সরিয়ে নেয়ার জন্য বলা হবে। যদি তারা নির্দেশ না মানেন তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।