শিরোনাম :
Logo চুয়াডাঙ্গায় মারধর করে নগদ টাকা ছিনতাই Logo ধর্ষকদের  কলিজা ছিঁড়ে চৌরাস্তার মোড়ে টাঙানো হবে: সাফফাতুল ইসলাম Logo ধর্ষণ ও নারী সহিংসতার প্রতিবাদে চুয়াডাঙ্গায় শিক্ষার্থীদের হুঁশিয়ার সমাবেশ ও মশাল-মোমবাতি প্রজ্জলন Logo শহিদ আবু সাইদকে নিয়ে কটুক্তি করায় বেরোবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ Logo নারী তুমি সর্বগুণান্বিতা, নির্ভীক Logo জুলাই বিপ্লবের চেতনায় ৫ম সিনেমাকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত Logo কচুয়ায় স্থানীয় সরকার দিবসে র‌্যালী ও আলোচনা সভা Logo লামী আন্দোলন বাংলাদেশ চাঁদপুর জেলা শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটির শপথ অনুষ্ঠান Logo পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে যা বললেন সেনাপ্রধান Logo অদ্য অপরাহ্ন থেকে সাজেক পর্যটক ভ্রমণের জন্য উন্মুক্ত
নারী ও বিশ্ব

নারী তুমি সর্বগুণান্বিতা, নির্ভীক

  • সম্পাদকীয় ডেস্ক সম্পাদকীয় ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৭:৫৫:১৫ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • ৭২১ বার পড়া হয়েছে

Oplus_131072

মোরা গুণীজন, বড় সচেতন! 

তাই নারী হয় গৃহহারা,

হে যীশু, তুমি এসেছিলে কি নারী ছাড়া ?

১৮৫৭ সালে এক শ্রমিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে ১৯১০ সালে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ ই মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের প্রস্তাব দেন। কয়েক বছর কেটে যাওয়ার পর ১৯৭৫  সালে জাতিসংঘ ৮ই মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। তারপর থেকে দীর্ঘ পথ চলা।

যৌবনকালে পৌঁছাবার পূর্বে একজন নারীকে মেয়ে বলে অভিহিত করা হয়। নারী শব্দটিকে যখন ‘নারীর অধিকার’ শব্দগুচ্ছে  ব্যবহার করা হয় তখন বয়সের  ব্যাপারটিকে প্রাধান্য দেওয়া হয় না। নারী তুমি সর্বগুণান্বিতা, নির্ভীক। নারী বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তার গুণের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। সে যেমন ভালোবাসতে পারে আবার প্রয়োজনে অন্যায়কে কঠোরহস্তে দমনও করতে পারে।

নারীর গুণের প্রশংসা করতে গেলে একটি প্রবাদ বারবার উচ্চারিত  হয় -‘যে রাধে সে  চুলও বাধে। কিন্তু এই প্রবাদ আমাদের সমাজ সত্যিই কি অন্তর থেকে ধারন করতে পেরেছে?

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ওয়েবসাইট অনুসারে-বেগুনি,  সবুজ এবং সাদা রং কে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের রং হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বেগুনি- ন্যায়বিচার ও মর্যাদার প্রতীক, সবুজ- আশার প্রতীক এবং সাদা-বিশুদ্ধতার প্রতীক।

নারী দিবসের লক্ষ্য- নারীর কাজের স্বীকৃতি,  মানবাধিকার হিসেবে নারীর অধিকার উন্নীত করা, বিশ্বব্যাপী  নারী -পুরুষের সমতা নিশ্চিত করা, উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে নারী ক্ষমতায়ন, সহিংসতা ও নারী নির্যাতন বন্ধ করাসহ সকল ক্ষেত্রে সমান অংশগ্রহণ।

 

জাতীয় কবির ভাষায়,

এ বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, 

অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। 

 

এত পথ পাড়ি দেওয়ার পরও কি আমাদের কবি ফররুখ আহমেদের কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে বলতে হবে-   রাত পোহাবার কত দেরি, পাঞ্জেরী?

স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও নারী দিবসের তাৎপর্য কতোটা সফলভাবে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা হচ্ছে তা সময় বলে দিবে। প্রতিদিন এখনো হাজার হাজার নারীকে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হয়।

নারী তুমি কোথায় নিরাপদ?? পাবলিক ট্রান্সপোর্টে প্রতিনিয়ত নারীদের ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়। কর্মক্ষেত্রে উচ্চ পদের প্ররোচনা দেখিয়ে নারীদের হয়রানি করা হয়।দুঃখজনক হলেও এটা সত্যি যে, যাদের থেকে আমাদের নারী অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে শিক্ষার ভীত গড়ে ওঠার কথা, তাদের কাছেই নারীরা নিরাপদ নয়।

আমাদের দেশে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ  আইন থাকলেও এর কোন আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না। কোন এক অদৃশ্য শক্তি পুতুল নাচের মতো পর্দার আড়ালে থেকে কলকাঠি নাড়ে, যার কারণে দোষীদের কোন শাস্তি হয় না।

নারীদের আরেকটা পরিচয় হলো-  ‘অর্ধাঙ্গিনী’।কিন্তু এই পরিচয়টুকু কি শুধু গল্প, কবিতা, সাহিত্য, উপন্যাস কিংবা চিত্রনাট্যেই সীমাবদ্ধ? আদৌ কি এর  কোন শারীরিক রূপ আছে? উত্তর হল- big no!

বিশ্ব নারী দিবসের যথার্থতা সেদিনই পূর্ণতা পাবে যেদিন আমরা বিশ্বব্যাপী একটি সুন্দর বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে সমান অধিকার নিয়ে প্রতিটি নারী ও পুরুষ তার ন্যায্য অধিকার ভোগ করতে পারবে, পারবে স্বাধীনতার মূলমন্ত্রটাকে সাংবিধানিকভাবে অন্তরে ধারণ করতে। এজন্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল নাগরিকদের সম্মিলিতভাবে  অকৃপণভাবে উদার মন নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে মানবতার মোহনায়। আমাদের অত্যন্ত সচেতন হওয়া জরুরী যে, শুধুমাত্র নারী দিবসেই যেন আমরা নারী অধিকার নিয়ে গলাবাজি না করি। জীবনের পুরোটা সময়ই যেন নারীদের অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত রাখার জন্য সচেতন থাকি।

 

লেখক : নাজনীন আক্তার বৃষ্টি 

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় 

 

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

চুয়াডাঙ্গায় মারধর করে নগদ টাকা ছিনতাই

নারী ও বিশ্ব

নারী তুমি সর্বগুণান্বিতা, নির্ভীক

আপডেট সময় : ০৭:৫৫:১৫ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

মোরা গুণীজন, বড় সচেতন! 

তাই নারী হয় গৃহহারা,

হে যীশু, তুমি এসেছিলে কি নারী ছাড়া ?

১৮৫৭ সালে এক শ্রমিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে ১৯১০ সালে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ ই মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের প্রস্তাব দেন। কয়েক বছর কেটে যাওয়ার পর ১৯৭৫  সালে জাতিসংঘ ৮ই মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। তারপর থেকে দীর্ঘ পথ চলা।

যৌবনকালে পৌঁছাবার পূর্বে একজন নারীকে মেয়ে বলে অভিহিত করা হয়। নারী শব্দটিকে যখন ‘নারীর অধিকার’ শব্দগুচ্ছে  ব্যবহার করা হয় তখন বয়সের  ব্যাপারটিকে প্রাধান্য দেওয়া হয় না। নারী তুমি সর্বগুণান্বিতা, নির্ভীক। নারী বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তার গুণের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। সে যেমন ভালোবাসতে পারে আবার প্রয়োজনে অন্যায়কে কঠোরহস্তে দমনও করতে পারে।

নারীর গুণের প্রশংসা করতে গেলে একটি প্রবাদ বারবার উচ্চারিত  হয় -‘যে রাধে সে  চুলও বাধে। কিন্তু এই প্রবাদ আমাদের সমাজ সত্যিই কি অন্তর থেকে ধারন করতে পেরেছে?

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ওয়েবসাইট অনুসারে-বেগুনি,  সবুজ এবং সাদা রং কে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের রং হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বেগুনি- ন্যায়বিচার ও মর্যাদার প্রতীক, সবুজ- আশার প্রতীক এবং সাদা-বিশুদ্ধতার প্রতীক।

নারী দিবসের লক্ষ্য- নারীর কাজের স্বীকৃতি,  মানবাধিকার হিসেবে নারীর অধিকার উন্নীত করা, বিশ্বব্যাপী  নারী -পুরুষের সমতা নিশ্চিত করা, উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে নারী ক্ষমতায়ন, সহিংসতা ও নারী নির্যাতন বন্ধ করাসহ সকল ক্ষেত্রে সমান অংশগ্রহণ।

 

জাতীয় কবির ভাষায়,

এ বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, 

অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। 

 

এত পথ পাড়ি দেওয়ার পরও কি আমাদের কবি ফররুখ আহমেদের কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে বলতে হবে-   রাত পোহাবার কত দেরি, পাঞ্জেরী?

স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও নারী দিবসের তাৎপর্য কতোটা সফলভাবে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা হচ্ছে তা সময় বলে দিবে। প্রতিদিন এখনো হাজার হাজার নারীকে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হয়।

নারী তুমি কোথায় নিরাপদ?? পাবলিক ট্রান্সপোর্টে প্রতিনিয়ত নারীদের ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়। কর্মক্ষেত্রে উচ্চ পদের প্ররোচনা দেখিয়ে নারীদের হয়রানি করা হয়।দুঃখজনক হলেও এটা সত্যি যে, যাদের থেকে আমাদের নারী অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে শিক্ষার ভীত গড়ে ওঠার কথা, তাদের কাছেই নারীরা নিরাপদ নয়।

আমাদের দেশে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ  আইন থাকলেও এর কোন আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না। কোন এক অদৃশ্য শক্তি পুতুল নাচের মতো পর্দার আড়ালে থেকে কলকাঠি নাড়ে, যার কারণে দোষীদের কোন শাস্তি হয় না।

নারীদের আরেকটা পরিচয় হলো-  ‘অর্ধাঙ্গিনী’।কিন্তু এই পরিচয়টুকু কি শুধু গল্প, কবিতা, সাহিত্য, উপন্যাস কিংবা চিত্রনাট্যেই সীমাবদ্ধ? আদৌ কি এর  কোন শারীরিক রূপ আছে? উত্তর হল- big no!

বিশ্ব নারী দিবসের যথার্থতা সেদিনই পূর্ণতা পাবে যেদিন আমরা বিশ্বব্যাপী একটি সুন্দর বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে সমান অধিকার নিয়ে প্রতিটি নারী ও পুরুষ তার ন্যায্য অধিকার ভোগ করতে পারবে, পারবে স্বাধীনতার মূলমন্ত্রটাকে সাংবিধানিকভাবে অন্তরে ধারণ করতে। এজন্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল নাগরিকদের সম্মিলিতভাবে  অকৃপণভাবে উদার মন নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে মানবতার মোহনায়। আমাদের অত্যন্ত সচেতন হওয়া জরুরী যে, শুধুমাত্র নারী দিবসেই যেন আমরা নারী অধিকার নিয়ে গলাবাজি না করি। জীবনের পুরোটা সময়ই যেন নারীদের অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত রাখার জন্য সচেতন থাকি।

 

লেখক : নাজনীন আক্তার বৃষ্টি 

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়