শিরোনাম :
Logo “সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী হামজালা-কে দেখতে গেলেন, হাবিপ্রবি’র ভিসি প্রফেসর ড. মো. এনামউল্যা” Logo সততা-সাহসিকতায় ও আন্তরিকতায় ‘নজির গড়লেন’ সদরপুরের ইউএনও জাকিয়া সুলতানা Logo ইউজিসির বাজেট বৃদ্ধির দাবিতে জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ Logo ইউটিউব দেখে ড্রাগন চাষ করে সফল কচুয়ার যুবক আক্তার বেপারী Logo প্রয়োজনীয় ওষুধের দোকান না থাকায় ভোগান্তিতে রাবি শিক্ষার্থীরা Logo চুয়াডাঙ্গা শহরে পুলিশের অভিযান, সাড়ে ৬ লাখ পিস নকল বিড়ি জব্দ Logo মেট গালায় বেবিবাম্প নিয়ে চমকে দিলেন কিয়ারা Logo মেট গালায় ‘কিং’ বেশে শাহরুখ, দ্যুতি ছড়ালেন আরও যারা Logo হত্যার হুমকি পেলেন শামি Logo বার্সার ইন্টার পরীক্ষা, মিলানের দুর্গ জয়ের অপেক্ষায় কাতালানরা

বিপুল সংখ্যক রিজার্ভ সেনা মোতায়েন, গাজা দখলের প্রস্তুতি ইসরায়েলের

ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজায় সামরিক অভিযানের সম্প্রসারণে অনুমোদন দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ‘জয়’ করার পরিকল্পনা। সোমবার এক সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই পরিকল্পনার আওতায় সেনাবাহিনী বিপুল সংখ্যক রিজার্ভ সেনা মোতায়েন করছে এবং গাজা দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো আগেই সতর্ক করে দিয়েছিল যে, দীর্ঘদিন ধরে চলা অবরোধের ফলে গাজায় মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে এবং আবারও দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েল তার সামরিক তৎপরতা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সরকারি এক সূত্র জানায়, নতুন এই অভিযানের মধ্যে গাজা দখল, এলাকাগুলোর দখল নেওয়া এবং ‘জনগণের সুরক্ষার জন্য’ তাদের দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

একজন জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, পুরো গাজা ভূখণ্ড থেকে জনগণকে সরিয়ে দক্ষিণে নিয়ে যাওয়াই এই অভিযানের প্রধান লক্ষ্যগুলোর একটি। একই কর্মকর্তা বলেন, ‘গাজাবাসীদের জন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী স্থানান্তর কর্মসূচি’ এই অভিযানের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, এই পরিকল্পনা ফিলিস্তিনিদের জন্য আরও প্রাণহানি ও দুর্ভোগ ডেকে আনবে। অন্যদিকে হামাস এই নতুন সহায়তা কাঠামোকে ‘রাজনৈতিক চাপের হাতিয়ার’ বলে আখ্যা দিয়েছে।

গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানিয়েছে, সোমবার সকালে গাজার উত্তরে ইসরায়েলের দুটি বিমান হামলায় অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছে। সংস্থাটির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, ‘তিনটি অ্যাপার্টমেন্টে ইসরায়েলি হামলায় আমরা ১৫ জন শহীদ ও ১০ জন আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছি, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু ও নারী।’

গাজা সিটির উত্তরের বাইত লাহিয়ায় একটি বাড়িতে হামলায় আরও চারজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছে বলেও তিনি জানান।

প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং বেশ কয়েকজন মন্ত্রীসহ নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে এই পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন, যার মূল লক্ষ্য হামাসকে পরাজিত করা এবং গাজায় আটক বন্দিদের মুক্ত করে আনা। সরকারি সূত্র জানায়, এই পরিকল্পনার মধ্যে ‘হামাসের বিরুদ্ধে শক্তিশালী হামলার’ পরিকল্পনাও রয়েছে, যদিও এর বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।

ইসরায়েলের একজন সাধারণ নাগরিক, সরকারি কর্মচারী ইয়োসি গারশন (৩৬) এএফপিকে বলেন, ‘আমি মনে করি এটি একটি বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ, কারণ এবার অন্তত মূল সমস্যাটার মোকাবিলা করা হচ্ছে। আমরা যতোবার পিছু হেটেছি, ততোবারই দেখেছি যে, অপর পক্ষের সঙ্গে সত্যিকারের শান্তি সম্ভব নয়।’

তবে অনেকেই এই পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একজন শিক্ষার্থী, তামার লাজারো (৫৯) বলেন, ‘এটি একটি বেপরোয়া সিদ্ধান্ত যা উভয় পক্ষেরই আরও প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়াবে। ইতোমধ্যেই অনেক নিরীহ মানুষ মারা গেছে… আমি আমাদের সরকারের সিদ্ধান্তের সদিচ্ছা নিয়ে সন্দিহান।’

গাজায় আটক বন্দিদের পরিবারদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি ইসরায়েলি প্রচার গ্রুপ বলেছে, এই যুদ্ধ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা গাজায় বন্দিদের ‘বলি’ করার সামিল।

এই যুদ্ধ পরিকল্পনার পাশাপাশি নেতানিয়াহু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি প্রস্তাবও এগিয়ে নিচ্ছেন, যাতে গাজাবাসীদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে স্থানান্তরের পরামর্শ রয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত এই পরিকল্পনাকে আরব দেশসহ বিশ্বজুড়ে সরকারগুলো এবং ফিলিস্তিনিরা প্রত্যাখ্যান করেছে।

নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা মানবিক ত্রাণ বিতরণের ‘সম্ভাবনাও অনুমোদন’ দিয়েছে, তবে সেটিও এমন শর্তে যাতে হামাস যেন ত্রাণ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে এবং তাদের শাসনক্ষমতা ধ্বংস করা যায়।

এদিকে গাজায় কাজ করা একাধিক জাতিসংঘ সংস্থা ও ত্রাণ সংস্থার একটি জোট জানিয়েছে, ইসরায়েল ‘বিদ্যমান ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিতে চাইছে’ এবং তাদেরকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর নির্ধারিত নিয়মে সহায়তা দিতে বাধ্য করার চেষ্টা করছে। তাদের মতে, এই পরিকল্পনা ‘মৌলিক মানবিক নীতিমালার পরিপন্থী এবং জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগের কৌশলের অংশ।’

 

ট্যাগস :

“সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী হামজালা-কে দেখতে গেলেন, হাবিপ্রবি’র ভিসি প্রফেসর ড. মো. এনামউল্যা”

বিপুল সংখ্যক রিজার্ভ সেনা মোতায়েন, গাজা দখলের প্রস্তুতি ইসরায়েলের

আপডেট সময় : ০৪:২৫:৪৩ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫

ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজায় সামরিক অভিযানের সম্প্রসারণে অনুমোদন দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ‘জয়’ করার পরিকল্পনা। সোমবার এক সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই পরিকল্পনার আওতায় সেনাবাহিনী বিপুল সংখ্যক রিজার্ভ সেনা মোতায়েন করছে এবং গাজা দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো আগেই সতর্ক করে দিয়েছিল যে, দীর্ঘদিন ধরে চলা অবরোধের ফলে গাজায় মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে এবং আবারও দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েল তার সামরিক তৎপরতা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সরকারি এক সূত্র জানায়, নতুন এই অভিযানের মধ্যে গাজা দখল, এলাকাগুলোর দখল নেওয়া এবং ‘জনগণের সুরক্ষার জন্য’ তাদের দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

একজন জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, পুরো গাজা ভূখণ্ড থেকে জনগণকে সরিয়ে দক্ষিণে নিয়ে যাওয়াই এই অভিযানের প্রধান লক্ষ্যগুলোর একটি। একই কর্মকর্তা বলেন, ‘গাজাবাসীদের জন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী স্থানান্তর কর্মসূচি’ এই অভিযানের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, এই পরিকল্পনা ফিলিস্তিনিদের জন্য আরও প্রাণহানি ও দুর্ভোগ ডেকে আনবে। অন্যদিকে হামাস এই নতুন সহায়তা কাঠামোকে ‘রাজনৈতিক চাপের হাতিয়ার’ বলে আখ্যা দিয়েছে।

গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানিয়েছে, সোমবার সকালে গাজার উত্তরে ইসরায়েলের দুটি বিমান হামলায় অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছে। সংস্থাটির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, ‘তিনটি অ্যাপার্টমেন্টে ইসরায়েলি হামলায় আমরা ১৫ জন শহীদ ও ১০ জন আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছি, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু ও নারী।’

গাজা সিটির উত্তরের বাইত লাহিয়ায় একটি বাড়িতে হামলায় আরও চারজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছে বলেও তিনি জানান।

প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং বেশ কয়েকজন মন্ত্রীসহ নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে এই পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন, যার মূল লক্ষ্য হামাসকে পরাজিত করা এবং গাজায় আটক বন্দিদের মুক্ত করে আনা। সরকারি সূত্র জানায়, এই পরিকল্পনার মধ্যে ‘হামাসের বিরুদ্ধে শক্তিশালী হামলার’ পরিকল্পনাও রয়েছে, যদিও এর বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।

ইসরায়েলের একজন সাধারণ নাগরিক, সরকারি কর্মচারী ইয়োসি গারশন (৩৬) এএফপিকে বলেন, ‘আমি মনে করি এটি একটি বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ, কারণ এবার অন্তত মূল সমস্যাটার মোকাবিলা করা হচ্ছে। আমরা যতোবার পিছু হেটেছি, ততোবারই দেখেছি যে, অপর পক্ষের সঙ্গে সত্যিকারের শান্তি সম্ভব নয়।’

তবে অনেকেই এই পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একজন শিক্ষার্থী, তামার লাজারো (৫৯) বলেন, ‘এটি একটি বেপরোয়া সিদ্ধান্ত যা উভয় পক্ষেরই আরও প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়াবে। ইতোমধ্যেই অনেক নিরীহ মানুষ মারা গেছে… আমি আমাদের সরকারের সিদ্ধান্তের সদিচ্ছা নিয়ে সন্দিহান।’

গাজায় আটক বন্দিদের পরিবারদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি ইসরায়েলি প্রচার গ্রুপ বলেছে, এই যুদ্ধ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা গাজায় বন্দিদের ‘বলি’ করার সামিল।

এই যুদ্ধ পরিকল্পনার পাশাপাশি নেতানিয়াহু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি প্রস্তাবও এগিয়ে নিচ্ছেন, যাতে গাজাবাসীদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে স্থানান্তরের পরামর্শ রয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত এই পরিকল্পনাকে আরব দেশসহ বিশ্বজুড়ে সরকারগুলো এবং ফিলিস্তিনিরা প্রত্যাখ্যান করেছে।

নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা মানবিক ত্রাণ বিতরণের ‘সম্ভাবনাও অনুমোদন’ দিয়েছে, তবে সেটিও এমন শর্তে যাতে হামাস যেন ত্রাণ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে এবং তাদের শাসনক্ষমতা ধ্বংস করা যায়।

এদিকে গাজায় কাজ করা একাধিক জাতিসংঘ সংস্থা ও ত্রাণ সংস্থার একটি জোট জানিয়েছে, ইসরায়েল ‘বিদ্যমান ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিতে চাইছে’ এবং তাদেরকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর নির্ধারিত নিয়মে সহায়তা দিতে বাধ্য করার চেষ্টা করছে। তাদের মতে, এই পরিকল্পনা ‘মৌলিক মানবিক নীতিমালার পরিপন্থী এবং জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগের কৌশলের অংশ।’