সংশোধিত ওয়াকফ আইন কেন্দ্রীয় সংসদে পাস হওয়ার পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় শুরু হয়েছে প্রতিবাদ ও অশান্তি। সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা ছড়িয়েছে মুর্শিদাবাদের সুতি, ধুলিয়ান, রঘুনাথগঞ্জ ও সামশেরগঞ্জ অঞ্চলে। একইসঙ্গে সহিংসতার খবর এসেছে মালদার জঙ্গিপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগণার আমতলা এবং হুগলির চাঁপদানিতেও।
রেল ও বাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় প্রশাসনের উদ্বেগ আরও বেড়েছে। কলকাতাও এই উত্তেজনার বাইরে থাকেনি। এরই মধ্যে রাজ্য সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
এ ব্যাপারে আজ শনিবার (১২ এপ্রিল) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স-এ দেওয়া বার্তায় বলেন, রাজ্য সরকার এই সংশোধিত আইন সমর্থন করে না এবং বাংলায় তা কার্যকর হবে না। তা হলে এত হিংসা কেন? যারা উত্তেজনা ছড়াচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তিনি আরও লেখেন, এই আইন কেন্দ্রীয় সরকারের, রাজ্য সরকারের নয়। তাই প্রশ্ন থাকলে তা কেন্দ্রের কাছেই তুলতে হবে। ধর্মকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা উচিৎ নয়। যারা এমনটি করছে, তারা রাজ্যের শান্তি বিনষ্ট করছে।
সব সম্প্রদায়ের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন— দয়া করে শান্ত থাকুন, সংযত থাকুন। ধর্মের নামে কোনও রকম সহিংসতা গ্রহণযোগ্য নয়। রাজনীতির জন্য অশান্তি সৃষ্টি না করে, মানবিকতা ও সম্প্রীতির পথে চলুন।
পাশাপাশি রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার ও এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম জানিয়েছেন, গুজবে কান না দিতে এবং আইন নিজের হাতে না তুলতে। জাভেদ শামিম বলেন, গুজব রটনাকারীদের শনাক্ত করা হয়েছে। অনেককেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, শুরু থেকেই সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরোধিতা করছে তৃণমূল কংগ্রেস। সংসদে বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র সুপ্রিম কোর্টে মামলাও করেছেন এই বিল বাতিলের দাবিতে।
গত ৯ এপ্রিল নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মহাবীর জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলায় কেউ ওয়াকফ সম্পত্তি কেড়ে নিতে পারবে না। দিদি সব সময় আপনাদের পাশে আছেন— আপনাদের এবং আপনাদের সম্পত্তির সুরক্ষার দায়িত্বও দিদি নেবেন। আমাদের একে অপরের ওপর আস্থা রাখা জরুরি।’
তবে এই বার্তার পরও রাজ্যে ছড়িয়েছে সংঘর্ষ ও সহিংসতা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায় জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। এমন প্রেক্ষাপটে ফের মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিলেন— “পশ্চিমবঙ্গে সংশোধিত ওয়াকফ আইন কার্যকর হবে না।”