কাবাঘরের সম্মান ও মর্যাদা
পবিত্র কাবাঘর আল্লাহর অনন্য নিদর্শন এবং তা হাজরে আসওয়াদ, জমজম কূপ ও মাকামে ইবরাহিমের মতো নিদর্শনকে বুকে ধারণ করে আছে। আল্লাহ কাবাঘরকে নিরাপদ ঘোষণা করেছেন এবং এই পবিত্র ঘরের হজ ফরজ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাতে অনেক সুস্পষ্ট নিদর্শন আছে, যেমন মাকামে ইবরাহিম। আর যে সেখানে প্রবেশ করে সে নিরাপদ। মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে এই ঘরের হজ করা তার অবশ্য কর্তব্য। যে প্রত্যাখ্যান করল সে জেনে রাখুক আল্লাহ বিশ্বজগতের মুখাপেক্ষী নন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৯৭)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে এই ঘরের হজ করল এবং অশ্লীলতায় লিপ্ত হলো না, আল্লাহর অবাধ্য হলো না সে সদ্য প্রসূত শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে (হজ থেকে) ফিরল।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৫২১)
কাবাঘরের নামগুলো
কোরআন ও হাদিসে কাবাঘরের সাতটি নাম পাওয়া যায়। তা হলো—
১. বাইত: পবিত্র কোরআনে ১৫ বার ‘বাইত’ শব্দ দ্বারা কাবাঘরকে ব্যক্ত করা হয়েছে। কখনো শুধু বাইত শব্দটি এসেছে। আবার কখনো এর সাথে যুক্ত হয়েছে সর্বনাম ও বিশেষণ। আরবি বাইত শব্দের অর্থ ঘর। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা তো বাক্কায় (মক্কায়), তা বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারী।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯৬)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা যেন তাওয়াফ করে প্রাচীনঘরের।’ (সুরা হজ, আয়াত : ২৯)
২. কাদিস: আল্লামা আজরাকি (রহ.) বলেন, প্রাচীনকালে আরবের লোকেরা কাবাঘরকে কাদিস বলত। যার অর্থ পবিত্র। লিসানুল আরবে কাদিসের একটি অর্থ লেখা হয়েছে ‘বাইতুল হারাম’ বা কাবাঘর। (আখবারু মক্কা : ১/২৮০; লিসানুল আরব : ৬/১৭০)
৩. নাজির: শাব্দিক অর্থ মানতকারী, তবে তা মানতের স্থান অর্থে ব্যবহৃত হতো। আল্লামা আজরাকি (রহ.) বলেন, প্রাচীনকালে আরবের লোকেরা কাবাঘরকে নাজির বলত। কেননা কাবাঘরের উদ্দেশ্যে নানা জিনিসের মানত করা হতো। (আখবারু মক্কা : ১/২৮০)
৪. নাদির: নাদির শব্দটি ‘নাদরাতুন’ থেকে এসেছে। নাদরাহ হলো এক প্রকার বিরল ও মূল্যবান রত্ন যা স্বর্ণের খনিতে পাওয়া যায়। তুলনাহীন ও মূল্যবান অর্থে কাবাঘরকে নাদির বলা হতো। (কামুসুল মুহিত, পৃষ্ঠা ৬১৯)
৫. বানিয়্যাহ: শাব্দিক অর্থ স্থাপত্য বা শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য। আল্লামা ইবনে আসির (রহ.) বলেন, কাবাঘরকে বানিয়্যাতু ইবরাহিম বলা হতো। কেননা তিনি তা নির্মাণ করেছিলেন। পরবর্তীতে অধিক ব্যবহারের কারণে তাতে সংকোচন ঘটে এবং বানিয়্যাহ শব্দে রূপান্তরিত হয়। হাদিসেও কাবাঘর বোঝাতে বানিয়্যাহ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। (আন নিহায়া ফি গারিবিল হাদিস ওয়াল আসার : ১/১৫৮; মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৫৮৩৬)
৬. দাওয়ার: আল্লামা ইবনে মানজুর (রহ.) দাওয়ারকে কাবাঘরের একটি নাম হিসেবে উল্লেখ করেছেন। দাওয়ার শব্দটি দায়ির শব্দের বহুবচন। যার অর্থ বৃত্তাকার। যেহেতু কাবাঘরকে ঘিরে মানুষ তাওয়াফ করে। তাই তাকে দাওয়ার বলা হয়। (আসমাউ কাবাতিল মুশাররাফা, পৃষ্ঠা ২৮; লিসানুল আরব : ৪/২৯৮)
৭. কিবলা: পবিত্র কোরআনে কাবাঘরকে কিবলা নামে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি এ যাবত যে কিবলা অনুসরণ করছিলে তাকে আমি এই উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম যাতে জানতে পারি কে রাসুলের অনুসরণ করে এবং কে ফিরে যায়?’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৪৩)