তিনি জানান, নতুন এই দলের কাঠামোতে থাকবে- আহ্বায়ক, সদস্যসচিব, মুখ্য সংগঠক ও মুখপাত্র পদ। আহ্বায়ক হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের নাম চূড়ান্ত হয়েছে। পরের পদগুলোর জন্য জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখভাগের কয়েকজন নেতার নাম আলোচনায় আছে।
নতুন দলের আহ্বায়কের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য নাহিদ ইসলাম যেকোনো সময় সরকার থেকে পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির দায়িত্বশীল তিন নেতা।
তারা জানান, সদস্যসচিব পদে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অধিকাংশ নেতার পছন্দ আখতার হোসেনকে। মুখ্য সংগঠক ও মুখপাত্র পদের জন্য আলোচনায় আছেন সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ।
চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে শিবিরের সাবেক নেতাদের মধ্যে একজন আখতার হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন। শীর্ষ চারটি পদে তাদের কাউকে না রাখলে নতুন দলে তারা থাকবেন না বলে জানান। মূলত এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিবিরের সাবেক নেতারা আলী আহসান জোনায়েদের পক্ষে প্রচার শুরু করেন। এর পাশাপাশি এমন প্রচারও চালানো হয় যে শিবিরকে ‘মাইনাস’ করে বামপন্থীদের নিয়ে রাজনীতি করতে চান আখতার।
এ রকম পরিস্থিতিতে শনিবার রাত থেকে বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে উত্তাপ ছড়াতে শুরু করে। আখতার হোসেনের শুভানুধ্যায়ীরা ফেসবুকে তাকে নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট করতে থাকেন। কেউ কেউ লেখেন, আখতারকে ‘মাইনাস’ করার পরিকল্পনা হচ্ছে। ফেসবুকে এমন আলোচনায় এক পক্ষে ছিলেন শিবিরের সাবেক নেতারা, অন্য পক্ষে ছাত্রশক্তি ও ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক নেতাদের পাশাপাশি দেখা গেছে মধ্যপন্থী অনেককে।
শিবিরের সাবেক নেতারা যাকে নতুন দলের সদস্যসচিব পদে দেখতে চেয়েছিলেন, সেই জোনায়েদ গত বছরের ২৬ নভেম্বর জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য হন। এরপর ৯ ডিসেম্বর যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পান। অন্যদিকে এই পদে নাগরিক কমিটির বড় অংশের পছন্দ আখতার হোসেনকে। তিনি ছাত্র অধিকার পরিষদের প্যানেল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সমাজসেবা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০২৩ সালে ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে বেরিয়ে গিয়ে তিনি গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি গঠন করে এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হন। জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির সমন্বয়কেরা মূলত ছাত্রশক্তির নেতা ছিলেন। অভ্যুত্থানের পর গত সেপ্টেম্বরে জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠিত হলে আখতারকে এর সদস্যসচিব করা হয়।
গত রোববার ফেসবুকে এই বিতর্কে যোগ দেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি শিবিরের সাবেক নেতাদের দিকে ইঙ্গিত করে অভ্যুত্থানের ‘ইতিহাস বিকৃতির’ অভিযোগ তোলেন। একই অভিযোগ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদও।
ফেসবুকে এমন বাহাস চলার মধ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির কার্যালয়ে রোববার ও সোমবার দুই দফায় বৈঠক করেন নেতারা। তবে সেই বৈঠকগুলোতে শিবিরের সাবেক নেতারা যোগ দেননি। অবশ্য সোমবার দুপুর থেকে শিবিরের সাবেক নেতাদের সঙ্গে নাগরিক কমিটির নেতৃস্থানীয়দের সমঝোতার অনানুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেই সমঝোতা একটি ‘সমাধানের’ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কয়েকজন নেতা। তারা বলেন, সমঝোতা অনুযায়ী আলী আহসান জোনায়েদকে নতুন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক করার কথা রয়েছে। এ ছাড়া জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব হওয়ার কথা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর।
একজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন। অতি সম্প্রতি নতুন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বে তার আসা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। তবে এখনো এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
তরুণদের উদ্যোগে নতুন এই দলের আত্মপ্রকাশের আয়োজনের জন্য দুটি জায়গার কথা ভেবেছিল জাতীয় নাগরিক কমিটি। একটি হলো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, অন্যটি ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ। সর্বশেষ একজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, আত্মপ্রকাশের অনুষ্ঠানটি হতে পারে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে।
নেতারা জানান, প্রথমে ২৫ ফেব্রুয়ারি দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের কথা ভাবা হয়েছিল; কিন্তু ওই দিন পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বার্ষিকী থাকায় এই দিনে দলের ঘোষণা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য তারিখ ২৬ ফেব্রুয়ারি।