আসাদকে উৎখাতের সম্মুখ সমর ও নেপথ্যে কারা, সিরিয়ার ভবিষ্যৎ কী

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০১:৫০:১৫ অপরাহ্ণ, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৭৩৫ বার পড়া হয়েছে

সিরিয়ার ‘স্বৈরশাসক’ প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন । এরপর কী হবে এই প্রশ্ন দেশটির সবার কাছে।

সিরিয়ায় এই অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামের একটি ইসলামিক সশস্ত্র গোষ্ঠী বলছে,  অন্ধকার যুগের অবসান হলো , আলোর দিকে যাচ্ছি আমরা।

কিন্তু দেশটির অনেক সাধারণ মধ্যপন্থী মানুষের মনে প্রশ্ন , তারা কী দেশকে সত্যি আলোর মুখ দেখাবে ? তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্ত এলাকা থেকে বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য সংবাদদাতা হুগো ব্যাচেগা বলেছেন, আসাদ বিদায় নেওয়ায় বহু মানুষ খুশি কিন্তু এরপরই একটি প্রশ্ন নিশ্চিতভাবে আসবে যে এরপর কী হবে।

কারণ রয়েছে । রয়টার্স ও বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসলামপন্থী বিদ্রোহী হিসেবে পরিচিত এইচটিএস- যাদের রুট হলো আল-কায়েদা। বহুবছর ধরেই তারা নিজেদেরকে জাতীয়তাবাদী শক্তি হিসেবে পরিচিত করানোর চেষ্টা করছে। তবে অনেকেই এটা মানতে রাজি নন।

২০১৮ সাল থেকে দেশটি কার্যত তিন ভাগে বিভক্ত, যেখানে বাশার আল-আসাদের কর্তৃত্ববাদী শাসন, কুর্দি বাহিনী এবং ইসলামি বিদ্রোহীরা বিভিন্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
একটা সময় পর্যন্ত সিরিয়ায় যুদ্ধ শেষ করা কঠিন বলে বিশ্বাস করেছেন বিশ্লেষকেরা। বছরের পর বছর ধরে চলা যুদ্ধ সিরিয়াকে ধ্বংস করে দিয়েছে। একইসঙ্গে দেশটির অর্থনীতিকে পঙ্গু, অবকাঠামোকে ধ্বংস এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে চরম দুর্দশায় ফেলেছে।

এটি এমন একটি মানবিক সংকট তৈরি করেছে যেখান থেকে পুনরুদ্ধারের কোনো সুস্পষ্ট পথ নেই। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সিরিয়ায় যুদ্ধের আগের দুই কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

প্রায় ৬০ লাখ মানুষ দেশটি ছেড়ে পালিয়েছে, যার বেশিরভাগই আশ্রয় নিয়েছে লেবানন, জর্ডান এবং তুরস্কে।
এমন পরিস্থিতিতে ইসলামপন্থী বিদ্রোহী হিসেবে পরিচিত এইচটিএ ‘র ওপর ভরসা করতে পারছেন না অনেকেই। কিন্তু ফ্যাসিস্ট বাশার সরকারের পতনে সবাই খুশি।

বাশার আল-আসাদের সহযোগী হিজবুল্লাহ সদস্যরা সরে যাচ্ছেন । দ্যা সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ এর মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক কর্মসূচির সিনিয়র ফেলো নাতাশা হল বিবিসি রেডিও ফাইভ লাইভ’কে বলেছেন, মূলত আসাদের দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী রাশিয়া ও ইরান অন্য ঘটনায় দুর্বল ও মনোযোগ হারানোর কারণেই তার এ পরিণতি হলো। কিন্তু রাশিয়া ইসলামপন্থী বিদ্রোহী হিসেবে পরিচিত এইচটিএকে কীভাবে নেবে এটাও দেখার বিষয়।

এরিমধ্যে সিরিয়ান প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মেদ ঘাজি জালালি জানান, তিনি বিদ্রোহীদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি। তিনি সিরিয়া ছেড়ে যাবেন না এবং বিদ্রোহীদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি। তিনি বলেন, জনগণ যাকেই বেছে নেবে আমরা তাকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। রয়েছে দেশটির সেনাবাহিনীও চুপ।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়া এক বৈশ্বিক দাবা বোর্ডে পরিণত হয়েছে, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিগুলো তাদের কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনের জন্য মিত্রদের সাহায্য করার ভান ধরে আসছে। তুরস্ক, সৌদি আরব এবং মার্কিন সমর্থিত বিকেন্দ্রীভূত সশস্ত্র বিরোধী দলগুলো আসাদকে চ্যালেঞ্জ করছিল এতোদিন।

সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের নতুন করে আক্রমণ শুরুর পর তাদের লক্ষ্য করে হামলা শুরু করেছিল রাশিয়ার যুদ্ধবিমানগুলো। এরপর ইরান থেকেও যোদ্ধা পাঠানো হয় বলে খবর চাউর হয়। তবে শেষমেশ আসাদ সরকারের রক্ষা হলো না।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

আসাদকে উৎখাতের সম্মুখ সমর ও নেপথ্যে কারা, সিরিয়ার ভবিষ্যৎ কী

আপডেট সময় : ০১:৫০:১৫ অপরাহ্ণ, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪

সিরিয়ার ‘স্বৈরশাসক’ প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন । এরপর কী হবে এই প্রশ্ন দেশটির সবার কাছে।

সিরিয়ায় এই অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামের একটি ইসলামিক সশস্ত্র গোষ্ঠী বলছে,  অন্ধকার যুগের অবসান হলো , আলোর দিকে যাচ্ছি আমরা।

কিন্তু দেশটির অনেক সাধারণ মধ্যপন্থী মানুষের মনে প্রশ্ন , তারা কী দেশকে সত্যি আলোর মুখ দেখাবে ? তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্ত এলাকা থেকে বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য সংবাদদাতা হুগো ব্যাচেগা বলেছেন, আসাদ বিদায় নেওয়ায় বহু মানুষ খুশি কিন্তু এরপরই একটি প্রশ্ন নিশ্চিতভাবে আসবে যে এরপর কী হবে।

কারণ রয়েছে । রয়টার্স ও বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসলামপন্থী বিদ্রোহী হিসেবে পরিচিত এইচটিএস- যাদের রুট হলো আল-কায়েদা। বহুবছর ধরেই তারা নিজেদেরকে জাতীয়তাবাদী শক্তি হিসেবে পরিচিত করানোর চেষ্টা করছে। তবে অনেকেই এটা মানতে রাজি নন।

২০১৮ সাল থেকে দেশটি কার্যত তিন ভাগে বিভক্ত, যেখানে বাশার আল-আসাদের কর্তৃত্ববাদী শাসন, কুর্দি বাহিনী এবং ইসলামি বিদ্রোহীরা বিভিন্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
একটা সময় পর্যন্ত সিরিয়ায় যুদ্ধ শেষ করা কঠিন বলে বিশ্বাস করেছেন বিশ্লেষকেরা। বছরের পর বছর ধরে চলা যুদ্ধ সিরিয়াকে ধ্বংস করে দিয়েছে। একইসঙ্গে দেশটির অর্থনীতিকে পঙ্গু, অবকাঠামোকে ধ্বংস এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে চরম দুর্দশায় ফেলেছে।

এটি এমন একটি মানবিক সংকট তৈরি করেছে যেখান থেকে পুনরুদ্ধারের কোনো সুস্পষ্ট পথ নেই। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সিরিয়ায় যুদ্ধের আগের দুই কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

প্রায় ৬০ লাখ মানুষ দেশটি ছেড়ে পালিয়েছে, যার বেশিরভাগই আশ্রয় নিয়েছে লেবানন, জর্ডান এবং তুরস্কে।
এমন পরিস্থিতিতে ইসলামপন্থী বিদ্রোহী হিসেবে পরিচিত এইচটিএ ‘র ওপর ভরসা করতে পারছেন না অনেকেই। কিন্তু ফ্যাসিস্ট বাশার সরকারের পতনে সবাই খুশি।

বাশার আল-আসাদের সহযোগী হিজবুল্লাহ সদস্যরা সরে যাচ্ছেন । দ্যা সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ এর মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক কর্মসূচির সিনিয়র ফেলো নাতাশা হল বিবিসি রেডিও ফাইভ লাইভ’কে বলেছেন, মূলত আসাদের দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী রাশিয়া ও ইরান অন্য ঘটনায় দুর্বল ও মনোযোগ হারানোর কারণেই তার এ পরিণতি হলো। কিন্তু রাশিয়া ইসলামপন্থী বিদ্রোহী হিসেবে পরিচিত এইচটিএকে কীভাবে নেবে এটাও দেখার বিষয়।

এরিমধ্যে সিরিয়ান প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মেদ ঘাজি জালালি জানান, তিনি বিদ্রোহীদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি। তিনি সিরিয়া ছেড়ে যাবেন না এবং বিদ্রোহীদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি। তিনি বলেন, জনগণ যাকেই বেছে নেবে আমরা তাকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। রয়েছে দেশটির সেনাবাহিনীও চুপ।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়া এক বৈশ্বিক দাবা বোর্ডে পরিণত হয়েছে, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিগুলো তাদের কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনের জন্য মিত্রদের সাহায্য করার ভান ধরে আসছে। তুরস্ক, সৌদি আরব এবং মার্কিন সমর্থিত বিকেন্দ্রীভূত সশস্ত্র বিরোধী দলগুলো আসাদকে চ্যালেঞ্জ করছিল এতোদিন।

সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের নতুন করে আক্রমণ শুরুর পর তাদের লক্ষ্য করে হামলা শুরু করেছিল রাশিয়ার যুদ্ধবিমানগুলো। এরপর ইরান থেকেও যোদ্ধা পাঠানো হয় বলে খবর চাউর হয়। তবে শেষমেশ আসাদ সরকারের রক্ষা হলো না।