শিরোনাম :
Logo কৃষকদের কষ্ট লাগবে জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিদর্শন করলেন পিআইও রাকিবুল ইসলাম Logo শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা Logo ‘জুলাই শহীদ দিবস’ উপলক্ষে শোক দিবস পালন Logo বেরোবিতে শহিদ আবু সাঈদ মিউজিয়াম গেইট ও চত্বরের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন Logo ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ায় আহত ১৬ Logo কিশোর অপরাধ দমনে চাঁদপুর জেলা পুলিশের কঠোর অবস্থান কিশোর অপরাধের ভয়াবহ পরিণতি উপলব্ধি করতে পারেন কেবল ভুক্তভোগী পিতা-মাতা ………….মুহম্মদ আব্দুর রকিব পিপিএম Logo ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (চাঁদপুর-২ আসনে)” এমপি প্রার্থী মুফতী মানসুর আহমদ সাকী Logo রাজশাহীর বাগমারায় বজ্রপাতে যুবক নিহত Logo মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রীসহ রাজশাহীতে ২০ জন আটক Logo কয়রায় জুলাই শহিদ দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

সালাম মুসলমানদের মুখে মুখে শান্তির বার্তা

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৮:৩০:৩৩ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪
  • ৭২৯ বার পড়া হয়েছে

সালাম মানে শান্তি, কল্যাণ ইত্যাদি। পরস্পরকে সালাম দেওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা একে অপরের শান্তি কামনা করি। সামাজিক জীবনে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের ভেতর সালাম ছড়িয়ে দেয় ভালোবাসা, সম্প্রীতি আর সৌহার্দ্যের সৌরভ। শান্তি আর ভালোবাসার দ্যোতনা ছড়ানো এই শুভকামনা আমাদের সম্ভাষণ। মুসলমানদের অভিবাদন সালাম পারস্পরিক শান্তি ও নিরাপত্তামূলক একটি দোয়া।

আচার-অভ্যাস, অভিবাদন-সম্ভাষণ ইত্যাদি সংস্কৃতির এইসব উপাদান থেকে বিভিন্ন জাতির বৈশিষ্ট্য নিরূপণ হয়। পৃথিবীতে অনেক সম্ভাষণ আছে। বিভিন্ন জাতির, ভাষার ও দেশের। সালামের শ্রেষ্ঠত্ব এখানে অনন্য। সালাম মহান আল্লাহর অভিবাদন, ফেরেশতাদের অভিবাদন, জান্নাতের অভিবাদন। সৃষ্টির পর আদম (আ.)-কে আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদেরকে সালাম দেওয়ার আদেশ করেছিলেন। এখানেই অভিবাদন হিসেবে সালামের অনন্যতা। নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন আল্লাহ আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করলেন ফেরেশতাদের দেখিয়ে বললেন, তুমি তাদেরকে সালাম দাও। তারপর শোনো তারা তোমাকে কি উত্তর দেয়। কারণ, (তাদের দেওয়া উত্তর) সেটা তোমার সম্ভাষণ। তোমার বংশধরদের সম্ভাষণ। আদম (আ.) তাদের বললেন, আসসালামু আলাইকুম। ফেরেশতারা জবাবে বলেন, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। তখন তারা যোগ করলেন, ওয়া রাহমাতুল্লাহ। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৩২৬)

সালাম মুসলমানদের ধর্মীয় অভিবাদন। স্বতন্ত্র ও অত্যন্ত মাধুর্যময় সম্ভাষণ। মুসলমানদের সভ্যতা ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র ও জাতিসত্তা বোধের প্রতীক।

সালামের গুরুত্ব ও প্রতিদান
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে সালামের আদেশ করেছেন। নবীজি (সা.) সবাইকে সালাম দিতেন, দিতে  উদ্বুদ্ধ করতেন। পারস্পরিক দেখা-সাক্ষাতে পরস্পরকে সালাম দেওয়ার প্রতি অনেক গুরুত্ব আরোপ করতেন। কেননা সালামে আল্লাহ তাআলার রহমত ও বরকত নাজিল হয়। পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তাআলা নিজে খুশি হন। হিজরতের পর মদিনায় পা রাখার পরপরই যেসব উপদেশ নবীজি (সা.) দিয়েছিলেন সালামের প্রচলন তার অন্যতম। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৪৮৫)
সালাম ইসলামের শ্রেষ্ঠতম আমলগুলোর একটি। নবীজি (সা.)-কে একজন জিজ্ঞাসা করল, ইসলামের শ্রেষ্ঠ আমল কোনটি? নবীজি বললেন, তুমি মানুষকে খাওয়াবে আর পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৬)

সালামের উত্তর দেওয়ার ব্যাপারেও ইসলামে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন তোমাদেরকে অভিবাদন করা হয়, তখন তোমরাও তা অপেক্ষা উত্তম প্রত্যাভিবাদন করবে অথবা তারই অনুরূপ করবে; নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৮৬)

সালাম হূদ্যতা বাড়ায় 
নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না ঈমান না আনা পর্যন্ত। আর ঈমান পূর্ণতা পাবে না যতক্ষণ না তোমরা একে অপরকে ভালোবাসো। আমি কি তোমাদের এমন একটি আমলের কথা বলবো, যে আমল করলে তোমরা একে অপরকে ভালোবাসবে? তোমাদের মধ্যে সালামের প্রচলন ঘটাও। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৪)

সালামের নিয়ম ও শিষ্টাচার
সালাম দিতে কার্পণ্য নয়। সালাম দিতেও হবে সঠিক উচ্চারণে যথাসময়ে। নামাজ, পানাহার, কোরআন তিলাওয়াত, অজুসহ কিছু আমলের সময় সালাম দেওয়া মাকরুহ। ফকিহ আলেমরা এমন অবস্থার সংখ্যা  বিশের অধিক বলেছেন। সালামের বাক্য হতে হবে শুদ্ধ। অশুদ্ধ উচ্চারণে বিকৃতি ঘটে অর্থের। আরবের ইহুদিরা ইচ্ছা করে বিকৃত উচ্চারণে সালাম দিলে তাদের নিন্দায় আয়াত নাজিল হয়েছিল। কে কাকে সালাম দেবে এ প্রসঙ্গে নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন, আরোহী পথচারীকে, পথিক উপবিষ্টকে, কম সংখ্যক অধিক সংখ্যককে এবং ছোট বড় কে সালাম দেবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস ৬২৩৩)

সালাম দেওয়া উচিত শিশুদেরও। এতে তারা সালামচর্চায় উদ্বুদ্ধ হয়। আনাস বিন মালিক (রা.) একবার শিশুদেরকে অতিক্রম করার সময় সালাম দিয়ে বললেন, নবীজি (সা.)-ও এভাবে সালাম দিতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬২৪৭)

সব সময় আগে সালাম দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত। নবীজি (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আগে সালাম দেবে সে আল্লাহ ও রাসুলের কাছে উত্তম ব্যক্তি। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২২১৯২)

এই অশান্ত অস্থির পৃথিবীতে আল্লাহ আমাদের জীবনের শান্তি দান করুন। সালামের রহমতও বরকত আমাদের জীবনে নসিব করুন। আমিন।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

কৃষকদের কষ্ট লাগবে জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিদর্শন করলেন পিআইও রাকিবুল ইসলাম

সালাম মুসলমানদের মুখে মুখে শান্তির বার্তা

আপডেট সময় : ০৮:৩০:৩৩ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

সালাম মানে শান্তি, কল্যাণ ইত্যাদি। পরস্পরকে সালাম দেওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা একে অপরের শান্তি কামনা করি। সামাজিক জীবনে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের ভেতর সালাম ছড়িয়ে দেয় ভালোবাসা, সম্প্রীতি আর সৌহার্দ্যের সৌরভ। শান্তি আর ভালোবাসার দ্যোতনা ছড়ানো এই শুভকামনা আমাদের সম্ভাষণ। মুসলমানদের অভিবাদন সালাম পারস্পরিক শান্তি ও নিরাপত্তামূলক একটি দোয়া।

আচার-অভ্যাস, অভিবাদন-সম্ভাষণ ইত্যাদি সংস্কৃতির এইসব উপাদান থেকে বিভিন্ন জাতির বৈশিষ্ট্য নিরূপণ হয়। পৃথিবীতে অনেক সম্ভাষণ আছে। বিভিন্ন জাতির, ভাষার ও দেশের। সালামের শ্রেষ্ঠত্ব এখানে অনন্য। সালাম মহান আল্লাহর অভিবাদন, ফেরেশতাদের অভিবাদন, জান্নাতের অভিবাদন। সৃষ্টির পর আদম (আ.)-কে আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদেরকে সালাম দেওয়ার আদেশ করেছিলেন। এখানেই অভিবাদন হিসেবে সালামের অনন্যতা। নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন আল্লাহ আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করলেন ফেরেশতাদের দেখিয়ে বললেন, তুমি তাদেরকে সালাম দাও। তারপর শোনো তারা তোমাকে কি উত্তর দেয়। কারণ, (তাদের দেওয়া উত্তর) সেটা তোমার সম্ভাষণ। তোমার বংশধরদের সম্ভাষণ। আদম (আ.) তাদের বললেন, আসসালামু আলাইকুম। ফেরেশতারা জবাবে বলেন, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। তখন তারা যোগ করলেন, ওয়া রাহমাতুল্লাহ। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৩২৬)

সালাম মুসলমানদের ধর্মীয় অভিবাদন। স্বতন্ত্র ও অত্যন্ত মাধুর্যময় সম্ভাষণ। মুসলমানদের সভ্যতা ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র ও জাতিসত্তা বোধের প্রতীক।

সালামের গুরুত্ব ও প্রতিদান
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে সালামের আদেশ করেছেন। নবীজি (সা.) সবাইকে সালাম দিতেন, দিতে  উদ্বুদ্ধ করতেন। পারস্পরিক দেখা-সাক্ষাতে পরস্পরকে সালাম দেওয়ার প্রতি অনেক গুরুত্ব আরোপ করতেন। কেননা সালামে আল্লাহ তাআলার রহমত ও বরকত নাজিল হয়। পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তাআলা নিজে খুশি হন। হিজরতের পর মদিনায় পা রাখার পরপরই যেসব উপদেশ নবীজি (সা.) দিয়েছিলেন সালামের প্রচলন তার অন্যতম। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৪৮৫)
সালাম ইসলামের শ্রেষ্ঠতম আমলগুলোর একটি। নবীজি (সা.)-কে একজন জিজ্ঞাসা করল, ইসলামের শ্রেষ্ঠ আমল কোনটি? নবীজি বললেন, তুমি মানুষকে খাওয়াবে আর পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৬)

সালামের উত্তর দেওয়ার ব্যাপারেও ইসলামে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন তোমাদেরকে অভিবাদন করা হয়, তখন তোমরাও তা অপেক্ষা উত্তম প্রত্যাভিবাদন করবে অথবা তারই অনুরূপ করবে; নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৮৬)

সালাম হূদ্যতা বাড়ায় 
নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না ঈমান না আনা পর্যন্ত। আর ঈমান পূর্ণতা পাবে না যতক্ষণ না তোমরা একে অপরকে ভালোবাসো। আমি কি তোমাদের এমন একটি আমলের কথা বলবো, যে আমল করলে তোমরা একে অপরকে ভালোবাসবে? তোমাদের মধ্যে সালামের প্রচলন ঘটাও। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৪)

সালামের নিয়ম ও শিষ্টাচার
সালাম দিতে কার্পণ্য নয়। সালাম দিতেও হবে সঠিক উচ্চারণে যথাসময়ে। নামাজ, পানাহার, কোরআন তিলাওয়াত, অজুসহ কিছু আমলের সময় সালাম দেওয়া মাকরুহ। ফকিহ আলেমরা এমন অবস্থার সংখ্যা  বিশের অধিক বলেছেন। সালামের বাক্য হতে হবে শুদ্ধ। অশুদ্ধ উচ্চারণে বিকৃতি ঘটে অর্থের। আরবের ইহুদিরা ইচ্ছা করে বিকৃত উচ্চারণে সালাম দিলে তাদের নিন্দায় আয়াত নাজিল হয়েছিল। কে কাকে সালাম দেবে এ প্রসঙ্গে নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন, আরোহী পথচারীকে, পথিক উপবিষ্টকে, কম সংখ্যক অধিক সংখ্যককে এবং ছোট বড় কে সালাম দেবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস ৬২৩৩)

সালাম দেওয়া উচিত শিশুদেরও। এতে তারা সালামচর্চায় উদ্বুদ্ধ হয়। আনাস বিন মালিক (রা.) একবার শিশুদেরকে অতিক্রম করার সময় সালাম দিয়ে বললেন, নবীজি (সা.)-ও এভাবে সালাম দিতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬২৪৭)

সব সময় আগে সালাম দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত। নবীজি (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আগে সালাম দেবে সে আল্লাহ ও রাসুলের কাছে উত্তম ব্যক্তি। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২২১৯২)

এই অশান্ত অস্থির পৃথিবীতে আল্লাহ আমাদের জীবনের শান্তি দান করুন। সালামের রহমতও বরকত আমাদের জীবনে নসিব করুন। আমিন।