এ বিষয় স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, আমতলী উপজেলাধীন হলদিয়া বাজার সংলগ্ন ( আয়রন ব্রীজ) লোহার সেতু পার হবার সময় বিয়ের বরযাত্রী বহন করা হাইএক্স মাইক্রোবাসটি পারাপারের সময় সেতুটি ভেঙ্গে মাইক্রোবাস সহ খালে ধসে পরে। এ সময় মাইক্রোবাসের ভিতরে থাকা নারী ও শিশু সহ ১০জনকে মৃত অবস্থায় স্থানীয়রা উদ্ধার করে। এ সময় স্থানীয়রা ৪ জনকে জীবত উদ্ধার করে।
শুক্রবার দুপুরে ভাগ্নির বিয়ে অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে ১৭জন যাত্রী নিয়ে শনিবার দুপুরে ছেলের বাড়িতে আসার সময় এ দূর্ঘটনা ঘটে। নিহত সবাই নারী এবং শিশু। বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণ হানির ঘটনায় এলাকা জুরে শোকের ছায়া নেমে আসে। নিহতের ১০জনের মধ্যে ৮জন শিবচর মাদরীপুরের বাসিন্দা এবং ২জন স্থানীয় গুরুদল গ্রামের বাসিন্দা বলে প্রাথমিকভাবে জানাযায়।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের গুরুদল গ্রামের মাসুম বিল্লাহ মনির হাওলাদারের মেয়ে হুমায়রা বেগমের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল শুক্রবার। ঐ অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে শনিবার দুপুর দেড় টার সময় তারা হাইএক্স মাইক্রো যোগে আমতলী আসছিল। পথিমধ্যে হাইএক্স গাড়ীটি হলদিয়া বাজার সংলগ্ন লোহার সেতু পার হওয়ার সময় মাঝ বরাবর ভেঙ্গে কচুরিপানায় ভরা খালে পরে তলিয়ে যায়। সেতু ভেঙ্গে মাইক্রোবাসটি খালে পরে যাওয়া শব্দ পেয়ে স্থানীয়রা উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসে। মুশল ধারে বৃষ্টি এবং খালে নেমে উদ্ধারের কোন সুযোগ না থাকায় উদ্ধার কাজে বিলম্বের ঘটনায় অনেকেই তখন পানিতেই প্রাণ হারান। পানির মধ্যে থাকা মাইক্রোবাসের মধ্য থেকে স্থানীয়রা একের পর এক নারী ও শিশুসহ ১০টি লাশ উদ্ধার করে ৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করে।
উদ্ধার হওয়া লাশ হলো শিবচর মাদরীপুরের মুনী বেগম(৪০), তার ছোট মেয়ে তাহিয়া (৭), বড় মেয়ে তাসফিয়া (১১), একই এলাকার ফরিদা বেগম (৫৫), রাইতি (৩০), ফাতেমা আক্তার (৪০), রুবী বেগম (৪০), হলদিয়া গ্রামের জহিরুল ইসলামের মেয়ে হৃদি (৫),তার মা জাকিয়া বেগম (৩০)। জীবিত উদ্ধার হওয়া ৪জন হলেন, মাহবুব খান, সোহেল খান, সুমা আক্তার ও দীশা আক্তার তারা সবাই শরিয়তপুরের বাসিন্দা।
এ বিষয় জীবিত উদ্ধার হওয়া মাহবুব খান বলেন, শুক্রবার আমরা ভাগ্নি হুমায়রা বেগমের বাড়ি হলদিয়া ইউনিয়নের গুরুদল গ্রামে যাই। সেখান থেকে একটি হাইএক্স মাইক্রো যোগে আজ শনিবার দুপুর ১টার সময় ভাগ্নি জামাইর আমতলীর বাড়ির অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য রওয়ানা করি। দুপুর দেড় টার সময় হলদিয়া বাজার সংলগ্ন একটি লোহার সেতু পার হওয়ার সময় হাইএক্স মাইক্রোবাসটি মাঝ বরাবর আসার পর আকস্মিক সেতুটির ২০ ফুট ধরে ধসে হাইএক্স মাইক্রোসহ কচুরি পানায় ভর্তি খালে পরে যায়। এর পর আর কিছুই বলতে পারি না। জ্ঞান ফিরে দেখি হাসপাতালে । আল্লায় মোগো বাচাইলেও সব শ্যাষ অইয়া গ্যাছে। ১০ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে ৮জন আমাদের শিবচর মাদরীপুরের সবাই স্বজন। অন্য দুজন আমতলীর তারাও আমাদের অত্মীয়। সব শ্যাষ অইয়া গ্যাছে এর চাইতে আমাদেরও মইর্যা যাওয়া ভালো ছিল।
স্থাণীয় হলদিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য সাইফ’ল ইসলাম সোহেল বলেন, সেতু ভেঙ্গে মাইক্রোটি খালে পরে যাওয়ার পর আমরা খবর পেয়ে দ্রুত উদ্ধার কাজে নেমে পরি। ৪ জনকে জীবত উদ্ধার করা গলেও বাকিদের সলিল সমাধি ঘটে। এত বড় দুর্ঘটনা এবং এতগুলো লাশ আমার জীবনেও আমি আর দেখি নাই।
দুর্ঘটনার পর খবর পেয়ে আমতলী উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। আবহাওয়া এবং মুশলধারে বৃষ্টির কারনে উদ্ধার কাজ কিছুটা বিলম্ব হয়। ঘটনার খবর পেয়ে আমতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা এ্যাডেভোকেট এম কাদের, নবনিবাীচত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ¦ গোলাম সরোয়ার ফোরকান, ভাইস চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন খান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জেসিকা তারতিলা যুথী, সহকারী কমিশনার ভুমি তাওরেক হাসান ,আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী সাখেয়াত হোসেন তপু, (তদন্ত) আমির হোসেন সেরনিয়াবাদ,, ইউপি চেয়ারম্যান আখতারুজামান বাদল খান, আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিক ঘটনাস্থলে থেকে উদ্ধার কাজ তদারকি করেন।
দূর্ঘটনার খবর পেয়ে বরগুনার সংসদস্য সদস্য গোলাম সরোয়ার টুকু বিকেলে আমতলী হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে নিহতদের পরিবারের সান্তনা দেন এবং সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।