করোনা সঙ্কটে দীর্ঘ আড়াই মাসেরও অদিক সময়ে ধরে বন্ধ রয়েছে দর্শনা চেকপোস্ট
নিউজ ডেস্ক:
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে জনশূন্য হয়েছে পড়েছে দর্শনা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। এতে করে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এ চেকপোস্টকে কেন্দ্র করে গড়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও হাজার হাজার খেটে খাওয়া মানুষ। তাই স্বল্প পরিসরে হলেও চেকপোস্টটি খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন কর্মহীন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভারত সরকার ১৩ মার্চ বিকেল থেকে দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা জয়নগর চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট যাত্রীদের ভারতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর দর্শনা চেকপোস্ট জনশূন্য হয়ে পড়েছে। বেকার হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। অন্য দিকে ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন সার্ভিস বন্ধ ঘোষণার পর থেকে খাঁ খাঁ করছে দর্শনা জয়নগর-গেদে চেকপোস্ট এলাকা। যেখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষের পদভারে মুখরিত থাকত, সেখানে এখন নেই কোনো কোলাহল। অলস সময় কাটাচ্ছেন পরিবহন কাউন্টারের লোকজন, আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট মালিক-কর্মচারী, ইমিগ্রেশন, কাস্টমস, আনসার সদস্যরা। নেই অটোচালকদের হাঁকডাক। সর্বত্র সুনসান নীরবতা। এ যেন অচেনা এক চেকপোস্ট।
চেকপোস্ট এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, চেকপোস্টকে কেন্দ্র করে এখানে ছোট-বড় দোকান রয়েছে শতাধিক। যাত্রীদের আনা-নেওয়ার জন্য রয়েছে পায়ে চালিত শত শত ভ্যানগাড়ি, ইজিবাইক, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার এবং হাজার হাজার অটোরিকশা। করোনার কারণে কয়েক মাস ধরে সবাই পুরোপুরি বেকার।
চা-দোকানি কিবরিয়া হোসেন বলেন, ‘আগে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২ হাজার টাকার বেচাকেনা করতাম। বর্তমানে শুধুমাত্র নিজের চা খাওয়ার জন্য দোকান খুলছি।’ ফাস্টফুডের দোকানদার মণ্টু বলেন, ‘করোনাভাইরাস আসার আগে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকার পণ্য বেচাকেনা করতাম। বর্তমানে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার বেচাকেনা হচ্ছে।’
১৯৪৭ সালে স্থাপিত হয় দর্শনা চেকপোস্ট। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হলে এটি বন্ধ হয়ে যায়। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পুনরায় ১৯৭৮ সালে চালু হয়। এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে এক ঘণ্টার জন্যও পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত বন্ধ হয়নি। অথচ করোনাভাইরাস সারা পৃথিবীর সঙ্গে সম্পূর্ণ আলাদা করে দিয়েছে দর্শনা আন্তর্জাতিক চেকপোস্টকে। করোনা সংক্রমণ রোধে ভারতে ভ্রমণ ও ভিসা স্থগিত ঘোষণার পর বিপাকে পড়েছেন অসহায় রোগী, ব্যবসায়ীরা এবং সব ধরনের মানুষ। এ দিকে পণ্য আমদানি-রপ্তানির ওপর সাময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে রেলপথে দর্শনা বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য স্বাভাবিক গতিতে চলছে। ইতিমধ্যে আড়াই মাস পর ৯ মে প্রথম ভারতীয় পেঁয়াজের একটি বড় চালান ঢুকেছে।
কে হাসান ট্রেডিংসের প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম জানান, দর্শনা রেলপথে ভারতীয় শুকনা ঝাল, আদা, পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। আমদানিকৃত মালামাল দর্শনা বন্দরে খালাস হওয়ার পর ট্রাকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নেয়া হচ্ছে। যার ফলে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
এদিকে দর্শনার সাথে রেল এবং সড়ক পথে যাত্রীদের যাতায়াত সুবিধাজনক হওয়ায় ঢাকা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, রাজশাহী, বগুড়া, মানিকগঞ্জ, মাগুরা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নাটোরসহ বিভিন্ন এলাকার পাসপোর্টধারী যাত্রীরা দর্শনা আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট হয়ে বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত করে থাকেন। প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার পাসপোর্টধারী যাত্রী দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করে থাকেন। প্রতি বছর দর্শনা বন্দরের মাধ্যমে আমদানি করা পণ্য ও পাসপোর্টধারী যাত্রীদের কাছ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে সরকার। আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন, সাধারণ ব্যবসায়ী, এলাকাবাসী ও ভারতে চিকিৎসারত রোগীদের জোর দাবি দর্শনা আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্প পরিসরে হলেও খুলে দেয়া হোক। তাহলে দুই দেশের সরকার যেমন রাজস্ব পাবে তেমনি উপকৃত হবে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ।
দর্শনা জয়নগর চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ইনচার্জ এসআই রাশেদ জানান, সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীযাত্রী ছাড়া অন্য পাসপোর্টযাত্রীদের যাতায়াত করতে দেয়া হচ্ছে না। আমরা ইমিগ্রেশনের ১৬ জন পুলিশ সদস্য, কাস্টমস, বিজিবি ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা প্রতিদিন ডিউটি করি। বিজিবির এফএস নুরুজ্জামান জানান, ‘আমি আমার কর্ম এলাকার মধ্যে থেকে কাজ করে যাচ্ছি।’