নিউজ ডেস্ক:আষাঢ়-শ্রাবণের বৃষ্টিহীনতা ঝিনাইদহের কৃষকদের ভাবিয়ে তুলেছে। মাঠের পর মাঠ ধানখেতগুলো পানির অভাবে চৌচির। স্যালোমেশিন দিয়ে সেচ দিতে দিতে কৃষকেরা হয়রান। ভাদ্র মাসে আকাশে মেঘের আনাগোনা থাকলেও বৃষ্টি নেই। পানির অভাবে আমনখেত বিবর্ণ হয়ে পড়েছে।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মুন্দিয়া গ্রামের কৃষক সাজু আহম্মেদ জানান, তিনি দুই বিঘা জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ করেছেন। কিন্তু এ বছর ঠিকমতো বৃষ্টি না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তিনি। পানির অভাবে মাঠের ধানগাছগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেকে অধিক পয়সা ব্যয় করে সেচ দিচ্ছেন।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি রোপা আমন মৌসুমে ঝিনাইদহ জেলায় ১ লাখ ৫ হাজার ৬৪৬ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু চাষ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ১২৫ হেক্টর জমি। যার মধ্যে বেশির ভাগ জমিতে চাষ হয়েছে স্বর্ণা জাত। এ ছাড়াও রয়েছে ব্রী-৪৯ জাত। কৃষি বিভাগের হিসাবে চাষকৃত জমি থেকে ৩ লাখ ৫৮৮ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হবে। ধান হবে ৪ লাখ ৬২ হাজার ৪৪৩ মেট্রিক টন। হিসাব অনুযায়ী, প্রতি একরে ধান উৎপাদন হওয়ার কথা ৪৫ মণ। অবশ্য কৃষকেরা বলছেন, এবার ধানগাছ যেভাবে বেড়ে উঠছিল, তাতে উৎপাদন আরও বেশি হতো। তাঁদের হিসাবে একরে ৫০ থেকে ৫৫ মণ ধান উৎপাদন হওয়ার কথা। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে ধানগাছ ঝিমিয়ে পড়ছে, এতে উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সদর উপজেলার বিষয়খালী গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি দুই বিঘা জমিতে স্বর্ণা জাতের ধানের চাষ করেছেন। তিনি জমি তৈরি, ধানগাছ রোপণ, আগাছা পরিষ্কারসহ একদফা সার-কীটনাশক দিয়েছেন। ধানগাছগুলোও তরতর করে বেড়ে উঠছিল। আশা ছিল, এক বিঘায় ১৮ থেকে ২০ মণ ধান পাবেন। কিন্তু পানির অভাবে হঠাৎ গাছগুলো থমকে গেছে। জমির মাটি ফেটে যাচ্ছে। এ সময় ধানের গোড়ায় বৃষ্টির পানি থাকে। কিন্তু এবার স্যালোমেশিন দিয়ে পানি নিতে হচ্ছে। এতে তাঁদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ঝিনাইদহের মাঠে এবার ধানখেত দেখে কৃষকের পাশাপাশি তাঁরাও খুব খুশি ছিলেন। আশা করেছিলেন, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ফলন পাবেন। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে খেত কিছুটা নষ্ট হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, এবার জুন মাসে ৯৬ মিলি মিটার, জুলাই মাসে ১৭১ মিলি মিটার ও আগস্ট মাসে ১৯৬ মিলি মিটার বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টি রোপা আমন চাষের জন্য খুবই সামান্য।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহের কৃষি বিভাগের উপপরিচালক আব্দুর রউফ জানান, বর্তমানে ধানগাছ যে স্তরে আছে, তাতে একটু পানি কম থাকলেও ফলনে তেমন ক্ষতি হবে না। তবে কৃষকের সেচ দিতে হলে খরচ বেশি হবে। তিনি বলেন, ধানগাছে যখন মোচা হতে থাকে, তখন পানি কম হলে ফলন কমে যায়। তিনি বলেন, এ বছর বৃষ্টির পানি কম হওয়ায় খুবই সমস্যা হচ্ছে। তবে এখনো তাঁরা আশাবাদী, দুই-তিন দিনের মধ্যে বৃষ্টি হলে সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, উঁচু জমিতে যাঁরা ধান চাষ করেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে একটু বেশি সমস্যা দেখা দিয়েছে।