নিউজ ডেস্ক:জীবননগরে শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা করে আবারও ২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। জীবননগর উপজেলার ৮টি রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (রস্ক ফেইজ-২) প্রকল্পের আওতায় আনন্দ স্কুলের টিসি শাহানারাসহ শিক্ষকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার জীবননগর সোনালী ব্যাংক থেকে শিক্ষার্থীরা টাকা তোলার পর এই আত্মসাতের অভিযোগ উঠে।
জানা গেছে, গত কয়েক দিন আগে জীবননগর সোনালী ব্যাংকে থেকে উপজেলার ২৩টি আনন্দ স্কুলের ৩৩৫ জন শিক্ষার্থীদের মাথাপিছু ১ হাজার ৫শ’ ২০টাকা হারে ৫ লাখ ৭৬ হাজার ২শ’ টাকা সরকারিভাবে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা থাকলেও উপজেলার ২৩টি আনন্দ স্কুলের টিসি শাহানারা ও শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের মাথাপিছু ৫২০ টাকা হারে মোট ১ লাখ ৭৪ হাজার ২শ’ টাকা তাদের হাতে প্রদান করেন। আর ১ হাজার টাকা করে মোট ৪ লাখ ২ হাজার টাকা বিভিন্ন খরচ দেখিয়ে কোমলমতি শিশুদের নিকট থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে। ৪ লাখ টাকার অভিযোগ থাকতে থাকতেই আবারও টিসি শাহানারা ও শিক্ষকরা একত্রিত হয়ে কোমলমতি শিশুদের সাথে প্রতারনা করে হাতিয়ে নিলো ৮৩ হাজার ১৬০টাকা। তবে এবার ব্যাংকের বাইরে থেকে অন্যপথ অবলম্বন করে স্কুলে এবং রাস্তার মাঝ থেকে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়েছে। আনন্দ স্কুলের ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফারাজানা খাতুন, বিথি খাতুন বলে ব্যাংক থেকে ১ হাজার ৫২০টাকা আমাদের হাতে দিয়ে দেয় বাড়িতে আসার সময় মুনজুরা আপা বলে তোমরা ৭৫০ টাকা রেখে বাকি ৭৭০ টাকা আমার কাছে দিয়ে দাও। এগুলো তোমাদের পরীক্ষার পর দিয়ে দিব। এই বলে আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যায়। একই অভিযোগ করে বাঁকা ইউনিয়নের প্রতাপপুর দক্ষিনপাড়া আনন্দ স্কুলের ৫ম শ্রেণীর ছাত্র শরিফুল ইসলাম, শাহাবুল বলে মুনজুরা আপা আমাদের সকলকে ডেকে বলে কেউ টাকা নিয়ে চলে যাবা না। সবাই আমার সাথে স্কুলে যাবে এই বলে আমাদের সকলকে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার পথিমধ্যে আমাদের কাছ থেকে ৭৭০টাকা করে নিয়ে নেয় আর বাকি ৭৫০টাকা আমাদের হাতে দিয়ে বলে এই টাকা নিয়ে বাড়ি যাও। আর বাদ বাকি টাকা তোমাদের পরীক্ষার পর দেওয়া হবে। এদিকে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ঘটনাটি অন্যদিকে প্রভাবিত করছেন টিসি শাহানারা ও শিক্ষকরা। বাঁকা ইউনিয়নের প্রতাপপুর দক্ষিনপাড়া আনন্দ স্কুলের শিক্ষক মুনজুরার সাথে কথা বললে তিনি বলেন আমি কোন শিক্ষার্থীর টাকা আত্মসাৎ করিনি। আমাকে যেভাবে বলা হয়েছে আমি তাই করেছি। এর বেশি আমি আর কিছুই বলতে পারবো না। অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে ভাড়াটে ছাত্র-ছাত্রী ও ভূয়া শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেন টিসি ও শিক্ষকরা। এছাড়াও যে সব ছাত্র-ছাত্রী স্কুলে আসে না, সে সব ছাত্র-ছাত্রীর টাকা টিসি শাহানারার নির্দেশে অন্য স্কুলের শিক্ষার্থী নিয়ে এসে ব্যাংকে স্বাক্ষর করে তুলে নিয়ে তা ভাগাভাগি করে থাকে। শুধু তাই নয় টিসি শাহানারার বিরুদ্ধে এর আগেও এ ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিলো এবং তা তদন্ত করা হয়েছিলো। কিন্তু এ ব্যাপারে কোন ফলাফল জানা যায়নি।
আনন্দ স্কুলের টিসি শাহানারা খাতুনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, টাকা আত্মসাতের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে বিষয়টি যদি সত্যি হয়, তাহলে যে সমস্ত শিক্ষক/শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে গত দিনের যে টাকা আত্মসাৎ করেছে সে বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন ওই দিন যে সমস্ত শিক্ষক টাকা নিয়েছিলো, তারা সবাই শিক্ষার্থীদের বাড়িতে যেয়ে টাকা ফেরত দিয়েছে। আর আমার বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ উঠেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ।
জীবননগর সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার আরিফুজ্জামানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, গত কয়েক দিন আগে ব্যাংক থেকে উপজেলায় ২৩টি আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে ১ হাজার ৫২০ টাকা প্রদান করা হয়। তবে অভিযোগ উঠেছিল আনন্দ স্কুলের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা করে কেটে রেখেছিলো। এ বিষয়টি আমি শোনা মাত্র শিক্ষা অফিসারকে জানিয়েছি। তাছাড়া ব্যাংক থেকে টাকা দেয়ার সময় আমরা শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড দেখে টাকা দিয়েছি। ব্যাংক থেকে কোন শিক্ষার্থীদের টাকা কম দেয়া হয়নি। গত দিনের মত গতকাল সোমবার একই ঘটনা ঘটে ব্যাংক থেকে শিক্ষার্থীদের ১৫২০টাকা দেওয়া হলেও কিছু শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ৭৫০টাকা করে দিয়ে বাকি টাকা নিজের কাছে রেখে দিয়েছে বলে অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে। এ বিষয়টি আমরা শিক্ষা অফিসার জানিয়েছি।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, টাকা আত্মসাতের বিষয়টি আমি শুনেছি, এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিরাজুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আনন্দ স্কুলের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের যে টাকা আত্মসাতের ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কেউ কোন অভিযোগ করেনি তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহন করবো। এদিকে শিক্ষার্থীদের টাকা আত্মসাৎ করায় ঘটনায় ফুসে উঠেছে অভিভাবকরা যে কোন সময় হতে পারে একটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা।