ইবি প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এসএমএ ফায়েজ বলেছেন, হায়ার এডুকেশন এক্সিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (হিট) প্রকল্পে উপ-প্রকল্প মূল্যায়নে শতভাগ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) ইউজিসি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে হিট প্রকল্পের সাব-প্রজেক্ট নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং বাস্তবায়ন সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর বিষয়ক আলোচনা হয়। ইউজিসির জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক ড. শামসুল আরেফিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
প্রফেসর ড. ফায়েজ বলেন, “হিট প্রকল্পের বিভিন্ন সাব-প্রজেক্ট মূল্যায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ক্ষেত্রে ইউজিসি সর্বোচ্চ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রকল্প মূল্যায়নের প্রতিটি ধাপ আমি নিজে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “ইউজিসিতে যোগদানের পূর্বে আমি সততা ও নিষ্ঠার সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। আমার দীর্ঘ কর্মজীবনের অর্জিত সম্মান যেন কোনোভাবেই ক্ষুণ্ণ না হয়, সে বিষয়ে আমি সচেতন।”
উচ্চশিক্ষার অংশীজন ও গণমাধ্যমকর্মীদের গঠনমূলক সমালোচনা কামনা করে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, “উপ-প্রকল্প প্রস্তাব জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে কারো সুযোগ নেই। প্রত্যেকটি প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কমিটি ও উপাচার্যের অনুমোদনের মাধ্যমে জমা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আবেদনকারীর রাজনৈতিক আদর্শ বিবেচ্য নয়। নিরপেক্ষ রিভিউয়ার এবং যোগ্য শিক্ষক-গবেষকদের মাধ্যমে প্রকল্প মূল্যায়ন করা হয়েছে।” তিনি আরও জানান, “উপ-প্রকল্প নির্বাচনে দেশ ও জাতির স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, প্রফেসর ড. মো. সাইদুর রহমান, প্রফেসর ড. মাছুমা হাবিব ও প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আইয়ুব ইসলাম। হিট প্রকল্পের পরিচালক প্রফেসর ড. আসাদুজ্জামান প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও উপ-প্রকল্প নির্বাচনের প্রক্রিয়ার বিভিন্ন দিক উপস্থাপন করেন।
ড. শামসুল আরেফিনের সঞ্চালনায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ইউজিসির সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলামসহ বিভাগীয় প্রধান, হিট প্রকল্প ও ইউজিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, আগামীকাল (২৭ আগস্ট) নির্বাচিত ১৫১টি উপ-প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইউজিসি চুক্তি স্বাক্ষর করবে। পাঁচ বছর মেয়াদি হিট প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ১৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৫০.৯৬ শতাংশ অর্থায়ন করবে বাংলাদেশ সরকার এবং বাকি ৪৯.৪ শতাংশ বহন করবে বিশ্বব্যাংক।
হিট প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে—বাজার চাহিদাভিত্তিক কারিকুলাম প্রণয়ন, উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিজিটাল সংযোগ বৃদ্ধি, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠা, বিডিরেনের সক্ষমতা বৃদ্ধি, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের কার্যক্রম বেগবানকরণ, ইনোভেশন ল্যাব স্থাপন, এবং প্রতিযোগিতামূলক গবেষণাভিত্তিক উদ্ভাবনী প্রকল্প চালুর উদ্যোগ।
তবে গত রোববার (১০ আগস্ট) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) একদল শিক্ষক হিট প্রকল্পে অনিয়ম, দুর্নীতি ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলেন। এ সময় তারা প্রজেক্ট নির্বাচনে মেধা ও যোগ্যতার যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়া, রাজনৈতিক প্রভাব, স্বজনপ্রীতি, এবং স্বচ্ছ রিভিউ প্রক্রিয়ার অভাবসহ মোট ১২টি অভিযোগ তুলে ধরেন।
তাদের অভিযোগ অনুযায়ী, নির্বাচিত প্রকল্পের প্রায় ৪০ শতাংশ গবেষকের টোটাল সাইটেশন ১০০ এর কম এবং ৫০০ সাইটেশনের নিচে থাকা গবেষকদের সংখ্যাও প্রায় ৪০ শতাংশ। এছাড়া রিভিউ প্রক্রিয়ার মান, স্বার্থের দ্বন্দ্ব, প্রকৃত ব্লাইন্ড পিয়ার রিভিউ না হওয়া, বিভাগভিত্তিক বৈষম্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি অবহেলা, এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় অর্থ অপচয়সহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করেন তাঁরা।