নিউজ ডেস্ক:
গোটা বিশ্বের কাছে তিনিই ‘গতি সম্রাট’। নিজের তৈরি করা একের পর এক রেকর্ড ভেঙেছেন নিজেই।
হয়তো এই শেষ। আর কখনও ট্র্যাকে পা রাখবেন না। কারণ কোনও কিছুই থাকে না চিরকাল। অনন্তদিন ধরে চলতে পারে না। তাই অবসরের সিদ্ধান্ত আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন।
বিদায় নেওয়ার আগে জিতেই থামতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্ত তা আর হল না। শেষ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০ মিটার রেস শেষ করলেন তৃতীয় হয়ে। তাই রেস শেষ হতেই মনের কোণে জমতে থাকে মেঘ। স্বাভাবিকভাবেই মন খারাপ। আর বিদায় মুহূর্তে গোটা দুনিয়া অধীর অপেক্ষায় থাকবে সদ্য প্রাক্তনের মুখ থেকে কিছু শোনার জন্য! আসলে অসম্ভব ‘সেন্স অফ হিউমার’র অধিকারী উসাইন বোল্টকে ভুলবেন কেমন করে তার ভক্তরা? তাই ট্র্যাকে হেরে গেলেও ভক্তদের মনে তিনিই জয়ী।
তাকে ‘বিদ্যুৎ’ বলে চেনে গোটা বিশ্ব। কিন্তু জীবনের শেষ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের চিন্তাটা আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল খানিকক্ষণ। কিন্তু তার পরেই মনে হয়, এই খেলাটাও তো দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাবে! আসলে বেশ কয়েকদিন আগেই ঘোষণা করেছিলেন লন্ডনে আয়োজিত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেই হতে চলেছে তার শেষ রেস। তাই গোটা বিশ্ব অপেক্ষায় ছিল শেষবার ‘বিদ্যুৎ’ চমক দেখার। তা আর হল না!
ক্রীড়া জগতে সর্বকালের অন্যতম সেরা অঘটন ঘটিয়ে উসাইন বোল্টকে হারিয়ে দিলেন জাস্টিন গ্যাটলিন। জ্যামাইকান কিংবদন্তিকে হারিয়েও তাকে স্যালুট জানান এই মার্কিন অ্যাথলিটিকস। রেস জিতলেও বোল্টই যে সেরা যেন সেটা স্বীকার করে নেন গ্যাটলিন।
২০১২ অলিম্পিকের পর থেকেই বহুবার চোট পেয়েছেন জ্যামাইকান এই কিংবদন্তি। ২০১৬ রিও’তে পুরো ফিট না হয়েও সোনা জিতেছিলেন তিনি। ব্রাজিলে সোনা জেতার পরই ঘোষণা করেছিলেন এটাই তার শেষ অলিম্পিক। আসলে মন চাইলেও শরীর যে টানছে না। তাই বাধ্য হয়ে চলতি বছরেই বোল্ট ঘোষণা করেন আর না। অগস্টে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের পরই ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডকে অবসর জানাবেন তিনি। ফর্মে যে নেই সেটা বারবার বোঝা যাচ্ছিল।
হিটে খুব একটা ভালো সময় করতে পারেননি। অনেকে ভেবেছিলেন রেসে ঠিক বাজিমাত করবেন ‘বিদ্যুৎ’। কিন্তু জাস্টিন গ্যাটলিন নামের এক হারিয়ে যাওয়া নায়কই পরাজিত করলেন তাকে।
রেকর্ড দিয়ে বিচার করলে বোল্টের তুলনা একমাত্র তিনিই। প্রথম বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ লড়েছিলেন ২০০৫। সেবার অবশ্য খালি হাতেই ফিরেছিলেন সর্বকালের সেরা স্পিন্টার। ব্যর্থতাই তো প্রকৃত চ্যাম্পিয়নদের সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে! ঠিক এটাই হয়েছিল বোল্টের।
২০০৭ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম পদক জয়ের স্বাদ পান তিনি। এক বছর পরেই ২০০৮ মে’তে প্রথমবার বিশ্বরেকর্ড গড়েন তিনি। ১০০ মিটার দূরত্ব পার করতে সময় নেন ৯.৭২ সেকেন্ড। সেই শুরু হয় বোল্ট যুগের। এরপর টানা ২০১৬ অলিম্পিক পর্যন্ত অপরাজেয় ছিলেন তিনি। ২০১১ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ফলস্ স্টার্টের জন্য ১০০ মিটার অংশ নিতে পারেননি। এছাড়া ১০০ মিটার, ২০০ মিটার, ৪x১০০ মিটার রিলে কোনও বিভাগেই তাকে হারাতে পারেননি কেউ৷
তবে সকলকেই তো থামতে হয়। আর এটাই কালের নিয়ম। ডন ব্র্যাডম্যান থেকে পেলে কিংবা মাইকেল জর্ডন থেকে মোহাম্মাদ আলী অবসর নেওয়ার পর ভক্তদের মনের মণিকোঠায় রয়ে গেছেন। উসাইন বোল্টও সেভাবেই রয়ে যাবেন আমাদের মনে। সেই জন্যই ভক্তদের ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি ট্র্যাক অ্যান্ডের ফিল্ডের কিংবদন্তি। তাই ভক্তদের কাছে তার বার্তা,’আপনাদের কাছ থেকে যত ভালোবাসা পেয়েছি সেই অনুভূতিটা বলে বোঝানো যায় না। এর চেয়ে বেশি আর কিছু বলতে পারছি না। কখনও ভাবিনি যে এত রেকর্ড করব।
ক্যারিয়ারের শুরুতে একমাত্র লক্ষ্য ছিল অলিম্পিকে ২০০ মিটার রেস জেতা। এত রেকর্ড করা সম্ভব হত না যদি না আপনাদের সমর্থন থাকত। সমর্থন করার জন্য এসময় তিনি সকলকে ধন্যবাদ জানান।