শিরোনাম :
Logo বীরগঞ্জে ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ডিপিইও নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানববন্ধন। Logo টাকার জন্য হরিদাস বাবু’কে হয়রানী তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার অনুসন্ধানে প্রমাণ। Logo খুবির সঙ্গে গবেষণা সহযোগিতায় আগ্রহ জাপানি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের Logo শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পথে ট্রাকের ধাক্কায় এনজিও কর্মীর মৃত্যু Logo সাতক্ষীরায় রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ তরুণী, থানায় সাধারণ ডায়েরি Logo আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস ২০২৫ উপলক্ষে কয়রায় র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত Logo দর্শনা থানা পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান, ৪ কেজি গাঁজাসহ আটক ১ Logo জীবননগরে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০২৫ উদযাপন Logo আইএফএডিকে বাংলাদেশের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনের প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার Logo চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ এলাকায় বিষাক্ত মদপানে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।

বরকতময় শবে বরাত !

  • amzad khan
  • আপডেট সময় : ০৩:০০:৩১ অপরাহ্ণ, রবিবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৭
  • ৭৮২ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক:

হাদিস শরিফে শবেবরাতের বিশেষ ফয়েজ ও বরকতের কথা উল্লেখ রয়েছে। এ বরকত হাসিল হয় আমলের মাধ্যমে। তাই এটি হলো আমলের রাত, ইবাদতের রাত।

অতীব পরিতাপের বিষয় যে, আমরা জযবার কারণে অনেক সময় উপকারের নিয়তে অপকার করে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হই। অনেক সময় শরিয়ত এবং সুন্নতের সীমারেখা অতিক্রম করে বসি।

এ রাতে যাদের ভাগ্যে কল্যাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে, যাদের দোয়া মঞ্জুর করা হবে, তারা বড়ই ভাগ্যবান। তারা মহান আল্লাহপাকের প্রিয় বান্দা। যারা তাদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করে তাদের আশপাশে থাকে, তাদের সঙ্গে উঠাবসা করে মুহাব্বত ও শ্রদ্ধা রাখে, আল্লাহপাক তাদের বঞ্চিত করেন না বলে ঘোষণা করা হয়েছে। রসুলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এদিকে ইঙ্গিত করে হাদিসে কুদসিতে উল্লেখ করেন, তারা পুণ্যশীল জামাতের সহযাত্রী, তাদের বঞ্চিত করা হবে না।

আসলে আমাদের এমন যোগ্যতা নেই যে, আল্লাহপাকের শান অনুযায়ী কোনো আমল এই রাতে তার দরবারে পেশ করব। তাহলে আমরা আল্লাহর রহমত এবং মাগফিরাতের অধিকারী কীভাবে হতে পারি? হতে পারি এভাবে যে, এ রাতে আমরা আল্লাহর প্রিয়জনদের সাদৃশ্য অবলম্বন করব, তাদের সঙ্গে বসব, তারা যা করে তাই করব। এ রাতের ফজিলতের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, অন্যান্য রাতে আল্লাহপাক শেষ রাতে বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য, বিপদমুক্ত করার জন্য এবং হালাল রিজিক প্রদানের জন্য আহ্বান করেন, আর এ রাতে প্রথম রাত থেকেই আহ্বান জানাতে থাকেন। ফেরেশতাদের আগমনও প্রথম রাত থেকেই শুরু হয়ে যায়, তারা মানুষের জন্য আল্লাহর দরবারে কল্যাণের দোয়া করতে থাকে। হাদিসপাকে আছে যে, শবেবরাতে অসংখ্য অগণিত ফেরেশতার আগমন ঘটে।

হজরত জিবরাইল (আ.) পাখির ঝাঁকের ন্যায় অসংখ্য ফেরেশতাকে নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন এবং সমগ্র পৃথিবীতে বিচরণ করেন। তারা ইবাদতে নিমগ্ন মানুষের নাম, ঠিকানা এবং আমলসমূহের সূচিপত্র তৈরি করে মহান আল্লাহপাকের দরবারে জমা দিয়ে থাকেন।

আল্লাহপাক মানুষের জীবন-মৃত্যুর আগে-পরের সবকিছু জানা সত্ত্বেও কেন ফেরেশতাদের এ রিপোর্ট দান করার ব্যবস্থা? এর রহস্য তিনিই ভালো জানেন। তবে মানব সৃষ্টির প্রথম পর্যায়ে ফেরেশতাদের ধারণা ছিল যে, মানব জাতি পৃথিবীতে ফেতনা-ফাসাদের মাধ্যমে চরম বিপর্যয় সৃষ্টি করবে, আল্লাহর নাফরমানিতে সমগ্র পথিবীতে জটিলতার সৃষ্টি হবে। এরা আল্লাহপাকের ইবাদত এবং দাসত্বের যথাযথ হক আদায়ে ব্যর্থ হবে। তারা এ ব্যাপারে আল্লাহপাকের দরবারে আবেদন-নিবেদনও পেশ করেছিল। অথচ এই মানুষের মধ্যেই আছেন মাকামে বেলায়েত এবং রিসালাতের যোগ্যতার অধিকারী নবী-অলিগণ। আল্লাহপাকের সৃষ্টির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তাদের মাধ্যমেই সফল হবে। তারাই হবে আল্লাহপাকের গৌরব ও কৃতিত্বের পাত্র। হাদিসেপাকে আছে, এ রাতে আল্লাহপাক মানুষকে নিয়ে ফেরেশতাদের সম্মুখে গৌরববোধ করেন। এ জন্যই হয়তো ফেরেশতাদের মাধ্যমে তাদের অবস্থান নির্ধারণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে।

অপর এক হাদিসে রয়েছে যে, ফেরেশতারা আল্লাহপাককে মানুষের ইবাদত, আমল-আখলাক সম্পর্কে অবহিত করে বলে যে, তারা তাদের কৃত গুনাহ খাতার জন্য অশ্রুসিক্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করছে। জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাত লাভের জন্য মুনাজাত করছে। তখন আল্লাহপাক ফেরেশতাদের সাক্ষী রেখে উপস্থিত সব মানুষের প্রতি ক্ষমা ঘোষণা করেন। আল্লাহপাক সমবেত সবারই প্রতি ক্ষমা ঘোষণার ফলে ফেরেশতারা বলেন, হে আল্লাহ! অমুক লোকটা তো এমনতেই তাদের সঙ্গে বসে আছে। তার প্রতি ক্ষমা ঘোষণার হেতু কী? তখন আল্লাহপাক বলেন, আমার প্রিয় বান্দার সাহচর্যে যারা থাকে আমি তাদের সম্মানার্থে ওদেরকেও ক্ষমা করে থাকি। যারা তাদের সহকর্মী হয়, তাদের বঞ্চিত করা হয় না।

এই রাতে আমরা সবাই আল্লাহর কাছে আবেদন-নিবেদন করব এবং অশ্রুসিক্ত হয়ে আল্লাহর প্রিয়জনদের পাশে থেকে তার দরবারে এভাবে প্রার্থনা করব, হে আল্লাহ! আমরা অপরাধী! তোমার দরবারে পেশ করার মতো কোনো যোগ্যতা আমাদের নেই, তবে আমরা তোমাকে, তোমার প্রিয় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, অন্তরে রয়েছে তোমার প্রতি অনুরাগ, জাহান্নামের ভয়, জান্নাত লাভের কামনা, তোমার করুণার কোনো শেষ নেই, তুমি করুণা করে আমাকে মানুষরূপে সৃজন করেছ, লক্ষ-কোটি নেয়ামতদানে বাধিত করেছ। আর মহান এ রাতে তোমার দরবারে তোমার প্রিয়জনদের সঙ্গে বসে মোনাজাতের সুযোগ দিয়েছ। হে রাহমানুর রাহীম! তুমি করুণা করে আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার সন্তান-সন্তুতি, আমার পরিবার-পরিজন, আমার দেশ ও দেশবাসী এবং সব উম্মতকে তুমি ক্ষমা করে দাও। তোমার অলি বুজুর্গদের তুফাইলে, তাদের বরকতে দয়া করে তোমার গোলাম বানিয়ে নাও। জীবিত এবং মৃত সবাইকে ক্ষমা করে দাও। তোমার বিশেষ রহমতের অধিকারী বানাও। অতীতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি, আর বর্তমান ও ভবিষ্যতে সিরাতে মুস্তাকিমের ওপর কায়েম দায়েম থাকার জন্য মোনাজাত করছি।

লেখক : খতিব গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

বীরগঞ্জে ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ডিপিইও নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানববন্ধন।

বরকতময় শবে বরাত !

আপডেট সময় : ০৩:০০:৩১ অপরাহ্ণ, রবিবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৭

নিউজ ডেস্ক:

হাদিস শরিফে শবেবরাতের বিশেষ ফয়েজ ও বরকতের কথা উল্লেখ রয়েছে। এ বরকত হাসিল হয় আমলের মাধ্যমে। তাই এটি হলো আমলের রাত, ইবাদতের রাত।

অতীব পরিতাপের বিষয় যে, আমরা জযবার কারণে অনেক সময় উপকারের নিয়তে অপকার করে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হই। অনেক সময় শরিয়ত এবং সুন্নতের সীমারেখা অতিক্রম করে বসি।

এ রাতে যাদের ভাগ্যে কল্যাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে, যাদের দোয়া মঞ্জুর করা হবে, তারা বড়ই ভাগ্যবান। তারা মহান আল্লাহপাকের প্রিয় বান্দা। যারা তাদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করে তাদের আশপাশে থাকে, তাদের সঙ্গে উঠাবসা করে মুহাব্বত ও শ্রদ্ধা রাখে, আল্লাহপাক তাদের বঞ্চিত করেন না বলে ঘোষণা করা হয়েছে। রসুলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এদিকে ইঙ্গিত করে হাদিসে কুদসিতে উল্লেখ করেন, তারা পুণ্যশীল জামাতের সহযাত্রী, তাদের বঞ্চিত করা হবে না।

আসলে আমাদের এমন যোগ্যতা নেই যে, আল্লাহপাকের শান অনুযায়ী কোনো আমল এই রাতে তার দরবারে পেশ করব। তাহলে আমরা আল্লাহর রহমত এবং মাগফিরাতের অধিকারী কীভাবে হতে পারি? হতে পারি এভাবে যে, এ রাতে আমরা আল্লাহর প্রিয়জনদের সাদৃশ্য অবলম্বন করব, তাদের সঙ্গে বসব, তারা যা করে তাই করব। এ রাতের ফজিলতের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, অন্যান্য রাতে আল্লাহপাক শেষ রাতে বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য, বিপদমুক্ত করার জন্য এবং হালাল রিজিক প্রদানের জন্য আহ্বান করেন, আর এ রাতে প্রথম রাত থেকেই আহ্বান জানাতে থাকেন। ফেরেশতাদের আগমনও প্রথম রাত থেকেই শুরু হয়ে যায়, তারা মানুষের জন্য আল্লাহর দরবারে কল্যাণের দোয়া করতে থাকে। হাদিসপাকে আছে যে, শবেবরাতে অসংখ্য অগণিত ফেরেশতার আগমন ঘটে।

হজরত জিবরাইল (আ.) পাখির ঝাঁকের ন্যায় অসংখ্য ফেরেশতাকে নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন এবং সমগ্র পৃথিবীতে বিচরণ করেন। তারা ইবাদতে নিমগ্ন মানুষের নাম, ঠিকানা এবং আমলসমূহের সূচিপত্র তৈরি করে মহান আল্লাহপাকের দরবারে জমা দিয়ে থাকেন।

আল্লাহপাক মানুষের জীবন-মৃত্যুর আগে-পরের সবকিছু জানা সত্ত্বেও কেন ফেরেশতাদের এ রিপোর্ট দান করার ব্যবস্থা? এর রহস্য তিনিই ভালো জানেন। তবে মানব সৃষ্টির প্রথম পর্যায়ে ফেরেশতাদের ধারণা ছিল যে, মানব জাতি পৃথিবীতে ফেতনা-ফাসাদের মাধ্যমে চরম বিপর্যয় সৃষ্টি করবে, আল্লাহর নাফরমানিতে সমগ্র পথিবীতে জটিলতার সৃষ্টি হবে। এরা আল্লাহপাকের ইবাদত এবং দাসত্বের যথাযথ হক আদায়ে ব্যর্থ হবে। তারা এ ব্যাপারে আল্লাহপাকের দরবারে আবেদন-নিবেদনও পেশ করেছিল। অথচ এই মানুষের মধ্যেই আছেন মাকামে বেলায়েত এবং রিসালাতের যোগ্যতার অধিকারী নবী-অলিগণ। আল্লাহপাকের সৃষ্টির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তাদের মাধ্যমেই সফল হবে। তারাই হবে আল্লাহপাকের গৌরব ও কৃতিত্বের পাত্র। হাদিসেপাকে আছে, এ রাতে আল্লাহপাক মানুষকে নিয়ে ফেরেশতাদের সম্মুখে গৌরববোধ করেন। এ জন্যই হয়তো ফেরেশতাদের মাধ্যমে তাদের অবস্থান নির্ধারণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে।

অপর এক হাদিসে রয়েছে যে, ফেরেশতারা আল্লাহপাককে মানুষের ইবাদত, আমল-আখলাক সম্পর্কে অবহিত করে বলে যে, তারা তাদের কৃত গুনাহ খাতার জন্য অশ্রুসিক্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করছে। জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাত লাভের জন্য মুনাজাত করছে। তখন আল্লাহপাক ফেরেশতাদের সাক্ষী রেখে উপস্থিত সব মানুষের প্রতি ক্ষমা ঘোষণা করেন। আল্লাহপাক সমবেত সবারই প্রতি ক্ষমা ঘোষণার ফলে ফেরেশতারা বলেন, হে আল্লাহ! অমুক লোকটা তো এমনতেই তাদের সঙ্গে বসে আছে। তার প্রতি ক্ষমা ঘোষণার হেতু কী? তখন আল্লাহপাক বলেন, আমার প্রিয় বান্দার সাহচর্যে যারা থাকে আমি তাদের সম্মানার্থে ওদেরকেও ক্ষমা করে থাকি। যারা তাদের সহকর্মী হয়, তাদের বঞ্চিত করা হয় না।

এই রাতে আমরা সবাই আল্লাহর কাছে আবেদন-নিবেদন করব এবং অশ্রুসিক্ত হয়ে আল্লাহর প্রিয়জনদের পাশে থেকে তার দরবারে এভাবে প্রার্থনা করব, হে আল্লাহ! আমরা অপরাধী! তোমার দরবারে পেশ করার মতো কোনো যোগ্যতা আমাদের নেই, তবে আমরা তোমাকে, তোমার প্রিয় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, অন্তরে রয়েছে তোমার প্রতি অনুরাগ, জাহান্নামের ভয়, জান্নাত লাভের কামনা, তোমার করুণার কোনো শেষ নেই, তুমি করুণা করে আমাকে মানুষরূপে সৃজন করেছ, লক্ষ-কোটি নেয়ামতদানে বাধিত করেছ। আর মহান এ রাতে তোমার দরবারে তোমার প্রিয়জনদের সঙ্গে বসে মোনাজাতের সুযোগ দিয়েছ। হে রাহমানুর রাহীম! তুমি করুণা করে আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার সন্তান-সন্তুতি, আমার পরিবার-পরিজন, আমার দেশ ও দেশবাসী এবং সব উম্মতকে তুমি ক্ষমা করে দাও। তোমার অলি বুজুর্গদের তুফাইলে, তাদের বরকতে দয়া করে তোমার গোলাম বানিয়ে নাও। জীবিত এবং মৃত সবাইকে ক্ষমা করে দাও। তোমার বিশেষ রহমতের অধিকারী বানাও। অতীতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি, আর বর্তমান ও ভবিষ্যতে সিরাতে মুস্তাকিমের ওপর কায়েম দায়েম থাকার জন্য মোনাজাত করছি।

লেখক : খতিব গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ।