নিউজ ডেস্ক:
সূরা বনি-ইসরাইলের ১নং আয়াতে মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন— পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দা মুহাম্মদ (সা.)-কে তাঁর নিদর্শনসমূহ দেখানোর জন্য রাতে ভ্রমণ করিয়েছেন। মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত-যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি-যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল। আলোচ্য আয়াতে ইসরা ও মিরাজের বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। মিরাজের রজনিতে রসুল (সা.)-এর সমগ্র সফর যে শুধু আত্মিক ছিল না বরং মানুষের সফরের মতো দৈহিক ছিল, একথা পবিত্র কোরআন ওই বক্তব্য ও অনেক মুতাওয়াতির হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। (মুতাওয়াতির হাদিস বলতে সংক্ষেপে আমরা বুঝি, যা রসুল (সা.)-এর পর থেকে আমাদের পর্যন্ত একাধিক বর্ণনাকারীর মাধ্যমে সমানভাবে বর্ণিত হয়ে এসেছে। এত বেশি রাবী মুতাওয়াতির হাদিস বর্ণনা করেছেন তাদের মিথ্যাবাদী বলা অসম্ভব। আল্লাহপাক আয়াতের শুরুতে ‘সুবহান’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। এই শব্দটি প্রত্যেক আশ্চর্যজনক ও বিস্ময়কর বিষয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়। যেমন— আমাদের সামনে যদি কোনো আশ্চর্যজনক ও বিস্ময়কর বিষয় ঘটে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে বলি ‘সুবহানাল্লাহ’। অনুরূপ আল্লাহতায়ালা এখানে ‘সুবহান’ শব্দ উল্লেখ করে দুনিয়াবাসীকে বুঝিয়ে দিয়েছেন আমি রাতের কিছু অংশে আমার হাবীব মুহাম্মদ (সা.)-কে ঊর্ধ্বজগতে ভ্রমণ করিয়েছি তা বড়ই আশ্চর্যজনক বিষয়। বোঝা গেল রসুল (সা.)-এর মিরাজ সশরীরে হয়েছে। কারণ যদি মিরাজ শুধু আত্মিক বা স্বপ্নযোগে সংঘটিত হতো, তবে এতে আশ্চর্যের কি আছে? স্বপ্নে তো প্রত্যেক ব্যক্তিই দেখতে পারে যে, সে আকাশে মনের আনন্দে উড়ছে, বাংলাদেশের মানুষ মুহূর্তের মধ্যে সমগ্র দুনিয়া ভ্রমণ করছে। কিন্তু বাস্তবতার সঙ্গে তার কোনো মিল নেই। কারণ বিষয়টি এমন কোনো আশ্চর্যজনক বিষয় নয় যার আলোচনা করা যায়। তাফসিরে কুরতুবীতে হজরত উম্মে হানী (রা.)-এর একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রসুল (সা.) যখন মিরাজের ঘটনা হজরত উম্মে হানী (রা.)-এর কাছে বর্ণনা করলেন, তখন তিনি পরামর্শ দিলেন যে, আপনি কারও কাছে এ কথা প্রকাশ করবেন না, প্রকাশ করলে কাফেররা আপনার প্রতি আরও বেশি মিথ্যারোপ করবে। এখানে যদি ব্যাপারটি শুধু আত্মিক বা স্বপ্নের মাধ্যমেই হতো, তবে কাফেরদের মিথ্যারোপ করার কী কারণ থাকতে পারে? তা বোধগম্য নয়। পরে যখন রসুল (সা.) মিরাজের ঘটনা কাফেরদের সামনে প্রকাশ করলেন, তখন কাফেররা প্রায় সবাই একবাক্যে রসুল (সা.)-এর কথাকে অবিশ্বাস ও ঠাট্টা-বিদ্রূপ করল। এমনকি কতক নও-মুসলিম এ সংবাদ শুনে ধর্মত্যাগী হয়ে গেল। ব্যাপারটি শুধু যদি স্বপ্নের মাধ্যমেই হয়ে থাকে, তাহলে এত সব তুলকালাম কাণ্ড ঘটার কারণ কী ছিল? তাফসিরে ইবনে কাছিরে ইসরার সব হাদিসকে মুতাওয়াতির হাদিস হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন এবং তিনি তাঁর তাফসির গ্রন্থে ২৫ জন সাহাবির নাম উল্লেখ করেছেন যাদের থেকে মিরাজের হাদিস বর্ণিত হয়েছে এবং তিনি সাহাবিদের সব রেওয়াত একসঙ্গে উল্লেখ করার পর বলেছেন, মিরাজের ঘটনা সম্পর্কে ঐকমত্য রয়েছে যে রসুল (সা.)-এর মিরাজ সশরীরে হয়েছে। আল্লামা কাযী আয়ায (রহ.) আর কিতাব ‘শেফাতে’ মিরাজের বিস্তারিত আলোকপাত করেছেন। কিছু কিছু মানুষের এক স্বভাব আছে, যদি কারও কোনো কিছু বুঝে না আসে তখন সে তা অস্বীকার করে। বর্তমান আধুনিক বিশ্বের বিশ্বায়ন রসুল (সা.)-এর মিরাজ সশরীরে হয়েছে, এর পক্ষে অনেক বড় দলিল। কারণ বর্তমান উন্নত বিশ্বে এমন এমন কতিপয় বস্তুর আবিষ্কার হয়েছে যা অতীতকালের লোকদের কাছে সত্যিই বিস্ময়কর ব্যাপার হবে।
তাদের কাছে বিস্ময়কর ব্যাপার হোক আর না হোক মানুষ কিন্তু তা আবিষ্কার করেই চলছে। মানুষ আল্লাহর সৃষ্ট মাখলুখ হয়ে যদি এমন এমন বস্তুর আবিষ্কার করতে পারে তবে যিনি খালেক বা স্রষ্টা তিনি কি তাঁর এক বান্দাকে মুহূর্তের মধ্যে ঊর্ধ্ব জগতে ভ্রমণ করাতে সক্ষম নয়? অবশ্যই সক্ষম। বিষয়টি আমাদের কাছে আরও পরিষ্কার হবে, কদিন ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে ভয়ংকর ভূমিকম্প হয়ে চলছে। পূর্ব লক্ষণ ব্যতীত হঠাৎ ভূমিকম্প আঘাত করছে, যার মোকাবিলা করার ক্ষমতা কারও নেই। এখন প্রশ্ন হলো, এই ভয়ংকর ভূমিকম্প কেন হচ্ছে, কে দিয়েছেন এই ভূমিকম্প। তা ভিন্ন আলোচনা। আমাদের এখানে ভাবার বিষয় হলো, আল্লাহপাক মুহূর্তের মধ্যে এমন ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প দিতে পারেন তিনি মুহূর্তের মধ্যে সমস্ত নব-মণ্ডল ও ভূমণ্ডলকে ধ্বংস করে দিতে পারেন। এমনকি তিনি মুহূর্তের মধ্যে তাঁর এক বান্দার মাধ্যমে সারা জগৎ ভ্রমণ করিয়ে আনতে পারেন এতে সন্দেহের কোনোই অবকাশ নেই। কেউ যদি সন্দেহ করে সে তার ইমান হারাবে। আল্লাহতায়ালা সব শক্তির আধার। তিনি ‘কুন ফায়াকুন’-এর মালিক। অর্থাৎ তিনি বলেন হও সঙ্গে সঙ্গে তা হয়ে যায়।
লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব বারিধারা, ঢাকা-১২১২।
সূত্র : bd-prati-din