সোমবার | ১ ডিসেম্বর ২০২৫ | হেমন্তকাল
শিরোনাম :
Logo নোবিপ্রবির আধুনিকায়নে ৩৩৪ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন Logo পর্যটক সেন্টমার্টিন পৌঁছলে ফুল দিয়ে পর্যটকদের বরণ Logo খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা, বীরগঞ্জ উপজেলায় অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ Logo চাঁদপুরে যোগদানের প্রথম দিনেই সাংবাদিকদের সাথে নবাগত পুলিশ সুপারের মতবিনিময় Logo সদরপুরে গার্ডিয়ান এর এরিয়া অফিস উদ্ভোধন অনুষ্ঠানে ১০ লাখ টাকার মৃত্যু দাবী চেক বিতরণ। Logo ৪৫তম বিসিএস-এ ক্যাডার বুটেক্সের ১৩ শিক্ষার্থী Logo হাবিপ্রবিতে মশার উপদ্রবে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা, ভ্রুক্ষেপ নেই প্রশাসনের Logo জবিস্থ চুয়াডাঙ্গা ছাত্রকল্যাণের নেতৃত্বে সজিব ও তরিকুল Logo মেডিকেল বোর্ডের দেওয়া চিকিৎসা খালেদা জিয়া গ্রহণ করতে পারছেন : ডা. জাহিদ Logo কচুয়ায় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন গণঅধিকার পরিষদ নেতা এনায়েত হাসিব

কচুয়ায় একটি রাস্তার অভাবে কৃষকদের জীবনযুদ্ধ

চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার মেঘদাইর পূর্ব মাঠ যেন এখন এক জলাবদ্ধতার নাম। রাস্তা না থাকায় কোমর সমান পানির ভেতর দিয়েই কৃষকদের হেঁটে চলাচল করতে হয়। বর্ষা এখনও পুরোপুরি শুরু না হলেও গ্রামের বেশ মাঠে আসা যাওয়ার পথ কোমর সমান পানিতে ডুবে আছে।

মেঘদাইরের পূর্ব মাঠ যেন একটি উল্টোপথের দুঃস্বপ্ন, মাঠে পানি নেই, কিন্তু মাঠে পৌঁছানোর একমাত্র রাস্তাটি ডুবে আছে জলে!

শতাধিক কৃষক ও এলাকাবাসী প্রতিদিন হাঁটেন সেই কোমর পানির মধ্য দিয়ে। খালি হাতে হেঁটে যাওয়া যতটা কঠিন, তার চেয়ে কঠিন মাথায় করে ফসল নিয়ে ফেরা। আর এই যাত্রাপথ যেন হয়ে উঠেছে এক চরম মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের নাম।

কৃষক শফিউল্লাহ কষ্ট নিয়ে বলেন, জমিতে যাই হেঁটে, কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ফসল নিয়ে ফিরতে গেলে সেই পানির রাস্তা! কোমর পানি দিয়ে আসা যায় না। চোখের সামনে ফসল, কিন্তু কিছু করার নেই।

আরেকক কৃষক মো. রফিক ক্ষোভের সাথে বলেন, এই এলাকায় একমাত্র একজনের নৌকা আছে, তিনি যাতায়াত করেন। আর আমরা? কোমর পানি ঠেলে খালি হাতে যাই, কিন্তু ফসল নিয়ে ফিরতে পারি না।

এই দুর্ভোগ শুধু কৃষকদের নয়। রাস্তা না থাকায় আটকে পড়েছেন আশপাশের অন্তত আটটি পরিবারও।
তাসলিমা আক্তার বলেন, বর্ষা তো এখনও শুরুই হয়নি। অথচ আমাদের বাড়ির পথে এখনই কোমর পানি। বাইরে যেতে কাপড় ভিজিয়ে বের হতে হয়। মেয়েরা তো একরকম গৃহবন্দি হয়ে আছে।”

সবচেয়ে হতাশাজনক বিষয় হলো, যদি একটি সোজা রাস্তা থাকত, তাহলে মাঠ থেকে মাত্র ২ মিনিটেই ফসল ঘরে তোলা যেত। কিন্তু এখন সেই সামান্য রাস্তা না থাকায় বাধ্য হয়ে কৃষক ও এলাকাবাসীকে ঘুরে মেঘদাইর ব্রিকফিল্ড কিংবা বড় বাড়ির পাশ দিয়ে বহু কষ্টে ফিরতে হয়, যা সময় ও শ্রম দুটোই নষ্ট করছে।

রাস্তা মানে শুধু কংক্রিট নয়। রাস্তা মানে বাঁচার আশা, ঘরে ফসল পৌঁছানো, শিশুদের স্কুলে যাওয়া, নারীদের স্বাভাবিক চলাফেরা, আর মানুষের ন্যায্য অধিকার।

মাঠে ফসল আছে, শ্রম আছে, ঘরে ক্ষুধাও আছে, কিন্তু মাঝখানে নেই শুধু একটি রাস্তা। এই একটি রাস্তা পেলে কৃষকের মুখে হাসি ফিরবে, এলাকাবাসীর জীবনে ফিরবে স্বস্তি। এখন প্রয়োজন ‘প্রতিশ্রুতির’ নয়, ‘প্রতিষ্ঠার’ রাস্তার বাস্তব নির্মাণ।

 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ হেলাল চৌধুরী বলেন, এই রাস্তার কারণে কৃষক ও এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে যে কষ্ট ভোগ করছেন, তা নিরসনে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্যাগস :

নোবিপ্রবির আধুনিকায়নে ৩৩৪ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন

কচুয়ায় একটি রাস্তার অভাবে কৃষকদের জীবনযুদ্ধ

আপডেট সময় : ০৪:৩০:৩৯ অপরাহ্ণ, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার মেঘদাইর পূর্ব মাঠ যেন এখন এক জলাবদ্ধতার নাম। রাস্তা না থাকায় কোমর সমান পানির ভেতর দিয়েই কৃষকদের হেঁটে চলাচল করতে হয়। বর্ষা এখনও পুরোপুরি শুরু না হলেও গ্রামের বেশ মাঠে আসা যাওয়ার পথ কোমর সমান পানিতে ডুবে আছে।

মেঘদাইরের পূর্ব মাঠ যেন একটি উল্টোপথের দুঃস্বপ্ন, মাঠে পানি নেই, কিন্তু মাঠে পৌঁছানোর একমাত্র রাস্তাটি ডুবে আছে জলে!

শতাধিক কৃষক ও এলাকাবাসী প্রতিদিন হাঁটেন সেই কোমর পানির মধ্য দিয়ে। খালি হাতে হেঁটে যাওয়া যতটা কঠিন, তার চেয়ে কঠিন মাথায় করে ফসল নিয়ে ফেরা। আর এই যাত্রাপথ যেন হয়ে উঠেছে এক চরম মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের নাম।

কৃষক শফিউল্লাহ কষ্ট নিয়ে বলেন, জমিতে যাই হেঁটে, কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ফসল নিয়ে ফিরতে গেলে সেই পানির রাস্তা! কোমর পানি দিয়ে আসা যায় না। চোখের সামনে ফসল, কিন্তু কিছু করার নেই।

আরেকক কৃষক মো. রফিক ক্ষোভের সাথে বলেন, এই এলাকায় একমাত্র একজনের নৌকা আছে, তিনি যাতায়াত করেন। আর আমরা? কোমর পানি ঠেলে খালি হাতে যাই, কিন্তু ফসল নিয়ে ফিরতে পারি না।

এই দুর্ভোগ শুধু কৃষকদের নয়। রাস্তা না থাকায় আটকে পড়েছেন আশপাশের অন্তত আটটি পরিবারও।
তাসলিমা আক্তার বলেন, বর্ষা তো এখনও শুরুই হয়নি। অথচ আমাদের বাড়ির পথে এখনই কোমর পানি। বাইরে যেতে কাপড় ভিজিয়ে বের হতে হয়। মেয়েরা তো একরকম গৃহবন্দি হয়ে আছে।”

সবচেয়ে হতাশাজনক বিষয় হলো, যদি একটি সোজা রাস্তা থাকত, তাহলে মাঠ থেকে মাত্র ২ মিনিটেই ফসল ঘরে তোলা যেত। কিন্তু এখন সেই সামান্য রাস্তা না থাকায় বাধ্য হয়ে কৃষক ও এলাকাবাসীকে ঘুরে মেঘদাইর ব্রিকফিল্ড কিংবা বড় বাড়ির পাশ দিয়ে বহু কষ্টে ফিরতে হয়, যা সময় ও শ্রম দুটোই নষ্ট করছে।

রাস্তা মানে শুধু কংক্রিট নয়। রাস্তা মানে বাঁচার আশা, ঘরে ফসল পৌঁছানো, শিশুদের স্কুলে যাওয়া, নারীদের স্বাভাবিক চলাফেরা, আর মানুষের ন্যায্য অধিকার।

মাঠে ফসল আছে, শ্রম আছে, ঘরে ক্ষুধাও আছে, কিন্তু মাঝখানে নেই শুধু একটি রাস্তা। এই একটি রাস্তা পেলে কৃষকের মুখে হাসি ফিরবে, এলাকাবাসীর জীবনে ফিরবে স্বস্তি। এখন প্রয়োজন ‘প্রতিশ্রুতির’ নয়, ‘প্রতিষ্ঠার’ রাস্তার বাস্তব নির্মাণ।

 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ হেলাল চৌধুরী বলেন, এই রাস্তার কারণে কৃষক ও এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে যে কষ্ট ভোগ করছেন, তা নিরসনে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।