শিরোনাম :
Logo আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস ২০২৫ উপলক্ষে কয়রায় র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত Logo দর্শনা থানা পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান, ৪ কেজি গাঁজাসহ আটক ১ Logo জীবননগরে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০২৫ উদযাপন Logo আইএফএডিকে বাংলাদেশের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনের প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার Logo চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ এলাকায় বিষাক্ত মদপানে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। Logo ভাতগ্রামে ফ্রী রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ও ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হল Logo চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। Logo বিগত তিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারীদের বিরত রাখা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Logo কয়রায় মায়ের সঙ্গে অভিমানে ৯ বছরের স্কুলছাত্রী আছিয়ার মর্মান্তিক মৃত্যু Logo জাতীয় পতাকা ও সংগীত অবমাননাকারি সুন্দরগঞ্জের মিরাজ আটক : মামলা দায়ের

জুমার নামাজের গুরুত্ব

  • নীলকন্ঠ অনলাইন নীলকন্ঠ অনলাইন
  • আপডেট সময় : ১০:৪০:৪৪ পূর্বাহ্ণ, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫
  • ৭৬৫ বার পড়া হয়েছে

ইসলামের দৃষ্টিতে জুমার দিনকে সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কেননা নবীজি (সা.) বলেছেন, সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এদিন আদম (সা.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে, তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং সেখান থেকে দুনিয়ায় অবতরণ করানো হয়েছে। জুমার দিনই কিয়ামত সংগঠিত হবে। (মুসলিম, হাদিস : ১৮৬২)

ইসলামের জুমার দিনের গুরুত্ব অপরীসীম। জুমার দিনের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে নবীজি এই দিনকে ঈদের দিনের সঙ্গে তুলনা করেছেন বলে একটি সূত্রে পাওয়া যায়।

জুমার দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো, জুমার নামাজ। জুমার অর্থ হলো, একত্রিত হওয়া, সংঘবদ্ধ হওয়া। যেহেতু এই দিনে মানুষ আল্লাহর বিধান পালনার্থে একত্রিত হয়, তাই এই দিনকে জুমার দিন বলা হয়।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত মসজিদের দিকে ধাবিত হও। আর বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পারো।’ (সুরা : জুমা, আয়াত : ৯)

জুমার দিনের অধিক গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে নবীজি (সা.) এই দিনকে ঈদের দিনের সঙ্গে তুলা করেছেন। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ এই দিনকে মুসলিমদের ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি জুমার সালাত আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। আর মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য। (ইবনে মাজাহ, আয়াত : ১০৯৮)

হাদিসবিশারদের মতে, এখানে ঈদ বলে খুশি ও আনন্দের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। যেহেতু সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ এই দিনে মুসলমানরা একত্রিত হয়। পাশাপাশি যেহেতু এদিন প্রতিটি মুসলমান জনসমাগমে যাবে, তাই এই দিনের কিছু আদব রক্ষার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

ইবনে আব্বাস (রা.) এই দিনের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে এই দিনকে ‘গরীবের হজ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। (তাবরানি)

উদ্দেশ্য হলো, মুসলমানরা যাতে এই দিনের গুরুত্ব উপলদ্ধি করতে পারে, এবং এই দিনের পবিত্রতা রক্ষা করে ইবাদতে মনোনিবেশ করতে পারে। কোনো অবস্থাতেই যেন এই দিনের ফজিলত থেকে বঞ্চিত না হয়। হাদিস শরীফের জুমার দিনের বহু ফজিলত ও আমলের কথা উল্লেখ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো, এক জুমা থেকে আরেক জুমা মধ্যবর্তী সময়ের (সগিরা গুনাহের) জন্য কাফফারা হয়ে যায় যদি মুমিন কবিরাহ গুনাহ থেকে বিরত থাকে। (মুসলিম, হাদিস : ৪৪০)

জুমার নামাজ আদায়ের ইসলামের দেওয়া বিধান ও আদবগুলো পালন করে বের হলে, প্রতি কদমে কদমে গুনাহ মাফ হতে থাকে। আওস ইবনে আওস আস-সাক্বাফি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করবে এবং (স্ত্রীকেও) গোসল করাবে, প্রত্যুষে ঘুম থেকে জাগবে এবং জাগাবে, জুমার জন্য বাহনে চড়ে নয় বরং পায়ে হেঁটে মাসজিদে যাবে এবং কোনরূপ অনর্থক কথা না বলে ইমামের নিকটে বসে খুতবা শুনবে, তার (মাসজিদে যাওয়ার) প্রতিটি পদক্ষেপ সুন্নাত হিসেবে গণ্য হবে এবং প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে সে এক বছর যাবত সিয়াম (রোজা) পালন ও রাতভর সালাত (নামাজ) আদায়ের (সমান) সাওয়াব পাবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৫)

এর বিপরীতে যারা কোনো শরীয়ত সমর্থিত যৌক্তিক কারণ ছাড়া জুমার নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকবে, তারাতো অফুরন্ত সওয়াবগুলো থেকে বঞ্চিত হবেই পাশাপাশি তাদের নাম গাফিলদের তালিকায় পড়ে যাবে। আবদুল্লাহ ইবনে উমার ও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তারা উভয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে তাঁর মিম্বরের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন, যারা জুমার নামাজ ত্যাগ করে তাদেরকে এ অভ্যাস বর্জন করতে হবে। নতুবা আল্লাহ তাদের অন্তরে সীল মেরে দিবেন, অতঃপর তারা গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (মুসলিম, হাদিস : ১৮৮৭)

নাউজুবিল্লাহ, একজন মুমিনের জন্য এর চেয়ে বড় দুঃসংবাদ আর কী হতে পারে! উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিনা ওজরে (শরীয়ত সমর্থিত কোনো অজুহাত ছাড়া) পর পর তিন জুমা পড়া থেকে বিরত থাকে, তার নাম মুনাফিকদের খাতায় লিপিবদ্ধ হয়ে যায়।’ (তাবরানি)

হাদিসটি সনদগত ভাবে দুর্বল হলেও বিনা ওজরে জুমার নামাজ ছাড়া যে জঘন্য অপরাধ, তা জুমার দিনের ফজিলত সম্বলিত হাদিসগুলো দেখলে অনুভব করা যায়।

অতএব, আমাদের সবার উচিত, জুমার দিনের আদব রক্ষা করে জুমার নামাজ আদায়ের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস ২০২৫ উপলক্ষে কয়রায় র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

জুমার নামাজের গুরুত্ব

আপডেট সময় : ১০:৪০:৪৪ পূর্বাহ্ণ, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

ইসলামের দৃষ্টিতে জুমার দিনকে সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কেননা নবীজি (সা.) বলেছেন, সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এদিন আদম (সা.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে, তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং সেখান থেকে দুনিয়ায় অবতরণ করানো হয়েছে। জুমার দিনই কিয়ামত সংগঠিত হবে। (মুসলিম, হাদিস : ১৮৬২)

ইসলামের জুমার দিনের গুরুত্ব অপরীসীম। জুমার দিনের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে নবীজি এই দিনকে ঈদের দিনের সঙ্গে তুলনা করেছেন বলে একটি সূত্রে পাওয়া যায়।

জুমার দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো, জুমার নামাজ। জুমার অর্থ হলো, একত্রিত হওয়া, সংঘবদ্ধ হওয়া। যেহেতু এই দিনে মানুষ আল্লাহর বিধান পালনার্থে একত্রিত হয়, তাই এই দিনকে জুমার দিন বলা হয়।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত মসজিদের দিকে ধাবিত হও। আর বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পারো।’ (সুরা : জুমা, আয়াত : ৯)

জুমার দিনের অধিক গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে নবীজি (সা.) এই দিনকে ঈদের দিনের সঙ্গে তুলা করেছেন। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ এই দিনকে মুসলিমদের ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি জুমার সালাত আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। আর মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য। (ইবনে মাজাহ, আয়াত : ১০৯৮)

হাদিসবিশারদের মতে, এখানে ঈদ বলে খুশি ও আনন্দের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। যেহেতু সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ এই দিনে মুসলমানরা একত্রিত হয়। পাশাপাশি যেহেতু এদিন প্রতিটি মুসলমান জনসমাগমে যাবে, তাই এই দিনের কিছু আদব রক্ষার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

ইবনে আব্বাস (রা.) এই দিনের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে এই দিনকে ‘গরীবের হজ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। (তাবরানি)

উদ্দেশ্য হলো, মুসলমানরা যাতে এই দিনের গুরুত্ব উপলদ্ধি করতে পারে, এবং এই দিনের পবিত্রতা রক্ষা করে ইবাদতে মনোনিবেশ করতে পারে। কোনো অবস্থাতেই যেন এই দিনের ফজিলত থেকে বঞ্চিত না হয়। হাদিস শরীফের জুমার দিনের বহু ফজিলত ও আমলের কথা উল্লেখ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো, এক জুমা থেকে আরেক জুমা মধ্যবর্তী সময়ের (সগিরা গুনাহের) জন্য কাফফারা হয়ে যায় যদি মুমিন কবিরাহ গুনাহ থেকে বিরত থাকে। (মুসলিম, হাদিস : ৪৪০)

জুমার নামাজ আদায়ের ইসলামের দেওয়া বিধান ও আদবগুলো পালন করে বের হলে, প্রতি কদমে কদমে গুনাহ মাফ হতে থাকে। আওস ইবনে আওস আস-সাক্বাফি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করবে এবং (স্ত্রীকেও) গোসল করাবে, প্রত্যুষে ঘুম থেকে জাগবে এবং জাগাবে, জুমার জন্য বাহনে চড়ে নয় বরং পায়ে হেঁটে মাসজিদে যাবে এবং কোনরূপ অনর্থক কথা না বলে ইমামের নিকটে বসে খুতবা শুনবে, তার (মাসজিদে যাওয়ার) প্রতিটি পদক্ষেপ সুন্নাত হিসেবে গণ্য হবে এবং প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে সে এক বছর যাবত সিয়াম (রোজা) পালন ও রাতভর সালাত (নামাজ) আদায়ের (সমান) সাওয়াব পাবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৫)

এর বিপরীতে যারা কোনো শরীয়ত সমর্থিত যৌক্তিক কারণ ছাড়া জুমার নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকবে, তারাতো অফুরন্ত সওয়াবগুলো থেকে বঞ্চিত হবেই পাশাপাশি তাদের নাম গাফিলদের তালিকায় পড়ে যাবে। আবদুল্লাহ ইবনে উমার ও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তারা উভয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে তাঁর মিম্বরের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন, যারা জুমার নামাজ ত্যাগ করে তাদেরকে এ অভ্যাস বর্জন করতে হবে। নতুবা আল্লাহ তাদের অন্তরে সীল মেরে দিবেন, অতঃপর তারা গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (মুসলিম, হাদিস : ১৮৮৭)

নাউজুবিল্লাহ, একজন মুমিনের জন্য এর চেয়ে বড় দুঃসংবাদ আর কী হতে পারে! উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিনা ওজরে (শরীয়ত সমর্থিত কোনো অজুহাত ছাড়া) পর পর তিন জুমা পড়া থেকে বিরত থাকে, তার নাম মুনাফিকদের খাতায় লিপিবদ্ধ হয়ে যায়।’ (তাবরানি)

হাদিসটি সনদগত ভাবে দুর্বল হলেও বিনা ওজরে জুমার নামাজ ছাড়া যে জঘন্য অপরাধ, তা জুমার দিনের ফজিলত সম্বলিত হাদিসগুলো দেখলে অনুভব করা যায়।

অতএব, আমাদের সবার উচিত, জুমার দিনের আদব রক্ষা করে জুমার নামাজ আদায়ের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া।