শিরোনাম :
Logo আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস ২০২৫ উপলক্ষে কয়রায় র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত Logo দর্শনা থানা পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান, ৪ কেজি গাঁজাসহ আটক ১ Logo জীবননগরে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০২৫ উদযাপন Logo আইএফএডিকে বাংলাদেশের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনের প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার Logo চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ এলাকায় বিষাক্ত মদপানে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। Logo ভাতগ্রামে ফ্রী রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ও ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হল Logo চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। Logo বিগত তিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারীদের বিরত রাখা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Logo কয়রায় মায়ের সঙ্গে অভিমানে ৯ বছরের স্কুলছাত্রী আছিয়ার মর্মান্তিক মৃত্যু Logo জাতীয় পতাকা ও সংগীত অবমাননাকারি সুন্দরগঞ্জের মিরাজ আটক : মামলা দায়ের

ইসলামের দৃষ্টিতে চুপ থাকা

  • নীলকন্ঠ অনলাইন নীলকন্ঠ অনলাইন
  • আপডেট সময় : ০৫:৫৬:৪০ অপরাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫
  • ৭৫৭ বার পড়া হয়েছে
সত্যবাদীতা মনুষ্যত্বের সর্বশ্রেষ্ঠ অলংকার। বলা হয়, ‘আল ইসলামু হাক্কুন’ ইসলাম সত্য। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ মানুষকে সততার চর্চা ও সত্য বলার নির্দেশ দিচ্ছেন, ‘আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্য কথা বল’ (সুরা আহযাব, আয়াত: ৭০)

তবুও বাস্তবতা, ন্যায়ের কৌশল হিসেবে ক্ষেত্রভেদে সরব অবস্থানের চেয়ে চুপ থাকা বিশেষ উপকারী। নিম্নে ক্ষেত্রভেদে চুপ থাকার কিছু উপকারীতা তুলে ধরা হলো:

মুক্তির উপায়

মৌনতা অনেক সময় প্রতিবাদের ভাষা হয় এবং অনেক জটিল সমস্যা হতে তা মুক্তির পথ দেখায়। প্রিয় নবী (সা.) বলেন ‘যে চুপ থেকেছে, সে নাজাত পেয়েছে।’ (তিরমিজি)

নিরাপদ থাকা
অনাসৃষ্টি ও উত্তেজনা পরিহারের  জন্য চুপ থাকা অত্যন্ত কার্যকরী। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘যে নিরাপদ  থাকতে চায় তার চুপ থাকা আবশ্যক।’ (মুসনাদ আনাস বিন   মালিক, বায়হাকি)

সহজ ইবাদত

চুপ থাকা একটি ইবাদত। হাদিসেই আছে ‘রোজাদারের চুপ থাকা তাসবিহ তুল্য’। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘আমি  কি তোমাদের এমন ইবাদতের ব্যাপারে বলবো না যা সহজ এবং শরীরের ওপর খুবই হালকা? তা হলো চুপ থাকা এবং সুন্দর চরিত্র।’ (ইহইয়াউল উলুম)

উত্তম আমল

ভলো মন ও চরিত্রের বৈশিষ্ট্য হলো অহেতুক বাদানুবাদ এড়িয়ে চলা এবং প্রয়োজনে চুপ থাকা। পারেলৌকিক উন্নতির উপায় প্রসঙ্গে প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘…তা হলো উত্তম চরিত্র এবং  দীর্ঘ চুপ থাকা। দুটোকেই আবশ্যিকভাবে গ্রহণ করো। কেননা, তুমি আল্লাহর দরবারে ঐ দুটোর মতো (অর্থাৎ তার চেয়ে বেশি) অন্য কোনো আমল  নিয়ে  যেতে পারবে না।’ (কিতাবুস  সামত ওয়া আদাবুল লিসান)

মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত

মুক্তির জন্য আমলের বিশাল পুঁজির কোনো বিকল্প নেই। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘চুপ থাকা সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত।’ (তারিখে ইস্পাহান)

নিজেই উপদেশ

চুপ থাকার উপদেশ দিয়ে প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘আমি তোমাকে সুন্দর চরিত্র গঠন ও চুপ থাকার  নসীহত করছি। এ দু’টি আমল শরীরের ওপর সবচেয়ে হালকা আর মিজানে খুব ভারী। (কানযুল উম্মাল)

জ্ঞানীদের সৌন্দর্য 

কথায় বলে ‘খালি কলসি বাজে বেশি’! প্রকৃত জ্ঞানীগণ হয়ে থাকেন স্বল্পভাষীক। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘চুপ  থাকা হলো আলিমের সৌন্দর্য আর জাহেলের পর্দা।’ (বায়হাকি)

প্রিয় নবী (সা.) আরও বলেন, ‘চুপ থাকা আখলাকসমূহের (চরিত্রের) সরদার।’ (মুসনাদুল ফিরদাউস)

জাহান্নাম থেকে মুক্তি

হাদিসে আছে, ‘…প্রিয় নবী (সা.) একদিন ঘরের বাইরে  তাশরিফ নিলেন (ঘোড়ায় আরোহন করলেন)। তখন  মুআজ ইবনে  জাবাল (রা.) আরজ করলেন, কোন আমল সবচেয়ে উত্তম? তিনি (সা.) তাঁর পবিত্র নূরানী মুখ (ঠোঁট) মোবারকের দিকে ইশারা করে বললেন, ‘নেকির কথা  ব্যতীত চুপ থাকা’

আরজ করা হলো ‘আমরা জবান থেকে যা কিছু বলি, আল্লাহ কি তার জন্য আমাদের পাকড়াও করবেন’? তখন প্রিয় নবী (সা.) তাঁর রান মোবারকের ওপর হাত মেরে ইশারা করে বললেন, ‘হে মুআজ! তোমার ওপর তোমার মা কাঁদুক! জবান দ্বারা বলা কথাই মানুষকে জাহান্নামে উল্টো মুখ করে ফেলে দেবে। পরে প্রিয় নবী (সা.) বললেন, যে আল্লাহ ও আখিরাতের ওপর ঈমান  রাখে তাঁর উচিত ভালো কথা বলা অথবা খারাপ কথা থেকে বিরত থাকা। (অতঃপর ইরশাদ করেন) ভালো কথা বলো তাহলে ভালো থাকবে আর খারাপ কথা থেকে (বিরত থাকো) চুপ থাকো তাহলে নিরাপদে থাকবে।’ (মুসতাদরাক হাকেম)

মিজানের পাল্লায় মূল্যবান

সময় মতো সঠিক কথা বলা বিবেক ব্যক্তিত্বের দাবি। তবে মেনে নেওয়া ও মানিয়ে নেওয়ার জন্য চুপ থাকা শরীর মন ও আখিরাতের জন্য উপকারী। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাকে এমন আমল বলে দেবো না যা শরীরের জন্য হালকা এবং আমলের মিজানে (দাড়িপাল্লায়) ভারী?’ বলা হলো কেনো নয়? তিনি (সা.) বললেন, ‘তা (আমল) হলো চুপ থাকা, উত্তম চরিত্র তৈরী করা এবং অনর্থক কাজ ছেড়ে দেওয়া।’ (তারগিব)

বস্তুতঃ চুপ থাকার নামে ‘বোবা শয়তান’ হওয়া যাবে না। আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহ.) বলেন ‘যেখানে কথা বলা দরকার নেই সেখানে চুপ থাকা মানুষের জন্য অনেক   বড়ো অলঙ্কার’। আড়ালে-কৌশলে অন্যায়কারীকে সমর্থন, সহায়তা আইনের চোখে অপরাধ না হলেও এখানে বিবেকের দায়মুক্তি নেই। সুরা বাকারার ৪২ নম্বর আয়াতের নির্দেশনা, ‘তোমরা সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশিও না এবং জেনে-বুঝে সত্য গোপন করো না।’

লেখক: সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, কাপাসিয়া, গাজীপুর ১৭৩০

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস ২০২৫ উপলক্ষে কয়রায় র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

ইসলামের দৃষ্টিতে চুপ থাকা

আপডেট সময় : ০৫:৫৬:৪০ অপরাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫
সত্যবাদীতা মনুষ্যত্বের সর্বশ্রেষ্ঠ অলংকার। বলা হয়, ‘আল ইসলামু হাক্কুন’ ইসলাম সত্য। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ মানুষকে সততার চর্চা ও সত্য বলার নির্দেশ দিচ্ছেন, ‘আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্য কথা বল’ (সুরা আহযাব, আয়াত: ৭০)

তবুও বাস্তবতা, ন্যায়ের কৌশল হিসেবে ক্ষেত্রভেদে সরব অবস্থানের চেয়ে চুপ থাকা বিশেষ উপকারী। নিম্নে ক্ষেত্রভেদে চুপ থাকার কিছু উপকারীতা তুলে ধরা হলো:

মুক্তির উপায়

মৌনতা অনেক সময় প্রতিবাদের ভাষা হয় এবং অনেক জটিল সমস্যা হতে তা মুক্তির পথ দেখায়। প্রিয় নবী (সা.) বলেন ‘যে চুপ থেকেছে, সে নাজাত পেয়েছে।’ (তিরমিজি)

নিরাপদ থাকা
অনাসৃষ্টি ও উত্তেজনা পরিহারের  জন্য চুপ থাকা অত্যন্ত কার্যকরী। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘যে নিরাপদ  থাকতে চায় তার চুপ থাকা আবশ্যক।’ (মুসনাদ আনাস বিন   মালিক, বায়হাকি)

সহজ ইবাদত

চুপ থাকা একটি ইবাদত। হাদিসেই আছে ‘রোজাদারের চুপ থাকা তাসবিহ তুল্য’। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘আমি  কি তোমাদের এমন ইবাদতের ব্যাপারে বলবো না যা সহজ এবং শরীরের ওপর খুবই হালকা? তা হলো চুপ থাকা এবং সুন্দর চরিত্র।’ (ইহইয়াউল উলুম)

উত্তম আমল

ভলো মন ও চরিত্রের বৈশিষ্ট্য হলো অহেতুক বাদানুবাদ এড়িয়ে চলা এবং প্রয়োজনে চুপ থাকা। পারেলৌকিক উন্নতির উপায় প্রসঙ্গে প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘…তা হলো উত্তম চরিত্র এবং  দীর্ঘ চুপ থাকা। দুটোকেই আবশ্যিকভাবে গ্রহণ করো। কেননা, তুমি আল্লাহর দরবারে ঐ দুটোর মতো (অর্থাৎ তার চেয়ে বেশি) অন্য কোনো আমল  নিয়ে  যেতে পারবে না।’ (কিতাবুস  সামত ওয়া আদাবুল লিসান)

মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত

মুক্তির জন্য আমলের বিশাল পুঁজির কোনো বিকল্প নেই। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘চুপ থাকা সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত।’ (তারিখে ইস্পাহান)

নিজেই উপদেশ

চুপ থাকার উপদেশ দিয়ে প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘আমি তোমাকে সুন্দর চরিত্র গঠন ও চুপ থাকার  নসীহত করছি। এ দু’টি আমল শরীরের ওপর সবচেয়ে হালকা আর মিজানে খুব ভারী। (কানযুল উম্মাল)

জ্ঞানীদের সৌন্দর্য 

কথায় বলে ‘খালি কলসি বাজে বেশি’! প্রকৃত জ্ঞানীগণ হয়ে থাকেন স্বল্পভাষীক। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘চুপ  থাকা হলো আলিমের সৌন্দর্য আর জাহেলের পর্দা।’ (বায়হাকি)

প্রিয় নবী (সা.) আরও বলেন, ‘চুপ থাকা আখলাকসমূহের (চরিত্রের) সরদার।’ (মুসনাদুল ফিরদাউস)

জাহান্নাম থেকে মুক্তি

হাদিসে আছে, ‘…প্রিয় নবী (সা.) একদিন ঘরের বাইরে  তাশরিফ নিলেন (ঘোড়ায় আরোহন করলেন)। তখন  মুআজ ইবনে  জাবাল (রা.) আরজ করলেন, কোন আমল সবচেয়ে উত্তম? তিনি (সা.) তাঁর পবিত্র নূরানী মুখ (ঠোঁট) মোবারকের দিকে ইশারা করে বললেন, ‘নেকির কথা  ব্যতীত চুপ থাকা’

আরজ করা হলো ‘আমরা জবান থেকে যা কিছু বলি, আল্লাহ কি তার জন্য আমাদের পাকড়াও করবেন’? তখন প্রিয় নবী (সা.) তাঁর রান মোবারকের ওপর হাত মেরে ইশারা করে বললেন, ‘হে মুআজ! তোমার ওপর তোমার মা কাঁদুক! জবান দ্বারা বলা কথাই মানুষকে জাহান্নামে উল্টো মুখ করে ফেলে দেবে। পরে প্রিয় নবী (সা.) বললেন, যে আল্লাহ ও আখিরাতের ওপর ঈমান  রাখে তাঁর উচিত ভালো কথা বলা অথবা খারাপ কথা থেকে বিরত থাকা। (অতঃপর ইরশাদ করেন) ভালো কথা বলো তাহলে ভালো থাকবে আর খারাপ কথা থেকে (বিরত থাকো) চুপ থাকো তাহলে নিরাপদে থাকবে।’ (মুসতাদরাক হাকেম)

মিজানের পাল্লায় মূল্যবান

সময় মতো সঠিক কথা বলা বিবেক ব্যক্তিত্বের দাবি। তবে মেনে নেওয়া ও মানিয়ে নেওয়ার জন্য চুপ থাকা শরীর মন ও আখিরাতের জন্য উপকারী। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাকে এমন আমল বলে দেবো না যা শরীরের জন্য হালকা এবং আমলের মিজানে (দাড়িপাল্লায়) ভারী?’ বলা হলো কেনো নয়? তিনি (সা.) বললেন, ‘তা (আমল) হলো চুপ থাকা, উত্তম চরিত্র তৈরী করা এবং অনর্থক কাজ ছেড়ে দেওয়া।’ (তারগিব)

বস্তুতঃ চুপ থাকার নামে ‘বোবা শয়তান’ হওয়া যাবে না। আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহ.) বলেন ‘যেখানে কথা বলা দরকার নেই সেখানে চুপ থাকা মানুষের জন্য অনেক   বড়ো অলঙ্কার’। আড়ালে-কৌশলে অন্যায়কারীকে সমর্থন, সহায়তা আইনের চোখে অপরাধ না হলেও এখানে বিবেকের দায়মুক্তি নেই। সুরা বাকারার ৪২ নম্বর আয়াতের নির্দেশনা, ‘তোমরা সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশিও না এবং জেনে-বুঝে সত্য গোপন করো না।’

লেখক: সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, কাপাসিয়া, গাজীপুর ১৭৩০