মহান আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ মাখলুক ও সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)। তিনি ছিলেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী। যাঁকে মহান আল্লাহ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের জন্য রহমতস্বরূপ তৈরি করেছেন। নিম্নে আল্লাহর এই প্রিয় বন্ধুর কয়েকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো—
আল্লাহর প্রিয় বন্ধু : নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমি আল্লাহ তাআলার প্রিয় হাবিব (বন্ধু), তাতে কোনো গর্ব নেই। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৬১৬)
কিয়ামতের দিন প্রথম উত্থিত হবেন : নবী (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষ বেহুঁশ হয়ে পড়বে। তারপর জমিন ফাটবে এবং যারাই উঠবে, আমিই হব তাদের মধ্যে প্রথম।’ (বুখারি, হাদিস : ২৪১২)
কিয়ামতের দিন প্রথম শাফাআতকারী : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদ পড়, ওটা তোমার জন্য নফল, শীঘ্রই তোমার প্রতিপালক তোমাকে মাকামে মাহমুদে (প্রশংসিত স্থানে) উন্নীত করবেন। (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৭৯)
তাফসিরবিদদের মধ্যে এখানে মাকামে মাহমুদ বলতে বড় শাফাআতের স্থানকে বোঝানো হয়েছে।
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কিয়ামাত দিবসে আমিই হব প্রশংসার পতাকা বহনকারী তাতে কোনো গর্ব নেই। কিয়ামাতের দিন আমিই সর্বপ্রথম শাফাআতকারী এবং সর্ব প্রথমে আমার শাফাআতই কবুল হবে, তাতেও কোন গর্ব নেই।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৬১৬)
প্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবেন : আনাস ইবনু মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, কিয়ামত দিবসে আমি জান্নাতের তোরণে এসে দরজা খোলার অনুমতি চাইবো। তখন দ্বাররক্ষী বলবেন, আপনি কে? আমি উত্তর করবো, মুহাম্মাদ। দ্বাররক্ষী বলবেন, ‘আপনার জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি, আপনার পূর্বে অন্য কারোর জন্য দরজা খুলিনি।’ (মুসলিম, হাদিস: ৩৭৪)
তাঁর সব পূর্ববর্তী ও পরবর্তী গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে: পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘যেন আল্লাহ তোমার পূর্বের ও পরের পাপ ক্ষমা করেন, তোমার উপর তাঁর নিয়ামত পূর্ণ করেন আর তোমাকে সরল পথের হেদায়েত দেন।’ (সুরা ফাতহ, আয়াত : ২)
তাঁকে কাওসার দান করা হয়েছে : আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাকে কাওসার দিয়েছি।’ (সুরা কাওসার, আয়াত : ১)
এই ব্যাপারে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তা এমন একটি পানির ঝর্ণা যা আমার রব জান্নাতে সৃষ্টি করে রেখেছেন। তাতে অসংখ্য কল্যাণ বিদ্যমান। তাতে হাওজে কাওসারও রয়েছে। আমার উম্মতগণ কিয়ামতের দিন সেখানে উপস্থিত হবে। এর পানপাত্রের সংখ্যা হবে (আকাশের) তারকার সমপরিমাণ।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৪৭)
আল্লাহ তাঁর জীবনের শপথ করেছেন: পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, নিশ্চয়ই আপনার জীবনের কসম, তারাতো আপন নেশায় মত্ত ছিল। (সুরা হিজর, আয়াত : ৭২)
তাফসিরবিদদের মতে, এটা নবীজির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের দিকে ইঙ্গিত করে।
কবরের প্রশ্নোত্তর তাঁর সম্পর্কে: আল-বারাআ (রা.) থেকে বর্ণিত, বিশ্বনবী (সা.) আল্লাহ তাআলার বাণী ‘যারা ইমান আনে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে পার্থিব জীবনে ও আখিরাতে শাশ্বত বানীতে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন’ -[সুরা ইবরাহিম : ২৭] প্রসঙ্গে বলেন, কবরে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখা হবে- যখন তাকে বলা হবে, তোমার প্রভু কে, তোমার দ্বীন কি এবং তোমার নবী কে। (তিরমিজি, হাদিস : ৩১২০)
তিনি সারা জাহানের জন্য রহমত : পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, আর আমি আপনাকে বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপই পাঠিয়েছি। (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭)
তিনি জান্নাত ও জাহান্নাম দেখেছেন: রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমিতো জান্নাত দেখেছিলাম এবং এক গুচ্ছ আঙ্গুরের প্রতি হাত বাড়িয়েছিলাম। আমি তা পেয়ে গেলে দুনিয়া কায়িম থাকা পর্যন্ত অবশ্য তোমরা তা খেতে পারতে। অতঃপর আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়, আমি আজকের মত ভয়াবহ দৃশ্য কখনো দেখিনি।’ (বুখারি, হাদিস : ১০৫২)
তিনি ছিলেন ‘জাওয়ামিউল কালিম’ : তিনি সংক্ষিপ্ত অথচ গভীর অর্থবহনকারী কথা বলার শক্তি রাখতেন। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, অল্প শব্দে ব্যাপক অর্থবোধক বাক্য বলার শক্তি সহ আমাকে পাঠানো হয়েছে এবং শত্রুর মনে ভীতি সঞ্চারের মাধ্যমে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। একবার আমি নিদ্রায় ছিলাম, তখন পৃথিবীর ধনভাণ্ডার সমূহের চাবি আমার হাতে দেওয়া হয়েছে। (বুখারি, হাদিস : ২৯৭৭)
লেখক : উপ-পরিচালক (অব.), পূর্ত অডিট অধিদপ্তর, সেগুনবাগিচা, ঢাকা