সুরা ইউনুসে যুগে যুগে নবী প্রেরণের ধারা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। সৃষ্টিজগত্ নিয়ে বর্ণনা করে আল্লাহর একত্ববাদ সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।
এই সুরায় মুশরিকদের ভ্রান্ত বিশ্বাসের অপনোদন করা হয়েছে। নবুয়ত অস্বীকারকারীদের দাবি খ-ন করা হয়েছে। ‘আল্লাহ রিজিকদাতা, জীবনদাতা ও মৃত্যুদাতা’—এসব আকিদা আলোচ্য সুরায় বিশেষ বর্ণনাশৈলীতে উপস্থাপন করা হয়েছে। উপদেশ গ্রহণের জন্য আলোচ্য সুরায় নুহ (আ.), মুসা (আ.)সহ বেশ কয়েকজন নবীর কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
ফেরাউনের সাগরে ডুবে মরা এবং ইউনুস (আ.) ও তাঁর জাতির বিষয়ে এই সুরায় বর্ণনা করা হয়েছে। এই সুরায় বলা হয়েছে, আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্য ও হেদায়েতের আলোকবর্তিকা এসে গেছে। কোরআনে এসেছে আল্লাহর উপদেশ নিয়ে। অতএব আল্লাহর ফয়সালা আসা পর্যন্ত ঈমানদারদের ধৈর্য ধারণ করতে বলা হয়েছে।
আদেশ-নিষেধ-হেদায়েত
১. বিধান দাতা কেবল মহান আল্লাহ। (আয়াত : ১)
২. মানুষকে নবী বানানো হয়েছে যেন মানুষ বলতে না পারে ‘তোমার আনীত বিধান মানুষের পালনযোগ্য নয়, তুমি ভিন্ন প্রকৃতির অধিকারী’। (আয়াত: ২)
৩. পরকালে কিছু মানুষ আল্লাহর অনুমতিক্রমে সুপারিশ করতে পারবে। (আয়াত: ৩)
৪. মানুষের সব দোয়া কবুল না হওয়া আল্লাহর অনুগ্রহ। কেননা মানুষ ক্ষোভ ও রাগ থেকে নিজের অকল্যাণেরও দোয়া করে থাকে। (আয়াত: ১১)
৫. নিজের প্রতি, নিজের সন্তান ও পরিবার এবং সহায়-সম্পদের প্রতি বদদোয়া করা নিষিদ্ধ। (আয়াত: ১১)
৬. দুঃসময়ে আল্লাহর প্রার্থনা করা এবং সুসময়ে তাঁকে ভুলে থাকা পাপীদের লক্ষণ। (আয়াত : ১২)
৭. কোরআন ও শরিয়তের বিকল্প খোঁজা ঈমানহীনতার প্রমাণ। (আয়াত: ১৫)
৮. কোরআনের যে কোনো ধরনের বিকৃতি হারাম। (আয়াত: ১৫)
৯. দুটি পাপের শাস্তি দুনিয়াতে দ্রুততম সময়ে দেওয়া হয় : খোদাদ্রোহিতা ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা। (আয়াত: ২৩)
১০. সৃষ্টিজগতের উপকার হয় এবং আল্লাহ খুশি হন এমন সব কাজের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে সাওয়াব আশা করা যায়। (আয়াত: ২৬)
১১. মানুষের চেহারায় পাপ ও পুণ্যের প্রভাব প্রকাশ পায়। (আয়াত: ২৬-২৭)
১২. কোরআনের প্রতি সংশয় পোষণকারীরা সর্বত মিথ্যাবাদী। (আয়াত: ২৯)
১৩. হেদায়েত লাভের অন্যতম শর্ত হলো ব্যক্তির অন্তরে হেদায়েতের তলব থাকা। (আয়াত: ৪৪)
১৪. বান্দার মৃত্যুকালীন ঊর্ধ্বশ্বাস আরম্ভ হওয়ার আগ পর্যন্ত তার তাওবা কবুল করা হয়। (আয়াত: ৫৪)
১৫. আল্লাহর ওলিদের জন্য পার্থিব জীবনের সুসংবাদ হলো আল্লাহর সাহায্য, পৃথিবীর শাসনভার, সত্য স্বপ্ন, উত্তম প্রতিদান ও জান্নাত লাভের ঘোষণা। (আয়াত: ৬৪)
১৬. ধারণার বশবর্তী হয়ে কোনো কথা বা কাজ করা উচিত নয়। কেননা তাতে মিথ্যায় লিপ্ত হওয়ার ভয় থাকে। (আয়াত: ৬৬)
১৭. বিনা প্রয়োজনে রাতজাগা নিন্দনীয়। আল্লাহ রাতকে ঘুমের উপযোগী করেছেন এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য তা অপরিহার্য। (আয়াত: ৬৭)
১৮. অত্যাচারী শাসকদের থেকে মুক্তির দোয়া করাও মুমিনের কর্তব্য। (আয়াত: ৮৫)
১৯. দোয়ার একটি শিষ্টাচার হলো আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে দোয়া করা এবং দোয়া কবুলের আশা রাখা। (আয়াত: ৮৬)
২০. আল্লাহ ফেরাউনের লাশ নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণ করেছেন। (আয়াত: ৯২)
২১. মানুষকে ইসলামের প্রতি উত্সাহিত করা মুমিনের দায়িত্ব, তাদের বাধ্য করা তাদের কাজ নয়। (আয়াত: ৯৯)
২২. ধর্মীয় সম্প্রীতির অজুহাতে অমুসলিমদের পূজা-আর্চনার মতো ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে যোগ দেওয়া মুসলমানের জন্য বৈধ নয়। (আয়াত: ১০৫)