শিরোনাম :
Logo চাঁদপুর মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র পরিদর্শনে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার Logo হাবিপ্রবিতে “ইন্টারডিসিপ্লিনারি রিসার্চ অ্যান্ড সাস্টেইনেবল ইকনোমি” শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত Logo দুই সাংবাদিকসহ ৪ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ; পালটাপালটি সংবাদ সম্মেলন Logo ভিসির কার্যালয়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপন- নিয়ন্ত্রণ প্রোভিসির Logo শিশু আছিয়ার ধর্ষক হিটু শেখের মৃত্যুদণ্ড Logo দেবীগঞ্জে কৃষক লীগ নেতার অডিও ফাঁস; বিএনপি-জামায়াত নেতাদের বাড়িতে আগুন দেওয়ার পরিকল্পনা Logo দেবীগঞ্জে কৃষক লীগ নেতার অডিও ফাঁস; বিএনপি-জামায়াত নেতাদের বাড়িতে আগুন দেওয়ার পরিকল্পনা Logo কচুয়ার রাজবাড়ী হোসনেয়ারা মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ক্রীড়া সাংস্কৃতিক ও পুরস্কার বিতরণ Logo ইবির সেই শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে শিক্ষার্থীদের পুনরায় বিক্ষোভ Logo চাঁদপুরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে প্রতিবাদ

ফসলি জমির মাটি ও গাছ পুড়ছে আমতলীতে

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৪:৫৪:২২ অপরাহ্ণ, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৭৩১ বার পড়া হয়েছে

বরগুনার আমতলীর দুটি গ্রামে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে চারটি ইটভাটা। ইটভাটাগুলোর কাছে রয়েছে চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। চারপাশে জনবসতি ও ফসলি জমি। দীর্ঘদিন ধরে এ রকম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ইট পোড়ানো হচ্ছে। এতে ফসলহানির পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয়রা।

আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের রায়বালা ও খাগদান গ্রাম দুটিতে ঘনবসতিসহ রয়েছে তিন ফসলি জমি। গ্রাম দুটির ২-৩শ’ মিটারের মধ্যেই রয়েছে নূরজামালের আল্লাহর দান ব্রিকস, মাহবুবুল আলম মৃধার এসএম ব্রিকস, হান্নান মৃধার বিবিসি ব্রিকস, শানু হাওলাদারের ফাইভ স্টার ব্রিকস। এসব ভাটা থেকে ১০০ থেকে ১৫০ ফুটের মধ্যে রয়েছে রায়বালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আকবরিয়া দাখিল মাদ্রাসা, খাগদান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খাগদান নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

অবৈধভাবে ইটভাটা গড়ে তোলার বিষয়ে কথা বলতে রায়বালা গ্রামের বিবিসি ব্রিকসের মালিক মো. হান্নান মৃধার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁর দাবি, সবকিছু ম্যানেজ করেই ইটভাটার কার্যক্রম চলছে। ইট পরিবহনের কারণে রাস্তাঘাট নষ্টের বিষয়ে খাগদান গ্রামের ফাইভ স্টার ব্রিকসের মালিক শানু হাওলাদারের ভাষ্য, রাস্তাঘাট ধ্বংস হলে তাঁর কিছু যায় আসে না।

সরেজমিন দেখা গেছে, গ্রাম দুটিজুড়ে চলছে ইটভাটার কর্মযজ্ঞ। ভাটা থেকে ৫-১০ ফুট দূরত্বেই রয়েছে আমন ক্ষেত। আধাপাকা ধানগুলো বিবর্ণ। আশপাশের গাছপালা ও ঘরবাড়িতে ধুলাবালির আস্তর জমেছে। প্রতিদিন শতাধিক ট্রলিতে ভাটায় ব্যবহারের জন্য মাটি ও পোড়া ইট পরিবহনের ফলে মহিষকাটা থেকে হাজার টাকার বাঁধ পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সড়ক চষা জমিতে পরিণত হয়েছে। কার্পেটিং উঠে বড় বড় গর্ত হওয়ায় যানবাহন দূরের কথা, হেঁটেও চলাচল দায় হয়ে পড়েছে। ভাটার দূষিত ধোঁয়ায় ঘরে ঘরে শিশু ও বয়স্কদের চর্মরোগ, হাঁপানি, সর্দি-কাশি লেগেই আছে। মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বলার সাহস পান না।

রায়বালা গ্রামের মুসা মিয়া বলেন, এই গ্রাম গাছপালায় ভরা ছিল। এখানকার জমিতে তিন ফসল হতো। ইটভাটার কারণে সব শেষ। এখন আউশ আর রবি ফসল ফলানো যায় না। ভাটা মালিকদের কিছু বললেই মামলা দিয়ে হয়রানি করার ভয় দেখায়।

একই গ্রামের সাবেরা বেগম জানান, ময়লার কারণে বিছানা, বালিশ ধুলায় ভরে যায়। আগের মতো নারকেল, আম, কাঁঠাল ধরে না। বেশ কিছু গাছ মরে গেছে। খাগদান গ্রামের বাচ্চু হাওলাদার জানান, আগে বাড়ির গাছে প্রচুর আম, জাম, কাঁঠাল, নারকেল হতো। ইটভাটা হওয়ার পর থেকে তেমন একটা ফল হয় না।

খাগদান গ্রামের ইউপি সদস্য মাসুম ও রায়বালা গ্রামের ইউপি সদস্য জাকির হোসেন জানান, আইনের তোয়াক্কা না করে একের পর এক ইটভাটা গড়ে উঠছে। সেখানে ফসলি জমির মাটি ও গাছ পোড়ানো হচ্ছে। ধুলাবালিতে একাকার হয়ে থাকে গোটা এলাকা। জরুরি ভিত্তিতে এসব ভাটা বন্ধ করা দরকার। পরিবেশ অধিদপ্তর বরগুনার সহকারী পরিচালক হায়াত মাহমুদ রকিব বলেন। বিষয়টি আমি তদন্ত করে দেখব।’

আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ‘কৃষিজমি ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার পাশে ইটভাটা স্থাপন অবৈধ। অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে সত্যতা পেলে লাইসেন্স বাতিলের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করা হবে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

চাঁদপুর মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র পরিদর্শনে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার

ফসলি জমির মাটি ও গাছ পুড়ছে আমতলীতে

আপডেট সময় : ০৪:৫৪:২২ অপরাহ্ণ, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

বরগুনার আমতলীর দুটি গ্রামে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে চারটি ইটভাটা। ইটভাটাগুলোর কাছে রয়েছে চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। চারপাশে জনবসতি ও ফসলি জমি। দীর্ঘদিন ধরে এ রকম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ইট পোড়ানো হচ্ছে। এতে ফসলহানির পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয়রা।

আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের রায়বালা ও খাগদান গ্রাম দুটিতে ঘনবসতিসহ রয়েছে তিন ফসলি জমি। গ্রাম দুটির ২-৩শ’ মিটারের মধ্যেই রয়েছে নূরজামালের আল্লাহর দান ব্রিকস, মাহবুবুল আলম মৃধার এসএম ব্রিকস, হান্নান মৃধার বিবিসি ব্রিকস, শানু হাওলাদারের ফাইভ স্টার ব্রিকস। এসব ভাটা থেকে ১০০ থেকে ১৫০ ফুটের মধ্যে রয়েছে রায়বালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আকবরিয়া দাখিল মাদ্রাসা, খাগদান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খাগদান নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

অবৈধভাবে ইটভাটা গড়ে তোলার বিষয়ে কথা বলতে রায়বালা গ্রামের বিবিসি ব্রিকসের মালিক মো. হান্নান মৃধার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁর দাবি, সবকিছু ম্যানেজ করেই ইটভাটার কার্যক্রম চলছে। ইট পরিবহনের কারণে রাস্তাঘাট নষ্টের বিষয়ে খাগদান গ্রামের ফাইভ স্টার ব্রিকসের মালিক শানু হাওলাদারের ভাষ্য, রাস্তাঘাট ধ্বংস হলে তাঁর কিছু যায় আসে না।

সরেজমিন দেখা গেছে, গ্রাম দুটিজুড়ে চলছে ইটভাটার কর্মযজ্ঞ। ভাটা থেকে ৫-১০ ফুট দূরত্বেই রয়েছে আমন ক্ষেত। আধাপাকা ধানগুলো বিবর্ণ। আশপাশের গাছপালা ও ঘরবাড়িতে ধুলাবালির আস্তর জমেছে। প্রতিদিন শতাধিক ট্রলিতে ভাটায় ব্যবহারের জন্য মাটি ও পোড়া ইট পরিবহনের ফলে মহিষকাটা থেকে হাজার টাকার বাঁধ পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সড়ক চষা জমিতে পরিণত হয়েছে। কার্পেটিং উঠে বড় বড় গর্ত হওয়ায় যানবাহন দূরের কথা, হেঁটেও চলাচল দায় হয়ে পড়েছে। ভাটার দূষিত ধোঁয়ায় ঘরে ঘরে শিশু ও বয়স্কদের চর্মরোগ, হাঁপানি, সর্দি-কাশি লেগেই আছে। মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বলার সাহস পান না।

রায়বালা গ্রামের মুসা মিয়া বলেন, এই গ্রাম গাছপালায় ভরা ছিল। এখানকার জমিতে তিন ফসল হতো। ইটভাটার কারণে সব শেষ। এখন আউশ আর রবি ফসল ফলানো যায় না। ভাটা মালিকদের কিছু বললেই মামলা দিয়ে হয়রানি করার ভয় দেখায়।

একই গ্রামের সাবেরা বেগম জানান, ময়লার কারণে বিছানা, বালিশ ধুলায় ভরে যায়। আগের মতো নারকেল, আম, কাঁঠাল ধরে না। বেশ কিছু গাছ মরে গেছে। খাগদান গ্রামের বাচ্চু হাওলাদার জানান, আগে বাড়ির গাছে প্রচুর আম, জাম, কাঁঠাল, নারকেল হতো। ইটভাটা হওয়ার পর থেকে তেমন একটা ফল হয় না।

খাগদান গ্রামের ইউপি সদস্য মাসুম ও রায়বালা গ্রামের ইউপি সদস্য জাকির হোসেন জানান, আইনের তোয়াক্কা না করে একের পর এক ইটভাটা গড়ে উঠছে। সেখানে ফসলি জমির মাটি ও গাছ পোড়ানো হচ্ছে। ধুলাবালিতে একাকার হয়ে থাকে গোটা এলাকা। জরুরি ভিত্তিতে এসব ভাটা বন্ধ করা দরকার। পরিবেশ অধিদপ্তর বরগুনার সহকারী পরিচালক হায়াত মাহমুদ রকিব বলেন। বিষয়টি আমি তদন্ত করে দেখব।’

আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ‘কৃষিজমি ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার পাশে ইটভাটা স্থাপন অবৈধ। অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে সত্যতা পেলে লাইসেন্স বাতিলের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করা হবে।