ঋতু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে কিছু রোগ বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তার মধ্যে একটি চোখ ওঠা। চিকিৎসা বিদ্যায় এর নাম কনজাংটিভাইটিস। রাজধানীজুড়ে সম্প্রতি এ রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। সাধারণত গ্রীষ্মে এ রোগ দেখা দিলেও এবার শরতে বেশি দেখা যাচ্ছে। পরিবারের একজন এ রোগে আক্রান্ত হলে বাকিদের মধ্যেও তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এভাবে ছড়াচ্ছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাঝেও।
রাজধানীর অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের চোখ ওঠা শুরু হয়েছে। একজন আক্রান্ত হলে দ্রুত সেটি অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ছে। অতি ছোঁয়াচে এই রোগ বেশি ভোগাচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীদের। চোখ ওঠা রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে স্কুল সাময়িক বন্ধ বা আক্রান্ত শিক্ষার্থীকে ছুটি দিয়ে দিচ্ছে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান।
শুধু চোখ ওঠা নয়, বেশ কিছুদিন ধরে রাজধানীতে সর্দি-কাশি ও জ্বরের প্রকোপও বেড়েছে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতির হার কমেছে। অসুস্থ যেসব শিক্ষার্থীর পরীক্ষা চলছে, তাদের আলাদা কক্ষে বসিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। চোখ ওঠার ক্ষেত্রে ক্লাসে আসার জন্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বাধ্য করা হচ্ছে না।
যাত্রাবাড়ীর সানবীম কিন্ডার গার্টেন স্কুলে চোখ ওঠা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে অন্তত ৩০ জন খুদে শিক্ষার্থী। তাদের সবাইকে আগামী শনিবার (১ অক্টোবর) পর্যন্ত ছুটি দেওয়া হয়েছে। আক্রান্তদের আপাতত বাসায় থাকতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্কুলটির প্রধান শিক্ষক বিলকিস বেগম।
রাজধানীর ব্রাইট স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কিছুটা কমেছে। প্রতি ক্লাসেই দুয়েকজনের চোখ উঠেছে। যাদের চোখ উঠেছে, আমরা তাদের কালো চশমা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছি। তারা ক্লাসে আসতে পারছে। তবে, তাদের আলাদা করে বসাচ্ছি।
তিনি বলেন, যেসব শিক্ষার্থীর এলার্জির সমস্যা বেশি তাদের ক্লাসে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়া, জ্বর-সর্দি গত মাসের চেয়ে এ মাসে বেড়েছে। যারা অসুস্থ হচ্ছে, তাদের কেউ আসছে, কেউ আসছে না।
এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মঈদুর রহমান জেম বলেন, চোখ ওঠা শিক্ষার্থীরা সানগ্লাস দিয়ে ক্লাসে ঢুকছে। ক্লাস শেষে আবার তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যারা আসতে পারছে না, তাদের ক্লাসে আসার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে না। পরবর্তীতে তারা আবেদনপত্র নিয়ে আসলে আমরা ছুটি মঞ্জুর করে দিচ্ছি।
রাজধানীর উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ জহুরা বেগম বলেন, অনেক শিক্ষার্থীরই চোখ উঠেছে। অনেকের এখন ক্লাস টেস্ট চলছে। আলাদা দুটি কক্ষে তাদের পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষা শেষে তাদের ছুটি দেওয়া হচ্ছে, তারা কোনো ক্লাসে ঢুকছে না। কেউ না আসতে চাইলে অভিভাবকদের বলে দিয়েছি, জোর করার দরকার নেই।
মিরপুর-১ এ অবস্থিত মিরপুর ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়ালের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী আনিসা ইমামের মা জানান, গত সপ্তাহের মাঝামাঝি তার মেয়ে জ্বরে আক্রান্ত হয়। সে কারণে তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এ সপ্তাহের শুরুতে জ্বর সেরে গেলেও সর্দি-কাশি রয়ে গেছে। অসুস্থতার কারণে এক সপ্তাহের বেশি তাকে স্কুলে গ্যাপ দিতে হচ্ছে।
মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র মো. তাসরিফুল ইসলাম। জ্বর-সর্দির কারণে গত তিনদিন (২৬ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর) সে ক্লাসে উপস্থিত হতে পারেনি। তার বড় ভাই নাইমুল ইসলাম বলেন, অসুস্থতার প্রথম দিন কলেজে যেতে পারলেও পরের দিন থেকে সে বাসায় অবস্থান করছে। আমরা ডাক্তার দেখিয়েছি। সুস্থ হলেই কলেজে পাঠাব।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শাখার (বেইলি রোড) দিবা বিভাগের প্রধান শাহ আলম খান বলেন, অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ। তবে আমাদের শ্রেণি পরীক্ষা চলমান থাকায় তাদের আসতে হচ্ছে। আলাদা মিলনায়তনে দূরত্ব বজায় রেখে তাদের বসাচ্ছি। এক বেঞ্চের দুই পাশে দুজন বসছে।