শিরোনাম :
Logo মাদকের টাকা না পেয়ে বাবাকে কোপাল ছেলে Logo সাতক্ষীরা কলারোয়ায় সাবেক যুবদল নেতার আগ্রাসনে বিধবা নারীর বসতবাড়ি ভাঙচুর Logo চাঁদপুর পুরান বাজারে ব্র্যাকের উদ্যোগে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ক্লিনিং ক্যাম্পেইন Logo ভারতে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অফিস বন্ধের আহ্বান ঢাকার! Logo ইবিতে প্রথম ট্যুরিস্ট ক্লাব নির্বাচন; নেতৃত্বে রিফাত ও ফেরদৌস Logo এন্ট্রি পদ নবম গ্রেড ও আলাদা অধিদপ্তর গঠনের দাবিতে মাধ্যমিক শিক্ষকদের মানববন্ধন Logo চাঁদপুরে পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাস মালিকদের সঙ্গে জেলা প্রশাসকের আলোচনা সভা Logo চাঁদপুরে বাংলাদেশ পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগের শারীরিক মাপ ও কাগজপত্র যাচাইকরণ” পরীক্ষা Logo বীরগঞ্জে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের  ৪৫ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত হয়েছে Logo পলাশবাড়ীতে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫ তম জন্মবার্ষিকী পালিত

চুয়াডাঙ্গায় ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তার বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ চালক ও মালিকরা

  • rahul raj
  • আপডেট সময় : ০৮:৪৯:০৭ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ২০ আগস্ট ২০১৮
  • ৭৪১ বার পড়া হয়েছে

 

নিউজ ডেস্ক: সদ্য শেষ হয়েছে পুলিশের বিশেষ ট্রাফিক সপ্তাহ। সাফল্য ছিলো চোখে পড়ার মত। অথচ এরমধ্যে চুয়াডাঙ্গায় ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তার বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন ছোট বড় যানবাহনের চালক ও মালিকরা। একাধিক চালক অভিযোগ করে জানান, বিনা কারণেই ট্রাফিক পুলিশ গাড়ী আটকিয়ে প্রায় জিম্মি করে টাকা আদায় করে। ট্রাফিক পুলিশ গাড়ী আটকানোর পর চালকরা অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েন আইনের কাছে। বৈধ কাগজপত্র থাকারও পরও বাধ্য হয়ে অনেকে ঝামেলা এড়াতে ট্রাফিক পুলিশকে উৎকোচ দিয়ে সড়কে যানবাহন নিয়ে চলাচল করেন।
গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা মহাসড়কে হাজরাহাটি মোড় নামকস্থানে ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা টিএসআই প্রদীপ চেকপোস্টের নামে ব্যাপক চাঁদাবাজি করছেন। এমনকি এসময় যানবাহন মালিক ও চালকদের সাথে অশোভন আচরণ করতেও দেখা যায়। আরো দেখা যায় মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে বিভিন্ন কোম্পানির গাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের বৈধ কাগজপত্র চেক করার নামে চলছে অহেতুক হয়রানি। ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’ কথাটা কয়েকজন অসাধু পুলিশ সদস্যদের জন্য মিথ্যা হতে চলেছে। গোটা পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলেও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। আর চাঁদা দিতে না পারলে যে কোনও মিথ্যা কারণ দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন অপরাধের মামলা। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির গাড়ি দাড় করিয়ে একটি টোকেন দিয়ে টিএসআই প্রদীপসহ পুরো টিমকে টাকা আদায় করতে দেখা যায়। এবিষয়ে চুয়াডাঙ্গায় ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা টিএসআই প্রদীপের কাছে জানতে চাইলে তিনি মালিক ও চালকদের এ অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, গতকাল আলমডাঙ্গা সড়কে আলামিন ও রাসেল নামের দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিয়ে আলমডাঙ্গার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পথিমধ্যে চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা সড়কে হাজরাহাটি মোড় নামকস্থানে টিএসআই প্রদীপ তাদের দাড় করান মোটরসাইকেলের বৈধ কাগজপত্র চেক করার জন্য। এসময় আলামিন চেকপোস্টে কর্তব্যরত একজন কন্সটেবলকে বলেন, আমার মোটরসাইকেলের বৈধ সকল কাগজপত্র আছে তবে এখন আমার কাছে নেই। আপনারা একটু ওয়েট করলে আমি এনে দেখাতে পারবো। এসময় ওই কন্সটেবল বলে স্যারের সাথে কথা বলেন। এসময় আলামিন বিভিন্ন ধরণের মামলা দেওয়ার ভয় দেখালে আলামিন ও রাসেল ভয়ে প্রথমে ২শ’ টাকা দিয়ে ঝামেলা এড়াতে চায়। কিন্তু টিএসআই প্রদীপ এতে রাজী না হলে পরে ৫শ টাকা দিলে আলামিন এবং রাসেলকে মোটরসাইকেলের কাগজ না দেখে এবং মামলা না দিয়ে ছেড়ে দেয়। এসময় টিএসআই প্রদীপ এই দুইজন মোটরসাইকেল আরোহীকে অন্য পথে বাড়ি ফেরার দিকনির্দেশনাও দিয়ে দেন।
এর কিছুক্ষণ পর নাভানা ফার্নিচার লিমিটেডের একটি পণ্য বহনকারী ট্রাক থামিয়ে টোকেনের মাধ্যমে ২শ’ টাকা আদায় করেন। নাভানা ফার্নিচার লিমিটেডের গাড়ির ড্রাইভার জাহাঙ্গীর আলম প্রথমে না বলতে চাইলেও সাংবাদিকদের জেরার মুখে পড়ে পুলিশের টাকা আদায়ের অভিযোগ স্বীকার করে নেন। তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ টাকা না দিলে মামলা দিয়ে দিবে। তবে তিনি আরো বলেন, আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা সত্তেও আমার নিকট থেকে টাকা আদায় করেছে। শুধু আমাকে না প্রায় কোম্পানির গাড়িগুলোতে নির্ধারিত টোকেনের মাধ্যমে টাকা আদায় করছে। চাঁদা না দিলে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয় আমাদের।
এদিকে, সচেতন মহল জানান বৈধ কাগজপত্র থাকারও পরও বাধ্য হয়ে অনেকে ঝামেলা এড়াতে ট্রাফিক পুলিশকে চাঁদা দেন। ভুক্তভোগীরা আরও জানান, কতিপয় অসাধু পুলিশ সদস্যের জন্য পুরো বাহিনী এখন ভুগছে ইমেজ ও আস্থার সংকটে। অথচ অপরাধ দমনে অনেক সৎ নিষ্ঠাবান পুলিশ সদস্যদের সাহসী কর্মকা- ঢাকা পড়ছে কয়েকজনের দুর্নীতিতে।
এবিষয়ে অভিযুক্ত টিএসআই প্রদিপের নিকট টাকা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, আমি কারো নিকট থেকে টাকা আদায় করি নাই। টোকেনের মাধ্যমে টাকা আদায়ের কথা বললে তিনি চালকদের অভিযোগ ভিত্তিহিন বলে জানান।
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা ট্রাফিক টিআই মাহবুবের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোটরসাইকেল ও গাড়ির কাগজপত্র দেখার জন্য নির্দেশ দেওয়া আছে। তবে টোকেন দিয়ে আদায়ের বিষয়টি জানা নাই। যদি টোকেনের মাধ্যমে টাকা আদায় করে থাকে, তাহলে এটা সম্পূর্ন অবৈধ। কোনও পুলিশ সদস্য এ রকম অপরাধ করে থাকলে, তার বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

মাদকের টাকা না পেয়ে বাবাকে কোপাল ছেলে

চুয়াডাঙ্গায় ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তার বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ চালক ও মালিকরা

আপডেট সময় : ০৮:৪৯:০৭ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ২০ আগস্ট ২০১৮

 

নিউজ ডেস্ক: সদ্য শেষ হয়েছে পুলিশের বিশেষ ট্রাফিক সপ্তাহ। সাফল্য ছিলো চোখে পড়ার মত। অথচ এরমধ্যে চুয়াডাঙ্গায় ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তার বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন ছোট বড় যানবাহনের চালক ও মালিকরা। একাধিক চালক অভিযোগ করে জানান, বিনা কারণেই ট্রাফিক পুলিশ গাড়ী আটকিয়ে প্রায় জিম্মি করে টাকা আদায় করে। ট্রাফিক পুলিশ গাড়ী আটকানোর পর চালকরা অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েন আইনের কাছে। বৈধ কাগজপত্র থাকারও পরও বাধ্য হয়ে অনেকে ঝামেলা এড়াতে ট্রাফিক পুলিশকে উৎকোচ দিয়ে সড়কে যানবাহন নিয়ে চলাচল করেন।
গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা মহাসড়কে হাজরাহাটি মোড় নামকস্থানে ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা টিএসআই প্রদীপ চেকপোস্টের নামে ব্যাপক চাঁদাবাজি করছেন। এমনকি এসময় যানবাহন মালিক ও চালকদের সাথে অশোভন আচরণ করতেও দেখা যায়। আরো দেখা যায় মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে বিভিন্ন কোম্পানির গাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের বৈধ কাগজপত্র চেক করার নামে চলছে অহেতুক হয়রানি। ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’ কথাটা কয়েকজন অসাধু পুলিশ সদস্যদের জন্য মিথ্যা হতে চলেছে। গোটা পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলেও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। আর চাঁদা দিতে না পারলে যে কোনও মিথ্যা কারণ দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন অপরাধের মামলা। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির গাড়ি দাড় করিয়ে একটি টোকেন দিয়ে টিএসআই প্রদীপসহ পুরো টিমকে টাকা আদায় করতে দেখা যায়। এবিষয়ে চুয়াডাঙ্গায় ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা টিএসআই প্রদীপের কাছে জানতে চাইলে তিনি মালিক ও চালকদের এ অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, গতকাল আলমডাঙ্গা সড়কে আলামিন ও রাসেল নামের দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিয়ে আলমডাঙ্গার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পথিমধ্যে চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা সড়কে হাজরাহাটি মোড় নামকস্থানে টিএসআই প্রদীপ তাদের দাড় করান মোটরসাইকেলের বৈধ কাগজপত্র চেক করার জন্য। এসময় আলামিন চেকপোস্টে কর্তব্যরত একজন কন্সটেবলকে বলেন, আমার মোটরসাইকেলের বৈধ সকল কাগজপত্র আছে তবে এখন আমার কাছে নেই। আপনারা একটু ওয়েট করলে আমি এনে দেখাতে পারবো। এসময় ওই কন্সটেবল বলে স্যারের সাথে কথা বলেন। এসময় আলামিন বিভিন্ন ধরণের মামলা দেওয়ার ভয় দেখালে আলামিন ও রাসেল ভয়ে প্রথমে ২শ’ টাকা দিয়ে ঝামেলা এড়াতে চায়। কিন্তু টিএসআই প্রদীপ এতে রাজী না হলে পরে ৫শ টাকা দিলে আলামিন এবং রাসেলকে মোটরসাইকেলের কাগজ না দেখে এবং মামলা না দিয়ে ছেড়ে দেয়। এসময় টিএসআই প্রদীপ এই দুইজন মোটরসাইকেল আরোহীকে অন্য পথে বাড়ি ফেরার দিকনির্দেশনাও দিয়ে দেন।
এর কিছুক্ষণ পর নাভানা ফার্নিচার লিমিটেডের একটি পণ্য বহনকারী ট্রাক থামিয়ে টোকেনের মাধ্যমে ২শ’ টাকা আদায় করেন। নাভানা ফার্নিচার লিমিটেডের গাড়ির ড্রাইভার জাহাঙ্গীর আলম প্রথমে না বলতে চাইলেও সাংবাদিকদের জেরার মুখে পড়ে পুলিশের টাকা আদায়ের অভিযোগ স্বীকার করে নেন। তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ টাকা না দিলে মামলা দিয়ে দিবে। তবে তিনি আরো বলেন, আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা সত্তেও আমার নিকট থেকে টাকা আদায় করেছে। শুধু আমাকে না প্রায় কোম্পানির গাড়িগুলোতে নির্ধারিত টোকেনের মাধ্যমে টাকা আদায় করছে। চাঁদা না দিলে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয় আমাদের।
এদিকে, সচেতন মহল জানান বৈধ কাগজপত্র থাকারও পরও বাধ্য হয়ে অনেকে ঝামেলা এড়াতে ট্রাফিক পুলিশকে চাঁদা দেন। ভুক্তভোগীরা আরও জানান, কতিপয় অসাধু পুলিশ সদস্যের জন্য পুরো বাহিনী এখন ভুগছে ইমেজ ও আস্থার সংকটে। অথচ অপরাধ দমনে অনেক সৎ নিষ্ঠাবান পুলিশ সদস্যদের সাহসী কর্মকা- ঢাকা পড়ছে কয়েকজনের দুর্নীতিতে।
এবিষয়ে অভিযুক্ত টিএসআই প্রদিপের নিকট টাকা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, আমি কারো নিকট থেকে টাকা আদায় করি নাই। টোকেনের মাধ্যমে টাকা আদায়ের কথা বললে তিনি চালকদের অভিযোগ ভিত্তিহিন বলে জানান।
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা ট্রাফিক টিআই মাহবুবের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোটরসাইকেল ও গাড়ির কাগজপত্র দেখার জন্য নির্দেশ দেওয়া আছে। তবে টোকেন দিয়ে আদায়ের বিষয়টি জানা নাই। যদি টোকেনের মাধ্যমে টাকা আদায় করে থাকে, তাহলে এটা সম্পূর্ন অবৈধ। কোনও পুলিশ সদস্য এ রকম অপরাধ করে থাকলে, তার বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।