নিউজ ডেস্ক:
রোববার নক আউট পর্বের তৃতীয় ম্যাচে স্বাগতিক রাশিয়ার মুখোমুখি হবে ২০১০ বিশ^ চ্যাম্পিয়ন স্পেন। আন্ডারডগ হিসেবে নিজেদের ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ শুরু করা রাশিয়াকে নিয়ে টুর্নামেন্টের আগে থেকেই যে সমালোচনা চলছিল তাকে আমলে না নিয়ে ঠিকই গ্রুপ পর্বের বাঁধা পেরিয়ে নক আউট নিশ্চিত করেছে স্তানিসলাভ চেরচেসভের শিষ্যরা। অনেকটাই দাপটের সাথে গ্রুপ পর্ব পার করেছে স্বাগতিকরা। আর সে কারনেই তারকা নির্ভর স্পেন রাশিয়াকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়ে একটু বেশী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
নক আউট পর্বে যেতে চেরচেসভের দলের মূল ভরসাই ছিলেন ফরোয়ার্ড আরটেম ডিজুবা। সৌদি আরব ও মিশরের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের প্রথম দুটি ম্যাচে গোল করেছেন ডিজুবা। যদিও শেষ ম্যাচে উরুগুয়ের কাছে ৩-০ গোলে পরাজিত হয়ে হতাশ করেছিল রাশিয়া। কিন্তু ডিজুবা মনে করেন মস্কোতে তারকা সমৃদ্ধ স্পেনকে মোকাবেলা করার ম্যাচটি হবে আরো কঠিন। তিনি বলেন, ‘গত ৩২ বছরে প্রথমবারের মত আমরা নক আউট পর্বে খেলতে যাচ্ছি। দেখা যাক সেখানে কি করতে পারি। মনে হচ্ছে বক্সিংয়ের হেভিওয়েট কোন বিশ^ লড়াই হতে যাচ্ছে। যেখানে অভিজ্ঞ একজন ফাইটার তরুন কিন্তু সাহসী এক যোদ্ধার সাথে রিংয়ে নামছে। দেখা যাক সেই লড়াইয়ে কে সেরা হয়। একটি ভাল দিনে যেকোন দল যেকাউকেই পরাজিত করতে পারে।’
স্প্যানিশ অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকে, সার্জিও রামোসদের কঠিন রক্ষনব্যুহ ভেঙ্গে ডিজুবাকে সামনে এগুতে হবে। বিষয়টি নিয়ে তিনি নিজেও বেশ উচ্ছসিত। ডিজুবা বলেন, সেরাদের বিপক্ষে খেলতে গেলে নিজে কতটা ভাল সেটা প্রমান করা যায়। রামোস ও পিকের বিপক্ষে খেলাটা আমি বেশ উপভোগ করছি। এই ধরনের সুযোগ জীবনে একবারই আসে। দেখা যাক এই লড়াইয়ে কে বিজয়ী হয়।
গ্রুপ পর্বে স্পেনের পারফরমেন্স ততটা নজড় কাড়তে পারেনি। ডিজুবা তাই মনে করেন নক আউট পর্বেও স্পেন তাদের জন্য ততটা ভয়ঙ্কর কিছু করতে পারবেনা। তারা অবশ্যই বিশ্বের সেরা দলগুলোর একটি। গ্রুপ পর্বের ভুলগুলো হয়ত তারা এখানে করবে না। আমরা জানি স্পেনের বিপক্ষে আমাদের কি করতে হবে। অবশ্যই তারা সুষ্পষ্ট ফেবারিট। আমরা জানি ম্যাচটা মোটেই সহজ হবে না। উরুগুয়ে আমদের সেই শিক্ষাই দিয়েছে।
টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে সৌদি আরবকে পাঁচ গোলের লজ্জায় ডুবিয়েছিল রাশিয়া। সেই ম্যাচটির পরে আবারো মস্কোর লুজিনকি স্টেডিয়ামে ফিরে এসেছে স্বাগতিকরা। স্প্যানিশ মিডফিল্ডার মার্কো আসেনসিও মনে করেন রাশিয়ান রাজধানীতে কাল আয়োজিত ম্যাচটি বেশ উত্তেজনাকর হবে। তবে এক্ষেত্রে তিনি কোচ ফার্নান্দো হিয়েরোর পক্ষে কথা বলেছেন। রিয়াল মাদ্রিদের এই তারকা বলেন, ‘রাশিয়া তাদের সমর্থকদের উচ্ছাসকে সঙ্গী করে মাঠে নামবে। ফাইনালের আদলেই আমাদের এই ম্যাচটিতে মুখোমুখি হতে হবে। জয়ী না হলে বাড়ির পথ ধরতে হবে। আমাদের কোচ হিয়েরো একজন জাত নেতা। সবাই এটা ইতোমধ্যেই উপলব্ধি করেছে। সে সবসময়ই আমাদের উজ্জীবিত করার চেস্টা করেছে।
শুক্রবার পূর্ণ শক্তির দল নিয়েই রাশিয়া অনুশীলন করেছে। এর মধ্যে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার এ্যালান ডিজাগোয়েভও ছিলেন। সৌদি আরবের বিপক্ষে মাত্র ২৪ মিনিট আগে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারনে ডিজাগোয়েভ খেলতে পারেননি।
স্পেনের এ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ স্ট্রাইকার দিয়েগো কস্তা ইতোমধ্যেই টুর্নামেন্টে তিন গোল করে নিজেকে প্রমান করেছেন। স্বাগতিক সমর্থকদের চুপ করে দেবার জন্য তিনি একাই যথেষ্ঠ। তবে রাশিয়ান গোলরক্ষক ইগর আকিনফিভ টুর্নামেন্টে এ পর্যন্ত সবকটি ম্যাচে স্বস্তিতে না থাকলেও স্পেনের আক্রমনকে রুখে দেবার জন্য তার ফর্মের দিকেই তাকিয়ে থাকবে পুরো দল।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গার পরে রাশিয়ান এ পর্যন্ত কখনই স্পেনকে পরাজিত করতে পারেনি। সর্বশেষ ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রীতি ম্যাচটি ৩-৩ গোলে ড্র হয়েছিল। স্পেন শেষ ২৩টি ম্যাচে অপারাজিত আছে। ২০১৮ বিশ^কাপের ৩২টি দেশের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। দুই বছর আগে ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপে ইতালির বিপক্ষে সর্বশেষ তারা পরাজিত হয়েছিল (২-০)। ২০০৬ সালের পরে বিশ^কাপ ও ইউরো মিলিয়ে স্পেন তাদের ৩২টি ম্যাচের মধ্যে ৩৩টিতেই আধিপত্য দেখিয়েছে।