নিউজ ডেস্ক:
অনিশ্চিত গন্তব্য জেনেও আত্মরক্ষার্থে বাংলাদেশ সীমান্তের জিরো পয়েন্টে অবস্থান গ্রহণ করেছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সীমান্তের তিন কিলোমিটার ভেতরে আজোহাইয়া সীমানায় নতুন করে অবস্থান নিয়েছে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু।
তমব্রু সীমান্তের জিরো পয়েন্টে যেখানে তাঁবু খাটিয়ে গত ৬ দিন ধরে কোন রকম আশ্রয় নিয়ে বেঁচে আছে তিন হাজার রোহিঙ্গা, ঠিক তাদের একটু উপরের পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছে নতুন করে আরও প্রায় ৪-৫ হাজার রোহিঙ্গা। কোন ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ।
বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে নাফনদীর মোহনায় শাহপরীর দ্বীপের কাছে বুধবার শেষ রাতে ট্রলার ডুবির ঘটনায় ১৯ জন রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ট্রলারটিতে মোট কতজন লোক ছিল তার সঠিক তথ্য জানা যায়নি। অন্যদিকে মায়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি ও সেনা সদস্যরা রোহিঙ্গাদেও উপর নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। আজ সকালেও ওপার থেকে গুলির শব্দ ভেসে এসেছে এবং রোহিঙ্গাদের অবশিষ্ট পাড়াগুলোতে অগ্নিসংযোগ দেওয়া হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে কিছু কিছু পাড়ায় আগুনের লেলিহান শিখা ও ধোঁয়ার কুন্ডলি দেখা গেছে। এতে সীমান্তের জিরো পয়েন্টে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে আজ ভোর থেকেই উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে দলে দলে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটতে দেখা গেছে। অননুমোদিত এই বিশাল ক্যাম্পে প্রতিদিন কতজন রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটছে তার কোন সঠিক তথ্য নেই বিজিবি, পুলিশ প্রশাসন বা রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কর্মরত দেশি-বিদেশি এনজিও সংস্থার কাছে। তবে স্থানীয় বাঙালি ও পুরনো রোহিঙ্গাদেও দেওয়া তথ্য মতে আজ যে পরিমাণ রোহিঙ্গা এসেছে অতীতে এত সংখ্যক রোহিঙ্গা আর আসেনি। এছাড়া আজ টেকনাফের ল্যাদা, মুছনী ও উখিয়ার বালুখালীর অস্থায়ী শরনার্থী ক্যাম্পগুলোতেও অন্তত সহস্রাধিক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সীমায়ন্তের বিভিন্ন পয়েন্টে অনুপ্রবেশের আশায় নিয়েছে আরো প্রায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। নাইক্ষ্যংছড়ির আজোহাইয়া, তমব্রু, জলপাইতলী, ঘুমধুম হয়ে উখিয়ার বালুখালী, কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে সাধারণ যাত্রীর পাশাপাশি রোহিঙ্গা যাত্রী পরিবহনকারি সিএনজি টেক্সি চালক শামসুল ইসলাম বলেন, ‘অতীতে এতো পরিমাণ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ আমরা দেখিনি। এতোদিন ওখানকার সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষজন এদিকে চলে আসত। কিন্তু এবার দেখলাম মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোও এদিকে চলে এসেছে। ’
এদিকে মৃত্যঝুঁকি এড়াতে রাখাইন রাজ্যেও ৬টি হিন্দু পরিবার আজ বাংলাদেশ অনুপ্রবেশ করেছে বলে অসমর্থিত সূত্রে জানা গেলেও তাদের অবস্থান খুঁজে পাওয়া যায়নি। এর আগে মুসলিম ছাড়া অন্য কোন ধর্মেও রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ হয়েছে বলে শোনা যায়নি। এবারই প্রথম কোন হিন্দু পরিবার বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।