মাসুদ রানা, মেহেরপুর প্রতিনিধিঃ সম্ভাবনাময় আম রপ্তানীতে ধাক্কা খেল মেহেরপুরের আম চাষিরা। চাষিদের সাথে মৌখিক চুক্তি অনুযায়ী আম কিনতে গড়িমশি করছেন রপ্তানীকারকরা। ফলে বিদেশে রপ্তানির জন্য ব্যাগিং করা আম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন আম চাষি। ২০০ টন আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও গেল ৫ দিনে রপ্তানীকারকরা আম কিনেছেন মাত্র ১২ টন। এরপর থেকে আর দেখা মিলছেনা তাদের। সদুত্তর দিতে পারছে না কৃষি বিভাগও। গাছের আম পেকে পড়ে পড়ে নষ্ট হওয়ায় প্রতিনিয়তই লোকসানের পাল্লা ভারি হচ্ছে কৃষকদের। তবে রপ্তানীকারকরা জানিয়েছেন সংগ্রহকৃত আমের মান যাচাইয়ের পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বাকি আম তারা কিনবেন কিনা।
গত বছরে ব্যাগিং করে রপ্তানীকারকদের কাছ থেকে আমের ভাল দাম পাওয়ায় এবারও আম রপ্তানীতে উৎসাহিত হয় মেহেরপুরের আম চাষিরা। কৃষি বিভাগ ও রপ্তানীকারকদের নির্দেশনা মোতাবেক এবার ৯ লক্ষ আম আম ব্যাগিং করেন তারা। রপ্তানির জন্য ২৫ মে আম সংগ্রহ করার কথা ছিল তাদের। কিন্তু সেই আম সংগ্রহ শুরু করেন ৩১ মে থেকে। দাম দেয়া হয় কেজি প্রতি ৮৫ টাকা। অথচ গত বছর ছিল ৯৫ টাকা। এতে হতাশ হন আম চাষিরা। কারণ প্রতি কেজি আম রপ্তানীযোগ্য করে তুলতে খরচ হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। তারপরও রপ্তানীকারকরা আম নেয়ার সময় ব্যাগিং করা আমের ৪০ ভাগ বাদ দিচ্ছেন। এতে ক্ষোভ বাড়তে থাকে কৃষকদের মাঝে। কিন্তু ৫ দিনে ১২ টন আম সংগ্রহ করার পর আর দেখা মিলছে না রপ্তানীকারকদের। আবার কোন কোন বাগানে এখনও শুরু হয়নি আম সংগ্রহ। ফলে গাছের আম গাছেই নষ্ট হতে শুরু হয়েছে। আম চাষিরা ভুগছেন চরম হতাশায়। বাড়তি খরচ করে ব্যাগিং করা আম তারা কোথায় বিক্রি করবেন তা নিয়ে চিন্তিত চাষিরা। কারণ স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে গেলে উৎপাদন খরচই উঠবে না।
আম চাষি সাইদুর রহমান জানান, ২০০ মেট্রিকটন আমের মধ্যে তিনি নিজেই উৎপাদন করেছেন ৫০ মেট্রিকটন। এর মধ্যে মাত্র ৭ মেট্রিকটন আম তার বাগান থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। বাকি আম নিয়ে তিনি কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন। এছাড়াও রোজার সময় বাজারে আমের চাহিদাও কম। এতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকার লোকসান গুনতে হবে তাকে। কারণ প্রতিটি আমে ব্যাগ পরাতে খরচ হয়েছে ৫ টাকা করে। দুই লক্ষ ব্যাগে খরচ হয়েছে ১০ লক্ষ টাকা। সাথে রয়েছে আনুসাঙ্গীক খরচ। একই কথা জানালেন বুড়িপোতা গ্রামের আম চাষি সিরাজুল ইসলাম। তিনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ অনূযায়ী ৫০ লক্ষ আম ব্যাগিং করেছেন। এর মধ্যে মাত্র ৫ টন আম তার বাগান থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। একই অবস্থা আমঝুপি গ্রামের খলিল জর্দ্দার, মামুন, আমদাহ গ্রামের আম চাষি হারন-অর রশিদসহ এক্সপোর্টারদের সাথে চুক্তিবদ্ধ ৭০ জন চাষির।
রপ্তানীকারক আনোয়ার হোসেন এবং রপ্তানীকারক সমিতির উপদেষ্টা মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, ২২ মে থেকে আম সংগ্রহ করার কথা থাকলেও কোয়ারেন্টাইন অফিসারদের কারণে তারা পারেননি। আবার রপ্তানীর উদ্দেশ্যে ঢাকায় সেন্ট্রাল প্যাক হাউজে আগগুলো নেওয়ার পর ২০ ভাগ বাদ দিচ্ছেন। ফলে রপ্তানী খরচ বেড়ে যাচ্ছে। অথচ গত বছর মেহেরপুর থেকে আম প্যাক করে সরাসরি রপ্তানি করা হয়েছিল। এখন ইউরোপে রপ্তানীকৃত আমের ভাল মূল্য পেলে পরবর্তীতে মেহেরপুরে আম সংগ্রহ করতে আসবেন তারা। অনেককে স্থানীয় বাজারে আম বিক্রি করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তারা।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক এস.এম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ঢাকায় আমগুলো নিয়ে যাবার পর সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউজে কিছু আম বাদ দেয়া হচ্ছে। ফলে রপ্তানীকারকদের সাথে দ্বন্দ্বের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চলছে।