নজরুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ:সিরাজগঞ্জের সালেহা ইসহাক সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফছার আলীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ থাকলেও তা থেকে রেহাই পেতে নানা কৌশল গ্রহণ করছেন তিনি।
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর তদন্তে সত্যতা মেলায় সেই সুপারিশপত্র রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে গেছে। প্রধান শিক্ষক আফছার আলীর প্রভাব ও অর্থের বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়।
বর্তমানে সহকারি শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা ও বদলির তদবির করছেন প্রধান শিক্ষক আফছার আলী।
জানা যায়, প্রধান শিক্ষক আফছার আলীর বিরুদ্ধে বহুমুখী অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায়। পত্রিকায় প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তৎকালীন পাবনা জেলা শিক্ষা অফিসার রোস্তম আলী হেলালীকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর মাসে তদন্ত কমিটি বিদ্যালয় প্রধানের কক্ষে গ্রহন করে তদন্তের সুপারিশপত্র রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অঞ্চলে প্রেরণ করা হলেও ওই পত্র দপ্তরে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সত্যতা মেলায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ দেওয়ায় সেখানেও প্রভাব ও মোটা অর্থের বিনিময়ে সড়িয়ে ফেলে সহকারি শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবী করে বদলি চাচ্ছে।
এনিয়ে তদন্ত শেষ হলেও আজ পর্যন্ত কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ না হওয়ায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকায় রয়েছে— শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর নানা রকম হয়রানি, নিয়মবহির্ভূতভাবে গাছ বিক্রি, অতিরিক্ত ছাত্রী ভর্তি, মাসিক বেতন বৃদ্ধি, প্রশংসাপত্র প্রদানে অর্থ নির্ধারণ, ছাত্রী নিবাস দখল, আইসিটি ল্যাব থেকে এসি অপসারণ, ফিডার স্কুল পরিচালনায় রেজুলেশন ও কমিটি না থাকা, নিম্নমানের টিফিন বিতরণ, পরীক্ষা পরিবর্তন করে অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা, এমনকি ধর্মীয় ও নৈতিক সীমানা অতিক্রম করে শিক্ষার্থীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগে আদালতের শাস্তি হিসেবে পাঁচ বছর অবনমনসহ প্রায় ১৫টি গুরুতর অভিযোগ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্ষমতার অপব্যবহার করে শিক্ষক নিজেই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সকল প্রতিবাদ দমন করেন। এমনকি শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলন বন্ধে জেলার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করে “আন্দোলন প্রতিরোধ নীলনকশা” তৈরি করেছিলেন বলেও অভিযোগ উঠে। এসব ঘটনার পিছনে সাবেক সংসদ সদস্য ডা. জান্নাত আরা হেনরীর নামও সংশ্লিষ্ট রয়েছে বলে জানা যায়।
২০২৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জ থেকে প্রকাশিত পিপলস নিউজ ২৪-এ বিষয়ে দুটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপা হয়, যেখানে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার অর্থ বাণিজ্যের চিত্র উঠে আসে।
এসব বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আফছার আলী বলেন, ওই সময়ে সংবাদ প্রকাশে পর আমার কক্ষে এসে সবার সাথে আলোচনা নথি গেটে তদন্ত করে চলে গেছেন। তারপর কি হয়েছে তা জানি না। এরপর আমাকে কোন চিঠি বা কেউ আর যোগাযোগও করেনি।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও বর্তমানে নাটোর জেলা শিক্ষা অফিসার রোস্তম আলী হেলালী বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত সম্পন্ন করে সুপারিশসহ রিপোর্ট রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে। প্রধান শিক্ষক আফছার আলীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সুপারিশ সুপারিশ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রশিদ বলেন, তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটির সুপারিশ পেয়েছিলাম। কিন্তুু এখন আর দেখছি না। কিভাবে ফাইল হারিয়ে গেল তা জানি না। তবে এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে জানাতে পারবো।