সাজিদের মৃত্যুতে বিক্ষোভে উত্তাল ইবি, শিক্ষার্থীদের তদন্ত ও নিরাপত্তার দাবি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শাহ আজিজুর রহমান হলের পুকুর থেকে উদ্ধারকৃত আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (১৯ জুলাই) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন সংবত ৩৬ ব্যাচের (২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থীরা। তাদের এ উদ্যোগে একাত্মতা প্রকাশ করে কর্মসূচিতে যোগ দেন প্রজ্বলিত ৩৫ ব্যাচ (২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) ও ইনকিলাব ৩৬ ব্যাচের (২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থীরা ছাড়াও অন্যান্য ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন এবং একাত্মতা প্রকাশ করেন।

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা — ‘কাজ না করে বেতন নে, বেতন কি তোর হালাল রে’, ‘ইবির ভাসছে লাশ, তদন্ত চলবে ২ মাস’, ‘কার দায় কে নেবে, জবাব চাই দিতে হবে’, ‘বেশি আবেগী হইও না, তোমরা’, ‘তুমি কে আমি কে, সাজিদ সাজিদ’, ‘টাকা লাগলে টাকা নে, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা দে’, ‘শিক্ষার্থী মর্গে, প্রশাসন ঘুমায় স্বর্গে’, ‘জাস্টিস ফর সাজিদ’ সহ বিভিন্ন রকমের প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

এছাড়াও “তুমি কে, আমি কে — সাজিদ সাজিদ”, “আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না”, “আমার ভাই কবরে, খুনী কেন বাহিরে?”, “আমার ভাই মরলো কেন? প্রশাসন জবাব দে”, “বাজেট বাজেট বাজেট নাই, বাজেট কী তোর বাপে খায়?”, “প্রশাসনের ব্যর্থতায় আমার ভাই প্রাণ হারায়”, “প্রশাসন চায় কী? বেতন আর দালালি”, “ আপোষ না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম”, “জুলাই যোদ্ধা কবরে, ভিসি-প্রক্টর কি করে?”, “তালা ঝুলবে ততদিন, তদন্ত হবে না যতদিন”, “জাস্টিস! জাস্টিস! উই ওয়ান্ট জাস্টিস”, “একশন একশন, ডাইরেক্ট একশন”, “ছাত্র সমাজের একশন”, “ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ” সহ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

এসময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানায়, আমার ভাই মৃত্যু আমরা কোনভাবেই সাধারণ মৃত্যুর দৃষ্টিতে দেখছি না। আমরা মনে করি তাকে হত্যা করা হয়েছে। নয় একজন ভালো সাঁতারু কিভাবে পানিতে ডুবে মারা যায়, এতো এতো আলামত থাকার পরও প্রশাসন আমার ভাইর মৃত্যু নিয়ে টালবাহানা শুরু করছে। এমন প্রশাসন আমরা চাইনা। আমার ভাই পুকুরে লাশ হয়ে ভেসে ওঠে তারা এসিতে বসে আরাম করে। ধিক্কার জানাই এমন প্রশাসনের প্রতি।

শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, লাশ পাওয়ার ৪০ মিনিট পর আসে এম্বুলেন্স সাড়ে তিন ঘন্টা পর আসে হল প্রশাসন। মানে তাদের কাছে এ ঘটনা সাধারণই মনে হচ্ছে। লাশ পাওয়ার ১ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও তাদের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ তারা নেয়নি। শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে সাদা কাগজে সাধারণ বিবৃতি দেয় তারা। শিক্ষার্থীরা এই মৃত্যুর সুষ্ঠু বিচার চাইতে গেলে বলেন “তোমরা অতি আবেগি হইয়ো না” এমন মাজাভাঙ্গা প্রশাসনের ওই চেয়ারে বসার কোন অধিকারই নাই।

আন্দোলনের একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে উপস্থিত হয়ে বলেন, “আমাদের প্রাণপ্রিয় ছাত্রের এমন মৃত্যুতে আমি শোক প্রকাশ করছি। তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গতকাল তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তোমরা যে দাবি করছো সে দাবি শুধু তোমাদের নয় এ দাবি আমারো। আমার যদি মৃত্যুও হয় তবুও আমি এর সুষ্ঠু বিচার করেই ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। যদি কেউ এ হত্যার সাথে জড়িয়ে থাকে তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে, তোমরা যে প্রতিবাদ করছো এ প্রতিবাদ বন্ধ করবে না, চালিয়ে যাবে।”

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শাহ আজিজুর রহমান হলের পুকুর থেকে সাজিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে তার লাশ কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। শুক্রবার কুষ্টিয়ার সদর হাসপাতালের মসজিদের সামনে প্রথম জানাজা শেষে তার মরদেহ টাঙ্গাইলের পৈতৃক নিবাসে পাঠানো হয়। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে সন্ধ্যায় তার দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

সাজিদের মৃত্যুতে বিক্ষোভে উত্তাল ইবি, শিক্ষার্থীদের তদন্ত ও নিরাপত্তার দাবি

আপডেট সময় : ০৪:০৮:০৫ অপরাহ্ণ, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শাহ আজিজুর রহমান হলের পুকুর থেকে উদ্ধারকৃত আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (১৯ জুলাই) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন সংবত ৩৬ ব্যাচের (২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থীরা। তাদের এ উদ্যোগে একাত্মতা প্রকাশ করে কর্মসূচিতে যোগ দেন প্রজ্বলিত ৩৫ ব্যাচ (২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) ও ইনকিলাব ৩৬ ব্যাচের (২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থীরা ছাড়াও অন্যান্য ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন এবং একাত্মতা প্রকাশ করেন।

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা — ‘কাজ না করে বেতন নে, বেতন কি তোর হালাল রে’, ‘ইবির ভাসছে লাশ, তদন্ত চলবে ২ মাস’, ‘কার দায় কে নেবে, জবাব চাই দিতে হবে’, ‘বেশি আবেগী হইও না, তোমরা’, ‘তুমি কে আমি কে, সাজিদ সাজিদ’, ‘টাকা লাগলে টাকা নে, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা দে’, ‘শিক্ষার্থী মর্গে, প্রশাসন ঘুমায় স্বর্গে’, ‘জাস্টিস ফর সাজিদ’ সহ বিভিন্ন রকমের প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

এছাড়াও “তুমি কে, আমি কে — সাজিদ সাজিদ”, “আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না”, “আমার ভাই কবরে, খুনী কেন বাহিরে?”, “আমার ভাই মরলো কেন? প্রশাসন জবাব দে”, “বাজেট বাজেট বাজেট নাই, বাজেট কী তোর বাপে খায়?”, “প্রশাসনের ব্যর্থতায় আমার ভাই প্রাণ হারায়”, “প্রশাসন চায় কী? বেতন আর দালালি”, “ আপোষ না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম”, “জুলাই যোদ্ধা কবরে, ভিসি-প্রক্টর কি করে?”, “তালা ঝুলবে ততদিন, তদন্ত হবে না যতদিন”, “জাস্টিস! জাস্টিস! উই ওয়ান্ট জাস্টিস”, “একশন একশন, ডাইরেক্ট একশন”, “ছাত্র সমাজের একশন”, “ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ” সহ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

এসময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানায়, আমার ভাই মৃত্যু আমরা কোনভাবেই সাধারণ মৃত্যুর দৃষ্টিতে দেখছি না। আমরা মনে করি তাকে হত্যা করা হয়েছে। নয় একজন ভালো সাঁতারু কিভাবে পানিতে ডুবে মারা যায়, এতো এতো আলামত থাকার পরও প্রশাসন আমার ভাইর মৃত্যু নিয়ে টালবাহানা শুরু করছে। এমন প্রশাসন আমরা চাইনা। আমার ভাই পুকুরে লাশ হয়ে ভেসে ওঠে তারা এসিতে বসে আরাম করে। ধিক্কার জানাই এমন প্রশাসনের প্রতি।

শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, লাশ পাওয়ার ৪০ মিনিট পর আসে এম্বুলেন্স সাড়ে তিন ঘন্টা পর আসে হল প্রশাসন। মানে তাদের কাছে এ ঘটনা সাধারণই মনে হচ্ছে। লাশ পাওয়ার ১ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও তাদের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ তারা নেয়নি। শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে সাদা কাগজে সাধারণ বিবৃতি দেয় তারা। শিক্ষার্থীরা এই মৃত্যুর সুষ্ঠু বিচার চাইতে গেলে বলেন “তোমরা অতি আবেগি হইয়ো না” এমন মাজাভাঙ্গা প্রশাসনের ওই চেয়ারে বসার কোন অধিকারই নাই।

আন্দোলনের একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে উপস্থিত হয়ে বলেন, “আমাদের প্রাণপ্রিয় ছাত্রের এমন মৃত্যুতে আমি শোক প্রকাশ করছি। তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গতকাল তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তোমরা যে দাবি করছো সে দাবি শুধু তোমাদের নয় এ দাবি আমারো। আমার যদি মৃত্যুও হয় তবুও আমি এর সুষ্ঠু বিচার করেই ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। যদি কেউ এ হত্যার সাথে জড়িয়ে থাকে তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে, তোমরা যে প্রতিবাদ করছো এ প্রতিবাদ বন্ধ করবে না, চালিয়ে যাবে।”

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শাহ আজিজুর রহমান হলের পুকুর থেকে সাজিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে তার লাশ কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। শুক্রবার কুষ্টিয়ার সদর হাসপাতালের মসজিদের সামনে প্রথম জানাজা শেষে তার মরদেহ টাঙ্গাইলের পৈতৃক নিবাসে পাঠানো হয়। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে সন্ধ্যায় তার দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়।