নীলফামারীর উত্তরা রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) বিক্ষুব্ধ শ্রমিক ও যৌথবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে হাবিব নামে এক শ্রমিক নিহতের প্রতিবাদে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছে।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৫ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এতে সাবেক সমন্বয়ক এস এম সুইট, সাবেক সহ-সমন্বয়ক গোলাম রাব্বানী, ইয়াশিরুল কবীর, ইবি ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি নুর আলমসহ প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের হাতে “হাবিব হত্যার বিচার চাই”, “চাইলাম ন্যায্য অধিকার, খাইলাম গুলি”, “চাইলাম ভাত, খাইলাম বুলেট”, “শ্রমিক বাঁচলে বাঁচবে দেশ”, “আমার ভাইয়ের বুকে গুলি কেন, ইন্টেরিম জবাব চাই”, “শ্রমিকের জীবনের দায় কে নিবে?” ইত্যাদি লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
বক্তারা বলেন, নীলফামারিতে বরাবরই উত্তরা ইপিজেডের শ্রমিকরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনে তাদের শ্রমিক ভাইদের মেরে ফেলা হয়েছে। ৫ আগস্টের পর ভাবতেই পারিনি যে, দেশের যৌথবাহিনীর আক্রমণে একজন খেটে-খাওয়া শ্রমিক নিহত হবে। আন্দোলন দমন করতে হলে সাধারণ মানুষের বুকেই গুলি কেন করতে হবে? অন্যায়ভাবে গুলি চালানোর ফলে হাবিব নিহত হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। কয়েকদিন আগে একজন রাজনৈতিক নেতা আহত হলে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়, কিন্তু আজ কেন কোনো রাজনৈতিক দল কথা বলছে না?
বক্তারা আরও বলেন, একজন শ্রমিক সারাজীবন কাজ করলেও তাদের কোনও প্রভিডেন্ট ফান্ড নেই, হঠাৎ একদিন সকালে এসে দেখেন তার চাকরিও নেই। যৌথবাহিনী কি আমাদের ভাইদের হত্যা করার দায়িত্ব নিয়েছে? ইন্টেরিম সরকারকে স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যৌথবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করুন। কথা ছিলো সেনাবাহিনী ও যৌথবাহিনী আমাদের নিরাপত্তা দেবে, কিন্তু তারা আমাদের উপর গুলি চালাচ্ছে। আজকের হত্যাকাণ্ড তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত বিচার করতে হবে। শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিতে হবে এবং হাবিবের পরিবারের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। নীলফামারীর শ্রমিক থেকে চা শ্রমিক, সর্বস্তরের শ্রমিকের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
এস এম সুইট বলেন, বাংলাদেশ তৈরি হওয়ার আগ থেকেই উত্তরবঙ্গ নিষ্পেষিত ও বৈষম্যের শিকার। কৈবর্ত্য বিদ্রোহ থেকে তেভাগা আন্দোলন, সর্বশেষ ২৪ জুলাইয়ের ঘটনা পুরো দেশের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। যখন যে সরকার এসেছে তারা বলেছেন উত্তরবঙ্গের সাথে বৈষম্য করা হবে না, কিন্তু তারা প্রথমেই বৈষম্য শুরু করেছে। উত্তরবঙ্গের সাথে কেউ বেঈমানি করে বেশি দিন সরকার চালাতে পারেনি। ব্রিটিশরা চেয়েছিল, পাকিস্তানিরাও চেয়েছিলো, পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাও উত্তরবঙ্গকে ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল, কিন্তু সফল হয়নি। ইন্টেরিম সরকারকে অবশ্যই শ্রমিক হত্যার দায় নিতে হবে, এ দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
উল্লেখ্য, যথাযথ নোটিশ ছাড়াই ছাঁটাই, কর্মপরিবেশের অনিয়ম, নারী শ্রমিকদের সঙ্গে অসভ্য আচরণ, বেতন বৃদ্ধির পর হঠাৎ ছাঁটাই, নামাজে বিরোধিতা, এক শুক্রবার ডিউটি করলে পরের শুক্রবার ছুটি না দেওয়া, পাঞ্চ মেশিন অনুযায়ী বেতন নির্ধারণসহ মোট ২৩ দফা দাবিতে শ্রমিকেরা আন্দোলনে নামেন। গত তিন দিন ধরে আন্দোলন চলছিল। মঙ্গলবার কারখানার বাইরে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে আসে। তাদের টিয়ারশেল ও গুলিবর্ষণের ফলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই হাবিব নিহত হন এবং অন্তত ৬ শ্রমিক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।