শিরোনাম :
Logo চুয়াডাঙ্গায় বিএনপি নেতাকে লাঞ্ছনার অভিযোগে প্রতিবাদ সভা Logo ৭ নং তরপুরচন্ডী ইউনিয়ন ইসলামী আন্দোলনের পরিচিতি সভা ও শপথ অনুষ্ঠান Logo পাল্টাপাল্টি আকাশসীমা বন্ধের মেয়াদ বাড়ালো ভারত-পাকিস্তান Logo ৪২৭ রোহিঙ্গাকে নিয়ে আচমকাই ডুবলো দুই নৌকা Logo আন্দোলনকারীদের মুঠোফোনে যে নির্দেশনা দিলেন ইশরাক Logo যমুনায় যাবে জামায়াতও Logo ইবির ৩৫ জন শিক্ষার্থীকে ডিন’স অ্যাওয়ার্ড প্রদান Logo রিকশাচালকদের রেইনকোট দিয়ে প্রশংসায় ভাসছে বিজয়ীর ফাউন্ডার তানিয়া ইশতিয়াক খান Logo জাতীয় প্রাণীবিজ্ঞান সম্মেলনে রানার-আপ রাবি সোয়ান ইউনিট Logo আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস উপলক্ষে চাঁদপুরে ডিএনসি’র উদ্যোগে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা

প্রধান উপদেষ্টার যেসব চাপে থাকার কথা জানালো নিউইয়র্ক টাইমস

  • নীলকন্ঠ অনলাইন নীলকন্ঠ অনলাইন
  • আপডেট সময় : ১০:৪১:৫৭ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫
  • ৭১০ বার পড়া হয়েছে

গত আগস্টে ছাত্র-জনতার একটি আদর্শবাদী আন্দোলন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটায়। সে সময় দেশের মানুষ গণতন্ত্রের আসন্ন পুনরুজ্জীবন উদ্‌যাপন করেছিলেন। এরপর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের ৯ মাস পার হলো। তবে, এই সময়ে এসে তারা হতাশ হয়েছেন- যারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুত নির্বাচন চেয়ে আসছেন। এখন দেশটির খ্যাতিমান নেতা শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস হুমকি দিচ্ছেন, যদি তাকে তার কাজ করতে দেওয়া না হয় এবং দেশকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করার সুযোগ না দেওয়া হয়, তাহলে তিনি এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করবেন।

শুক্রবার (২৩ মে) নিউইয়র্ক টাইমসে প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়। প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হলো-

আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত মুহাম্মদ ইউনূসকে সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সবকিছু গুছিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সেরা সম্ভাবনা হিসেবে দেখা হচ্ছিল। তাকে যখন অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনার নেতৃত্বে আনা হয়, তখনো রাস্তাঘাটে রক্তপাত চলছিল।

কিন্তু তার সহযোগীরা বলছেন, বর্তমানে তিনি একাধিক পক্ষ থেকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত অনুভব করছেন। তার নীতিগুলোর তারা সমালোচনা করছে এবং বলছে, তিনি নির্বাচনের পরিকল্পনায় অত্যন্ত ধীরগতিতে এগোচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) মুহাম্মদ ইউনূস বাধাহীনভাবে কাজ করার জন্য রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থন না পেলে পদত্যাগের হুমকি দেন।

মুহাম্মদ ইউনূস তার পদত্যাগ ঘোষণার ভাষণের খসড়া তৈরির পর্যায়ে গিয়েছিলেন বলে তার সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। অন্যান্য উপদেষ্টা তাকে বোঝান যে তার পদত্যাগে বাংলাদেশ আরও অস্থিতিশীল হবে। ওই কর্মকর্তা ফোনে বলেন যে, এ বছর নির্বাচন হওয়া উচিত বলে সেনাপ্রধান সম্প্রতি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে অখুশি হয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষগুলোর সমালোচনায় তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বোধ করছেন।

হাসিনার পুরোনো বিরোধীরা যেকোনো নির্বাচনে জয় পাওয়ার মতো অবস্থায় রয়েছেন। নির্বাচন যত দ্রুত হবে, সেই সম্ভাবনা তত বেশি। শেখ হাসিনার দল লাঞ্ছনার মধ্যে রয়েছে এবং সম্প্রতি দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে বর্তমানে দেশটিতে কার্যত অর্থবহ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ফেলো মোবাশ্বার হাসান বলেন, ‘মুহাম্মদ ইউনূস একজন চমৎকার ব্যাংকার হতে পারেন, প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি দারুণ হতে পারেন; কিন্তু তার যে ঘাটতি রয়েছে, দিনের পর এটা স্পষ্ট হচ্ছে যে তার দৃঢ় ও শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব নেই।’ তার বদলে মুহাম্মদ ইউনূস তার উপদেষ্টাদের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হতে পারেন বলে মনে করেন মোবাশ্বার হাসান।

অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশের গণতন্ত্রকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে যাদের তাকে সাহায্য করার কথা ছিল, তাদের কেউ কেউ তাকে উপেক্ষা করছেন বলে অধ্যাপক ইউনূস মনে করছেন। ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হওয়া উচিত, এমন অবস্থান জোরালো হওয়ার পর তিনি ধৈর্য হারিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।

অধ্যাপক ইউনূস এর আগে বলেছিলেন, ২০২৬ সালের জুন নাগাদ দেশ নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত হতে পারে। তবে তিনি কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা দেননি। তিনি তাঁর মন্ত্রিসভাকে বলেছেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত বলে তিনি মনে করেন না।

গত নভেম্বরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, ‘নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে। এটি আর থামবে না। তবে এই যাত্রাপথে আমাদের অনেক কাজ শেষ করতে হবে।’

বিএনপি জোর দিয়ে বলে আসছে যে দেশের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণের আগে একটি গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট প্রয়োজন। নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর সাবেক এই বিরোধী দল ক্ষমতা লাভের সুযোগ নিতে চায়।

বিএনপি প্রথম দিকে অধ্যাপক ইউনূসের সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নীতিগত নানা বিষয়ে মতবিরোধের কারণে দলটি সহযোগিতা বন্ধ করেছে। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে, অধ্যাপক ইউনূস ও তার কর্মকর্তারা দেশের সবচেয়ে বড় সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে চান; যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারের কিছু অঞ্চলে মানবিক সাহায্যের করিডর চালু করতে চান এবং দেশের প্রধান কর কর্তৃপক্ষকে (এনবিআর) ভাগ করতে চান।

রাজনৈতিক অস্থিরতা ঠিক করা ৮৪ বছর বয়সী এই অর্থনীতিবিদের জন্য চ্যালেঞ্জ প্রমাণিত হয়েছে এবং অনেকাংশে প্রায় অসম্ভব কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের একটি নিষিদ্ধ আর অপরটি তড়িঘড়ি নির্বাচন চাইছে। এমন পরিস্থিতিতে অধ্যাপক ইউনূস সময় নিতে চাইছেন বলে মনে হয়।

এতে সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল বিশ্লেষকেরাও বিরক্ত। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মোবাশ্বার হাসান বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে এই নির্বাচন হতে না পারার কোনো কারণ নেই। এটি সম্পূর্ণ সরকারের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে।

এদিকে শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা ওই সময় থেকে তার (হাসিনার) সমর্থকদের সঙ্গে সহিংস সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছেন; কিন্তু তার (শেখ হাসিনা) পুরোনো শত্রু বিএনপিকে তার সে জায়গায় বসাতে ভয় পান তারা। বেশির ভাগ মানুষ এখনো অধ্যাপক ইউনূসের ওপর আস্থা রাখেন।

ফেব্রুয়ারিতে অধ্যাপক ইউনূসের সাবেক উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম ছাত্রদের নিজেদের পক্ষে টানার আশায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামের একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, তিনি অধ্যাপক ইউনূসকে পদত্যাগ না করতে অনুরোধ জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুজন কথা বলেন। অধ্যাপক ইউনূস তাকে বলেন যে দায়িত্ব গ্রহণের সময় তিনি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেগুলো রক্ষা করা যাচ্ছে না।

নাহিদ ইসলাম বলেন, বিভিন্ন গোষ্ঠী অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে এবং সরকারকে চাপ দিচ্ছে। তিনি (অধ্যাপক ইউনূস) মনে করছেন, তার পক্ষে কার্যকরভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করা আর সম্ভব নয়।

 

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

চুয়াডাঙ্গায় বিএনপি নেতাকে লাঞ্ছনার অভিযোগে প্রতিবাদ সভা

প্রধান উপদেষ্টার যেসব চাপে থাকার কথা জানালো নিউইয়র্ক টাইমস

আপডেট সময় : ১০:৪১:৫৭ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

গত আগস্টে ছাত্র-জনতার একটি আদর্শবাদী আন্দোলন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটায়। সে সময় দেশের মানুষ গণতন্ত্রের আসন্ন পুনরুজ্জীবন উদ্‌যাপন করেছিলেন। এরপর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের ৯ মাস পার হলো। তবে, এই সময়ে এসে তারা হতাশ হয়েছেন- যারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুত নির্বাচন চেয়ে আসছেন। এখন দেশটির খ্যাতিমান নেতা শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস হুমকি দিচ্ছেন, যদি তাকে তার কাজ করতে দেওয়া না হয় এবং দেশকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করার সুযোগ না দেওয়া হয়, তাহলে তিনি এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করবেন।

শুক্রবার (২৩ মে) নিউইয়র্ক টাইমসে প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়। প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হলো-

আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত মুহাম্মদ ইউনূসকে সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সবকিছু গুছিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সেরা সম্ভাবনা হিসেবে দেখা হচ্ছিল। তাকে যখন অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনার নেতৃত্বে আনা হয়, তখনো রাস্তাঘাটে রক্তপাত চলছিল।

কিন্তু তার সহযোগীরা বলছেন, বর্তমানে তিনি একাধিক পক্ষ থেকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত অনুভব করছেন। তার নীতিগুলোর তারা সমালোচনা করছে এবং বলছে, তিনি নির্বাচনের পরিকল্পনায় অত্যন্ত ধীরগতিতে এগোচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) মুহাম্মদ ইউনূস বাধাহীনভাবে কাজ করার জন্য রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থন না পেলে পদত্যাগের হুমকি দেন।

মুহাম্মদ ইউনূস তার পদত্যাগ ঘোষণার ভাষণের খসড়া তৈরির পর্যায়ে গিয়েছিলেন বলে তার সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। অন্যান্য উপদেষ্টা তাকে বোঝান যে তার পদত্যাগে বাংলাদেশ আরও অস্থিতিশীল হবে। ওই কর্মকর্তা ফোনে বলেন যে, এ বছর নির্বাচন হওয়া উচিত বলে সেনাপ্রধান সম্প্রতি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে অখুশি হয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষগুলোর সমালোচনায় তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বোধ করছেন।

হাসিনার পুরোনো বিরোধীরা যেকোনো নির্বাচনে জয় পাওয়ার মতো অবস্থায় রয়েছেন। নির্বাচন যত দ্রুত হবে, সেই সম্ভাবনা তত বেশি। শেখ হাসিনার দল লাঞ্ছনার মধ্যে রয়েছে এবং সম্প্রতি দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে বর্তমানে দেশটিতে কার্যত অর্থবহ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ফেলো মোবাশ্বার হাসান বলেন, ‘মুহাম্মদ ইউনূস একজন চমৎকার ব্যাংকার হতে পারেন, প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি দারুণ হতে পারেন; কিন্তু তার যে ঘাটতি রয়েছে, দিনের পর এটা স্পষ্ট হচ্ছে যে তার দৃঢ় ও শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব নেই।’ তার বদলে মুহাম্মদ ইউনূস তার উপদেষ্টাদের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হতে পারেন বলে মনে করেন মোবাশ্বার হাসান।

অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশের গণতন্ত্রকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে যাদের তাকে সাহায্য করার কথা ছিল, তাদের কেউ কেউ তাকে উপেক্ষা করছেন বলে অধ্যাপক ইউনূস মনে করছেন। ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হওয়া উচিত, এমন অবস্থান জোরালো হওয়ার পর তিনি ধৈর্য হারিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।

অধ্যাপক ইউনূস এর আগে বলেছিলেন, ২০২৬ সালের জুন নাগাদ দেশ নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত হতে পারে। তবে তিনি কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা দেননি। তিনি তাঁর মন্ত্রিসভাকে বলেছেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত বলে তিনি মনে করেন না।

গত নভেম্বরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, ‘নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে। এটি আর থামবে না। তবে এই যাত্রাপথে আমাদের অনেক কাজ শেষ করতে হবে।’

বিএনপি জোর দিয়ে বলে আসছে যে দেশের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণের আগে একটি গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট প্রয়োজন। নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর সাবেক এই বিরোধী দল ক্ষমতা লাভের সুযোগ নিতে চায়।

বিএনপি প্রথম দিকে অধ্যাপক ইউনূসের সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নীতিগত নানা বিষয়ে মতবিরোধের কারণে দলটি সহযোগিতা বন্ধ করেছে। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে, অধ্যাপক ইউনূস ও তার কর্মকর্তারা দেশের সবচেয়ে বড় সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে চান; যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারের কিছু অঞ্চলে মানবিক সাহায্যের করিডর চালু করতে চান এবং দেশের প্রধান কর কর্তৃপক্ষকে (এনবিআর) ভাগ করতে চান।

রাজনৈতিক অস্থিরতা ঠিক করা ৮৪ বছর বয়সী এই অর্থনীতিবিদের জন্য চ্যালেঞ্জ প্রমাণিত হয়েছে এবং অনেকাংশে প্রায় অসম্ভব কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের একটি নিষিদ্ধ আর অপরটি তড়িঘড়ি নির্বাচন চাইছে। এমন পরিস্থিতিতে অধ্যাপক ইউনূস সময় নিতে চাইছেন বলে মনে হয়।

এতে সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল বিশ্লেষকেরাও বিরক্ত। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মোবাশ্বার হাসান বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে এই নির্বাচন হতে না পারার কোনো কারণ নেই। এটি সম্পূর্ণ সরকারের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে।

এদিকে শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা ওই সময় থেকে তার (হাসিনার) সমর্থকদের সঙ্গে সহিংস সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছেন; কিন্তু তার (শেখ হাসিনা) পুরোনো শত্রু বিএনপিকে তার সে জায়গায় বসাতে ভয় পান তারা। বেশির ভাগ মানুষ এখনো অধ্যাপক ইউনূসের ওপর আস্থা রাখেন।

ফেব্রুয়ারিতে অধ্যাপক ইউনূসের সাবেক উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম ছাত্রদের নিজেদের পক্ষে টানার আশায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামের একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, তিনি অধ্যাপক ইউনূসকে পদত্যাগ না করতে অনুরোধ জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুজন কথা বলেন। অধ্যাপক ইউনূস তাকে বলেন যে দায়িত্ব গ্রহণের সময় তিনি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেগুলো রক্ষা করা যাচ্ছে না।

নাহিদ ইসলাম বলেন, বিভিন্ন গোষ্ঠী অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে এবং সরকারকে চাপ দিচ্ছে। তিনি (অধ্যাপক ইউনূস) মনে করছেন, তার পক্ষে কার্যকরভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করা আর সম্ভব নয়।