শিরোনাম :
Logo ইবিতে রিপোর্টার্স ইউনিটির কমিটিতে নতুন নেতৃত্ব Logo অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমি জিরো টলারেন্স ;বেরোবি উপাচার্য Logo কুয়েট ভিসির পদত্যাগের দাবিতে পাবিপ্রবিতে ইনকিলাব মঞ্চের মানববন্ধন Logo খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি নির্বাচন ২০২৫ এর কমিশন গঠন ও তফসিল ঘোষণা Logo কুয়েট ভিসির পদত্যাগের দাবিতে রাবি শিক্ষার্থীদের অনশন Logo কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আমরণ অনশন—ইবি শিক্ষার্থীদের একাত্মতা Logo জাবিতে “সংগ্রামের শত রঙ” নামে জুলাই-বিপ্লবের আলোকচিত্র প্রদর্শনী Logo শ্রীবরদীতে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের সহায়তায় ছাত্রদল Logo আমরণ অনশনে বসেছেন হাবিপ্রবি শিক্ষার্থী কুয়েট ভিসির পদত্যাগের দাবি Logo শেরপুরে ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ৫ লক্ষ টাকার চেক প্রদান

সোনারগাঁয়ের অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়েছে মাদক

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৮:০৫:২৩ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ৮ জুলাই ২০২৪
  • ৭৪৮ বার পড়া হয়েছে

নারায়ণগঞ্জের উপজেলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে মরণনেশা ইয়াবা। উপজেলার ১০ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভায় চলছে মাদকের তাণ্ডব। বর্তমানে ইউনিয়নগুলোর প্রতিটি ওয়ার্ডে ছড়িয়ে পড়েছে মরণনেশা ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে সোনারগাঁ পৌর এলাকায়।

পৌর এলাকার ১০ ইউনিয়নের মধ্যে পিরোজপুর, কাঁচপুর ও মোগরাপাড়া ইউনিয়নের ওয়ার্ডগুলোয় এখন মাদকের ছড়াছড়ি।

জানা গেছে, সোনারগাঁ পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাদক বেচাকেনা হচ্ছে পানাম নগরী ১ নম্বর ওয়ার্ডের পুলের গোড়া, ২ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অলিগলিতে। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশেই রয়েছে পিরোজপুর, কাঁচপুর ও মোগরাপাড়া ইউনিয়ন।

এলাকাটি মহাসড়কের পাশে থাকায় এখানে মাদকের বিস্তার খুব বেশি। কারণ সোনারগাঁ থেকে কুমিল্লার দূরত্ব খুব একটা বেশি নয়। কুমিল্লা জেলার সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে ভারতের। ভারত সীমান্ত থেকে কুমিল্লা হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসংশ্লিষ্ট ইউনিয়নগুলোয় অবাধে প্রবেশ করছে ফেনসিডিল।

এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সংযোগ দক্ষিণাঞ্চলে টেকনাফ-কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমার থেকে অবাধে আসছে ইয়াবা। প্রায় সময় প্রশাসনিক অভিযানে মহাসড়কে আটক হয়েছে ইয়াবা ও ফেনসিডিলের বড় চালান। বিশেষ করে কাঠের ট্রাক ও ফার্নিচারের ট্রাকে বড় বড় চালান আটক হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন সময় কৌশলে এ উপজেলায় ঢুকে পড়ছে মাদক। সূত্র জানান, সোনারগাঁয়ে সড়কপথে মাদকের চালান বহন ও প্রবেশে চাপ সৃষ্টি হলেই নদীপথ বেছে নেন মাদক কারবারিরা। এ ক্ষেত্রে মেঘনা নদীর বৈদ্যের বাজার ইউনিয়নের মেঘনা ঘাট ও বরোদী ইউনিয়নের ছটাকিয়া ঘাট ব্যবহার করে সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন গ্রামে প্রবেশ করছে মাদক।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লাঙ্গলবন্দ ব্রিজের ব্রহ্মপুত্র নদের সোনারগাঁয়ের পুব দিকে দড়িকান্দি ও সোনাখালী গ্রাম। নদের পশ্চিম দিকে নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলা। এ নদ দিয়ে অবাধে সোনারগাঁ থেকে বন্দর উপজেলায় প্রবেশ করছে ইয়াবা ও ফেনসিডিল। মেঘনা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদ ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় বালুর ট্রলার ও মালবাহী নৌযান দিয়ে প্রবেশ করছে মাদকের চালান। কারণ সড়কপথে মাদকের চালান বহনে অতিরিক্ত প্রশাসনিক তল্লাশিতে ধরা পড়ার ঝুঁকি থাকে। কিন্তু নদীপথে মাদকের চালান বহনে তেমন কোনো চেকিং অসুবিধায় পড়তে হয় না। নদীপথে নদীর সীমানা বড় হওয়ায় নৌপুলিশ বা অন্য বাহিনীগুলোর তেমন একটা টহল দেখা যায় না। এ ছাড়া নদীপথে মাদকের চালান বহনে নানা কৌশল অবলম্বন করেন মাদক কারবারিরা।

জানা গেছে, ট্রলারে বহনকৃত বালুর নিচে লাখ পিস ইয়াবা নিয়ে এলেও তা নির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া আটক সম্ভব না। এতে বিভিন্ন নৌযানে অবাধে প্রবেশ করছে মাদক। এভাবে মাদকের চালান প্রবেশ করায় বর্তমানে সোনারগাঁ পৌরসভা ছাড়াও উপজেলার বৈদ্যের বাজার, জিয়ানগর, ভাটিবন্দর, ভবনাথপুর, পিরোজপুর, কোরবানপুর, আষাঢ়িয়ার চর, দুধঘাটা, মোগরাপাড়া, বারদী সাদিপুর, কাঁচপুর, জামপুরসহ শতাধিক গ্রামের অলিগলিতে ছেয়ে গেছে মাদক।

সূত্রগুলো বলছে, সোনারগাঁ পৌর এলাকায় মাদক ইয়াবার ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকটি অঙ্গসংগঠনের নেতারাও। এর মধ্যে বহিষ্কৃত বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা নেপথ্যে থেকে মাদকের শেল্টার দিচ্ছেন। অন্য একটি গ্রুপ রয়েছে যারা সরকারি দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ছবি তুলে শোডাউন করে বেড়ায়। রাজনীতিকরা এসব মাদকের শেল্টারদাতা ও তাদের কর্মীদের রাজনৈতিক মিটিং-মিছিলে ব্যবহার করেন। ক্ষমতার দাপটে ওই গ্রুপটি পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভ্রাম্যমাণ টিমের মাধ্যমে ইয়াবার কারবার করে যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক খবরে উঠে এসেছে এসব চিত্র। ইতোমধ্যে মোগরাপাড়ায় মাদকের ব্যবসার দ্বন্দ্বে ৯ জুন ফজলে রাব্বী (২২) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। স্থানীয় থানা সূত্রে জানা গেছে, সোনারগাঁয়ে ৫৯৮ জন তালিকাভুক্ত মাদক কারবারি রয়েছে। এর মধ্যে অনেকে আটক হলেও আইনের ফাঁক দিয়ে জামিনে বেরিয়ে পুনরায় মাদকের কারবার করেন।

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, শুধু ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন নেতাই নন, মাদকের কারবার থেকে প্রতি সপ্তায় মোটা অঙ্কের চাঁদা নিচ্ছে প্রশাসনের একটি অসাধু মহল। ওই অসাধু কর্তারা সরাসরি মাদকে জড়িত হচ্ছেন না বা চাঁদার টাকা আদায় করছেন না। তাদের সোর্সেরা মাদক কারবারিদের কাছ থেকে চাঁদার টাকা আদায় করছেন। এতে অনেকটা প্রকাশ্যে ও বেপরোয়াভাবেই চলছে সোনারগাঁ উপজেলার মাদকের কারবার।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

ইবিতে রিপোর্টার্স ইউনিটির কমিটিতে নতুন নেতৃত্ব

সোনারগাঁয়ের অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়েছে মাদক

আপডেট সময় : ০৮:০৫:২৩ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ৮ জুলাই ২০২৪

নারায়ণগঞ্জের উপজেলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে মরণনেশা ইয়াবা। উপজেলার ১০ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভায় চলছে মাদকের তাণ্ডব। বর্তমানে ইউনিয়নগুলোর প্রতিটি ওয়ার্ডে ছড়িয়ে পড়েছে মরণনেশা ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে সোনারগাঁ পৌর এলাকায়।

পৌর এলাকার ১০ ইউনিয়নের মধ্যে পিরোজপুর, কাঁচপুর ও মোগরাপাড়া ইউনিয়নের ওয়ার্ডগুলোয় এখন মাদকের ছড়াছড়ি।

জানা গেছে, সোনারগাঁ পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাদক বেচাকেনা হচ্ছে পানাম নগরী ১ নম্বর ওয়ার্ডের পুলের গোড়া, ২ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অলিগলিতে। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশেই রয়েছে পিরোজপুর, কাঁচপুর ও মোগরাপাড়া ইউনিয়ন।

এলাকাটি মহাসড়কের পাশে থাকায় এখানে মাদকের বিস্তার খুব বেশি। কারণ সোনারগাঁ থেকে কুমিল্লার দূরত্ব খুব একটা বেশি নয়। কুমিল্লা জেলার সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে ভারতের। ভারত সীমান্ত থেকে কুমিল্লা হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসংশ্লিষ্ট ইউনিয়নগুলোয় অবাধে প্রবেশ করছে ফেনসিডিল।

এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সংযোগ দক্ষিণাঞ্চলে টেকনাফ-কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমার থেকে অবাধে আসছে ইয়াবা। প্রায় সময় প্রশাসনিক অভিযানে মহাসড়কে আটক হয়েছে ইয়াবা ও ফেনসিডিলের বড় চালান। বিশেষ করে কাঠের ট্রাক ও ফার্নিচারের ট্রাকে বড় বড় চালান আটক হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন সময় কৌশলে এ উপজেলায় ঢুকে পড়ছে মাদক। সূত্র জানান, সোনারগাঁয়ে সড়কপথে মাদকের চালান বহন ও প্রবেশে চাপ সৃষ্টি হলেই নদীপথ বেছে নেন মাদক কারবারিরা। এ ক্ষেত্রে মেঘনা নদীর বৈদ্যের বাজার ইউনিয়নের মেঘনা ঘাট ও বরোদী ইউনিয়নের ছটাকিয়া ঘাট ব্যবহার করে সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন গ্রামে প্রবেশ করছে মাদক।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লাঙ্গলবন্দ ব্রিজের ব্রহ্মপুত্র নদের সোনারগাঁয়ের পুব দিকে দড়িকান্দি ও সোনাখালী গ্রাম। নদের পশ্চিম দিকে নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলা। এ নদ দিয়ে অবাধে সোনারগাঁ থেকে বন্দর উপজেলায় প্রবেশ করছে ইয়াবা ও ফেনসিডিল। মেঘনা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদ ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় বালুর ট্রলার ও মালবাহী নৌযান দিয়ে প্রবেশ করছে মাদকের চালান। কারণ সড়কপথে মাদকের চালান বহনে অতিরিক্ত প্রশাসনিক তল্লাশিতে ধরা পড়ার ঝুঁকি থাকে। কিন্তু নদীপথে মাদকের চালান বহনে তেমন কোনো চেকিং অসুবিধায় পড়তে হয় না। নদীপথে নদীর সীমানা বড় হওয়ায় নৌপুলিশ বা অন্য বাহিনীগুলোর তেমন একটা টহল দেখা যায় না। এ ছাড়া নদীপথে মাদকের চালান বহনে নানা কৌশল অবলম্বন করেন মাদক কারবারিরা।

জানা গেছে, ট্রলারে বহনকৃত বালুর নিচে লাখ পিস ইয়াবা নিয়ে এলেও তা নির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া আটক সম্ভব না। এতে বিভিন্ন নৌযানে অবাধে প্রবেশ করছে মাদক। এভাবে মাদকের চালান প্রবেশ করায় বর্তমানে সোনারগাঁ পৌরসভা ছাড়াও উপজেলার বৈদ্যের বাজার, জিয়ানগর, ভাটিবন্দর, ভবনাথপুর, পিরোজপুর, কোরবানপুর, আষাঢ়িয়ার চর, দুধঘাটা, মোগরাপাড়া, বারদী সাদিপুর, কাঁচপুর, জামপুরসহ শতাধিক গ্রামের অলিগলিতে ছেয়ে গেছে মাদক।

সূত্রগুলো বলছে, সোনারগাঁ পৌর এলাকায় মাদক ইয়াবার ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকটি অঙ্গসংগঠনের নেতারাও। এর মধ্যে বহিষ্কৃত বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা নেপথ্যে থেকে মাদকের শেল্টার দিচ্ছেন। অন্য একটি গ্রুপ রয়েছে যারা সরকারি দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ছবি তুলে শোডাউন করে বেড়ায়। রাজনীতিকরা এসব মাদকের শেল্টারদাতা ও তাদের কর্মীদের রাজনৈতিক মিটিং-মিছিলে ব্যবহার করেন। ক্ষমতার দাপটে ওই গ্রুপটি পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভ্রাম্যমাণ টিমের মাধ্যমে ইয়াবার কারবার করে যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক খবরে উঠে এসেছে এসব চিত্র। ইতোমধ্যে মোগরাপাড়ায় মাদকের ব্যবসার দ্বন্দ্বে ৯ জুন ফজলে রাব্বী (২২) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। স্থানীয় থানা সূত্রে জানা গেছে, সোনারগাঁয়ে ৫৯৮ জন তালিকাভুক্ত মাদক কারবারি রয়েছে। এর মধ্যে অনেকে আটক হলেও আইনের ফাঁক দিয়ে জামিনে বেরিয়ে পুনরায় মাদকের কারবার করেন।

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, শুধু ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন নেতাই নন, মাদকের কারবার থেকে প্রতি সপ্তায় মোটা অঙ্কের চাঁদা নিচ্ছে প্রশাসনের একটি অসাধু মহল। ওই অসাধু কর্তারা সরাসরি মাদকে জড়িত হচ্ছেন না বা চাঁদার টাকা আদায় করছেন না। তাদের সোর্সেরা মাদক কারবারিদের কাছ থেকে চাঁদার টাকা আদায় করছেন। এতে অনেকটা প্রকাশ্যে ও বেপরোয়াভাবেই চলছে সোনারগাঁ উপজেলার মাদকের কারবার।