শিরোনাম :
Logo চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সাইফুলের উপর হামলার অভিযোগ Logo হার্ভার্ডের সম্মাননা পেলেন রাবির আইআর বিভাগের ৭ শিক্ষার্থী Logo নিখোঁজের ৫ ঘন্টার পুকুর থেকে প্রতিবন্ধীর মরদেহ উদ্ধার Logo ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য হত্যার প্রতিবাদে রাবি ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল Logo সাম্য হত্যা বিচারের দাবিতে ইবিতে বিক্ষোভ Logo চুয়াডাঙ্গায় ৪৪ দিনের তাপপ্রবাহে নাভিশ্বাস সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ডে শীর্ষে Logo আলমডাঙ্গায় চার প্রতিষ্ঠানকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা Logo দামুড়হুদায় ধান শুকানোর সময় ছাঁদ থেকে পড়ে নারীর মৃত্যু Logo হাসনাতদের বেলায় ঠান্ডা পানি স্প্রে;জবি শিক্ষার্থীদের বেলায় টিয়ার শেল,সাউন্ড গ্রেনেড,লাঠি চার্জ Logo দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা জবি শিক্ষক শিক্ষার্থীদের, পুলিশের বিচার দাবি

হ্যান্ডস অন রিভিউ: হুয়াওয়ে ওয়াই নাইন ২০১৮ !

  • আপডেট সময় : ১১:৩৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১০ জুলাই ২০১৮
  • ৭৫৮ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক:

গত বছর ‘নোভা টুআই’ নামের মধ্যম বাজেটের একটি স্মার্টফোন উন্মুক্ত করে হুয়াওয়ে। ফোনটি বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তীব্র আলোড়ন তৈরি করতে সক্ষম হয়। নোভা টুআই স্মার্টফোনটি সম্পর্কে যদি আপনার জানাশোনা থাকে, তাহলে হুয়াওয়ের ওয়াই নাইন ২০১৮ স্মার্টফোনটিকে তেমন ভিন্ন কিছু মনে হবে না। বরং নোভা টুআইর চেয়ে দামে কম হলেও ওয়াই নাইন মডেলের স্মার্টফোনটিতে প্রায় একই ফিচার সুবিধা রাখার চেষ্টা করেছে হুয়াওয়ে।

চলতি বছরের মার্চে উন্মুক্ত হওয়া হওয়াওয়ে ওয়াই নাইন মডেলের এ স্মার্টফোনটিতে আছে সমসাময়িক উন্নত প্রযুক্তি ও ডিসপ্লে। নোভা টুআইর মতো এ ফোনটিও প্রায় বেজেললেস। স্ক্রিন টু বডি অনুপাত ১৮ : ৯। এ ছাড়া আছে কোয়াড ক্যামেরা, ফুল এইচডি স্ক্রিন। বাংলাদেশে এর দাম ধরা হয়েছে ১৯ হাজার ৫৯০ টাকা।

ফোনটি বাইরে থেকে যেমন দেখা যায়, অাসলেই কি তেমন? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যাক—

স্পেসিফিকেশন
ডিসপ্লে: ৫.৯৩ ইঞ্চি ফুল এইচডি আইপিএস এলসিডি মাল্টিটাচ ক্যাপাসিটিভ ২ডি কার্ভড গ্লাস

সিপিইউ: ২.৩৬ গিগাহার্টজ অক্টা-কোর

চিপসেট: কিরিন হাইসিলিকন ৬৫৯

র‌্যাম: ৩ জিবি

ইনটার্নাল স্টোরেজ: ৩২ জিবি

অপারেটিং সিস্টেম: অ্যান্ড্রয়েড অরিও ৮.০

পেছনের ক্যামেরা: ১৩+২ মেগাপিক্সেলের ডুয়াল রিয়ার ক্যামেরা। ক্যামেরায় অটোফোকাস, জিও ট্যাগিং, ডিজিটাল রুম, এইচডিআর, প্যানোরোমা, টাচ ফোকাস, ফেস-ডিটেকশন ফিচার আছে।

সামনের ক্যামেরা: ১৬+২ মেগাপিক্সেলের ডুয়াল ক্যামেরা

সেন্সর: লাইট, প্রক্সিমিটি, কমপাস, এক্সেলোমিটার, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, জাইরোস্কোপ

ব্যাটারি: ৪ হাজার মিলি অ্যাম্পিয়ার।

ডিজাইন
নোভা টুআইর ডিজাইনটা আমার কাছে যেমন চমৎকার লেগেছে, ওয়াই নাইনের ডিজাইনও ততটাই চমৎকার লেগেছে। ফোনটিতে অ্যালুমিনিয়াম বডির ওপর ৫.৯ ইঞ্চির বড় ডিসপ্লে রাখা হয়েছে। কম বেজেলের ফোনটির বডি টু ডিসপ্লে অনুপাত ১৮ : ৯। ফলে ফোনটি দেখতে বেশ স্টাইলিশ এবং হাতে রাখলেও এটি দারুণ মানাবে। ফোনটি কয়েকটি রঙে পাওয়া যায়। আমি সাদা রঙেরটি ব্যবহার করেছি। অন্যান্য রঙের মতো সাদাটিও যথেষ্ট আকর্ষণীয় মনে হয়েছে আমার কাছে।

ফোনটির পেছনে অানুভূমিকভাবে ডুয়াল ক্যামেরা রাখা হয়েছে। ক্যামেরার পাশেই আছে এলইডি ফ্ল্যাশ লাইট। এর ঠিক নিচেই আছে ফিঙ্গার প্রিন্ট। ফ্রিঙ্গার প্রিন্ট সেন্সরটি একটু উপরে হওয়াতে আপনি ব্যাক কাভার ছাড়া ফোনটি ধরলেও আঙুলের স্পর্শ লেগে অানলক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এটি খুবই ভালো লেগেছে আমার। দেখা যায়, আমরা প্রায়ই ফোন হাতে রাখলে আঙুলের স্পর্শে আনলক হয়ে যায়। যেটা বিভিন্ন সময় অনাহূত পরিস্থিতির জন্ম দেয়। সেদিক থেকে ফোনটি এ বিপদ থেকে পুরোপুরি মুক্ত। ব্যাক প্যানেলের ঠিক উপরে এবং নিচে আছে নেটওয়ার্ক অ্যান্টেনা ব্যান্ড।

স্মার্টফোনটির সামনের প্যানেলের উপরে আছে ডুয়াল ফ্রন্ট ক্যামেরা আর এয়ারপিস। ডান পাশে আছে ভলিউম রকার ও পাওয়ার বাটন। বাম পাশে আছে সিম কার্ড ও মেমরি কার্ড স্লট। একটি মাত্র স্লটেই সব ব্যবহার করা যাবে। নিচের দিকে আছে ৩.৫এমএম অডিও জ্যাক, মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট এবং স্পিকার। উপরের অংশে আছে শুধু নয়েজ ক্যান্সেলেশন মাইক্রোফোন।

ডিজাইনের দিক থেকে একটা সমস্যা রয়েই গেছে। কার্ভড পলিশ অ্যালুমিনিয়াম বডির কারণে এটি কিছুটা স্লিপারি এবং কাভার ছাড়া হাতে রাখলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। নোভা টুআই ফোনটিতেও এ সমস্যা ছিল।

ডিসপ্লে
হুয়াওয়ে ওয়াই নাইনে আছে ৫.৯৩ ইঞ্চির আইপিএস এলসিডি টাচস্ক্রিন ডিসপ্লে। স্ক্রিন রেজুলেশন যথারীতি ফুল এইচডি। ডিসপ্লে রেজুলেশন ২১৬০x১০৮০ পিক্সেল। এ ডিসপ্লেতে ভিডিও দেখে আপনি আরাম পাবেন। চোখের সুবিধার জন্য আই কমফোর্ট মোডও আছে ফোনটিতে।

সাইড থেকে বা কোনাকুনি ভিডিও দেখলেও কালার কম্বিনেশন ও কনট্রাস্টে কোনো পরিবর্তন পাওয়া যাবে না। সূর্যের আলোর নিচেও ডিসপ্লে দেখা যাবে স্পষ্ট।

পারফরম্যান্স
নোভা টুআইর মতো এ ফোনটিতেও হুয়াওয়ের নিজস্ব কিরিন হাইসিলিকন ৬৫৯ প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে। প্রসেসরটি বেশ উন্নত হওয়ায় একই সঙ্গে আপনি অনেক কাজ করতে পারবেন। আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়াই আমি মাল্টিটাস্কিং করতে পেরেছি। প্রায় এক মাসের মতো ফোনটি ব্যবহার করেছি। কিন্তু একবারের জন্যও এটি হ্যাং হয়ে যায়নি। ফোনটিতে ৩জিবি র‌্যাম পাওয়া যাবে। এদিক থেকে সামান্য ঘাটতি আছে বলে মনে হয় আমার কাছে। বাজারে একই দামের অন্যান্য কিছু ফোনে ৪জিবি র‌্যামও পাওয়া যায়।

ফোনটিতে ৩২ জিবি ইনটারনাল স্টোরেজ আছে। এ যুগে কেউ বাড়তি একটি মেমোরি কার্ড ব্যবহার করতে চায় না। তাই ফোনের স্টোরেজ বেশি হওয়া জরুরি। হওয়াওয়ে ওয়াই নাইন আপনার এ চাহিদা পূরণ করতে পারবে। যদিও কেউ যদি একান্তই বাড়তি মেমোরি কার্ড ব্যবহার করতে চান, তাহলে সেটিও ব্যবহার করা যাবে। ফোনটিতে অালাদা মেমোরি কার্ডের স্লট দেওয়া আছে।

ওয়াই নাইনে মিডরেঞ্জের গেম খেলে তৃপ্তি পাওয়া যাবে। যদিও খুব হাই রেঞ্জের গেমের ক্ষেত্রে আপনাকে সামান্য সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে।

বাজারে অনেক ফোনেরই একটা সমস্যা থাকে যে ব্যবহার করলে এটি গরম হয়ে যায়। এক মাসের ব্যবহারে গেম খেলা ছাড়া ফোনটিকে কখনো গরম হতে দেখিনি। গেম খেললে শুধু হালকা গরম হতে দেখেছি। তবে সেটি অসহনীয় কোনো মাত্রায় নয়।

সফটওয়্যার
হুয়াওয়ে ওয়াই নাইনের অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড অরিও ৮.০ এবং হুয়াওয়ের কাস্টম ইএমইউআই ৮.০ ব্যবহার করা হয়েছে। এটি হাইল কাস্টমাইজড একটি ইউআই। ফোনটি যতদিন আমি ব্যবহার করেছি, অনেক স্মুথ অভিজ্ঞতা হয়েছে। এই ইএমইউআইর ফলেই ফোনটিতে যোগ হয়েছে নতুন বেশ কিছু বিশেষ ফিচার। যেমন—গেম মোড, থ্রি ফিঙ্গার স্ক্রিনশট বা আলট্রা পাওয়ার সেভিং অপশন।

ছবি: শামছুল হক রিপন
পেছনের ক্যামেরা
হুয়াওয়ে ওয়াই নাইন ২০১৮ ফোনটির পেছনে ১৩+২ মেগাপিক্সেলের ডুয়াল ক্যামেরা আছে। ২.২ অ্যাপারচারসমৃদ্ধ ১৬ মেগাপিক্সেল ক্যামেরাটিতে আছে ফেস ডিটেকশন অটো ফেকাস, আর সঙ্গে থাকছে ২ মেগাপিক্সেলের ডেপথ সেন্সিং ক্যামেরা। ফোনটির ক্যামেরার একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এতে বেশ কিছু অপশন আছে। ক্যামেরা চালু করলে উপরের দিকে থাকছে এলইডি লাইট কন্ট্রোল, ওয়াইড অ্যাপারচার, পোর্ট্রেট মোড, মোশন ফটো। আর ভেতরে থাকছে ১৩টির বেশি ডেডিকেটেড ক্যামেরা মোড, যেখানে থাকছে টাইম ল্যাপস, এইচডিআর, প্যানোরোমা ভিও মোড। ক্যামেরাটিকে ম্যানুয়ালি কন্ট্রোল করা যায় এবং ইচ্ছামতো ছবি তোলা এবং ভিডিও করা যায়।

হুয়াওয়ে ক্যামেরাকে বেশ প্রাধান্য দিয়েছে। বেশি আলোতে তোলা ছবিতে বেশ ভালো শার্পনেস আসবে, কালারও বেশ ভালো। পোর্ট্রেট ছবির ক্ষেত্রে শার্পনেস বেশ ভালো এলেও এজ ডিটেকশনে সামান্য গড়বড় দেখা গেছে।

ওয়াই নাইন দিয়ে তোলা ছবি
সামনের ক্যামেরা
সামনে থাকছে ১৬ মেগাপিক্সেলের এফ ২.২ অ্যাপারচারসমৃদ্ধ ক্যামেরা এবং সঙ্গে থাকছে ২ মেগাপিক্সেলের সাপোর্টিং ক্যামেরা।

এখনকার বাজারে যেসব ফোন পাওয়া যায়, তার বেশির ভাগগুলোতেই ছবি তুললে গায়ের রং স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি উজ্জ্বল দেখায়। ফলে ছবিটি অনেক সময় কৃত্রিম মনে হয়। কিন্তু এ ফোনটিতে সমস্যাটি নেই। পেছনের ক্যামেরার মতো সামনের ক্যামেরায় তোলা ছবিও যথেষ্ট ভালো এবং ক্যামেরা ছবির খুঁটিনাটি সব ডিটেইলস কাভার করতে পারে। ফ্রন্ট ক্যামেরায় এআর লেন্স নামের একটি অপশন আছে, যেটি অনেকটা স্ন্যাপচ্যাটের ফিল্টারের মতো। এ অপশনটি ব্যবহার করে আপনি চাইলে বিভিন্ন ফিল্টারে ছবি তুলতে পারবেন।

নিরাপত্তা
কম বাজেটের স্মার্টফোনে ফেসিয়াল আনলক ফিচার রেখে চমক দেখিয়েছে হুয়াওয়ে। বাজারে একই বাজেটের ফোনে ফেসিয়াল আনলক খুবই বিরল। সে ক্ষেত্রে হুয়াওয়ের এ ফোনটি আলাদা ধন্যবাদ পেতে পারে। শুধু একটু অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ ছাড়া ফেসিয়াল আনলক ব্যবহারে কোনো সমস্যা হয়নি। এ ছাড়া আছে ফিঙ্গার প্রিন্ট। ফিঙ্গার প্রিন্ট সেন্সরটি যথেষ্ট ভালো। এটি ব্যবহারে কখনো সমস্যার মুখোমুখি হইনি আমি।

ব্যাটারি
হুয়াওয়ে ওয়াই নাইন ২০১৮ ফোনটির অন্যতম আকর্ষণীয় সুবিধা হচ্ছে এর লম্বা ব্যাটারি ব্যাকআপ। ৪০০০ এমএএইচ ব্যাটারিটি একবার ফুল চার্জ করলে গেম খেলে বা ভিডিও দেখলেও সারাদিন ব্যবহার করা যাবে। আর যদি শুধু সোশ্যাল মিডিয়া ব্রাউজিং, ছবি তোলার মতো হালকা কাজ করা হয়, তাহলে এর ব্যাটারির স্থায়িত্ব হবে প্রায় দুই দিন।

পরিশেষ
হুয়াওয়ে ওয়াই নাইন ২০১৮ ফোনটিকে বলা যেতে পারে নোভা টুআইর ছোট ভাই। দুটি ফোন প্রায় একই রকম হলেও দামের দিক থেকে ওয়াই নাইন অনেকটাই কম। যদিও ক্যামেরা এবং স্টোরেজের দিক থেকে ওয়াই নাইনের চেয়ে নোভা টুআই বেশি ভালো। কিন্তু তারপরও এই বাজেটে ওয়াই নাইন যেসব সুবিধা দিচ্ছে, বাজারে একই বাজেটের অন্য ফোনে এত সুবিধা বিরল।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সাইফুলের উপর হামলার অভিযোগ

হ্যান্ডস অন রিভিউ: হুয়াওয়ে ওয়াই নাইন ২০১৮ !

আপডেট সময় : ১১:৩৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১০ জুলাই ২০১৮

নিউজ ডেস্ক:

গত বছর ‘নোভা টুআই’ নামের মধ্যম বাজেটের একটি স্মার্টফোন উন্মুক্ত করে হুয়াওয়ে। ফোনটি বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তীব্র আলোড়ন তৈরি করতে সক্ষম হয়। নোভা টুআই স্মার্টফোনটি সম্পর্কে যদি আপনার জানাশোনা থাকে, তাহলে হুয়াওয়ের ওয়াই নাইন ২০১৮ স্মার্টফোনটিকে তেমন ভিন্ন কিছু মনে হবে না। বরং নোভা টুআইর চেয়ে দামে কম হলেও ওয়াই নাইন মডেলের স্মার্টফোনটিতে প্রায় একই ফিচার সুবিধা রাখার চেষ্টা করেছে হুয়াওয়ে।

চলতি বছরের মার্চে উন্মুক্ত হওয়া হওয়াওয়ে ওয়াই নাইন মডেলের এ স্মার্টফোনটিতে আছে সমসাময়িক উন্নত প্রযুক্তি ও ডিসপ্লে। নোভা টুআইর মতো এ ফোনটিও প্রায় বেজেললেস। স্ক্রিন টু বডি অনুপাত ১৮ : ৯। এ ছাড়া আছে কোয়াড ক্যামেরা, ফুল এইচডি স্ক্রিন। বাংলাদেশে এর দাম ধরা হয়েছে ১৯ হাজার ৫৯০ টাকা।

ফোনটি বাইরে থেকে যেমন দেখা যায়, অাসলেই কি তেমন? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যাক—

স্পেসিফিকেশন
ডিসপ্লে: ৫.৯৩ ইঞ্চি ফুল এইচডি আইপিএস এলসিডি মাল্টিটাচ ক্যাপাসিটিভ ২ডি কার্ভড গ্লাস

সিপিইউ: ২.৩৬ গিগাহার্টজ অক্টা-কোর

চিপসেট: কিরিন হাইসিলিকন ৬৫৯

র‌্যাম: ৩ জিবি

ইনটার্নাল স্টোরেজ: ৩২ জিবি

অপারেটিং সিস্টেম: অ্যান্ড্রয়েড অরিও ৮.০

পেছনের ক্যামেরা: ১৩+২ মেগাপিক্সেলের ডুয়াল রিয়ার ক্যামেরা। ক্যামেরায় অটোফোকাস, জিও ট্যাগিং, ডিজিটাল রুম, এইচডিআর, প্যানোরোমা, টাচ ফোকাস, ফেস-ডিটেকশন ফিচার আছে।

সামনের ক্যামেরা: ১৬+২ মেগাপিক্সেলের ডুয়াল ক্যামেরা

সেন্সর: লাইট, প্রক্সিমিটি, কমপাস, এক্সেলোমিটার, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, জাইরোস্কোপ

ব্যাটারি: ৪ হাজার মিলি অ্যাম্পিয়ার।

ডিজাইন
নোভা টুআইর ডিজাইনটা আমার কাছে যেমন চমৎকার লেগেছে, ওয়াই নাইনের ডিজাইনও ততটাই চমৎকার লেগেছে। ফোনটিতে অ্যালুমিনিয়াম বডির ওপর ৫.৯ ইঞ্চির বড় ডিসপ্লে রাখা হয়েছে। কম বেজেলের ফোনটির বডি টু ডিসপ্লে অনুপাত ১৮ : ৯। ফলে ফোনটি দেখতে বেশ স্টাইলিশ এবং হাতে রাখলেও এটি দারুণ মানাবে। ফোনটি কয়েকটি রঙে পাওয়া যায়। আমি সাদা রঙেরটি ব্যবহার করেছি। অন্যান্য রঙের মতো সাদাটিও যথেষ্ট আকর্ষণীয় মনে হয়েছে আমার কাছে।

ফোনটির পেছনে অানুভূমিকভাবে ডুয়াল ক্যামেরা রাখা হয়েছে। ক্যামেরার পাশেই আছে এলইডি ফ্ল্যাশ লাইট। এর ঠিক নিচেই আছে ফিঙ্গার প্রিন্ট। ফ্রিঙ্গার প্রিন্ট সেন্সরটি একটু উপরে হওয়াতে আপনি ব্যাক কাভার ছাড়া ফোনটি ধরলেও আঙুলের স্পর্শ লেগে অানলক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এটি খুবই ভালো লেগেছে আমার। দেখা যায়, আমরা প্রায়ই ফোন হাতে রাখলে আঙুলের স্পর্শে আনলক হয়ে যায়। যেটা বিভিন্ন সময় অনাহূত পরিস্থিতির জন্ম দেয়। সেদিক থেকে ফোনটি এ বিপদ থেকে পুরোপুরি মুক্ত। ব্যাক প্যানেলের ঠিক উপরে এবং নিচে আছে নেটওয়ার্ক অ্যান্টেনা ব্যান্ড।

স্মার্টফোনটির সামনের প্যানেলের উপরে আছে ডুয়াল ফ্রন্ট ক্যামেরা আর এয়ারপিস। ডান পাশে আছে ভলিউম রকার ও পাওয়ার বাটন। বাম পাশে আছে সিম কার্ড ও মেমরি কার্ড স্লট। একটি মাত্র স্লটেই সব ব্যবহার করা যাবে। নিচের দিকে আছে ৩.৫এমএম অডিও জ্যাক, মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট এবং স্পিকার। উপরের অংশে আছে শুধু নয়েজ ক্যান্সেলেশন মাইক্রোফোন।

ডিজাইনের দিক থেকে একটা সমস্যা রয়েই গেছে। কার্ভড পলিশ অ্যালুমিনিয়াম বডির কারণে এটি কিছুটা স্লিপারি এবং কাভার ছাড়া হাতে রাখলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। নোভা টুআই ফোনটিতেও এ সমস্যা ছিল।

ডিসপ্লে
হুয়াওয়ে ওয়াই নাইনে আছে ৫.৯৩ ইঞ্চির আইপিএস এলসিডি টাচস্ক্রিন ডিসপ্লে। স্ক্রিন রেজুলেশন যথারীতি ফুল এইচডি। ডিসপ্লে রেজুলেশন ২১৬০x১০৮০ পিক্সেল। এ ডিসপ্লেতে ভিডিও দেখে আপনি আরাম পাবেন। চোখের সুবিধার জন্য আই কমফোর্ট মোডও আছে ফোনটিতে।

সাইড থেকে বা কোনাকুনি ভিডিও দেখলেও কালার কম্বিনেশন ও কনট্রাস্টে কোনো পরিবর্তন পাওয়া যাবে না। সূর্যের আলোর নিচেও ডিসপ্লে দেখা যাবে স্পষ্ট।

পারফরম্যান্স
নোভা টুআইর মতো এ ফোনটিতেও হুয়াওয়ের নিজস্ব কিরিন হাইসিলিকন ৬৫৯ প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে। প্রসেসরটি বেশ উন্নত হওয়ায় একই সঙ্গে আপনি অনেক কাজ করতে পারবেন। আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়াই আমি মাল্টিটাস্কিং করতে পেরেছি। প্রায় এক মাসের মতো ফোনটি ব্যবহার করেছি। কিন্তু একবারের জন্যও এটি হ্যাং হয়ে যায়নি। ফোনটিতে ৩জিবি র‌্যাম পাওয়া যাবে। এদিক থেকে সামান্য ঘাটতি আছে বলে মনে হয় আমার কাছে। বাজারে একই দামের অন্যান্য কিছু ফোনে ৪জিবি র‌্যামও পাওয়া যায়।

ফোনটিতে ৩২ জিবি ইনটারনাল স্টোরেজ আছে। এ যুগে কেউ বাড়তি একটি মেমোরি কার্ড ব্যবহার করতে চায় না। তাই ফোনের স্টোরেজ বেশি হওয়া জরুরি। হওয়াওয়ে ওয়াই নাইন আপনার এ চাহিদা পূরণ করতে পারবে। যদিও কেউ যদি একান্তই বাড়তি মেমোরি কার্ড ব্যবহার করতে চান, তাহলে সেটিও ব্যবহার করা যাবে। ফোনটিতে অালাদা মেমোরি কার্ডের স্লট দেওয়া আছে।

ওয়াই নাইনে মিডরেঞ্জের গেম খেলে তৃপ্তি পাওয়া যাবে। যদিও খুব হাই রেঞ্জের গেমের ক্ষেত্রে আপনাকে সামান্য সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে।

বাজারে অনেক ফোনেরই একটা সমস্যা থাকে যে ব্যবহার করলে এটি গরম হয়ে যায়। এক মাসের ব্যবহারে গেম খেলা ছাড়া ফোনটিকে কখনো গরম হতে দেখিনি। গেম খেললে শুধু হালকা গরম হতে দেখেছি। তবে সেটি অসহনীয় কোনো মাত্রায় নয়।

সফটওয়্যার
হুয়াওয়ে ওয়াই নাইনের অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড অরিও ৮.০ এবং হুয়াওয়ের কাস্টম ইএমইউআই ৮.০ ব্যবহার করা হয়েছে। এটি হাইল কাস্টমাইজড একটি ইউআই। ফোনটি যতদিন আমি ব্যবহার করেছি, অনেক স্মুথ অভিজ্ঞতা হয়েছে। এই ইএমইউআইর ফলেই ফোনটিতে যোগ হয়েছে নতুন বেশ কিছু বিশেষ ফিচার। যেমন—গেম মোড, থ্রি ফিঙ্গার স্ক্রিনশট বা আলট্রা পাওয়ার সেভিং অপশন।

ছবি: শামছুল হক রিপন
পেছনের ক্যামেরা
হুয়াওয়ে ওয়াই নাইন ২০১৮ ফোনটির পেছনে ১৩+২ মেগাপিক্সেলের ডুয়াল ক্যামেরা আছে। ২.২ অ্যাপারচারসমৃদ্ধ ১৬ মেগাপিক্সেল ক্যামেরাটিতে আছে ফেস ডিটেকশন অটো ফেকাস, আর সঙ্গে থাকছে ২ মেগাপিক্সেলের ডেপথ সেন্সিং ক্যামেরা। ফোনটির ক্যামেরার একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এতে বেশ কিছু অপশন আছে। ক্যামেরা চালু করলে উপরের দিকে থাকছে এলইডি লাইট কন্ট্রোল, ওয়াইড অ্যাপারচার, পোর্ট্রেট মোড, মোশন ফটো। আর ভেতরে থাকছে ১৩টির বেশি ডেডিকেটেড ক্যামেরা মোড, যেখানে থাকছে টাইম ল্যাপস, এইচডিআর, প্যানোরোমা ভিও মোড। ক্যামেরাটিকে ম্যানুয়ালি কন্ট্রোল করা যায় এবং ইচ্ছামতো ছবি তোলা এবং ভিডিও করা যায়।

হুয়াওয়ে ক্যামেরাকে বেশ প্রাধান্য দিয়েছে। বেশি আলোতে তোলা ছবিতে বেশ ভালো শার্পনেস আসবে, কালারও বেশ ভালো। পোর্ট্রেট ছবির ক্ষেত্রে শার্পনেস বেশ ভালো এলেও এজ ডিটেকশনে সামান্য গড়বড় দেখা গেছে।

ওয়াই নাইন দিয়ে তোলা ছবি
সামনের ক্যামেরা
সামনে থাকছে ১৬ মেগাপিক্সেলের এফ ২.২ অ্যাপারচারসমৃদ্ধ ক্যামেরা এবং সঙ্গে থাকছে ২ মেগাপিক্সেলের সাপোর্টিং ক্যামেরা।

এখনকার বাজারে যেসব ফোন পাওয়া যায়, তার বেশির ভাগগুলোতেই ছবি তুললে গায়ের রং স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি উজ্জ্বল দেখায়। ফলে ছবিটি অনেক সময় কৃত্রিম মনে হয়। কিন্তু এ ফোনটিতে সমস্যাটি নেই। পেছনের ক্যামেরার মতো সামনের ক্যামেরায় তোলা ছবিও যথেষ্ট ভালো এবং ক্যামেরা ছবির খুঁটিনাটি সব ডিটেইলস কাভার করতে পারে। ফ্রন্ট ক্যামেরায় এআর লেন্স নামের একটি অপশন আছে, যেটি অনেকটা স্ন্যাপচ্যাটের ফিল্টারের মতো। এ অপশনটি ব্যবহার করে আপনি চাইলে বিভিন্ন ফিল্টারে ছবি তুলতে পারবেন।

নিরাপত্তা
কম বাজেটের স্মার্টফোনে ফেসিয়াল আনলক ফিচার রেখে চমক দেখিয়েছে হুয়াওয়ে। বাজারে একই বাজেটের ফোনে ফেসিয়াল আনলক খুবই বিরল। সে ক্ষেত্রে হুয়াওয়ের এ ফোনটি আলাদা ধন্যবাদ পেতে পারে। শুধু একটু অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ ছাড়া ফেসিয়াল আনলক ব্যবহারে কোনো সমস্যা হয়নি। এ ছাড়া আছে ফিঙ্গার প্রিন্ট। ফিঙ্গার প্রিন্ট সেন্সরটি যথেষ্ট ভালো। এটি ব্যবহারে কখনো সমস্যার মুখোমুখি হইনি আমি।

ব্যাটারি
হুয়াওয়ে ওয়াই নাইন ২০১৮ ফোনটির অন্যতম আকর্ষণীয় সুবিধা হচ্ছে এর লম্বা ব্যাটারি ব্যাকআপ। ৪০০০ এমএএইচ ব্যাটারিটি একবার ফুল চার্জ করলে গেম খেলে বা ভিডিও দেখলেও সারাদিন ব্যবহার করা যাবে। আর যদি শুধু সোশ্যাল মিডিয়া ব্রাউজিং, ছবি তোলার মতো হালকা কাজ করা হয়, তাহলে এর ব্যাটারির স্থায়িত্ব হবে প্রায় দুই দিন।

পরিশেষ
হুয়াওয়ে ওয়াই নাইন ২০১৮ ফোনটিকে বলা যেতে পারে নোভা টুআইর ছোট ভাই। দুটি ফোন প্রায় একই রকম হলেও দামের দিক থেকে ওয়াই নাইন অনেকটাই কম। যদিও ক্যামেরা এবং স্টোরেজের দিক থেকে ওয়াই নাইনের চেয়ে নোভা টুআই বেশি ভালো। কিন্তু তারপরও এই বাজেটে ওয়াই নাইন যেসব সুবিধা দিচ্ছে, বাজারে একই বাজেটের অন্য ফোনে এত সুবিধা বিরল।