ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পুতিনকে ফোন পোপের

ইউক্রেনে যুদ্ধের অবসান ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরাসরি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ফোন করেছেন ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপ চতুর্দশ লিও। বুধবার ( ৪ জুন)-এর এই ফোনালাপে পোপ কিয়েভের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা শুরুর আহ্বান জানান পুতিনকে। একই সঙ্গে তিনি যুদ্ধ বন্ধে সব সংশ্লিষ্ট পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করে আনুষ্ঠানিক সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শও দেন।

সম্প্রতি ইস্তাম্বুলে শান্তি সংলাপ শুরু করেছে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের সরকারি প্রতিনিধিরা। এই সংলাপের আওতায় ইতোমধ্যে ৬ হাজার করে মোট ১২ হাজার সেনার মরদেহ বিনিময় এবং আহত ও অসুস্থ সব সেনাকে মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে উভয়পক্ষ। পুতিনের সঙ্গে ফোন পোপ চতুর্দশ লিও এ ব্যাপারটিকে স্বাগত জানিয়েছেন।

মৃত সেনাদের দেহ বিনিময় এবং আহত ও অসুস্থ সেনাদের মুক্তি প্রদানে উভয়পক্ষের সমঝোতাকে ‘ঘোর অন্ধারে আশার আলো’ উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘শান্তি, জীবন এবং ধর্মীয় স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত রাখতে আমাদের সবাইকে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে।’

মিনস্ক চুক্তির শর্ত মেনে ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদান সত্ত্বেও তা পালন না করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য ইউক্রেনের তদবিরকে ঘিরে কয়েক বছর ধরে টানাপোড়েন চলার পর ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশটিতে অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। প্রেসিডেন্ট পুতিন নিজে এ অভিযান শুরুর নির্দেশ দিয়েছিলেন।

অভিযান শুরুর আগে তিন মাস ধরে রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে অবস্থান নিয়েছিল রুশ সেনারা।

রাশিয়ার যে সামরিক শক্তি ও সক্ষমতা— তাতে হয়তো এক সপ্তাহের মধ্যেই ইউক্রেনের পতন ঘটতে পারত, কিন্তু রুশ বাহিনী সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো এবং ইউরোপ। তারা ইউক্রেনকে সমানে অর্থ ও অস্ত্র সহায়তাপ্রদান শুরু করে।

বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ। সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সময় ইউক্রেনকে এক হাজার কোটি ডলারেরও বেশি অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের এই বিপুল সামরিক সহায়তা সত্ত্বেও গত সাড়ে তিন বছরের যুদ্ধে দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, ঝাপোরিজ্জিয়া ও খেরসন— ইউক্রেনের এই চার প্রদেশ দখল করেছে রাশিয়া, যা ইউক্রেনের মোট ভূখণ্ডের এক পঞ্চমাংশ। এই চার প্রদেশকে রাশিয়ার মানচিত্রেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর অবশ্য পরিস্থিতিতে বদল আসে। গত ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পর ইউক্রেনে সহায়তা প্রদান স্থগিত করেন তিনি। পাশাপাশি যুদ্ধ অবসানের জন্য তৎপরতাও শুরু করেন।

মূলত ট্রাম্প এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের আন্তরিক প্রচেষ্টাতেই বর্তমানে ইস্তাম্বুলে শান্তি সংলাপ শুরু করেছেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের সরকারি প্রতিনিধিরা।

ট্যাগস :

ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পুতিনকে ফোন পোপের

আপডেট সময় : ০৪:৪৮:৩৯ অপরাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫

ইউক্রেনে যুদ্ধের অবসান ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরাসরি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ফোন করেছেন ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপ চতুর্দশ লিও। বুধবার ( ৪ জুন)-এর এই ফোনালাপে পোপ কিয়েভের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা শুরুর আহ্বান জানান পুতিনকে। একই সঙ্গে তিনি যুদ্ধ বন্ধে সব সংশ্লিষ্ট পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করে আনুষ্ঠানিক সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শও দেন।

সম্প্রতি ইস্তাম্বুলে শান্তি সংলাপ শুরু করেছে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের সরকারি প্রতিনিধিরা। এই সংলাপের আওতায় ইতোমধ্যে ৬ হাজার করে মোট ১২ হাজার সেনার মরদেহ বিনিময় এবং আহত ও অসুস্থ সব সেনাকে মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে উভয়পক্ষ। পুতিনের সঙ্গে ফোন পোপ চতুর্দশ লিও এ ব্যাপারটিকে স্বাগত জানিয়েছেন।

মৃত সেনাদের দেহ বিনিময় এবং আহত ও অসুস্থ সেনাদের মুক্তি প্রদানে উভয়পক্ষের সমঝোতাকে ‘ঘোর অন্ধারে আশার আলো’ উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘শান্তি, জীবন এবং ধর্মীয় স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত রাখতে আমাদের সবাইকে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে।’

মিনস্ক চুক্তির শর্ত মেনে ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদান সত্ত্বেও তা পালন না করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য ইউক্রেনের তদবিরকে ঘিরে কয়েক বছর ধরে টানাপোড়েন চলার পর ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশটিতে অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। প্রেসিডেন্ট পুতিন নিজে এ অভিযান শুরুর নির্দেশ দিয়েছিলেন।

অভিযান শুরুর আগে তিন মাস ধরে রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে অবস্থান নিয়েছিল রুশ সেনারা।

রাশিয়ার যে সামরিক শক্তি ও সক্ষমতা— তাতে হয়তো এক সপ্তাহের মধ্যেই ইউক্রেনের পতন ঘটতে পারত, কিন্তু রুশ বাহিনী সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো এবং ইউরোপ। তারা ইউক্রেনকে সমানে অর্থ ও অস্ত্র সহায়তাপ্রদান শুরু করে।

বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ। সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সময় ইউক্রেনকে এক হাজার কোটি ডলারেরও বেশি অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের এই বিপুল সামরিক সহায়তা সত্ত্বেও গত সাড়ে তিন বছরের যুদ্ধে দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, ঝাপোরিজ্জিয়া ও খেরসন— ইউক্রেনের এই চার প্রদেশ দখল করেছে রাশিয়া, যা ইউক্রেনের মোট ভূখণ্ডের এক পঞ্চমাংশ। এই চার প্রদেশকে রাশিয়ার মানচিত্রেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর অবশ্য পরিস্থিতিতে বদল আসে। গত ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পর ইউক্রেনে সহায়তা প্রদান স্থগিত করেন তিনি। পাশাপাশি যুদ্ধ অবসানের জন্য তৎপরতাও শুরু করেন।

মূলত ট্রাম্প এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের আন্তরিক প্রচেষ্টাতেই বর্তমানে ইস্তাম্বুলে শান্তি সংলাপ শুরু করেছেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের সরকারি প্রতিনিধিরা।