গাজায় যুদ্ধ থামাতে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সংগঠনটি বলেছে, তারা গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চায়, তবে এর জন্য শর্ত হচ্ছে—ইসরায়েলকে উপত্যকা থেকে সব সেনা সরিয়ে নিতে হবে।
শনিবার (৩১ মে) এক বিবৃতিতে হামাস জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের প্রস্তাব তারা মধ্যস্থতাকারীদের কাছে উপস্থাপন করেছে এবং তাতে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, “এই প্রস্তাবের মূল লক্ষ্য গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, সব ইসরায়েলি সেনার প্রত্যাহার, এবং আমাদের জনগণের জন্য মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা।”
হামাসের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, জাতীয় পর্যায়ের আলোচনার ভিত্তিতে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ১০ জন জীবিত জিম্মি এবং ১৮ জনের মরদেহ ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করতে তারা রাজি। এর বিনিময়ে ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে।
যদিও বিবৃতিতে মার্কিন প্রস্তাবের কোনো সংশোধনের কথা বলা হয়নি, বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক মন্তব্যে এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জানান, হামাস কিছু শর্তে সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে। তা সত্ত্বেও সংগঠনটির প্রতিক্রিয়া সামগ্রিকভাবে ইতিবাচক।
এদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর হামাসের এ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি জিম্মিদের পরিবারের সঙ্গে এক বৈঠকে নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। যদিও এ বিষয়ে তাঁর দপ্তর থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি।
গত মার্চে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে একাধিকবার আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও গভীর মতপার্থক্যের কারণে কোনো স্থায়ী সমাধান আসেনি।
ইসরায়েলের দাবি, যুদ্ধ শেষ করতে হলে হামাসকে পুরোপুরি নিরস্ত্র হতে হবে এবং তাদের সামরিক ও প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে ফেলতে হবে। একই সঙ্গে গাজায় এখনো থাকা ৫৮ জন জিম্মিকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
অন্যদিকে হামাস জানিয়ে দিয়েছে, তারা অস্ত্র সমর্পণ করবে না। বরং চায় ইসরায়েল সেনা প্রত্যাহার করুক এবং যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধে প্রতিশ্রুতি দিক।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি অভিযানে এ পর্যন্ত গাজায় ৫৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। প্রায় পুরো উপত্যকাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
চলমান সংকটের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব ও হামাসের সদর্থক প্রতিক্রিয়া সম্ভাব্য সমাধানের ইঙ্গিত দিলেও, চূড়ান্ত শান্তির পথে এখনও বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।