হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধে ট্রাম্পের পরিকল্পনা আটকাল আদালত

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির অধিকার কেড়ে নিতে চাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্যোগ সাময়িকভাবে আটকে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের এক বিচারক। শুক্রবার (২৩ মে) বোস্টনের এক আদালত এই সিদ্ধান্ত দেন, যা হার্ভার্ডের পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি জয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিবিসি জানিয়েছে, মার্কিন ডিস্ট্রিক্ট বিচারক অ্যালিস বারাস শুক্রবার এক সংক্ষিপ্ত রায়ে ট্রাম্প প্রশাসনের অধীন ‘ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি’ (ডিএইচএস)-এর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। বৃহস্পতিবারই ডিএইচএস হার্ভার্ডের ‘স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম সার্টিফিকেশন’ বাতিলের কথা ঘোষণা করেছিল।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এই সিদ্ধান্তকে ‘আইনের লঙ্ঘন ও মতপ্রকাশের অধিকারে হস্তক্ষেপ’ আখ্যায়িত করে তাৎক্ষণিকভাবে আদালতে মামলা দায়ের করে। মামলায় বলা হয়, “কলমের এক খোঁচায় সরকার হার্ভার্ডের এক চতুর্থাংশ শিক্ষার্থীকে বাদ দিতে চায়, অথচ এই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতিতে বড় অবদান রাখেন।”

হার্ভার্ড প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার এক চিঠিতে বলেন, “সরকারের এই পদক্ষেপ আমাদের একাডেমিক স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। আমরা কখনোই আমাদের শিক্ষাক্রম, শিক্ষক বা ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণে ফেডারেল হস্তক্ষেপ মেনে নিতে পারি না।”

ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ইহুদিবিরোধিতার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি এবং ভর্তি ও নিয়োগে জাতিগত পক্ষপাতিত্ব করেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে।

এই আইনি লড়াইয়ের পটভূমিতে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর টানাপড়েন। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে হার্ভার্ডসহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন অভিযানের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।

সম্প্রতি হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের ফেডারেল অনুদান ও চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। সর্বশেষ গত সোমবার, ইহুদি শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দকৃত ৬ কোটি ডলারের অনুদান বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানবসেবা মন্ত্রণালয় (এইচএইচএস)।

বিশ্লেষকদের মতে, বিচারকের এই সাময়িক নিষেধাজ্ঞা প্রশাসনের কঠোর অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করেছে এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও ন্যায্যতার প্রশ্নে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তবে বিষয়টির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি এখনও আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।

 

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধে ট্রাম্পের পরিকল্পনা আটকাল আদালত

আপডেট সময় : ১১:১৭:৫০ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির অধিকার কেড়ে নিতে চাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্যোগ সাময়িকভাবে আটকে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের এক বিচারক। শুক্রবার (২৩ মে) বোস্টনের এক আদালত এই সিদ্ধান্ত দেন, যা হার্ভার্ডের পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি জয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিবিসি জানিয়েছে, মার্কিন ডিস্ট্রিক্ট বিচারক অ্যালিস বারাস শুক্রবার এক সংক্ষিপ্ত রায়ে ট্রাম্প প্রশাসনের অধীন ‘ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি’ (ডিএইচএস)-এর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। বৃহস্পতিবারই ডিএইচএস হার্ভার্ডের ‘স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম সার্টিফিকেশন’ বাতিলের কথা ঘোষণা করেছিল।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এই সিদ্ধান্তকে ‘আইনের লঙ্ঘন ও মতপ্রকাশের অধিকারে হস্তক্ষেপ’ আখ্যায়িত করে তাৎক্ষণিকভাবে আদালতে মামলা দায়ের করে। মামলায় বলা হয়, “কলমের এক খোঁচায় সরকার হার্ভার্ডের এক চতুর্থাংশ শিক্ষার্থীকে বাদ দিতে চায়, অথচ এই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতিতে বড় অবদান রাখেন।”

হার্ভার্ড প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার এক চিঠিতে বলেন, “সরকারের এই পদক্ষেপ আমাদের একাডেমিক স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। আমরা কখনোই আমাদের শিক্ষাক্রম, শিক্ষক বা ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণে ফেডারেল হস্তক্ষেপ মেনে নিতে পারি না।”

ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ইহুদিবিরোধিতার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি এবং ভর্তি ও নিয়োগে জাতিগত পক্ষপাতিত্ব করেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে।

এই আইনি লড়াইয়ের পটভূমিতে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর টানাপড়েন। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে হার্ভার্ডসহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন অভিযানের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।

সম্প্রতি হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের ফেডারেল অনুদান ও চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। সর্বশেষ গত সোমবার, ইহুদি শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দকৃত ৬ কোটি ডলারের অনুদান বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানবসেবা মন্ত্রণালয় (এইচএইচএস)।

বিশ্লেষকদের মতে, বিচারকের এই সাময়িক নিষেধাজ্ঞা প্রশাসনের কঠোর অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করেছে এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও ন্যায্যতার প্রশ্নে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তবে বিষয়টির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি এখনও আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।