শিরোনামহীন: এক মলাটে ২৯ বছর!

  • নীলকন্ঠ অনলাইন নীলকন্ঠ অনলাইন
  • আপডেট সময় : ০৬:১৬:৩১ অপরাহ্ণ, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫
  • ৭১২ বার পড়া হয়েছে
দেশীয় ব্যান্ডসংগীতের ইতিহাসে শিরোনামহীন এক অনন্য নাম। প্রায় তিন দশকের পথচলার পর, অবশেষে কানাডার মঞ্চে প্রথমবারের মতো গুঞ্জরিত হতে যাচ্ছে বাংলা রকের কিংবদন্তি ব্যান্ড শিরোনামহীনের সুর।

ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য কিংবা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া—সাফল্যের রঙ ছড়ানো দীর্ঘ এই সফরের পরও কানাডার মঞ্চ এতদিন অধরাই ছিল। সেই শূন্যতাই পূরণ হতে যাচ্ছে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে। আয়োজক মিক্সটেপ-এর তত্ত্বাবধানে টরন্টোয় প্রথমবারের মতো দর্শক-শ্রোতাদের সামনে সরাসরি পারফর্ম করবে এই ব্যতিক্রমী রক ব্যান্ড।

ব্যান্ড লিডার জিয়াউর রহমান বলেন, ‘২০২৫ সালটি শিরোনামহীনের জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতার বছর হতে যাচ্ছে। আমরা কানাডা ট্যুরের মাধ্যমে আমাদের বছরের প্রথম বিদেশ সফরের যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছি এবং আশা করছি আমাদের বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের সঙ্গে একটি দারুণ সময় কাটবে। সামনে আরও কিছু দেশের ট্যুরের পরিকল্পনা রয়েছে’।

তিনি বলেন, ‘শিরোনামহীনের হাতে রয়েছে আরও চারটি নতুন মিউজিক ভিডিও, যেগুলোর চিত্রায়ন হয়েছে থাইল্যান্ড ও ভারতের হিমাচল প্রদেশের মনোরম লোকেশনে। প্রবাসী জীবন, বেদনা ও রেমিট্যান্সকে কেন্দ্র করে নির্মিত ‘কতদূর’ গানটি এখন প্রকাশের অপেক্ষায়’।

এছাড়া জনপ্রিয় “এই অবেলায়” গানের সিক্যুয়েল নির্মাণ সম্পন্ন হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত রিলিজ করতে পারেনি শিরোনামহীন। স্পনসর এর সহযোগিতা পেলেই এই গানগুলো শিগগির প্রকাশিত হবে বলে জানান ব্যান্ড লিডার জিয়াউর রহমান।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো বাংলা গানকে সারা বিশ্বের মানুষদের কাছে আরও ভালোবাসার জায়গায় পৌঁছানো এবং বাংলা গানের পাশে থাকা’।

সম্প্রতি ”বাতিঘর” অ্যালবামের ধারাবাহিকতায় প্রকাশিত হয়েছে ”প্রিয়তমা”—যা এক মাসেই ইউটিউবে অতিক্রম করেছে ১৫ লাখ ভিউ, ছুঁয়েছে লাখো হৃদয়।

ব্যান্ডের কম্পোজার কাজী আহমেদ শাফিন বলেন, ‘ইউরোপ ট্যুর আমাদের নতুন ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। বিশ্বাস করি, কানাডা ও অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতাও আমাদের সংগীতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। আর নতুন কোনো দেশে কনসার্ট করতে যাওয়ার মানে শুধু মঞ্চেই সীমাবদ্ধ না। সেই দেশের সংস্কৃতি, জীবনধারা কাছ থেকে জানা যায়, দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখা যায় আর তাদের ঐতিহাসিক বা জনপ্রিয় খাবারের স্বাদও নেওয়া যায়। আর কানাডায় যারা অনেকদিন ধরে আছে তারা অবশ্যই শিরোনামহীনের লাইভ কনসার্ট মিস করেছে। তো এবারই তারা প্রথমবার সেই সুযোগটা পাচ্ছে। সব মিলিয়ে এমন একটি ট্যুর হয়ে ওঠে ভীষণ আনন্দময় ও মনে রাখার মতো’।

ব্যান্ডের কণ্ঠশিল্পী শেখ ইশতিয়াক বলেন, ‘এই ট্যুরগুলো থেকে আমাদের এমন কিছু অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি তৈরি হয়, যা ক্রিয়েটিভ চর্চার মানুষের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়’।

কিবোর্ডিস্ট সাইমন চৌধুরী বলেন, ‘২০২৪-এ অস্ট্রেলিয়া শোর পর ২০২৫-এর প্রথম বিদেশ সফর—২৯ বছর পর কানাডায়, সেটাও প্রথমবার। একটা গভীর অনুভূতি কাজ করছে। প্রতিটি বিদেশ সফর যেমন আনন্দময়, তেমনি ভরে থাকে অমূল্য স্মৃতিতে। আর সবচেয়ে বড় কথা—যারা প্রবাসে আছেন, দেশের শোগুলো মিস করেন, তাদের সেই শূন্যতা যদি একটু হলেও পূরণ করতে পারি, সেটাই হবে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি’।

গিটারিস্ট সুদিপ্ত সিনহা দীপু বলেন, ‘দেশের বাইরে শো মানেই এক ভিন্ন অনুভূতি। একদিকে শিখছি নতুন সংস্কৃতি, অন্যদিকে আমাদের দেশের গানকে বিদেশের মাটিতে উপস্থাপন করার গর্বের সুযোগ—এটা এক অমূল্য অভিজ্ঞতা’।

প্রায় তিন দশক ধরে বাংলা রককে বহন করে চলা এই ব্যান্ড এবার কানাডার আকাশেও রেখে যেতে চায় তাদের অনন্য সুরের চিহ্ন—প্রমাণ করে দিতে চায়, সময়কে পেছনে ফেলে বাংলা ব্যান্ডসংগীত আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক, তীক্ষ্ণ ও প্রাণবন্ত।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

শিরোনামহীন: এক মলাটে ২৯ বছর!

আপডেট সময় : ০৬:১৬:৩১ অপরাহ্ণ, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫
দেশীয় ব্যান্ডসংগীতের ইতিহাসে শিরোনামহীন এক অনন্য নাম। প্রায় তিন দশকের পথচলার পর, অবশেষে কানাডার মঞ্চে প্রথমবারের মতো গুঞ্জরিত হতে যাচ্ছে বাংলা রকের কিংবদন্তি ব্যান্ড শিরোনামহীনের সুর।

ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য কিংবা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া—সাফল্যের রঙ ছড়ানো দীর্ঘ এই সফরের পরও কানাডার মঞ্চ এতদিন অধরাই ছিল। সেই শূন্যতাই পূরণ হতে যাচ্ছে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে। আয়োজক মিক্সটেপ-এর তত্ত্বাবধানে টরন্টোয় প্রথমবারের মতো দর্শক-শ্রোতাদের সামনে সরাসরি পারফর্ম করবে এই ব্যতিক্রমী রক ব্যান্ড।

ব্যান্ড লিডার জিয়াউর রহমান বলেন, ‘২০২৫ সালটি শিরোনামহীনের জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতার বছর হতে যাচ্ছে। আমরা কানাডা ট্যুরের মাধ্যমে আমাদের বছরের প্রথম বিদেশ সফরের যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছি এবং আশা করছি আমাদের বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের সঙ্গে একটি দারুণ সময় কাটবে। সামনে আরও কিছু দেশের ট্যুরের পরিকল্পনা রয়েছে’।

তিনি বলেন, ‘শিরোনামহীনের হাতে রয়েছে আরও চারটি নতুন মিউজিক ভিডিও, যেগুলোর চিত্রায়ন হয়েছে থাইল্যান্ড ও ভারতের হিমাচল প্রদেশের মনোরম লোকেশনে। প্রবাসী জীবন, বেদনা ও রেমিট্যান্সকে কেন্দ্র করে নির্মিত ‘কতদূর’ গানটি এখন প্রকাশের অপেক্ষায়’।

এছাড়া জনপ্রিয় “এই অবেলায়” গানের সিক্যুয়েল নির্মাণ সম্পন্ন হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত রিলিজ করতে পারেনি শিরোনামহীন। স্পনসর এর সহযোগিতা পেলেই এই গানগুলো শিগগির প্রকাশিত হবে বলে জানান ব্যান্ড লিডার জিয়াউর রহমান।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো বাংলা গানকে সারা বিশ্বের মানুষদের কাছে আরও ভালোবাসার জায়গায় পৌঁছানো এবং বাংলা গানের পাশে থাকা’।

সম্প্রতি ”বাতিঘর” অ্যালবামের ধারাবাহিকতায় প্রকাশিত হয়েছে ”প্রিয়তমা”—যা এক মাসেই ইউটিউবে অতিক্রম করেছে ১৫ লাখ ভিউ, ছুঁয়েছে লাখো হৃদয়।

ব্যান্ডের কম্পোজার কাজী আহমেদ শাফিন বলেন, ‘ইউরোপ ট্যুর আমাদের নতুন ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। বিশ্বাস করি, কানাডা ও অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতাও আমাদের সংগীতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। আর নতুন কোনো দেশে কনসার্ট করতে যাওয়ার মানে শুধু মঞ্চেই সীমাবদ্ধ না। সেই দেশের সংস্কৃতি, জীবনধারা কাছ থেকে জানা যায়, দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখা যায় আর তাদের ঐতিহাসিক বা জনপ্রিয় খাবারের স্বাদও নেওয়া যায়। আর কানাডায় যারা অনেকদিন ধরে আছে তারা অবশ্যই শিরোনামহীনের লাইভ কনসার্ট মিস করেছে। তো এবারই তারা প্রথমবার সেই সুযোগটা পাচ্ছে। সব মিলিয়ে এমন একটি ট্যুর হয়ে ওঠে ভীষণ আনন্দময় ও মনে রাখার মতো’।

ব্যান্ডের কণ্ঠশিল্পী শেখ ইশতিয়াক বলেন, ‘এই ট্যুরগুলো থেকে আমাদের এমন কিছু অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি তৈরি হয়, যা ক্রিয়েটিভ চর্চার মানুষের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়’।

কিবোর্ডিস্ট সাইমন চৌধুরী বলেন, ‘২০২৪-এ অস্ট্রেলিয়া শোর পর ২০২৫-এর প্রথম বিদেশ সফর—২৯ বছর পর কানাডায়, সেটাও প্রথমবার। একটা গভীর অনুভূতি কাজ করছে। প্রতিটি বিদেশ সফর যেমন আনন্দময়, তেমনি ভরে থাকে অমূল্য স্মৃতিতে। আর সবচেয়ে বড় কথা—যারা প্রবাসে আছেন, দেশের শোগুলো মিস করেন, তাদের সেই শূন্যতা যদি একটু হলেও পূরণ করতে পারি, সেটাই হবে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি’।

গিটারিস্ট সুদিপ্ত সিনহা দীপু বলেন, ‘দেশের বাইরে শো মানেই এক ভিন্ন অনুভূতি। একদিকে শিখছি নতুন সংস্কৃতি, অন্যদিকে আমাদের দেশের গানকে বিদেশের মাটিতে উপস্থাপন করার গর্বের সুযোগ—এটা এক অমূল্য অভিজ্ঞতা’।

প্রায় তিন দশক ধরে বাংলা রককে বহন করে চলা এই ব্যান্ড এবার কানাডার আকাশেও রেখে যেতে চায় তাদের অনন্য সুরের চিহ্ন—প্রমাণ করে দিতে চায়, সময়কে পেছনে ফেলে বাংলা ব্যান্ডসংগীত আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক, তীক্ষ্ণ ও প্রাণবন্ত।