অল্প ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে নারীদের স্তন ক্যানসারের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। অনুন্নত দেশগুলোতে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত নারীদের চিত্র আরও ভয়াবহ, দুর্দশাগ্রস্ত ও মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশি। অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার কারণে স্তন ক্যানসারের সঠিক ধরন নির্ণয় না করে নামমাত্র চিকিৎসা দেওয়ার কারণে মৃত্যুসংখ্যা বেশি। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত ও সঠিক পরীক্ষা হলে প্রতিবছর হাজার হা্জার জীবন বাঁচানো সম্ভব।
স্বাভাবিক স্তনের গঠন
মেয়েদের স্তন লোবিউল (দুগ্ধ উৎপাদনকারী গ্রন্থি), নালিকা বা ডাক (লোবিউল থেকে বোঁটায় দুগ্ধ বহনকারী), ফ্যাটি টিস্যু দিয়ে তৈরী স্ট্রোমা, লোবিউল ও নালিকাগুলোকে পরিবেষ্টনকারী যোজক কলা, রক্তবাহিকা এবং নলিকাবাহিকার সমন্বয়ে গঠিত। মাতৃদুগ্ধকে পরিশোধিত করে অ্যান্টিবডিজের জন্য শিশুর দুধপান অবশ্যই জরুরি।
স্তন ক্যানসারেন ধরন
স্তন ক্যানসার হলো অতি দ্রুত বৃদ্ধি ও পরিবর্তিত টিউমার। স্তন কোষে মিউটেশন বা পরিবর্তনের কারণে জেনেটিক অস্থায়িত্ব কোষ তৈরি হওয়াতে যা স্বাভাবিক স্তন কোষকে অস্বাভাবিকরূপে পরিবর্তিত করে; ফলে কোষগুলোকে পার্শ্ববর্তী কোষের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি করে একটি চাকা বা লাম্প তৈরি করে। পরে প্রাথমিক লাম্প এলাকা থেকে দেহের দূরবর্তী বিভিন্ন অঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করে।
স্তন ক্যানসারের লক্ষণ
* স্তনের আকার ও আকৃতিতে পরিবর্তন।
* স্তনের ত্বকে টোল পড়া বা কুঁচকে যাওয়া।
* বোঁটা বা অন্য অংশ ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া।
* স্তনের বোঁটায় চুলকানি, আঁশযুক্ত ত্বক, ফুসকুড়ি পড়া।
* স্তন ফুলে যাওয়া, গরম হয়ে যাওয়া, লালচে ভাব, কালো হয়ে যাওয়া।
* স্তনের ভেতরে বা বগলে চাকা, শক্ত পিণ্ড।
* কোনো জায়গায় নতুন অনুভূত ব্যথা, যা দীর্ঘস্থায়ী।
* আচমকা স্তন বোঁটা দিয়ে ক্ষরণ।
কারা ঝুঁকিতে থাকেন
ক. পারিবারিক হিস্ট্রিতে রয়েছে স্তন ক্যানসার, এমন নারীরা; খ. মাসিক অনিয়মিতভাবে যাঁদের হয়েছে; গ. ঘন স্তন টিস্যু মেমোগ্রাফির দ্বারা বোঝা যায়;
ঘ. জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ব্যবহার করেছেন; ঙ. ডিপো প্রভেরা (ডিএমপিএ) ইনজেকশন নেওয়ার অভ্যাস; চ. হরমোন চিকিৎসা পোস্ট মেনোপজাল সময়ে; ছ. যেকোনো ধরনের ধূমপান, মদ পান; জ. অবিবাহিত বা দেরিতে ছেলেমেয়ে হওয়া; ঝ. ব্রেস্ট ফিডিং বা বাচ্চাকে বুকের দুধ না খাওয়ানো; ঞ. অতিরিক্ত ওজন ও মেদ
দ্রুত শনাক্তকরণ
স্ক্রিনিং পরীক্ষাগুলোর উদ্দেশ্য, লক্ষণ প্রকাশিত হওয়ার আগেই ছোট অবস্থায় চাকা খুঁজে বের করা, যেমন একটি চাকা যা হাতে অনুভব করা যায় না, যা রোগী হাত দিয়ে অনুভব করেন কিন্তু তারা এখনো স্তন টিস্যুতেই সীমাবদ্ধ আছে। এ ধরনের স্তন ক্যানসারের কারণ নির্ণয় প্রাথমিক পর্যায়ে বায়োপসি ও মলিকুলার বায়োলজি টেকনোলজি দিয়ে এর ধরন বা টাইপ নির্ণয় করা যায়। যেসব স্তন ক্যানসার লক্ষণ প্রকাশ করছে, অনুমান করা যায়, তারা আকারে বড় এবং ইতিমধ্যেই স্তন টিস্যুর বাইরে শরীরের অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। পরিব্যক্তির (জিনগত) ধরনের ওপর নির্ভর করে, তা সত্ত্বেও আরোগ্যের সম্ভাবনা আকার ও টিউমারটি কতখানি ছড়িয়ে পড়েছে, তার ওপর নির্ভরশীল। তাই জরুরি প্রয়োজনে প্রাথমিক অবস্থা রোগ নির্ণয়ে সম্ভব, যদি নারীরা এ ব্যাপারে সচেতন থাকেন এবং স্ক্রিনিং প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে নিয়মিত চেকআপ করেন।
বিজ্ঞানীরা একটি লক্ষ্যকে সঠিকভাবে আঘাত করার জন্য একটি ওষুধ তৈরি করতে পারেন, কিন্তু একটি টিউমার নিজেকে রক্ষা করার জন্য নানা ধরনের এখনো অনাবিষ্কৃত জেনেটিক কৌশল প্রয়োগ করে। ক্যানসার সম্পূর্ণভাবে নিরাময়যোগ্য না হলেও এটিকে প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা গেলে, ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত রাখা সম্ভব।
প্রতিরোধে করণীয় (ঝুঁকি কমানোর উপায়)
ক. অধিক পরিমাণ শারীরিক পরিশ্রম
খ. মানসিক স্বস্তি, সঠিক ও নিয়ন্ত্রিত শারীরিক ওজন
গ. ২০-৩০ বছর বয়স থেকে নিজেই নিয়ম অনুযায়ী স্তন পরীক্ষা শুরু করা উচিত।
ঘ. ৩০ থেকে ৪৫ বছরোর্ধ্ব নারীদের ঝুঁকির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে বিধায় তাঁদের প্রতিবছর পরীক্ষা করানো উচিত এবং ম্যাসোগ্রাফি ও অন্যান্য পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।
অধ্যাপক ডা. তাসনিম আরা সার্জিক্যাল অনকোলজিস্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক,
সেলিমা ইনস্টিটিউট ফর ক্যানসার ইমিউনোথেরাপি ও সেল থেরাপি