শিরোনাম :
রাজনীতি

উভয় সঙ্কটে ছাত্র রাজনীতি

  • তোহা ইসলাম তোহা ইসলাম
  • আপডেট সময় : ১২:৫৮:৩৩ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • ৭১৩ বার পড়া হয়েছে
  • হারুন ইসলাম

বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করার একটি মাধ্যম হিসেবে পরিচিত। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এটিকে এমন এক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবে দেখেন, যা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা, অ্যাজেন্ডা নির্ধারণ এবং সেই অ্যাজেন্ডার পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কর্তৃপক্ষকে চাপ দেয়। তবে বিগত দু’দশকে বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি একটি ভিন্ন রূপ ধারণ করেছে। বিশেষ করে, বর্তমান সময়ে ছাত্ররা সাধারণভাবে ছাত্র রাজনীতির প্রতি আগ্রহী নয়। এর প্রতি তাদের একটি বিরোধিতার মনোভাব তৈরি হয়েছে।

এখানে ছাত্র রাজনীতির একটি বড় সমস্যা হলো এটি জাতীয় রাজনীতির সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত হয়ে পড়েছে। দলীয় রাজনীতির একটি অংশ হিসেবে ছাত্রদের রাজনৈতিক দলের সমর্থন সংগ্রহ, নেতৃত্ব তৈরির মাধ্যমে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এই পরিবেশে ছাত্রদের মধ্যে মাদারপার্টির প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে। যার ফলে অনেক শিক্ষার্থী এই রাজনীতিকে নেতিবাচকভাবে দেখছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি অনেকটাই সঙ্কটাপন্ন। ছাত্র রাজনীতির মূল লক্ষ্য যদি শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করা হয়, তবে তার জন্য সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশের সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরি। গত ৫ আগস্টের পর এটি স্পষ্ট যে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে ঐক্য ও সৌহার্দ্য বজায় রাখা প্রয়োজন। ভবিষ্যতে ছাত্র রাজনীতি ছাত্রদের জন্য একটি প্রাসঙ্গিক এবং ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দমন-পীড়ন এবং সহিংসতা
ছাত্র রাজনীতি যখন ছাত্রদের মধ্যে সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করছে, তখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই ধরনের রাজনীতির বিরোধী হয়ে উঠছে। বিগত দু’দশকে ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত। এসব সংঘর্ষ মূলত ছাত্র রাজনীতির তিক্ত প্রতিযোগিতা এবং একে অপরের রাজনৈতিক মতের বিরোধের কারণে হয়েছিল। যেটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর

৫ আগস্টের গণঅভূত্থান: ছাত্র রাজনীতিতে বিভক্তির সূচনা
৫ আগস্টের গণঅভূত্থানের পর, ছাত্র রাজনীতি নতুন মাত্রায় প্রবাহিত হয়েছে। গণঅভূত্থানের পরিণতি নিয়ে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের মধ্যে বিভক্তির রাজনীতি শুরু হয়েছে। সংগঠনগুলোর মধ্যে অবদানের পরিমাণ এবং নেতৃত্বের কর্তৃত্ব নিয়ে বিতর্ক এবং বিরোধিতা বেড়েছে। এই বিভক্তির কারণে একসময়কার ঐক্য সংকুচিত হয়ে পড়েছে। যার ফলে ছাত্ররাজনীতির মূল উদ্দেশ্যকে বিপথগামী করে দিয়েছে।

জুলাই অভূত্থানের স্পিরিট
জুলাই অভূত্থান পরবর্তী সময়ে ছাত্ররাজনীতির নতুন স্পিরিটের প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছে। ঐক্য ও ফ্যাসিবাদবিরোধী মনোভাব আবারো সক্রিয় হতে হবে। যাতে ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করতে পারে। ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও সংঘর্ষের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই রাজনীতিকে প্রাসঙ্গিক মনে করছেন না।

ছাত্র সংগঠনগুলোর ভূমিকা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর একাধীক নেতারা জানান, ৫ আগস্টের পর তারা একসাথে কাজ করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু নানা বিভ্রান্তি ও রাজনৈতিক অস্থিরতা তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। তারা আরো বলেন, গত ১৫ বছর ক্যাম্পাসে বিভিন্ন দলের ছাত্রদের ওপর অত্যাচার, মারধর এবং অপদস্থ করা হয়েছিল, যা ছাত্র রাজনীতির জন্য অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করেছিল। এখন তারা আশা করছেন, এই নেতিবাচক দিকগুলো এড়াতে সংগঠনের সিনিয়ররা যৌক্তিক সমাধান দেবেন এবং ছাত্ররাজনীতি সৌহার্দ্যপূর্ণ ও ইতিবাচক ধারায় ফিরবে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, তাদের সংগঠন কখনোই পেশিশক্তি বা সহিংসতার রাজনীতি সমর্থন করে না এবং তারা ছাত্ররাজনীতিতে একটি সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সর্বদা সচেষ্ট। তবে কিছু গুপ্ত সংগঠন ছাত্রদলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে, যার মাধ্যমে ক্যাম্পাসে সহিংসতা সৃষ্টি হতে পারে।

ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আশিক বলেন, আমরা সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। তবে দুর্ভাগ্যবশত প্রতিপক্ষকে ক্যাম্পাসে কোনো স্পেইস না দেয়ার মতো ফ্যাসিবাদী আচরণ আমাদের কিছু বন্ধুপ্রতিম সংগঠনের মধ্যে লক্ষ্য করছি যেটি একত্রে কাজ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অন্তরায়।

ফ্যাসিবাদকে বিতাড়িত করতে যে সকল সংগঠন একসাথে কাজ করেছে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকা খুবই জরুরি। নিজেদের মধ্যে দূরত্ব থাকলে দেশের চলমান নাজুক পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে ২৪-এর পরাজিত শক্তি আবার পুনর্বাসনের আশঙ্কা আছে। তাই আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনকে পারস্পরিক দূরত্ব ভুলে গিয়ে ক্যাম্পাসে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করণে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানাই।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

শহিদ আবু সাইদকে নিয়ে কটুক্তি করায় বেরোবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

রাজনীতি

উভয় সঙ্কটে ছাত্র রাজনীতি

আপডেট সময় : ১২:৫৮:৩৩ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • হারুন ইসলাম

বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করার একটি মাধ্যম হিসেবে পরিচিত। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এটিকে এমন এক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবে দেখেন, যা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা, অ্যাজেন্ডা নির্ধারণ এবং সেই অ্যাজেন্ডার পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কর্তৃপক্ষকে চাপ দেয়। তবে বিগত দু’দশকে বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি একটি ভিন্ন রূপ ধারণ করেছে। বিশেষ করে, বর্তমান সময়ে ছাত্ররা সাধারণভাবে ছাত্র রাজনীতির প্রতি আগ্রহী নয়। এর প্রতি তাদের একটি বিরোধিতার মনোভাব তৈরি হয়েছে।

এখানে ছাত্র রাজনীতির একটি বড় সমস্যা হলো এটি জাতীয় রাজনীতির সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত হয়ে পড়েছে। দলীয় রাজনীতির একটি অংশ হিসেবে ছাত্রদের রাজনৈতিক দলের সমর্থন সংগ্রহ, নেতৃত্ব তৈরির মাধ্যমে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এই পরিবেশে ছাত্রদের মধ্যে মাদারপার্টির প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে। যার ফলে অনেক শিক্ষার্থী এই রাজনীতিকে নেতিবাচকভাবে দেখছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি অনেকটাই সঙ্কটাপন্ন। ছাত্র রাজনীতির মূল লক্ষ্য যদি শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করা হয়, তবে তার জন্য সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশের সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরি। গত ৫ আগস্টের পর এটি স্পষ্ট যে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে ঐক্য ও সৌহার্দ্য বজায় রাখা প্রয়োজন। ভবিষ্যতে ছাত্র রাজনীতি ছাত্রদের জন্য একটি প্রাসঙ্গিক এবং ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দমন-পীড়ন এবং সহিংসতা
ছাত্র রাজনীতি যখন ছাত্রদের মধ্যে সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করছে, তখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই ধরনের রাজনীতির বিরোধী হয়ে উঠছে। বিগত দু’দশকে ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত। এসব সংঘর্ষ মূলত ছাত্র রাজনীতির তিক্ত প্রতিযোগিতা এবং একে অপরের রাজনৈতিক মতের বিরোধের কারণে হয়েছিল। যেটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর

৫ আগস্টের গণঅভূত্থান: ছাত্র রাজনীতিতে বিভক্তির সূচনা
৫ আগস্টের গণঅভূত্থানের পর, ছাত্র রাজনীতি নতুন মাত্রায় প্রবাহিত হয়েছে। গণঅভূত্থানের পরিণতি নিয়ে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের মধ্যে বিভক্তির রাজনীতি শুরু হয়েছে। সংগঠনগুলোর মধ্যে অবদানের পরিমাণ এবং নেতৃত্বের কর্তৃত্ব নিয়ে বিতর্ক এবং বিরোধিতা বেড়েছে। এই বিভক্তির কারণে একসময়কার ঐক্য সংকুচিত হয়ে পড়েছে। যার ফলে ছাত্ররাজনীতির মূল উদ্দেশ্যকে বিপথগামী করে দিয়েছে।

জুলাই অভূত্থানের স্পিরিট
জুলাই অভূত্থান পরবর্তী সময়ে ছাত্ররাজনীতির নতুন স্পিরিটের প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছে। ঐক্য ও ফ্যাসিবাদবিরোধী মনোভাব আবারো সক্রিয় হতে হবে। যাতে ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করতে পারে। ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও সংঘর্ষের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই রাজনীতিকে প্রাসঙ্গিক মনে করছেন না।

ছাত্র সংগঠনগুলোর ভূমিকা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর একাধীক নেতারা জানান, ৫ আগস্টের পর তারা একসাথে কাজ করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু নানা বিভ্রান্তি ও রাজনৈতিক অস্থিরতা তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। তারা আরো বলেন, গত ১৫ বছর ক্যাম্পাসে বিভিন্ন দলের ছাত্রদের ওপর অত্যাচার, মারধর এবং অপদস্থ করা হয়েছিল, যা ছাত্র রাজনীতির জন্য অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করেছিল। এখন তারা আশা করছেন, এই নেতিবাচক দিকগুলো এড়াতে সংগঠনের সিনিয়ররা যৌক্তিক সমাধান দেবেন এবং ছাত্ররাজনীতি সৌহার্দ্যপূর্ণ ও ইতিবাচক ধারায় ফিরবে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, তাদের সংগঠন কখনোই পেশিশক্তি বা সহিংসতার রাজনীতি সমর্থন করে না এবং তারা ছাত্ররাজনীতিতে একটি সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সর্বদা সচেষ্ট। তবে কিছু গুপ্ত সংগঠন ছাত্রদলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে, যার মাধ্যমে ক্যাম্পাসে সহিংসতা সৃষ্টি হতে পারে।

ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আশিক বলেন, আমরা সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। তবে দুর্ভাগ্যবশত প্রতিপক্ষকে ক্যাম্পাসে কোনো স্পেইস না দেয়ার মতো ফ্যাসিবাদী আচরণ আমাদের কিছু বন্ধুপ্রতিম সংগঠনের মধ্যে লক্ষ্য করছি যেটি একত্রে কাজ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অন্তরায়।

ফ্যাসিবাদকে বিতাড়িত করতে যে সকল সংগঠন একসাথে কাজ করেছে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকা খুবই জরুরি। নিজেদের মধ্যে দূরত্ব থাকলে দেশের চলমান নাজুক পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে ২৪-এর পরাজিত শক্তি আবার পুনর্বাসনের আশঙ্কা আছে। তাই আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনকে পারস্পরিক দূরত্ব ভুলে গিয়ে ক্যাম্পাসে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করণে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানাই।