শিরোনাম :
Logo বীরগঞ্জে ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ডিপিইও নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানববন্ধন। Logo টাকার জন্য হরিদাস বাবু’কে হয়রানী তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার অনুসন্ধানে প্রমাণ। Logo খুবির সঙ্গে গবেষণা সহযোগিতায় আগ্রহ জাপানি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের Logo শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পথে ট্রাকের ধাক্কায় এনজিও কর্মীর মৃত্যু Logo সাতক্ষীরায় রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ তরুণী, থানায় সাধারণ ডায়েরি Logo আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস ২০২৫ উপলক্ষে কয়রায় র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত Logo দর্শনা থানা পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান, ৪ কেজি গাঁজাসহ আটক ১ Logo জীবননগরে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০২৫ উদযাপন Logo আইএফএডিকে বাংলাদেশের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনের প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার Logo চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ এলাকায় বিষাক্ত মদপানে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।

নবীজি (সা.)-এর রমজানপূর্ব প্রস্তুতি যেমন ছিল

  • নীলকন্ঠ অনলাইন নীলকন্ঠ অনলাইন
  • আপডেট সময় : ০৪:৪০:০৫ অপরাহ্ণ, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • ৭৪৪ বার পড়া হয়েছে
রমজান মাস মহান আল্লাহর এক বিশেষ অনুগ্রহ, যা তিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি দান করেছেন। এটি এমন এক মাস, যেখানে নেক আমলের প্রতিদান বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। এই মাসের বিশেষত্ব অন্য সব মাস থেকে আলাদা, কেননা এ মাসেই আল্লাহ তাআলা মানবজাতির পথনির্দেশক হিসেবে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন : ‘রমজান মাস, যে মাসে কোরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য হিদায়াত এবং সত্যপথের সুস্পষ্ট দিশা আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

এই মাসের সর্বশ্রেষ্ঠ রাত হলো লাইলাতুল কদর, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। মহানবী মুহাম্মদ (সা.) এই পবিত্র মাসকে পরম আনন্দ ও উত্সাহের সঙ্গে বরণ করতেন। তিনি ইবাদত-বন্দেগি, দান-সদকা ও সত্কর্মে আত্মনিয়োগ করতেন এবং সাহাবিদেরও এ মাসের গুরুত্ব বোঝাতেন। তিনি তাঁদের সুসংবাদ দিয়ে বলেছেন যে : তোমাদের কাছে রমজান উপস্থিত হয়েছে, যা একটি বরকতময় মাস। তোমাদের ওপর আল্লাহ তাআলা এই মাসের রোজা ফরজ করেছেন। এ মাসের আগমনে জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়, আর আল্লাহর অবাধ্য শয়তানদের গলায় লোহার বেড়ি পরানো হয়। এ মাসে একটি রাত রয়েছে যা এক হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। যে ব্যক্তি সে রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেল সে প্রকৃত বঞ্চিত রয়ে গেল।’ (সুনানে নাসাঈ, হাদিস : ২১০৬)

নবীজি (সা.)-এর রমজানের প্রস্তুতি ও তাঁর অবস্থা
মহিমান্বিত রমজানের আগমনে রাসুলুল্লাহ (সা.) খুবই আনন্দিত হতেন এবং আল্লাহর দরবারে সর্বদা দোয়া করতেন, যেন তিনি এ মহিমান্বিত মাসের বরকত লাভের সুযোগ দেন। তিনি শাবান মাসে বেশি পরিমাণে রোজা রাখতেন, যেন রমজানের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেন : আল্লাহর রাসুল (সা.) একাধারে (এত বেশি) রোজা রাখতেন যে আমরা বলাবলি করতাম, তিনি আর রোজা পরিত্যাগ করবেন না। (আবার কখনো এত বেশি) রোজা না রাখা অবস্থায় একাধারে কাটাতেন যে আমরা বলাবলি করতাম, তিনি আর (নফল) রোজা রাখবেন না। আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে রমজান ছাড়া কোনো পুরা মাসের রোজা পালন করতে দেখিনি এবং শাবান মাসের চেয়ে কোন মাসে বেশি (নফল) রোজা পালন করতে দেখিনি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৬৯)

এ থেকেই বোঝা যায়, শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা পালন করা ছিল নবীজি (সা.)-এর একটি বিশেষ প্রস্তুতি, যাতে রমজানের রোজা পালন তাঁর জন্য সহজ হয়ে যায় এবং তিনি আত্মিকভাবে এ মাসের জন্য প্রস্তুত হতে পারেন। (আস-সিয়াম আদাবুন ও আহকামুন, পৃষ্ঠা ১২)

নবীজি (সা.)-এর রমজানের জীবনধারা
রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে অতুলনীয়ভাবে উদারতা ও দানশীলতার পরিচয় দিতেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন : আল্লাহর রাসুল (সা.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল। রমজানে তিনি আরো বেশি দানশীল হতেন, যখন জিবরিল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত্ করতেন। আর রমজানের প্রতি রাতেই জিবরিল (আ.) তাঁর সঙ্গে দেখা করতেন এবং তারা একে অন্যকে কোরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসুল (সা.) রহমতের বায়ু অপেক্ষাও বেশি দানশীল ছিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬)

রমজানের শেষ ১০ দিনে নবীজি (সা.) ইতিকাফে বসতেন এবং নিজেকে আরও বেশি ইবাদতে নিয়োজিত করতেন। তিনি এই দিনগুলোতে বিশেষভাবে লাইলাতুল কদর খোঁজার চেষ্টা করতেন।

উম্মুল মুমিমিন আয়েশা (রা.) বলেন : আল্লাহর রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন : তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০২০)

সুতরাং নবীজি (সা.) রমজান মাসকে শুধুমাত্র রোজার মাস হিসেবে দেখেননি, বরং এটি ছিল তাঁর জন্য ইবাদত, উদারতা, কোরআন তিলাওয়াত ও আত্মশুদ্ধির একটি সুবর্ণ সুযোগ। তিনি নিজে যেমন এই মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাতেন, তেমনি উম্মতকেও অনুপ্রাণিত করতেন যাতে তারা রমজানের পূর্ণ ফজিলত অর্জন করতে পারে। আল্লাহ তাআলা আমাদের রমজানের প্রস্তুতি নেওয়ার ও রমজানে পূর্ণ উদ্যমে ইবাদত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

বীরগঞ্জে ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ডিপিইও নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানববন্ধন।

নবীজি (সা.)-এর রমজানপূর্ব প্রস্তুতি যেমন ছিল

আপডেট সময় : ০৪:৪০:০৫ অপরাহ্ণ, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
রমজান মাস মহান আল্লাহর এক বিশেষ অনুগ্রহ, যা তিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি দান করেছেন। এটি এমন এক মাস, যেখানে নেক আমলের প্রতিদান বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। এই মাসের বিশেষত্ব অন্য সব মাস থেকে আলাদা, কেননা এ মাসেই আল্লাহ তাআলা মানবজাতির পথনির্দেশক হিসেবে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন : ‘রমজান মাস, যে মাসে কোরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য হিদায়াত এবং সত্যপথের সুস্পষ্ট দিশা আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

এই মাসের সর্বশ্রেষ্ঠ রাত হলো লাইলাতুল কদর, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। মহানবী মুহাম্মদ (সা.) এই পবিত্র মাসকে পরম আনন্দ ও উত্সাহের সঙ্গে বরণ করতেন। তিনি ইবাদত-বন্দেগি, দান-সদকা ও সত্কর্মে আত্মনিয়োগ করতেন এবং সাহাবিদেরও এ মাসের গুরুত্ব বোঝাতেন। তিনি তাঁদের সুসংবাদ দিয়ে বলেছেন যে : তোমাদের কাছে রমজান উপস্থিত হয়েছে, যা একটি বরকতময় মাস। তোমাদের ওপর আল্লাহ তাআলা এই মাসের রোজা ফরজ করেছেন। এ মাসের আগমনে জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়, আর আল্লাহর অবাধ্য শয়তানদের গলায় লোহার বেড়ি পরানো হয়। এ মাসে একটি রাত রয়েছে যা এক হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। যে ব্যক্তি সে রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেল সে প্রকৃত বঞ্চিত রয়ে গেল।’ (সুনানে নাসাঈ, হাদিস : ২১০৬)

নবীজি (সা.)-এর রমজানের প্রস্তুতি ও তাঁর অবস্থা
মহিমান্বিত রমজানের আগমনে রাসুলুল্লাহ (সা.) খুবই আনন্দিত হতেন এবং আল্লাহর দরবারে সর্বদা দোয়া করতেন, যেন তিনি এ মহিমান্বিত মাসের বরকত লাভের সুযোগ দেন। তিনি শাবান মাসে বেশি পরিমাণে রোজা রাখতেন, যেন রমজানের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেন : আল্লাহর রাসুল (সা.) একাধারে (এত বেশি) রোজা রাখতেন যে আমরা বলাবলি করতাম, তিনি আর রোজা পরিত্যাগ করবেন না। (আবার কখনো এত বেশি) রোজা না রাখা অবস্থায় একাধারে কাটাতেন যে আমরা বলাবলি করতাম, তিনি আর (নফল) রোজা রাখবেন না। আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে রমজান ছাড়া কোনো পুরা মাসের রোজা পালন করতে দেখিনি এবং শাবান মাসের চেয়ে কোন মাসে বেশি (নফল) রোজা পালন করতে দেখিনি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৬৯)

এ থেকেই বোঝা যায়, শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা পালন করা ছিল নবীজি (সা.)-এর একটি বিশেষ প্রস্তুতি, যাতে রমজানের রোজা পালন তাঁর জন্য সহজ হয়ে যায় এবং তিনি আত্মিকভাবে এ মাসের জন্য প্রস্তুত হতে পারেন। (আস-সিয়াম আদাবুন ও আহকামুন, পৃষ্ঠা ১২)

নবীজি (সা.)-এর রমজানের জীবনধারা
রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে অতুলনীয়ভাবে উদারতা ও দানশীলতার পরিচয় দিতেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন : আল্লাহর রাসুল (সা.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল। রমজানে তিনি আরো বেশি দানশীল হতেন, যখন জিবরিল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত্ করতেন। আর রমজানের প্রতি রাতেই জিবরিল (আ.) তাঁর সঙ্গে দেখা করতেন এবং তারা একে অন্যকে কোরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসুল (সা.) রহমতের বায়ু অপেক্ষাও বেশি দানশীল ছিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬)

রমজানের শেষ ১০ দিনে নবীজি (সা.) ইতিকাফে বসতেন এবং নিজেকে আরও বেশি ইবাদতে নিয়োজিত করতেন। তিনি এই দিনগুলোতে বিশেষভাবে লাইলাতুল কদর খোঁজার চেষ্টা করতেন।

উম্মুল মুমিমিন আয়েশা (রা.) বলেন : আল্লাহর রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন : তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০২০)

সুতরাং নবীজি (সা.) রমজান মাসকে শুধুমাত্র রোজার মাস হিসেবে দেখেননি, বরং এটি ছিল তাঁর জন্য ইবাদত, উদারতা, কোরআন তিলাওয়াত ও আত্মশুদ্ধির একটি সুবর্ণ সুযোগ। তিনি নিজে যেমন এই মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাতেন, তেমনি উম্মতকেও অনুপ্রাণিত করতেন যাতে তারা রমজানের পূর্ণ ফজিলত অর্জন করতে পারে। আল্লাহ তাআলা আমাদের রমজানের প্রস্তুতি নেওয়ার ও রমজানে পূর্ণ উদ্যমে ইবাদত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।