শিরোনাম :
Logo বীরগঞ্জে ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ডিপিইও নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানববন্ধন। Logo টাকার জন্য হরিদাস বাবু’কে হয়রানী তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার অনুসন্ধানে প্রমাণ। Logo খুবির সঙ্গে গবেষণা সহযোগিতায় আগ্রহ জাপানি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের Logo শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পথে ট্রাকের ধাক্কায় এনজিও কর্মীর মৃত্যু Logo সাতক্ষীরায় রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ তরুণী, থানায় সাধারণ ডায়েরি Logo আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস ২০২৫ উপলক্ষে কয়রায় র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত Logo দর্শনা থানা পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান, ৪ কেজি গাঁজাসহ আটক ১ Logo জীবননগরে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০২৫ উদযাপন Logo আইএফএডিকে বাংলাদেশের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনের প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার Logo চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ এলাকায় বিষাক্ত মদপানে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।

ভাষা ও সাহিত্য হোক দ্বিন প্রচারের মাধ্যম

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৫:৩১:৩৩ অপরাহ্ণ, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • ৭৬৫ বার পড়া হয়েছে

সাহিত্য তা কোনো সাহিত্যিক রচনা করুন বা নবীর মুখে উচ্চারিত হোক অথবা তা কোনো ঐশ্বরিক গ্রন্থের বর্ণনা হোক—শর্ত হলো তা এমনভাবে বলতে হবে যেন তা হূদয়ে রেখাপাত করে। লেখক অনুপম সাহিত্য রচনা করে তৃপ্ত হবে এবং পাঠক তা পাঠ আনন্দ পাবে এবং তা গ্রহণ করে নেবে। কিন্তু বর্তমান যুগের প্রবণতা হলো যতক্ষণ মানুষ প্রগতির কথা না বলবে, পূর্বকার সমাজ-সংস্কৃতি নিয়ে উপহাস না করবে, ধর্ম ও ধর্মীয় গ্রন্থের প্রতি অপবাদ না দেবে ততক্ষণ পর্যন্ত তা সাহিত্য বলে গণ্য হয় না।

সাহিত্যের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে বলতে চাই, সাহিত্যের প্রাচীনতম উত্স ঐশ্বরিক ধর্মগ্রন্থগুলো। মানুষ সাহিত্যের ধারণাই পেয়েছে ঐশ্বরিক ধর্মগ্রন্থ থেকে। আল্লাহ যখন দ্বিন প্রচারের জন্য নবী পাঠালেন, তাদের উন্নত ও মার্জিত ভাষা দিলেন, অর্থবোধকতায় পরিপূর্ণ কিতাব দিলেন তখন মানুষ উত্কর্ষ ভাষা তথা সাহিত্যের ধারণা পেল। অবশেষে কোরআন অবতীর্ণ করার মাধ্যমে ভাষা-সাহিত্যের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘জিবরাইল এটি নিয়ে অবতরণ করেছে তোমার হূদয়ে যাতে তুমি সতর্ককারী হতে পারো। অবতীর্ণ  করা হয়েছে সুস্পষ্ট আরবি ভাষায়।’ (সুরা আশ শুরা, আয়াত : ১৯৩-১৯৫)

উর্দু ভাষার সব সাহিত্য আন্দোলন ও সাহিত্য-জীবনে আলেমরা এগিয়ে এসেছেন এবং মূল ভূমিকা পালন করেছেন। বলা হয়, উর্দু সাহিত্যের রাজমহলের চার স্তম্ভ হলেন মৌলভি হুসাইন আজাদ দেহলভি, খাজা আলতাফ হুসাইন হালি, ডিপুটি নাজির আহমদ ও মাওলানা শিবলি নোমানি। চার সাহিত্যিকই নৈতিক শিক্ষায় মনোযোগী ছিলেন, মাদরাসা শিক্ষার্থী ছিলেন এবং আলেমদের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন। মাওলানা শিবলি নোমানি ও ডেপুটি নাজির আহমদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল। তাদের একজন ছিলেন কোরআনের ব্যাখ্যাকার এবং অপরজন সিরাত গবেষক। একইভাবে খাজা আলতাফ হুসাইন হালি পুরোপুরি ধার্মিক মানুষ ছিলেন। আমি মনে করি, সাহিত্য মানবপ্রকৃতির অনুকূল হয় না যদি না তাতে বিশ্বাসের দীপ্তি ও মানুষের জন্য ভালোবাসা না থাকে। জালালুদ্দিন রুমি, শেখ সাদি, কুদসি এবং ভারতবর্ষের মির, ওয়ার্দ, মির্জা মাজহার জানে জানা ও জিগার মুরাদাবাদির সাহিত্য থেকে চোখ ফেরানো যায় না। এদের সবাই বিশ্বাসী ও ধার্মিক ছিলেন। কবি ইকবাল বলেছেন, ‘হে অনুসন্ধানী! তোমার অনুসন্ধিত্সা খুবই চমত্কার। তবে যে বস্তুর প্রকৃতিই দেখতে পেল না তার অনুসন্ধানের মূল্য কী? মানুষের বিচক্ষণতার উদ্দেশ্য চিরস্থায়ী জীবনের বোধ লাভ।’

সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য ও শক্তি হলো তা রচনা মানুষের প্রবণতা, মনোভব, চিন্তা, চেতনা ও কাজে বৈপ্লবিক জাগরণ সৃষ্টি করতে পারে। ফলে তা যেমন উপকারী, তেমন ক্ষতিকরও হতে পারে। তার যেমন নির্মাণের শক্তি রয়েছে, তেমন সামর্থ্য আছে বিনাশের। ফলে মুসলিম উম্মাহ ভাষা ও সাহিত্য চর্চায় অমনোযোগী হতে পারে না। ভাষা ও সাহিত্য জনজীবন পাল্টে দিতে পারে, জীবনের নতুন ধারা সৃষ্টি করতে পারে, রাষ্ট্রকে সুপথে পরিচালিত করতে পারে আবার বিপথগামীও করতে পারে। সুতরাং ভাষা ও সাহিত্য চর্চায় মহত্ লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। যেন তা ধ্বংস, চিন্তার অস্থিরতা, পাশবিক সুখ ও প্রবৃত্তি পূজার মাধ্যম না হয়ে নির্মাণ, সংস্কার, কল্যাণকামিতা, আল্লাহভীতি, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সুপথপ্রাপ্তির মাধ্যম হয়।

তামিরে হায়াত থেকে মুফতি আবদুল্লাহ নুরের ভাষান্তর

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

বীরগঞ্জে ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ডিপিইও নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানববন্ধন।

ভাষা ও সাহিত্য হোক দ্বিন প্রচারের মাধ্যম

আপডেট সময় : ০৫:৩১:৩৩ অপরাহ্ণ, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সাহিত্য তা কোনো সাহিত্যিক রচনা করুন বা নবীর মুখে উচ্চারিত হোক অথবা তা কোনো ঐশ্বরিক গ্রন্থের বর্ণনা হোক—শর্ত হলো তা এমনভাবে বলতে হবে যেন তা হূদয়ে রেখাপাত করে। লেখক অনুপম সাহিত্য রচনা করে তৃপ্ত হবে এবং পাঠক তা পাঠ আনন্দ পাবে এবং তা গ্রহণ করে নেবে। কিন্তু বর্তমান যুগের প্রবণতা হলো যতক্ষণ মানুষ প্রগতির কথা না বলবে, পূর্বকার সমাজ-সংস্কৃতি নিয়ে উপহাস না করবে, ধর্ম ও ধর্মীয় গ্রন্থের প্রতি অপবাদ না দেবে ততক্ষণ পর্যন্ত তা সাহিত্য বলে গণ্য হয় না।

সাহিত্যের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে বলতে চাই, সাহিত্যের প্রাচীনতম উত্স ঐশ্বরিক ধর্মগ্রন্থগুলো। মানুষ সাহিত্যের ধারণাই পেয়েছে ঐশ্বরিক ধর্মগ্রন্থ থেকে। আল্লাহ যখন দ্বিন প্রচারের জন্য নবী পাঠালেন, তাদের উন্নত ও মার্জিত ভাষা দিলেন, অর্থবোধকতায় পরিপূর্ণ কিতাব দিলেন তখন মানুষ উত্কর্ষ ভাষা তথা সাহিত্যের ধারণা পেল। অবশেষে কোরআন অবতীর্ণ করার মাধ্যমে ভাষা-সাহিত্যের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘জিবরাইল এটি নিয়ে অবতরণ করেছে তোমার হূদয়ে যাতে তুমি সতর্ককারী হতে পারো। অবতীর্ণ  করা হয়েছে সুস্পষ্ট আরবি ভাষায়।’ (সুরা আশ শুরা, আয়াত : ১৯৩-১৯৫)

উর্দু ভাষার সব সাহিত্য আন্দোলন ও সাহিত্য-জীবনে আলেমরা এগিয়ে এসেছেন এবং মূল ভূমিকা পালন করেছেন। বলা হয়, উর্দু সাহিত্যের রাজমহলের চার স্তম্ভ হলেন মৌলভি হুসাইন আজাদ দেহলভি, খাজা আলতাফ হুসাইন হালি, ডিপুটি নাজির আহমদ ও মাওলানা শিবলি নোমানি। চার সাহিত্যিকই নৈতিক শিক্ষায় মনোযোগী ছিলেন, মাদরাসা শিক্ষার্থী ছিলেন এবং আলেমদের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন। মাওলানা শিবলি নোমানি ও ডেপুটি নাজির আহমদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল। তাদের একজন ছিলেন কোরআনের ব্যাখ্যাকার এবং অপরজন সিরাত গবেষক। একইভাবে খাজা আলতাফ হুসাইন হালি পুরোপুরি ধার্মিক মানুষ ছিলেন। আমি মনে করি, সাহিত্য মানবপ্রকৃতির অনুকূল হয় না যদি না তাতে বিশ্বাসের দীপ্তি ও মানুষের জন্য ভালোবাসা না থাকে। জালালুদ্দিন রুমি, শেখ সাদি, কুদসি এবং ভারতবর্ষের মির, ওয়ার্দ, মির্জা মাজহার জানে জানা ও জিগার মুরাদাবাদির সাহিত্য থেকে চোখ ফেরানো যায় না। এদের সবাই বিশ্বাসী ও ধার্মিক ছিলেন। কবি ইকবাল বলেছেন, ‘হে অনুসন্ধানী! তোমার অনুসন্ধিত্সা খুবই চমত্কার। তবে যে বস্তুর প্রকৃতিই দেখতে পেল না তার অনুসন্ধানের মূল্য কী? মানুষের বিচক্ষণতার উদ্দেশ্য চিরস্থায়ী জীবনের বোধ লাভ।’

সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য ও শক্তি হলো তা রচনা মানুষের প্রবণতা, মনোভব, চিন্তা, চেতনা ও কাজে বৈপ্লবিক জাগরণ সৃষ্টি করতে পারে। ফলে তা যেমন উপকারী, তেমন ক্ষতিকরও হতে পারে। তার যেমন নির্মাণের শক্তি রয়েছে, তেমন সামর্থ্য আছে বিনাশের। ফলে মুসলিম উম্মাহ ভাষা ও সাহিত্য চর্চায় অমনোযোগী হতে পারে না। ভাষা ও সাহিত্য জনজীবন পাল্টে দিতে পারে, জীবনের নতুন ধারা সৃষ্টি করতে পারে, রাষ্ট্রকে সুপথে পরিচালিত করতে পারে আবার বিপথগামীও করতে পারে। সুতরাং ভাষা ও সাহিত্য চর্চায় মহত্ লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। যেন তা ধ্বংস, চিন্তার অস্থিরতা, পাশবিক সুখ ও প্রবৃত্তি পূজার মাধ্যম না হয়ে নির্মাণ, সংস্কার, কল্যাণকামিতা, আল্লাহভীতি, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সুপথপ্রাপ্তির মাধ্যম হয়।

তামিরে হায়াত থেকে মুফতি আবদুল্লাহ নুরের ভাষান্তর