করোনার টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বের প্রায় ১ কোটি ৪৪ লাখ মানুষের মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। গাণিতিক পদ্ধতি ব্যবহার করে করোনায় মৃত্যু প্রতিরোধের এই অনুমিত সংখ্যা বের করেছেন যুক্তরাজ্যের ইমপিরিয়াল কলেজের ছয়জন গবেষক। এ নিয়ে তাঁদের একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেট।
প্রতিরোধ করা মৃত্যুর হিসাব বের করতে গবেষকেরা করোনাভাইরাসের সংক্রমণক্ষমতা, করোনায় মৃত্যু, করোনার চিকিৎসাব্যবস্থা, করোনার কারণে অন্যান্য রোগে বাড়তি মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনা করেছেন। গবেষকেরা বলেছেন, করোনার টিকা কর্মসূচির প্রথম বছরে (৮ ডিসেম্বর ২০২০ থেকে ৮ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত) কোনো টিকা না দিলে ১ কোটি ৮১ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারত। ওই সময় বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃত্যু হয়েছিল ৩৭ লাখ মানুষের। টিকা দেওয়ার কারণে ১ কোটি ৪৪ লাখ মানুষের মৃত্যু ঠেকানো গেছে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান প্রদেশের বাসিন্দারা প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। এরপর তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এক বছর পর ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রথম করোনার টিকা দেওয়া হয়। ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্বের ৫৫ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ করোনার টিকার প্রথম ডোজ এবং ৪৫ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় ডোজ পায়। এ সময় ৪ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ বুস্টার ডোজও পেয়ে গিয়েছিল। গবেষকেরা এক বছরে ১৮৫টি দেশে করোনার টিকার প্রভাব দেখার চেষ্টা করেছেন।
গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, টিকা দেওয়ার ফলে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে রোগীর চাপ কম হয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রে ক্ষমতার অতিরিক্ত করোনার রোগী ভর্তি করাতে হয়নি। ২০২১ সালজুড়ে করোনার টিকার প্রভাব স্থান ও সময় ভেদে কমবেশি হতে দেখা গেছে। ভারতে ডেলটা ধরনের ঢেউয়ের সময় টিকার প্রভাব এক রকম ছিল, আবার ইউরোপে বিধিনিষেধ শিথিল করার সময় টিকার প্রভাব অন্য রকম ছিল।
গবেষকেরা বলছেন, টিকার ফলে ইউরোপীয় অঞ্চলে তুলনামূলকভাবে বেশি মৃত্যু ঠেকানো গেছে। এর কারণ হয়তো এই যে ডেলটা ধরন আসার আগেই এই অঞ্চলের বেশি মানুষ টিকার আওতায় এসেছিলেন। করোনার টিকা থেকে বেশি সুরক্ষা পেয়েছেন উচ্চ ও উচ্চমধ্যম আয়ের দেশের মানুষ। আবার একই ধরনের টিকা যেখানে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে, সেখানে সুরক্ষা তুলনামূলকভাবে বেশি হয়েছে। যেসব এলাকায় নানা ধরনের টিকা ব্যবহৃত হয়েছে, সেখানে টিকার প্রভাব কম দেখা গেছে।
গাণিতিক মডেলের মাধ্যমে বৈশ্বিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গবেষকদের বিজ্ঞানভিত্তিক অনুমানের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। কারণ, করোনারভাইরাসের জিন বিশ্লেষণের তথ্য অনেক দেশ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়ার সুযোগ ছিল না। আবার অনেক দেশের টিকাদানের বিস্তারিত তথ্য–উপাত্ত তাঁরা পাননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরামর্শক মুশতাক হোসেন বলেন, ‘টিকার সুফলের একটি অনুমিত হিসাব আমরা এই প্রবন্ধে দেখতে পাই। অন্যদিকে টিকাদানের ক্ষেত্রে যে বৈষম্য হয়েছে, সেটাও এই প্রবন্ধে স্পষ্ট হয়েছে। টিকার সুফল আরও বেশি পরিমাণে পাওয়া যেত যদি টিকাদানের ক্ষেত্রে বৈষম্য কম হতো।’



































